skip to Main Content

মনোজাল I লালে লাস্য

রহস্যমোদিরও বটে। পছন্দের মানুষটির সঙ্গে সম্পর্কের সমীকরণ পাল্টে দিতে পারে নিমেষেই। বিশ্বাস হচ্ছে না?

বাঁকা ঠোঁটে রাঙা রঙে উঠে গোলাপ ফুটে
তাই গো দেখে হৃদয় আমার বঁধুর পায়ে লুটে

নারীর রক্তরাঙা ঠোঁট নিয়ে বাংলা সাহিত্যে অসংখ্য কবিতা লেখা হয়েছে। ঘুরেফিরে প্রায় সব কবিতার অর্থ অনেকটা একই রকম। লাল ঠোঁটে নারী যে কতটা আবেদনময়ী হয়ে ওঠেন, তার বিশদ বর্ণনা। কবিদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, মনোবিশেষজ্ঞদের মতামত আরও সরাসরি। তাদের মতে, লাল লিপস্টিক পরিহিত নারীর সঙ্গে যত সহজে একজন পুরুষের সম্পর্ক তৈরি হয়, অন্য ক্ষেত্রে ততটা নয়। দুজনের সম্পর্কে এ লিপস্টিক অনেকটা অনুঘটকের কাজ করে। সেই প্রাচীনকাল থেকেই ঠোঁট রাঙানোয় লাল রীতিমতো রাজত্ব করে আসছে। মিসরের রানি ক্লিওপেট্রা লাল রঙে ঠোঁট রাঙাতেন। তার এই লাল ঠোঁটই তাকে অনন্য করে তুলত। কথিত আছে, সেটা যেন তীব্র লাল হয়, তার জন্য বিশেষ এই লিপস্টিক তৈরিতে ব্যবহৃত হতো মেরুন রঙের বিটল (পোকা), পিঁপড়া, মাছের আঁশ, ছারপোকা, মধু, ফুলের পাপড়ি, মোম ইত্যাদি। কী একটা অবস্থা!
বর্তমানে ফিরে আসা যাক। সম্প্রতি খুব মজার একটি তথ্য দিয়েছেন ফ্রান্সের মনোবিজ্ঞানীরা। তারা গবেষণায় বের করেছেন, যেসব ওয়েট্রেস লাল লিপস্টিক পরেন, তারা সব সময়ই গোলাপি, বাদামি বা ন্যুড লিপস্টিক পরা নারীদের চেয়ে বেশি টিপস উপার্জন করেন। বিশ্বজুড়েই। এ তথ্য দিয়ে তারা কী প্রমাণ করতে চেয়েছেন? তেমন কিছুই না। আবার ধরতে গেলে অনেক কিছু। আসলে, তারাও একটু ভিন্নভাবে নারীর ঠোঁটে লাল লিপস্টিকের মাহাত্ম্য বোঝাতে চেয়েছেন। ব্যাপারটি নতুন নয়। লাল লিপস্টিক নারীর সৌন্দর্যে অন্য রকম আবেদন যোগ করে সারা বিশ্বে। এটি বেশ প্রমাণিত তথ্য। এমনকি, প্রাচীন গ্রিসেও নারীরা তার সঙ্গীকে শারীরিকভাবে উত্তেজিত করার জন্য এই লিপস্টিক ব্যবহার করতেন বলে ধারণা করা হয়। সেই চর্চা এখনো সর্বত্র বিরাজমান।
আসলে, লাল এমন একটি রং, যা সব সময় চমকে দেয়, থমকে দাঁড়াতে বাধ্য করে। লালকে তুলনা করা হয় জ্বলন্ত রঙের সঙ্গে। বলা হয় হট কালার। রাস্তায় টকটকে লাল পোশাক পরা কাউকে দেখলে যে কেউ দ্বিতীয়বার তাকায়, একবার হলেও ভাবে, এমন পোশাক পরে সে কোথায় না জানি যাচ্ছে! এমনকি মনোবিজ্ঞান এ-ও দাবি করে, দিনের বেশির ভাগ সময় কাটানোর জন্য পোশাকে লাল রঙের একটি স্প্ল্যাশ যোগ করা অপরিহার্য। তাতে পরিধানকারীর চারপাশে একধরনের মোহময়তা সৃষ্টি হয়, অন্যরা ভালোবাসার দৃষ্টিতে একটু হলেও তাকায়। এমন একটি রং যখন নারীর লাস্যময় ঠোঁটকে রঙিন করে তোলে, তখন কী অবস্থা হয়? অর্থাৎ লিপস্টিকের দোষ নেই, দোষটা আসলে রঙের! লাল সব সময় বিভ্রান্তি তৈরি করে! লাল লিপস্টিককে বলা হয় ক্ল্যাসিক এবং একই সঙ্গে সাহসী। কারণ, এর সৌন্দর্য ও আবেদন এতটাই তীব্র যে এটি কিছুটা ভীতিকরও বটে! বিশেষ করে বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে। কারণ, লাল ঠোঁট খুব সহজে উত্তেজনা সৃষ্টিতে সক্ষম। এই আকর্ষণের ওপর রঙের প্রভাব পরীক্ষা করতে গিয়ে তাইওয়ানের গবেষকেরা দেখেছেন, শুধু লাল লিপস্টিক নয়, মহিলারা যখন লাল রঙের ল্যাপটপের মতো পণ্য বহন করেন, তখনো পুরুষদের চোখে তারা অন্য সময়ের তুলনায় আকর্ষণীয় এবং যৌন আবেদনময়ী হয়ে ওঠেন। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন?
গবেষকদের ধারণা, লাল লিপস্টিক পরলে পুরুষের পক্ষে নারীকে নম্র ও ভীরু হিসেবে দেখা কঠিন হয়ে পড়ে। অর্থাৎ নারীর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক সব সময়ই তাকে অন্য রকম উচ্চতায় নিয়ে যায়, তখন পুরুষের পক্ষে তাকে অগ্রাহ্য করা অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। অন্য রকম ব্যাখ্যাও আছে। যেখানে বলা হয়েছে, নারীর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক আসলে তাকে একজন কামার্ত মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করে। এ রঙে ঠোঁট রাঙানোর অর্থ হচ্ছে, পুরুষকে বোঝানো যে ‘আই অ্যাম সেক্সুয়ালি অ্যাভেইলেবল’। ফলে নারীর এই আহ্বান পুরুষের পক্ষে এড়ানো সম্ভব হয় না। এর কিছুটা বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তিও আছে। গবেষকেরা প্রমাণ করেছেন, নারীর যৌন উত্তেজনার বাহ্যিক লক্ষণগুলোর মাঝে অন্যতম হচ্ছে ঠোঁট লাল হয়ে ওঠা। কৃত্রিমভাবে ঠোঁটে এই লালচে আভা ফুটিয়ে তোলার জন্যই নাকি লিপস্টিক নামক প্রসাধন আবিষ্কার করা হয়েছিল। পুরো বিষয়টি আসলে মনস্তাত্ত্বিক। পেছনের নানা রকম ব্যাখ্যাকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক—দুটোই ধরে নেওয়া যেতে পারে।
এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই, প্রাচীন নারীরা নানান রকম ফল, পান, ফুলের রস দিয়ে ঠোঁটকে রক্তিম করে তুলতেন ভালোবাসার মানুষদের আকর্ষণ করার জন্য। এমনকি, পুরুষকে যৌন মিলনে আগ্রহী করে তুলতে আর নিজেকে যৌনতায় সক্ষম বোঝাতেও ব্যবহার করা হতো ঠোঁটের লাল রং। মেসোপটেমিয়ানরা ঠোঁট রাঙাতে রত্নচূর্ণ ব্যবহার করতেন। মিসরীয় নারীরা রঞ্জক পদার্থ যেমন অ্যালজিন, আয়োডিন ও ব্রোমিনের মিশ্রণে লাল রং তৈরি করে লিপস্টিক হিসেবে ব্যবহার করতেন। আর এখন তো রেড লিপস্টিক ট্রেন্ড সৌন্দর্যবিশ্বে রীতিমতো তুঙ্গে। রেড মানেই হট অ্যালার্ট। ক্রাশের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রধান একটি অস্ত্র। আগামীতেও এ লিপস্টিকের আবেদন পুরোনো হওয়ার সুযোগ নেই; বরং ক্রমাগতই বিউটি ট্রেন্ডে যুক্ত হচ্ছে রেডের নানা রকম শেড। বলা হচ্ছে, রেড সবাই সব সময় ক্যারি করতে পারেন না। তবে যিনি পারেন বা যার কাছে এ রং প্রিয়, তিনি সাহসী, আত্মবিশ্বাসী এবং শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের অধিকারী। পাশাপাশি খুব আনন্দপ্রিয়, আত্মসচেতন এবং কাজের ক্ষেত্রে মনোযোগী। পশ্চিমা বিশ্বও এ তত্ত্বে সমানভাবে বিশ্বাসী। সেখানে টকটকে লাল লিপস্টিককে সেক্স সিম্বলের প্রতীক হিসেবেও ধরা হয়। মেরিলিন মনরোর কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? তার ঠোঁট আলোকিত করে রাখত লাল। লালের এই মহিমা তাই যুগ যুগ ধরেই। কারণ, এটি ভালোবাসা ও শারীরিক উত্তেজনা বাড়াতে সক্ষম এমনকি সক্ষম বিপরীত লিঙ্গের চোখে ভয় ধরাতেও। নারীরা এ তথ্য জানেন না? জানেন বলেই তো নিজেকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে বারবার হাত বাড়ান লালের কাছে!
i রায়া ফাতিমা
মডেল: আনিকা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top