সঙ্গানুষঙ্গ I কমিক ফ্যাশন
অ্যানিমে বা কার্টুন চরিত্র থেকে আগমন। রাতারাতি জয় করে নিয়েছে ফ্যাশনিস্তাদের মন। দাপট ছড়াচ্ছে ফ্যাশন বিশ্বে
আপনার কি কখনো মনে হয়, ইশ্! আমার যদি কোনো সুপার পাওয়ার থাকত! নিমেষে দূর করে দিতাম সব ঝামেলা! অথবা ধরুন, মনে হচ্ছে কিছুক্ষণের জন্য হলেও যদি হারিয়ে যেতে পারতাম কোথাও! এমনই এক বিষয় এসেছে ফ্যাশনে। যা আপনাকে নিয়ে যাবে কল্পনার জগতে। সাময়িক সময়ের জন্য হলেও থাকবেন ফ্যান্টাসিল্যান্ডে। ফ্যাশন-দুনিয়ার এই নতুন সংযুক্তির নাম দেওয়া হয়েছে কমিক ফ্যাশন। কার্টুন চরিত্র, কস্টিউম—এসব থেকেই এই ট্রেন্ডের আগমন।
কাপড়ে, অ্যাকসেসরিজে, জুতায় কিংবা ব্যাগে কার্টুনের কাল্পনিক, অতি প্রাকৃতিক নকশার বিন্যাস জনপ্রিয়তায় রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে গতানুগতিক ফ্যাশন ট্রেন্ডকে। পোশাকে নির্ভয়ে রঙের ব্যবহার, ডিজাইনে কল্পনার সবটুকু ব্যবহার অ্যানিমে ফ্যাশনকে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। বহির্বিশ্বে তো আছেই, আমাদের দেশেও দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কার্টুন কিংবা অ্যানিমেশন থেকে প্রভাবিত ফ্যাশন ট্রেন্ড। সম্প্রতি নেটফ্লিক্সের তুমুল জনপ্রিয় অ্যানিমেশন সিরিজ ‘লাভ, ডেথ, রোবট’-এর সাইরেন চরিত্রটি এতই জনপ্রিয়তা পেয়েছে, সব ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে আমরা এর রিমেক দেখেছি অসংখ্যবার।
সবচেয়ে বেশি দেখেছি শিশু-কিশোরদের জন্য তৈরি পোশাক ও অ্যাকসেসরিজের ক্ষেত্রে। ছোটবেলায় অনেকেই বারবি ব্যাগ কিংবা মিকি মাউস পেনসিল বক্সের জন্য আবদার করেছি। এখন মিকি মাউস থেকে ডোরেমন কিংবা বেন টেন কার্টুনের আদলে বানানো কী নেই! ব্যাগ থেকে জুতা, এমনকি পেনসিলেও ডোরেমন। শিশুদের পোশাকে পপাই, টম অ্যান্ড জেরি কিংবা মিকি মাউস আশির দশক থেকেই দেখে আসছি। তখন বেশির ভাগ পোশাকে কেবল প্রিন্ট থাকলে এখন কাটিং, প্যাটার্ন, ডিজাইন এবং স্টাইলিংয়ে এসেছে নতুনত্ব। ইলাস্ট্রেশন, গ্রাফিকস এবং থ্রিডির ব্যবহারে পোশাকে যোগ হয়েছে ভিন্নমাত্রা। তবে তরুণদের কাছে মূলত এ ধারার সূত্রপাত হয়েছে জাপানি অ্যানিমেশনের হাত ধরে। জিবলি স্টুডিও কিংবা জাপানিজ মাংগা কমিকের ফ্যান বেইজ এখন পুরো বিশ্বে।
অ্যানিমেপ্রেমীদের জন্য আলাদা ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখানে প্রতিটি চরিত্রের ফ্যামিলি ট্রি পর্যন্ত দেওয়া থাকে! চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিখ্যাত ব্র্যান্ড জিমি চু লঞ্চ করেছে তাদের ক্যাপসুল কালেকশন, আইকনিক জাপানিজ অ্যানিমেশন সেইলর মুনের ওপর ভিত্তি করে। জাঁকালো পিংক বুট থেকে ক্লাচ ব্যাগ—সবই থাকছে অ্যানিমের আদলে। অর্থাৎ প্রিন্ট কিংবা প্যাটার্ন—সবই সেইলর মুনের আদলে তৈরি করা হয়েছে। একই দিনে ব্রুকলিন বেইজড আর্ট কালেকশন হাউস এমএসসিএফ উন্মুক্ত করেছে তাদের নতুন কালেকশন ‘বিগ রেড বুট’, যা জাপানিজ মাংগা অ্যানিমেশনকে রিপ্রেজেন্ট করে। তবে সত্যি বলতে অ্যানিমেশনের মধ্যে ডিজাইনার ও ফ্যাশনিস্তাদের ফ্যান্টাসাইজ হওয়াই মূলত অ্যানিমে বা কার্টুনপ্রীতি বাড়িয়েছে।
সংগীতের সবচেয়ে বড় আসর গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডস ২০২৩-এ নিমন্ত্রিত অতিথিদের পোশাকের দিকে খেয়াল করলে তাদের কমিক বা অ্যানিমেপ্রীতির ধারণা পাওয়া যাবে। হ্যারি স্টাইল থেকে শুরু করে শানিয়া টোয়ান পর্যন্ত, অনেক তারকার পরনে ছিল কমিক ইন্সপায়ারড ড্রেস। স্প্যানিশ ফ্যাশন ব্র্যান্ড লুই যখন জানুয়ারিতে জাপানিজ জিবলি স্টুডিওর বিখ্যাত অ্যানিমে ‘হাউলস মুভিং ক্যাসেল’-এর অনুকরণে তাদের লেটেস্ট কালেকশন লঞ্চ করে; রাতারাতি তা বিক্রি হয়ে যায়। মসচিনো তাদের ২০২৩ স্প্রিং কালেকশন অ্যানিমেশন বেইজড রেখেছে। সেলিব্রিটি থেকে শুরু করে বিখ্যাত মডেলদের যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়া পেইজগুলো ঘুরে দেখলে কার্টুন ক্যারেক্টারের প্রভাব বুঝতে সুবিধা হবে ফ্যাশনিস্তাদের জন্য।
নব্বইয়ের সময় থেকে হ্যালোইন উদযাপনে অ্যানিমে বা কার্টুন বেইজড পোশাকের আধিপত্য দেখেছি আমরা। প্যানডেমিক চলাকালীন মানুষের জীবনযাত্রা একেবারেই একঘেয়ে হয়ে উঠেছিল। পৃথিবী সেই ধাক্কা সামলে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই ম্যাক্সিমালিজমের দিকে খানিকটা ঝুঁকে পড়েছে। গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে সবকিছুতেই মানুষ নতুনত্ব খুঁজেছেন; খুঁজেছেন আনন্দ আর উচ্ছ্বাস। ফ্যাশনেও সেই জোয়ার লেগেছে। সেই ধারাবাহিকতায় কার্টুন বা অ্যানিমেশন এতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফ্যাশনে।
তার মানে ভবিষ্যৎ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে কমিক বা অ্যানিমে স্টাইল কি তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে? উত্তর হচ্ছে, কে জানে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ভবিষ্যৎ ফ্যাশন, যেখানে পরিবর্তন এবং নতুনত্বই এগিয়ে নিয়ে যায় এই জগৎকে! তবে ধারণা করা যাচ্ছে, অ্যানিমে বা কার্টুনের প্রভাব একটানা দীর্ঘস্থায়ী না হলেও অ্যানিমে ও কার্টুনপ্রেমীরা নস্টালজিয়া থেকে বারবার ফিরিয়ে আনবেন এ ট্রেন্ডকে।
নাঈমা তাসনিম
ছবি: ইন্টারনেট
মডেল: কেয়া পায়েল, ইলিয়াস ও কোকো
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: ক্লোদেন
ছবি: কৌশিক ইকবাল