skip to Main Content

সেলুলয়েড I গাবে

রচনা, পরিচালনা ও সম্পাদনা: মোহসেন মাখমালবাফ
অভিনয়: সাগায়েহ জোদাত, হোসেইন মোহারামি, রোগেই মোহারামি, আব্বাস সায়াহ
সময়ব্যাপ্তি: ৭৯ মিনিট
ভাষা: ফার্সি
দেশ: ইরান
মুক্তি: ১৯৯৬

নির্জন প্রকৃতি। কোলাহল থেকে দূরে, বহুদূরে। প্রবহমান জলধারার পাশে এক বয়োবৃদ্ধ দম্পতি। সঙ্গে পানির পাত্র, রান্নার সরঞ্জাম আর একটা গাবে বা গালিচা। একজন গালিচা পানিতে ধুয়ে নিচ্ছে, অন্যজন মাটির চুলায় বসাচ্ছে রান্না। আর চলছে এই বুড়ো দম্পতির খুনসুটি ভরা কথোপকথন। গালিচার বুকে আঁকা এক তরুণীর ছবি। দূরে ছোট্ট বিন্দুর মতো এক অশ্বারোহীও আঁকা। সেই তরুণী সহসাই ছবি থেকে বাস্তবে আবির্ভূত হয়। সঙ্গ দেয় ওই বুড়ো যুগলের কথোপকথনে। কী নাম এই তরুণীর? গাবে! বুড়ো-বুড়ির প্রশ্নে নিজ জীবনের গল্প শোনাতে থাকে সে।
এ এক চিরন্তন গল্প। যাযাবর গোত্রের সন্তান সে। বাবা সেই গোত্রের প্রধান। রাগী ও শৃঙ্খলাপ্রেমী। মা সন্তান-সংসার নিয়ে ব্যস্ত। দাদি সদ্য মৃত। চাচা বোহিমিয়ান; বহুদিন পরপর কোত্থেকে যেন এসে আবার যোগ দেয় গোত্রের সঙ্গে। ছোট বেশ কয়েকটি ভাই-বোন রয়েছে গাবের। এই গোত্রের রয়েছে কিছু গবাদিপশু। আদিগন্ত প্রত্যন্ত প্রান্তরে ঘুরে-ঘুরে জীবন কাটে তাদের। কোথাও থিতু হওয়ার নেই রেওয়াজ। অবসরে দল বেঁধে বোনে গালিচা।
তাদের সেই প্রায়-নিস্তরঙ্গ ও নির্ঝঞ্ঝাট জীবনে আচমকাই আততায়ীর মতো হাজির হয় এক অশ্বারোহী। দূরত্ব বজায় রেখে এই গোত্রের কাফেলাকে করে অনুসরণ। আর ক্ষণে ক্ষণে ডেকে ওঠে নেকড়ের স্বরে। তাকে স্পষ্ট দেখা যায় না। একটা অবয়ব টের পাওয়া যায় ঝাপসা। কালো পোশাকের অশ্বারোহী। তাতে একধরনের চাপা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ওই গোত্রের জীবনযাপনে। তবু জীবন বয়ে চলে। আর থাকে চলমান গৃহহীন এই লোকগুলোর চির নিরুদ্দেশ বিচরণ।
একসময় আমরা বুঝতে পারি, ওই অশ্বারোহী বস্তুত এক প্রেমিক। পড়েছে গাবের প্রেমে। নেকড়ের মতো ডাক তুলে সে আসলে গাবেকেই আহ্বান জানায়, গোত্র ছেড়ে তার সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার। পালায়ও একসময়। কিন্তু তখনই ভেসে আসে গুলির শব্দ। গুলি ছুড়েছে গোত্রপ্রধান। গোত্রের সম্মান রক্ষায়। নতুন প্রজন্মের কাছে উদাহরণ তৈরি করার জন্য, যেন কেউ নিয়মভাঙার সাহস না দেখায়। গুলির শব্দ তো শুনি, গাবের রক্তমাখা ওড়নাও নিয়ে আসে তার বাবা কাফেলার কাছে; কিন্তু আসলেই কি প্রাণ গেছে গাবে ও অশ্বারোহীর?
ওই গোত্র, ওই কাফেলা কোথায় মিলিয়ে গেছে, জানা হয় না আমাদের। তবে বুঝতে পারি, এই যে গালিচা ধুতে এসে খুনসুটিতে মেতে উঠেছে এই বয়োবৃদ্ধ দম্পতি, এই বৃদ্ধাই সেই গাবে, এই বৃদ্ধই সেই অশ্বারোহী। গালিচায় আঁকা ছবি অর্থাৎ সুদূর অতীত থেকে উঠে এসে, জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছানো বয়সের নিজ সত্তা ও প্রেমিকের উদ্দেশে, এভাবেই স্মৃতিচারণা করেছে গাবে। স্মৃতিচারণা করেছে আমাদের, অর্থাৎ দর্শকদের শোনানোর জন্যও।
চিরায়ত পারস্য কবিতার মতো মৃদু অথচ অন্তস্তলস্পর্শী দোলা দিয়ে এভাবেই ‘গাবে’ সিনেমার চিত্রমালা বুনেছেন ইরানি মাস্টার ফিল্মমেকার মোহসেন মাখমালবাফ। এর দৃশ্যে দৃশ্যে ছড়িয়ে রয়েছে জনবিরল প্রান্তরে ঝিরিঝিরি বয়ে চলা জলধারার মতোই একেকটি প্রাণশীতল করা কাব্যিক ইমেজ।
 আরিফুল ইসলাম

কুইজ
১। গাবের প্রেমিক কোন প্রাণীর মতো শব্দ করে সংকেত পাঠায়?
[ক] ঘোড়া
[খ] নেকড়ে
[গ] বাঘ
[ঘ] হায়েনা

২। গাবের পরিবার কোথায় থিতু হয়?
[ক] শহরে
[খ] গঞ্জে
[গ] পার্বত্যাঞ্চলে
[ঘ] কোথাও নয়

৩। ওই যাযাবর গোত্রের প্রধান কে?
[ক] গাবে
[খ] গাবের চাচা
[গ] অশ্বারোহী
[ঘ] গাবের বাবা

গত পর্বের বিজয়ী

১. নাদিয়া, বনানী, ঢাকা,
২. সুইটি আক্তার, মালিবাগ, ঢাকা,
৩. ফারহানা ইয়াসমিন, চকবাজার, চট্টগ্রাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top