ফরহিম I হিজ হেয়ার ব্রাশ
চুল নিয়ে কত কেচ্ছা-কাহিনি। নানা তন্ত্র-মন্ত্র-যন্ত্র! তবু সেই যে এক চিরুনি এসেছে ঘরে, প্রয়োজন ফুরায়নি এতটুকুও!
হেয়ার ফলিকলের সিবাস গ্ল্যান্ডস প্রাকৃতিক তেল উৎপাদন করে। ফলে মাথার তালু থাকে লুব্রিকেটেড। সঠিকভাবে চুল আঁচড়ে নিলে প্রাকৃতিক এই তেল ছড়িয়ে পড়ে পুরো চুলে। চুলের স্বাস্থ্য ভালো হয়। ঝলমলে চুল একেই বলে। চুলে চিরুনি চালালে সেটাও মিনি স্ক্যাল্প মাসাজ হিসেবে কাজ করে। এতে মাথার তালুজুড়ে রক্তচলাচল বাড়ে। মূল কয়েকটি বিষয়ে লক্ষ রাখলে হেয়ার ব্রাশের উপযুক্ত ধরনটি বেছে নেওয়া যায়।
চুলের ধরন
চুলের দৈর্ঘ্য
হেয়ার ব্রাশের ধরন
ব্রিস্টল টাইপ
হেয়ার প্রডাক্টস
শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার
চুল ভেজা নাকি শুকনো অবস্থায় আঁচড়ানো হবে।
চুলের ওপরের অংশ ফলিকল এবং নিচের অংশ শাফট নামে পরিচিত। একটির সঙ্গে অন্য চুলের পার্থক্য ডায়ামিটারে পরিমাপ সম্ভব। কিন্তু এই সামান্য পার্থক্য বিশাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। আবার ফলিকলেও রয়েছে আকারের পার্থক্য। ফলিকলের আকার সরাসরি চুলের ঘনত্বকে প্রভাবিত করে। এসব কঠিন বিষয়কে আপন করে নিয়েছে চুল, তা আপাতদৃষ্টে! জাস্ট শুধু আঁচড়ে নেওয়া মনে হলেও আদতে বিষয়টি এত সহজ নয়।
শর্ট লেংথ হেয়ার মূলত শূন্য দশমিক ১২৫ থেকে ২ ইঞ্চির হয়। মিডিয়াম হেয়ারের ক্ষেত্রে এই আকার বেড়ে দাঁড়ায় ২ থেকে ৬ ইঞ্চি। এর বেশি হলেই ছেলেদের ক্ষেত্রে লং হেয়ার বলে ধরে নেওয়ার কথা বলা আছে চুলের আকারের হিসাব-নিকাশের ব্যাকরণে।
কার্ল চুল বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। কার্লগুলো বড় হলে ওভাল, রাউন্ড এবং মিলিটারি শেপের ব্রাশ সাহায্য করবে। চুল লম্বা রাখতে পছন্দ করলে ওভাল, রাউন্ড এবং হেয়ার পিক আপনার অপশন। ঢেউ খেলানো চুলের গল্পে ছোট, বড় যে দলেই আপনার চুল থাক না কেন, বেছে নিতে পারবেন ডেনম্যান, রেক্টেঙ্গল, রাউন্ড, ভেন্টেড ব্রাশ। স্ট্রেইট চুলে যদি থাকে দারুণ ভলিউম, চুলের কাট যদি হয় শর্ট, আপনার জন্য অপেক্ষায় ডেনম্যান, রেক্টেঙ্গল, ভেন্টেড ব্রাশ। আর লং হলে এগুলোর সঙ্গে সঙ্গে ওভাল, রাউন্ড শেপও চুলে সঠিকভাবে কাজ করবে। বাইরে গেলে অথবা তাড়াহুড়ো থাকলে এ ধরনের চুলে ফোল্ডেবল চিরুনিও ব্যবহার করতে পারেন।
স্ট্রেইট কিন্তু ভলিউম কম—এমনও হতে পারে চুলের ধরন। এমনটা হলে মনোযোগ দিন চুলের কাটে। শর্ট হেয়ার যদি হয়, তাহলে ডেনম্যান, রেক্টেঙ্গল, ভেন্টেড, মিলিটারি ডিজাইন সই। আর যদি চুল হয় লম্বা, তাহলে এগুলোর সঙ্গে সঙ্গে প্যাডেল, ওভালও আপনার কাজে লাগবে।
চুলে যেহেতু চলবে চিরুনি, তাই তাকাতে হবে সেদিকেও। দেখতে হবে ব্রিস্টল টাইপ, ব্রাশের শেইপ এবং হ্যান্ডেল। ব্রাশের আকারের ওপরে ব্রিস্টল ও হ্যান্ডেল—দুই-ই খানিকটা নির্ভর করে। প্যাডেল ব্রাশের একটি রূপ ওভাল হেয়ার ব্রাশ। এটি আপনার স্ক্যাল্প যেমন মাসাজ করবে, তেমনি সব চুলের মাঝে প্রাকৃতিক হেয়ার অয়েল ছড়াতে কাজে দেবে। স্কয়ার হেয়ার ব্রাশেরও আদি ঠিকানা প্যাডেল ব্রাশে। এটির ব্যবহারে চুলের ফ্রিজিনেস কমবে। জট ছেড়ে যাবে সহজে। অন্যদিকে, রেক্টেঙ্গল হেয়ার ব্রাশের প্রকারভেদ ডেনম্যান আর ভেন্টেড। এই ব্রাশগুলোর ব্যবহারে চুলে ভলিউম তৈরি হয়।
হেয়ার ব্রিস্টল নানা রকম হতে পারে। নাইলনে তৈরি ব্রিস্টলগুলোতে টিপ হিসেবে থাকে রাউন্ড প্লাস্টিক। মাথার ত্বকে রক্তচলাচল বাড়ায় এটি। খুশকি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। উডেন ব্রিস্টলের হেয়ার ব্রাশ মাথার সব চুলে প্রাকৃতিক তেল ছড়িয়ে যেতে সাহায্য করে। এ ধরনের ব্রিস্টল অনেক দিন ব্যবহার উপযোগী থাকে। মাসাজিং ফিঙ্গার হিসেবেও কাজ করে এগুলো। ব্লাড সার্কুলেশনেও সাহায্য করে।
চুল কখন আঁচড়ে নেবেন, সেটি কিন্তু ভাবার বিষয়। ভেজা আর শুকনো—দুই সময়েই চুল পারিপাট্যে চিরুনি বোলাতে পারেন। চুল যখন ভেজা থাকে, তখন তা ড্যাম্প হয়। চুল যদি কার্ল অর্থাৎ কোঁকড়া হয়, তাহলে স্ট্রেইট ফ্রম শাওয়ার কম্ব করে নেওয়া যায়। এতে চুল ফোলার লুক পাবে।
স্ট্রেইট চুলের জন্য ড্রাই কম্ব বেশি কাজের। চুলে যদি নন-শাইনি ফিনিশ চান, তাহলে ড্রাই ব্রাশেই আস্থা রাখতে পারেন। অন্যদিকে ড্যামেজ চুলে যেকোনো স্টাইল করতে চাইলে ড্রাই অবস্থায় করা ভালো। ভেজা চুল তুলনামূলক দুর্বল হয়। এমন অবস্থায় ভেজা চুলে হেয়ার ব্রাশের স্পর্শ একটু বেশি হয়ে গেলে উঠে আসতে পারে গোড়া থেকে। চুলের ওপরে এমন আঘাত তো আশা করে না কেউ, তাই ধরন বুঝে চালানো চাই চিরুনি।
সাদিয়া আফরিন আইভী
মডেল: পলাশ
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: কৌশিক ইকবাল