তনুরাগ I বৃন্তবৃত্তান্ত
সুস্থ, সুন্দর স্তনযুগলের অন্যতম পরিচায়ক নবজাতকের খাবার উৎস। বিস্ময়ের কম কিছু নয় দেহের এই অংশ। তাই বাড়তি যত্নটা প্রাপ্যই
নানান আকৃতি ও আকারের স্তন যে হয়, তা হয়তো সবারই জানা। কিন্তু নিপলের জন্য যে একই ব্যাপার খাটে, তা অজানা অনেকের। বোর্ড সার্টিফাইড ডার্মাটোলজিস্ট আর পেডিট্রেশিয়ানদের মতে, পৃথিবীজুড়ে প্রায় আটটি ভিন্ন ধরনের নিপলের দেখা মেলে। সব কটিই স্বাভাবিক। এমনকি একজনের দুটি ভিন্ন ধরনের নিপল থাকার ব্যাপারটাও একদম নরমাল। তাই প্রথমেই জেনে নেওয়া ভালো নিপলের নানান ধরন। এতে অহেতুক দুশ্চিন্তা থেকে রেহাই মিলবে।
প্রোট্রুডিং
একদম স্বাভাবিক নিপল, যার সঙ্গে কমবেশি সবাই পরিচিত। সাধারণত স্তনের অ্যারিয়োলার (স্তনের মাঝ বরাবর, নিপলকে ঘিরে থাকা সার্কুলার পিগমেন্টেড এরিয়া) সারফেস থেকে কয়েক মিলিমিটার উঁচু হয়ে থাকে। আউটওয়ার্ডভাবে পয়েন্টেড থাকে। ঠান্ডায় অথবা উজ্জীবিত হলে এ ধরনের নিপল শক্ত হয়ে যায়। হয়ে ওঠে আরও দৃশ্যমান।
ফ্ল্যাট
স্তনের অ্যারিয়োলা লেভেলের সঙ্গে ফ্ল্যাট হয়ে মিশে থাকে এ ধরনের নিপল। তবে প্রোট্রুডিংয়ের মতোই ঠান্ডা অথবা উজ্জীবিত হলে তুলনামূলকভাবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
পাফি
পুরো অ্যারিয়োলা ও নিপল এরিয়া একটি চোখা অংশের মতো দেখায় স্তনের ওপর।
ইনভার্টেড
সাধারণত নিপল আউটওয়ার্ডে পয়েন্ট করে থাকলেও এই ধরন ঠিক তার উল্টো; বরং স্তনের মাঝে ইনওয়ার্ড হয়ে থাকে অর্থাৎ ভেতরের দিকে ঢুকে থাকে। আঙুল দিয়ে ধরে বের করা গেলেও মাঝেমধ্যে এই অংশের পেশিগুলো অনেক শক্ত থাকায় তা সম্ভব হয় না।
ইউনিল্যাটারাল ইনভার্টেড
এ ধরনের সাধারণত একই নারীর একটি নিপল আউটওয়ার্ড আর অন্যটি ইনভার্টেড হয়ে থাকে। প্রথম থেকেই নিপলের এমন অবস্থা পুরোপুরি স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু দুটি একই ধরনের নিপল হঠাৎ করে যদি পাল্টে ইউনিল্যাটারাল হয়ে ওঠে, দেরি না করে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া মঙ্গল।
বাম্পি
নিপলের চারপাশে আবৃত অ্যারিয়োলা অংশ বাম্পি হওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। এই বাম্পগুলো পরিচিত মন্টগোম্যারি গ্ল্যান্ড হিসেবে। মাঝেমধ্যে এগুলোকে হোয়াইডহেডের মতো দেখায়। অনেক সময় চাপলে এগুলো থেকে মৃতকোষও বের হয়ে আসে। কিন্তু সেই চেষ্টা না করাই ভালো।
হেয়ারি
স্তনের অ্যারিয়োলা অংশে ছাড়া কালো চুল গজানো খুব স্বাভাবিক ঘটনা। এগুলোতে পাতলা বা ঘন—দুই ধরনেরই ময়শ্চারাইজিং লোশন মেখে নিতে হবে। তবে যাদের নিপল বেশি শুষ্ক এবং ফেটে যাওয়ার প্রবণতা আছে, তাদের জন্য ভ্যাসলিন অথবা ল্যানোলিস ভালো অপশন। এমনকি নারকেল কিংবা অলিভ অয়েলেও মিলবে স্বস্তি।
এ ছাড়া বাসায় বসে প্রাকৃতিক উপায়ে নিপলের সৌন্দর্য বাড়ানোর সহজ উপায় রয়েছে। সেগুলোও ট্রাই করে দেখা যেতে পারে।
আমন্ড আর দুধের মিশ্রণ ব্যবহার করা যেতে পারে নিপলে। রাতে দুধে ভিজিয়ে রাখতে হবে কয়েকটি আমন্ড। সকালে আমন্ড বেটে পেস্টের মতো তৈরি করে মাখতে হবে নিপলে। ঘণ্টাখানেক পর ধুয়ে নিলেই চলবে। নিপল থাকবে ময়শ্চারাইজড, মসৃণ।
লেবুর রস আর মধু পরিমাণমতো নিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে মেখে রাখতে হবে নিপলে। আধঘণ্টা পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়া যেতে পারে। খুব বেশি অস্বস্তি হলে টুইজার দিয়ে প্লাক করে নিলেও ক্ষতি নেই। তবে সাবধান, এই অংশের ত্বক খুব স্পর্শকাতর হয়ে থাকে।
সুপারনিউমেরারি
অনেকের দেহে দুটির বদলে তিনটি নিপলের উপস্থিতি দেখা যায়। সাধারণত নির্দোষ হয়ে থাকে এই বাড়তি নিপল। অনেক সময় ফ্ল্যাট মোলের মতো দেখায়। আবার অনেক সময় দেখায় ফুল ফর্ম বাম্পের মতো।
যথার্থ যত্ন
নিপল যেমনই হোক, তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার। তাই গোসলের সময় ভালো করে নিপল পরিষ্কার করে নেওয়া জরুরি। তবে আলাদা করে সাবান বা শ্যাম্পুর প্রয়োজন নেই এ ক্ষেত্রে। শুধু পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিলেই চলবে। পাতলা কাপড় দিয়ে আলতো করে ঘষেও নেওয়া যেতে পারে। এতে করে জমে থাকা ময়লা দূর হবে। তারপর আপওয়ার্ড সুইপিং দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। লেবুর অ্যাসিডিক প্রোপার্টি অ্যারিয়োলার অংশ এক্সফোলিয়েট করে সেই অংশের ত্বককে রাখে উজ্জ্বল। আর মধু রাখে ময়শ্চারাইজড।
কমলার রস মেখে রাখা যেতে পারে নিপলে। এতে থাকা ভিটামিন সি লাইটেনিং প্রোপার্টি হিসেবে দারুণ। ডার্ক নিপলকে করে তোলে উজ্জ্বল। কমলার রস করে তা নিপলে মেখে রাখতে হবে আধঘণ্টা। তারপর পাতলা পরিচ্ছন্ন কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
ব্রেস্টফিডিংয়ে বেসিক কেয়ার
এ সময় নিপল আকারে বাড়ে। সেই সঙ্গে বাড়ে এর স্পর্শকাতরতাও। শিশুদের দিনে বেশ কয়েকবার বুকের দুধ খাওয়ানো হয় বলে বাড়তি চাপে নিপলে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। দেখা দিতে পারে শুষ্কতা। অনেক সময় ফেটে ক্ষতও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে শিশুর খাওয়ার পজিশনিংয়ে নজর দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে মেনে চলতে হবে সাধারণ কিছু নিয়ম। নিপল শুধু পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। কারণ, সাবানের সংস্পর্শে এই অংশের ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাতে দেখা দিতে পারে শুষ্কতা আর অস্বস্তি। স্বাভাবিক বাতাসে অথবা টাওয়েল দিয়ে আলতো চেপে শুকিয়ে নিতে হবে নিপল। খুব বেশি ঘষাঘষিতে এই অংশের ত্বক শক্ত হয়ে যেতে পারে। ব্রেস্টফিড করার আগে নিপল পরিষ্কারের প্রয়োজন নেই। কারণ, এতে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া শিশুর গাট মাইক্রোবায়ম ডেভেলপে সহায়তা করে। ফ্রেশ ব্রেস্ট মিল্ক নিপলের ক্ষত সারাইয়ে জাদুকরি। তাই শিশুকে খাওয়ানোর আগে এবং পরে কয়েক ফোঁটা ব্রেস্ট মিল্ক নিপলে মাসাজ করে নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া নিপল কেয়ার প্রডাক্ট ব্যবহার করা যায় এ সময়। সংগ্রহে থাকা চাই নিপল ক্রিম। আলট্রা পিওর ল্যানোলিনে তৈরি। এগুলো শিশুর জন্যও নিরাপদ। এর ব্যবহারে নিপল ময়শ্চারাইজড থাকবে। হাইড্রোজেল প্যাডের ব্যবহারে মিলবে স্বস্তি। ব্যবহার করা যেতে পারে ব্রেস্ট শেল, নার্সিং ব্রা আর নিপল শিল্ডও। তবে নিয়ম মেনে।
অর্চনা সাহা
ছবি: সংগ্রহ