ত্বকতত্ত্ব I ড্রাই থেকে ডিউই
মেকআপের ম্যাজিকে! সম্ভব বছরের যেকোনো সময়ে। সহজ ধাপে সেসব কৌশলের সাজেশন
সঠিক স্কিনকেয়ার
শুষ্ক ত্বকে মেকআপের আগে প্রয়োজন প্রস্তুতি। আর সেটা সারতে হবে সঠিক সব সৌন্দর্যপণ্য দিয়ে। তবেই মিলবে কাক্সিক্ষত ফল। শুরুতে ঈষদুষ্ণ পানিতে মুখত্বক ভিজিয়ে নেওয়া চাই। তারপর ব্যবহার করতে হবে এমন ক্লিনজার, যা কোমল এক্সফোলিয়েশনের ফল দেবে। বিশেষ এসব এক্সফোলিয়েটিং ওয়াশের ব্যবহার ত্বকের ওপর জমে থাকা মৃতকোষ দূর করবে। ত্বককে করে তুলবে মসৃণ। ময়শ্চারাইজার ও মেকআপের জন্য উপযুক্ত করে তুলবে। মুখ ধোয়ার পর পালা ময়শ্চারাইজারের। এ ক্ষেত্রে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হলে ফেশিয়াল অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। হাইড্রেটিং ফর্মুলার। আর তেলে অস্বস্তি হলে পছন্দের অন্য যেকোনো ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করলেই চলবে। কিন্তু তা যেন হয় শুষ্ক ত্বকের উপযোগী। তবে যেটাই ব্যবহার করা হোক না কেন, তা ত্বকে শুষে নেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। ব্যবহারের পর কয়েক মিনিট অপেক্ষা করলেই চলবে এ ক্ষেত্রে। এতে ত্বকে সুন্দর করে মিশে যাবে মেকআপ। বসবেও ভালোভাবে।
ফর্মুলায় নজর
সংগ্রহে থাকা মেকআপ পণ্যগুলো পুনরায় যাচাই-বাছাই করে দেখা প্রয়োজন। প্রতিটির ফর্মুলা যথেষ্ট হাইড্রেটিং এবং শুষ্ক ত্বকের জন্য জুতসই কি না, তা এই ফর্মুলেশনের ওপর নির্ভর করবে। প্রথমেই চেক করে নেওয়া চাই ফাউন্ডেশন আর কনসিলার। স্কিনকেয়ার সারার পর এ দুটোই প্রথমে মাখা হয় ত্বকে। এ ক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হবে, এগুলো শুষ্ক ত্বকের উপযোগী কি না। এসব মেকআপ প্রডাক্টে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, প্যারাবেন আর অ্যালকোহলের মতো উপাদান যেন না থাকে, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কারণ, এগুলোর কোনোটিই ত্বকে আর্দ্রতা জোগায় না; উল্টো আরও শুষ্ক করে তোলে। তাই শুষ্ক ত্বকের জন্য বেছে নেওয়া চাই হাইড্রেটিং, ক্রিমি ফর্মুলার ফাউন্ডেশন ও কনসিলার। এগুলোতে উপস্থিত উপাদানের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে হবে হায়ালুরনিক অ্যাসিড এবং ন্যাচারাল অয়েলের দিকে; যা শুষ্ক ত্বকে সৌন্দর্য তো বাড়াবেই, সঙ্গে জোগাবে জরুরি আর্দ্রতা। এগুলো ব্যবহারের সময়ও মেনে চলা চাই নির্দিষ্ট কৌশল। ফোঁটায় ফোঁটায় ফাউন্ডেশন দিয়ে নিতে হবে চেহারায়। তারপর ব্রাশের সাহায্যে আলতো করে, বাফ করে নিতে হবে। এর ওপর দিয়ে নিতে হবে কনসিলার। দাগছোপযুক্ত জায়গাগুলোতে।
জরুরি ধারাবাহিকতায়
কনসিলার আর ফাউন্ডেশনের পালা শেষে মেখে নিতে হবে ব্রোঞ্জার আর ব্লাশ। অবশ্য ব্রোঞ্জার প্রতিদিন প্রয়োজন হয় না। তবে চেহারায় যাদের উষ্ণতায় স্বাস্থ্যোজ্জ্বল আভা পছন্দ, তাদের প্রতিদিনকার মেকআপ তালিকায় থাকতেই পারে পণ্যটি। শুষ্ক ত্বকের জন্য কিন্তু ক্রিমি ফর্মুলার ব্রোঞ্জার আর ব্লাশন বেস্ট। এগুলো শুষ্ক ত্বকে সহজে মেখে নেওয়া যায়। পাউডারি প্রডাক্টের মতো কোনো ধরনের ড্রাই প্যাচ তৈরি করে না। তাই ত্বকে উষ্ণতা যোগে এবং স্ক্যাল্পটেড দেখাতে প্রথমে ব্রাশের সাহায্যে ক্রিম ব্রোঞ্জার মেখে নিতে হবে কপালে, গালের হাড়ে আর চোয়ালে। তারপর সামান্য হেসে গালের ফোলা জায়গায় চেপে চেপে মেখে নিতে হবে ক্রিম ব্লাশ। ব্রাশ ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে আঙুল দিয়েও সেরে নেওয়া যাবে কাজ। কাক্সিক্ষত পিগমেন্ট পাওয়া অব্দি মাখা যাবে ক্রিম ব্লাশন; কারণ, এ ধরনের ফর্মুলায় লেয়ারিং করে নেওয়া যায় অনায়াসে। তৈরি করা যায় হাইড্রেটেড কমপ্লেক্সন।
আই মেকআপে অপশন
ত্বক শুষ্ক হলেও আইলিডে সাধারণত এ সমস্যা দেখা যায় না বললেই চলে। তাই অনায়াসে পছন্দের পাউডার আইশ্যাডো ব্যবহার করা যায়। আইলাইনার আর মাসকারা ব্যবহারেও বাধা নেই। তবে আইলিডেও যদি শুষ্কতার বাড়াবাড়ি থাকে, সে ক্ষেত্রে আর্দ্রতার জোগান দিতে হবে এই অংশেও। ক্রিম বেসড আইশ্যাডো এ ক্ষেত্রে সেরা অপশন। মাখা যেতে পারে টিন্টেড ফর্মুলারগুলোও। এতে আইলুকও ডিউই ফিনিশ দিতে সহায়ক হবে চেহারায়।
শিশিরসিক্ত, চিটচিটে নয়
হালকা হাইলাইটারের টাচ শুষ্ক ত্বককে করে তুলবে শিশিরসিক্ত। তবে সাবধান! অতিরিক্ত মেখে অতি উজ্জ্বল চেহারা তৈরি কিন্তু মোটেই উদ্দেশ্য নয়। তাতে চেহারায় চিটচিটে ভাব চলে আসবে। হাইলাইটার শুধু মাখতে হবে গালের হাড়ে, ব্রাও বোনে আর কিউপিডস বোতে। সামান্য নিয়ে ট্যাপ মোশনে মাখতে হবে ক্রিম অথবা লিকুইড হাইলাইটার। ব্লেন্ড করার জন্য ফ্লাফি ব্রাশের পাশাপাশি আঙুলও ব্যবহার করা যেতে পারে অনায়াসে। সফট শিমারি শেডের হাইলাইটার শুষ্ক ত্বকের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
পাউডারে প্রস্তুতি
ফাইনাল টাচের জন্য শুষ্ক ত্বকেও প্রয়োজন পড়বে সেটিং পাউডারের। তবে তা পুরো মুখে না মাখলেও চলবে; বরং নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় সামান্য পাউডার ব্যবহারই যথেষ্ট মেকআপ সেট আর ম্যাটিফায়িংয়ের জন্য। ভাঁজ পড়া রোধে চোখের নিচে কনসিলার সেট করার পাশাপাশি নাকের দুই পাশের তেলে অংশ পাউডার দিয়ে সেট করা যেতে পারে। এতে পুরো চেহারা পাউডারি হয়ে উঠবে না, বরং হাইড্রেটেড ডিউই লুক বজায় থাকবে।
স্প্রে অ্যান্ড সেট
শুষ্ক ত্বকে ফাইনাল হাইড্রেশন জোগাতে ব্যবহার করা যেতে পারে নিয়াসিনামাইডযুক্ত সেটিং স্প্রে। যার ব্যবহারে ত্বক দেখাবে স্বাভাবিক ও সুন্দর; মেকআপ টিকেও থাকবে দীর্ঘ সময়। আর বাড়তি আর্দ্রতার ব্যবস্থা তো হচ্ছেই।
বিউটি ডেস্ক
মডেল: আনিকা মিম
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল