তনুরাগ I অ্যাসিডিক অলটারনেটিভ
টিকটকে ট্রেন্ডিং। ইতিমধ্যে ডার্মাটোলজিস্ট অ্যাপ্রুভড। কিন্তু ব্যবহারে চাই সচেতনতা
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টিকটকে গুটিকয় মানুষের প্রশংসাবাণী দিয়ে শুরু হয় ট্রেন্ডটি। এর কিছুদিনের মধ্যেই ভাইরাল #গ্লাইকোলিকঅ্যাসিডঅ্যাজডিওডোরেন্ট। ১২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ভিউ এখন এই হ্যাশট্যাগের দখলে। যার বক্তব্য, রেগুলার ডিওর বদলে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ব্যবহারে আর্মপিট বা বগলের দুর্গন্ধ রুখে দেওয়া সম্ভব। সত্যতা যাচাইয়ের আগে বেসিকটা জেনে নেওয়া যাক।
গ্লাইকোলিক অ্যাসিড কী
এটি মূলত একধরনের আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড, আখ থেকে প্রাপ্ত। যা কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট হিসেবে দারুণ কার্যকর। ত্বকের মৃতকোষ সারাইয়ের পাশাপাশি উজ্জ্বলতা বাড়াতে সহায়ক। সেই সঙ্গে বিভিন্ন অংশের ডিসকালারেশন আর পিগমেন্টেশন দূর করার পাশাপাশি এই অ্যাসিড বলিরেখা আর সূক্ষ্মরেখা রুখে দিতে সক্ষম। তাই ত্বকচর্চার ফর্মুলায় এই উপাদান জনপ্রিয় বেশ। গ্লাইকোলিক অ্যাসিড দিয়ে তৈরি ফেশিয়াল পিল আর ক্লিনজারের কাটতিও তাই বেশি। তবে এটি ব্যবহারে বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। সেটাও জেনে রাখা জরুরি। রাতেই বেশি ব্যবহার উপযোগী এই অ্যাসিড। তা-ও একদম লো পারসেন্টেজ মেনে। সপ্তাহে এক কিংবা দুবার ব্যবহারই যথেষ্ট। এটি ব্যবহারে সূর্যালোকে ত্বক সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। তাই সানস্ক্রিন ব্যবহার মাস্ট। গ্লাইকোলিক অ্যাসিড বেশি ব্যবহারে ত্বক ওভার এক্সফোলিয়েটেড হয়ে যেতে পারে। এমনকি ত্বকের সুরক্ষা দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে; যা ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। সেই সঙ্গে বাড়তে পারে ব্রণের মতো ব্রেকআউট আর ডিহাইড্রেশনজনিত সমস্যা।
ডিওর বিকল্পে
এ ক্ষেত্রে প্রথমেই জেনে নিতে হবে ডিওডোরেন্ট আর অ্যান্টিপার্সপিরেন্টের পার্থক্য। প্রায়শ এদেরকে একই ভাববার ভুল করে থাকেন অনেকে। কিন্তু এ দুটো আসলে আলাদা। আর এ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকলে প্রয়োজন বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজও অনেকটা সুবিধাজনক হয়। ডিওডোরেন্টে মূলত ফার্মেন্ট অথবা প্রোবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। জীবাণুর বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে, দুর্গন্ধ কমানোর জন্য। ডিওতে আরও ব্যবহার করা হয় স্টার্চ পাউডার। বগলের আর্দ্রতা শুষে নিয়ে, ঘাম রোধে সহায়তার জন্য। আর অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট অ্যালুমিনিয়াম সল্ট ব্যবহারে বগলের সোয়েট গ্ল্যান্ডগুলোকে বন্ধ করে দেয়। ফলাফল—ঘাম রোধ হয়। আর আর্দ্র হয়ে উঠতে পারে না বলে জীবাণুও তৈরি হতে পারে না। তৈরি হয় না কোনো দুর্গন্ধ। তো বোঝা গেল অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট সহায়তা করে ঘাম ও দুর্গন্ধে, অন্যদিকে ডিওডোরেন্টের কাজ দুর্গন্ধ প্রতিরোধ। ফলে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ডিওডোরেন্টের ক্যাটাগরিতে পড়ে। এটি ঘাম রোধ না করতে পারলেও ত্বকের পিএইচ লেভেলে নিয়ে আসে রদবদল, যা ওই অংশের ত্বকের জীবাণুর হার কমিয়ে দেয়। আর কম জীবাণু মানেই কম দুর্গন্ধ। সেই সঙ্গে দেহত্বকের এই অংশের পিগমেন্টেশন দূরেও দারুণ কার্যকর গ্লাইকোলিক অ্যাসিড।
কারণ, এটি র্যাপিড সেল টার্নওভারকে আরও ত্বরান্বিত করে এবং ত্বকের পুরুত্ব কমিয়ে আনে; যা অনাকাঙ্ক্ষিত হাইপারপিগমেন্টেশনের জন্য দায়ী। সঠিকভাবে ব্যবহারে সুফল মিলবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। ডার্মাটোলজিস্টরা বলে থাকেন গোসলের পর বগলে এই অ্যাসিড ব্যবহার করা উত্তম। কারণ, পরিষ্কার ত্বকে এটি বেশি কার্যকর। সাধারণত বায়োডিগ্রেডেবল প্যাড দিয়ে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড বগলে মেখে নেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
সম্ভাব্য ঝুঁকি
মূলত একটাই। স্পর্শকাতর হয় এই অংশের ত্বক। তাই মুখের ত্বকের জন্য ব্যবহার উপযোগী গ্লাইকোলিক অ্যাসিড আন্ডারআর্মে ব্যবহারে দেখা দিতে পারে অস্বস্তি। কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট হওয়ায় এর অত্যধিক ব্যবহারে বগলে প্রদাহ, লালচে ভাব, র্যাশ হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তাই অনেক ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ, যাদের বগলের ত্বক সুপার সেনসিটিভ এবং একজিমার মতো সমস্যা আছে, এ ট্রেন্ডের সঙ্গে তাদের গা না ভাসানোই ভালো। কারণ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা আরও বেড়ে যেতে পারে। র্যাশের মাত্রা গুরুতর হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি যাদের ত্বকরং গাঢ় বর্ণের, তাদের হাইপারপিগমেন্টেশন তো কমবেই না, বরং ভোগাবে মাসের পর মাস। হিতে বিপরীত হলে বরং বিপদ বাড়বে। অনেক ডার্মাটোলজিস্টের মত, আন্ডারআর্মের পিএইচ লেভেল, ত্বকের ভাঁজ, ফ্রিকশন—সবই আলাদা। এ ছাড়া এই অংশের তাপমাত্রা উচ্চ থাকায় অধিকাংশ সময় উষ্ণ থাকে। থাকে হেয়ার ফলিকলের উপস্থিতিও। এ বৈশিষ্ট্যগুলো মুখত্বকের চেয়ে একদমই ভিন্ন। তাই ফেশিয়াল স্কিনের জন্য তৈরি গ্লাইকোলিক অ্যাসিড আন্ডারআর্মে ব্যবহার করলে সেটা কতটুকু উপকারী হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
ব্যবহারের সঠিক উপায়
এই ট্রেন্ড ট্রাই করাই চাই? সঠিক হতে হবে প্রক্রিয়া, নয়তো ঝামেলা বাড়বে। আন্ডারআর্মে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ব্যবহারের আগে দেখে নিতে হবে এর ঘনত্ব। কম ঘনত্বে ঝুঁকির আশঙ্কাও কম। সেই সঙ্গে ঘন ঘন ব্যবহারের পরিকল্পনা থাকলে তা একদম বাদ। লো পার্সেন্টেজের গ্লাইকোলিক অ্যাসিড টোনার ব্যবহার করতে হবে। তা-ও একদম পাতলা স্তর মেখে নিতে হবে দিনে একবার। শুকনো ত্বকে।
আছে এরও বিকল্প
আন্ডারআর্মে ব্যবহারের জন্য গ্লাইকোলিক অ্যাসিডই শুধু ট্রেন্ডিং নয় এখন। তালিকায় আছে স্যালিসাইলিক অ্যাসিডও। তবে তা আন্ডারআর্মের ইনগ্রোন হেয়ার এক্সফোলিয়েশনের জন্য বেশি কার্যকর। যাদের দেহের এই অংশে হাইপারপিগমেন্টেশনের সমস্যা আছে, তাদের জন্য নিয়াসিনামাইড যুক্ত ডিও ফর্মুলাগুলো বেস্ট। স্কিন ফ্রেন্ডলি, পিগমেন্টেশন রোধেও দারুণ। অ্যালুমিনিয়ামের মাত্রা শূন্যের কোঠায় থাকায় ডিও স্প্রেগুলো চটজলদি দুর্গন্ধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে কোনো ধরনের ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার না করেই।
এখন শুধু বুঝে-শুনে বেছে নেওয়ার পালা।
i অর্চনা সাহা
মডেল: সাবরিন আজাদ
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল