skip to Main Content

কভারস্টোরি I ফো পা থেকে ফ্যাশন

ভুল কিংবা খেয়ালিপনা থেকে শুরু। প্রথমে বেশ হাসাহাসি। তারপর টার্ন নেয় ট্রেন্ডে। ফ্যাশন দুনিয়ায় ফলস স্টেপ ঘিরে ওঠে রব। বিস্তারিত সারাহ্ দীনার লেখায়

ফ্রেঞ্চ ভাষায় ‘ফো পা’। ইংরেজিতে ‘ফলস স্টেপ’। এই ফো পা যখন ফ্যাশন-দুনিয়ার অংশ হয়ে যায়, তাকে বলে ‘ফ্যাশন ফো পা’। তার মানে, ফ্যাশনে কোনো ফলস স্টেপ নেওয়া। ফ্যাশনের ক্ষেত্রে অনেক সময় নিয়মের বাইরে গিয়ে নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেন অনেকে। তাতে কখনো কখনো ভুল হয়। আর সেসব ঘটনা যে কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে যায়, তা কিন্তু নয়। কিছু মিশে যায় মনে, মগজে। পরে এই স্টাইলগুলো থেকে কেউ যদি প্রাণিত হন এবং আগ্রহ দেখান আরও অনেকজন, তখন সেই ভুলই পথ করে দেয় নতুন ধারার। নতুন ট্রেন্ড আসে ফ্যাশনবিশ্বে। এককথায় এগুলোকে বলা যেতে পারে ‘ফো পা থেকে ফ্যাশন ট্রেন্ড’।
লেয়ারিং উইদাউট আয়রন, দৃশ্যমান অন্তর্বাস কিংবা ইনারের সঙ্গে আউটফিট রঙের তারতম্য, ইল ফিটেড পোশাক, পোশাকে দাগ, আনপ্রফেশনাল লুক, ফ্যাব্রিকে ছিদ্র, হিলের কারণে হাঁটার ছন্দে বাধা, দুর্গন্ধযুক্ত মোজা—এসবের পরিচয় ফ্যাশন ফো পা হিসেবে। কিন্তু ফ্যাশন ইতিহাসের পুরোনো পাতায় চোখ রাখলে দেখতে পাব, গত শতকের সত্তর-আশির দশকের কিছু ফো পা সেই শতকেই পরিণত হয়েছিল ফ্যাশন ট্রেন্ডে। এখন তা রীতিমতো শিকড় গেড়ে জাঁকিয়ে বসেছে। বলা যায়, ভুলগুলো ফুটেছে ফুল হয়ে।
ফ্যানি প্যাকস
দেহের সঙ্গে ঝুলে থাকা ব্যাগ এগুলো। ইউনিসেক্স হিসেবে ফিরেছে ফ্যাশনবিশ্বে। এর কিন্তু কোনো গঠনগত ব্যাকরণ নেই। নকশায় তাই নানান রকম। রং আর অলংকরণেও বহুরূপী। কারও কাঁধে, কারও কোমরে কায়দা করে ঝুলে থাকে। এখনকার সময়ে বেশ কাজের ব্যাগ হিসেবে সমাদর পাচ্ছে ফ্যানি প্যাকস। অথচ বাজারে যখন প্রথম এসেছিল, তখন কিন্তু মোটেই সুন্দর করে একে গ্রহণ করেনি কেউ! হাসি-তামাশা আর ধুর ছাই—এ-ই জুটেছিল এমন ব্যাগের কপালে। ধারণা করা হতো, পোশাককে অনাকর্ষণীয় করার সব রকমের কায়দা জানে এই ব্যাগ। কনস্ট্রাকশন সাইট আর স্টলের হকাররাই ছিলেন এমন ব্যাগের মূল ক্রেতা। ফ্যানি প্যাকস নামটিতে আছে তাচ্ছিল্যের ছাপ। অর্থগত দিক দিয়ে তো যাচ্ছেতাই অবস্থা! একসময়ে ‘ধুর ছাই’ করা এই ব্যাগ ২০২০ সাল থেকে ফ্যাশন-সচেতনদের ভালোবাসা পাচ্ছে। অনেকেরই নিত্যদিনের গো আউট অ্যাটেয়ারে যোগ হয়েছে এটি। আর ভ্রমণপিয়াসীদের জন্য তো আশীর্বাদ হিসেবে পরিচিত। স্ট্রিট ওয়্যারের সঙ্গে এখন গো টু অ্যাকসেসরিজ। ক্রসবডি ব্যাগের প্রতি আগ্রহ তৈরিতে শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে এটি।
ওভার অ্যাকসেসরাইজিং
গয়নার আতিশয্য নিয়ে সচেতন ছিল ফ্যাশনবিশ্ব। জুয়েলারি গ্রামারের বাইরে সবকিছুতেই না বোধক উত্তর ছিল লম্বা সময় ধরে। পারফরমার মেদমইসেল গাব্রিয়েলকে একবার গত শতকের কিংবদন্তি ডিজাইনার কোকো শ্যানেল বলেছিলেন বাসা থেকে বের হওয়ার আগে আয়নার সামনে এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে একটি জুয়েলারি পিস খুলে রাখতে। এ থেকেই হয়তো বোঝা সম্ভব, গয়নাতে কেমন মিনিমালিজম ছিল সে সময়ে। এখনকার পরিবর্তন পুরোটাই উল্টো। একের অধিকে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে কয়েক বছরের ইতিহাস ঘাঁটলে। আর নিকট অতীতে তো জয়জয়কার। এখনো ধারাবাহিকতা চলছে। একটায় নয়, লেয়ারিংয়ে আগ্রহ; বিশেষ করে নেক জুয়েলারি, আঙুল আর ব্রেসলেটে দেখা যায় এই ধারা। গলায় লেয়ারিংয়ে একের পর এক চেইন, হাতে বেশ কয়েকটি চুড়ি, বালা, ব্রেসলেট, আঙুলে লাইন ধরে আংটি। আবার এই ট্রেন্ড অনেকের পায়েও দেখা যায়। অ্যাংকেলে থাকে একাধিক চেইন।
মোজা আর স্যান্ডেলের যুগলবন্দি
মোজা-জুতা। এই পেয়ার আপেই অভ্যস্ত ছিলাম আমরা। অনেকে মোজা বাদ দিয়ে জুতা পরলেও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ছিল হাজারো প্রশ্ন। অথচ এখন ফ্যাশন ট্রেন্ডে এসেছে খোলামেলা স্যান্ডেলের সঙ্গে মোজা পরে নেওয়ার চল। প্রথমে এসেছিল মেনস ফ্যাশনের হাত ধরে। ২০১৭ সালে লুই ভিতোঁর স্প্রিং সামার কালেকশনের রানওয়েতে প্রথম আলোচনায় আসে এমন জুটি। সেই থেকে নানাভাবে মিশে আছে ফ্যাশনে। এখন এটি রীতিমতো বিশ্বজুড়ে ট্রেন্ডি। অথচ একসময় এ ধরনের পেয়ার আপ কেউ করলে তার সমাদরের চেয়ে অনাদরের শঙ্কাই থাকত বেশি। এখন টিকটক তারকাদের ফুটওয়্যারে হামেশাই দেখা যাচ্ছে এ নতুন ধারা।
লো রাইজ ট্রাউজার
বটমে ট্রাউজার কোমরে আঁটসাঁট হওয়ার চল ছিল এত দিন। কিন্তু, ব্রিটনি স্পিয়ার্স আর ক্রিস্টিনা আগুইলেরা প্যান্ট পরেছিলেন ভিন্নভাবে। কোমর থেকে নিচে। জি স্ট্রিং খেলছিল পিক-আ-বু! দর্শকেরা এই থ্রিলিং মোমেন্ট উপভোগ করেছিলেন। সমালোচনাও ছিল। আর সেদিকেই পাল্লাটা ছিল ভারী। সেভাবে আলোড়ন তোলেনি। হারিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ফ্যাশন নীতি অনুযায়ী আবার ঘুরেফিরে এসেছে এই লো রাইজ ট্রাউজার। এবারে জনপ্রিয়তার প্রবল স্রোতে ভেসে। ফ্যাশনবিশ্বও স্বাগত জানিয়েছে দুহাত মেলে।
ডাবল ডেনিম
সত্তর-আশির দশকের লাভ চাইল্ড ডাবল ডেনিম। ফিরে আসে লেইট নাইন্টিজে। এ সময়ে এর জনপ্রিয়তা এতই প্রবল হয়ে ওঠে, ডাবল ডেনিম মোমেন্ট বলে ফ্যাশনের ইতিহাসে একটি বিশেষ সময় জায়গা করে নিয়েছে। সেটি ২০০১ সালের এএমএ অ্যাওয়ার্ড ইভেন্ট। আশির দশকে অ্যাসিড ওয়াশ প্যান্টের সঙ্গে ওভারসাইজড জ্যাকেটের পেয়ারিং আপ দেখা যেত। তা ছিল কুল লুকের ‘এপিটোম’। পাংক রক ক্যাজুয়াল ওয়্যার বলা হতো একে। সেলেব কাপল ব্রিটনি স্পিয়ার্স আর জাস্টিন টিম্বারলেককে ডাবল ডেনিমে দেখা গিয়েছিল এএমএ অ্যাওয়ার্ডের ২০০১ সালের রেড কার্পেটে। এই ‘দেন সেলেব কাপল’ ম্যাচিং লুকে হেঁটেছিলেন। ফুল লেংথ ডেনিম গাউন আর ডেনিম স্যুটের সে মুহূর্তকে ফ্যাশন-দুনিয়া মনে রেখেছে ডাবল ডেনিম শিরোনামে।
ইল ফিটেড ক্লথস
দেহের সঙ্গে আঁটসাঁট পোশাক পরায় অভ্যস্ত ছিল ফ্যাশন-দুনিয়া। বডি মেজারমেন্ট তাই ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ। এরপরে ওভার সাইজড ব্যাগি জিনস যখন বাজারে এলো, অনেকেই বেশ আগ্রহ দেখালেন। পরে তা আর না কমে বরং বাড়তে থাকে। ব্যাগি কার্গো প্যান্টও পায় অতি মনোযোগ। ‘বিগার ইজ বেটার’ এই অনুভূতি মানুষকে আকর্ষণ করতে থাকে। আর তা একসময়ে পরিণত হয় ট্রেন্ডে। এই ক্যাটাগরিতে রাখা যেতে পারে ওভার সাইজড স্যুটও। ঢিলেঢালা স্যুটে দারুণ মজেছিল একসময়ের ইয়াং জেনারেশন। সেদিন আবারও ফিরে আসতে পারে। কেননা, ২০২২-এর গ্র্যামিতে জাস্টিন বিবার হাজির হয়েছিলেন ওভারসাইজড স্যুটে। বিবারের ফ্যাশন নিয়ে সচেতনদের যে আগ্রহ রয়েছে, সে তো সবারই জানা।
ব্রাউনের সঙ্গে ব্ল্যাক
রং নিয়ে ফ্যাশন ফো পা-এর একটি মিথ রয়েছে। বলা হয়, ব্রাউন ও ব্ল্যাক—এই দুয়ের সন্ধিতে লুক নষ্ট হয়। আসলেই কি তাই? একদম না! এই কালার কম্বকে একসময় ভুল হিসেবে দেখা হলেও এখন চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। এই দুয়ের মিশেলে হাজার আউটফিট রেডি হচ্ছে। টপ-বটমে রং দুটি বেশ স্মার্ট এক লুক নিশ্চিত করছে। উইন্টারে আমাদের দেশেও দেখা মেলে এই দুই রঙের সন্ধি। কখনো টপে ব্রাউন তো বটমে ব্ল্যাক, কখনো আবার সম্পূর্ণ উল্টো।
সবুজ-নীলে বিগ নো!
সবুজ আর নীল রংকে পাশাপাশি দেখতে এখন মোটেই খারাপ লাগে না; বরং বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই কম্বিনেশন। কেন্ডাল জেনার প্রথমবারের মতো হাজির হয়েছিলেন এই দুই রঙের মিশেলের পোশাকে। তারপরে শুধুই জয়জয়কার। নেভি ব্লু ও ব্ল্যাকের কম্বও আছে এই তালিকায়।
প্যান্ট লেয়ারিং স্কার্ট
বটমে ডেনিম প্যান্টের ওপরে স্কার্টের লেয়ার অর্থগত দিক দিয়ে কোনো উপযোগিতাই তৈরি না সেভাবে। তবু হয়েছে এ ধরনের লেয়ারিং। আর তা পরিণত হয়েছে ট্রেন্ডে।
আন্ডারওয়্যার ফ্লাশিং
অন্তর্বাস। পোশাকের ভেতরে খুব গোপনে এর বসবাস থাকবে বলেই সম্ভবত এমন নামকরণ। ফ্যাশন ফো পা তৈরি হয়েছে আন্ডারগার্মেন্টস ঘিরেও। দ্য ওলফ অব ওয়াল স্ট্রিট তারকা মার্গো রবির প্রাডা ফ্রক রেড কার্পেটের জন্য ছিল এক বিগ নো। কেন? তিনি তার রুপালি অন্তর্বাস নিয়ে এসেছিলেন জনসমক্ষে। মেটালিক আন্ডারগার্মেন্টস পরে দেখা গেছে নানা জনের শরীরে। কিন্তু প্রথমবারের মতো তারকার দেহে এমন সাহসী প্রকাশ দেখা সে-ই প্রথম।
এরপর প্রিয়াংকা চোপড়া (পি সি) এক ইভেন্টে ডাবল লেয়ারের একটি স্কার্ট পরে মঞ্চে উঠলে উজ্জ্বল আলো সেটিকে করে তোলে সি থ্রি! সবার দৃষ্টি যায় তার সাদা থংয়ের দিকে। এরপর নানাভাবে নায়িকাদের আমরা আন্ডারওয়্যার ফ্লাশিংয়ে দেখেছি। কখনো সিনেমার দৃশ্যে, কখনো আইটেম সংয়ে।
টারটেল নেক
উইন্টারে টারটেল নেকের আলাদা ফ্যান বেইজ খুঁজে পাওয়া যায়। অনেকে এই ক্লদিং আইটেম বেছে নেন সে সময়ে। কিন্তু এই নেক লাইন ডিজাইনের প্রপোরশন কখনো কখনো বেশ বিপজ্জনক। ব্যাক ফায়ার করার ঝুঁকি থাকে। এর প্রধান কারণ, এই ধরনের নেক ডিজাইন চিন এরিয়ায় আলাদাভাবে ফোকাস তৈরি করে।
রাতের সানগ্লাস
রিহানাকে রাতের বেলায়ও সানগ্লাসে দেখা যেত। পাপারাজ্জি এড়াতে তিনি চোখ ঢাকতেন বলে জনশ্রুতি আছে। এটি ফ্যাশন ফো পা, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। আর পরে এটি ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের দেশেও তা মাতিয়েছে। এ দেশে এসেছিল ব্যান্ড চোখে। পরে তরুণদের মাঝে আলোড়ন তোলে।
টোট ব্যাগ
ফ্যাশনে ব্যাগের ভূমিকা গুরুত্ববহ। তবে এর আকার বিশাল হওয়ার কথা ফ্যাশন গ্রামারে নেই। বড় ব্যাগ তাই ফ্যাশন ফো পা হয়েও দীর্ঘ সময় ধরে ইন ট্রেন্ড। এর পেছনে রয়েছে মানুষের প্রয়োজনের গুরুত্ব। কর্মযজ্ঞে যত মন দিয়েছে সবাই, ততই বেড়েছে এর প্রয়োজন। অতশত সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে হয় বলে ব্যাগের আকার বড়তেই স্বস্তি অনেকের।
ব্রুস
ক্ল্যাসিক আর অ্যান্টিকুয়েড ফ্যাশনের মাঝে একটি ফাইন লাইন রয়েছে। ব্রুস সেই ফাইন লাইনে আটকা পড়ে আছে। এটি অ্যান্টিকুয়েড ফ্যাশন অ্যাকসেসরিজ। ফ্যাশন ফো পা-এর তালিকায় নাম আছে এরও। তবু এটি ফ্যাশনে জ্বলজ্বলে।
শির প্যান্টি হোশ
ব্ল্যাক ও নুড কালারের বাইরের প্যান্টি হোশ আকাঙ্ক্ষিত ছিল না বললেই চলে। তবু নানান রঙের নিরীক্ষা চলেছে। আর কালারে কিছু মানুষ আগ্রহও দেখিয়েছেন। প্রথম প্রথম ওই দুই রঙের বাইরেরগুলোকে বিবেচনা করা হতো ফো পা হিসেবে। তবে ধীরে ধীরে সেদিন ফুরিয়েছে। কালারে অভ্যস্ত হয়েছে মানুষ। তৈরি হয়েছে ফ্যাশন ট্রেন্ড। টাইটস জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে এ পোশাক রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
বোহো অ্যাসথেটিক
গরমের উষ্ণ দিনগুলোতে বোহিমিয়ান পোশাকে আরাম খুঁজে পান অনেকেই। যদিও সবখানে এমন আলুথালু পোশাক বাহবা পায় না, তবু আরাম নকশার এই পোশাকগুলো মন ছুঁয়ে যায় অনেকের। কাটছাঁট ফ্যাশন গ্রামারের নয় বললেই চলে; আবার লুজ ফিটিংও বটে। তবু এখানে মন আটকেছে অনেক ফ্যাশনিস্তার।
ফো পা থেকে ফ্যাশন ট্রেন্ড যেগুলো এসেছে, সেগুলো কখনো ট্রেন্ড হতে পারে—এমনটা আশা করেনি কেউ। যাদের হাত ধরে ফো পা তৈরি হয়েছিল, তাদের বরং অস্বস্তি ছিল। একটু ভিন্নতা থেকে স্টাইল স্টেটমেন্ট হয়ে যাওয়া কখনোই পরিকল্পিত ছিল না। ফো পা সাধারণত তৈরি হয় কয়েকভাবে। কেউ পোশাকের মাধ্যমে আশপাশের সবাইকে চমকে দিতে চেয়ে ভুল করে যদি কোনো কিছু নিজের লুকে যোগ করে নেন, তখন। মোট কথা, ফ্যাশন গ্রামারের বাইরে গেলেই তৈরি হতে পারে ফো পা। তার আগে নয়। নিয়ম ভাঙা থেকে নতুন নিয়ম তৈরি করে এই ফ্যাশন ট্রেন্ড। এসব যে শুধু সাধারণ মানুষের জীবনেই ঘটে, তা নয়। ফ্যাশন হিস্টোরি বলে, ফো পা রাজপরিবারের গুরুত্বপূর্ণ মানুষের জীবনেও ঘটেছে। এর আবার ভিন্ন নামকরণ আছে। রয়েল ফো পা। প্রিন্সেস ডায়ানার ফো পা-এর কথাই যদি বলি, সেখানে আমরা দেখতে পাই সাহসী এই নারী কীভাবে এক দুর্ধর্ষ স্টাইলে সবার সামনে এসেছিলেন। রানি এলিজাবেথ তাকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন একটি চোকার। ডায়ানা সেটি পরেছেন নেক পিস হিসেবে; দেখেছে জনগণ। এরপরে একদিন ডায়ানা সেই চোকার তুলে নিলেন মাথায়। বানালেন হেড ব্যান্ড। বিস্ময়ে এবার ঘুরে তাকাল পুরো দুনিয়া। রানির দেওয়া উপহার নিয়ে একি করলেন প্রিন্সেস! ফিসফাস-গুনগুন শুরু হলো ঠিকই; এর পাশাপাশি গয়নার ভিন্ন ব্যবহারও নজর কেড়ে নিল নতুনত্বপ্রেমীদের। দেখা গেল অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছেন। ঠিক এভাবেই হেড জুয়েলারির মতো করে নেকলেস পরতে শুরু করলেন তারা।
প্রিন্সেস ডায়ানার আরও একটি ফ্যাশন ফো পা-এর কাহিনি বেশ চর্চিত। সেটি আবার তার বিয়ের পোশাক ঘিরে। ১৯৮১ সালের বিয়ের আয়োজনে তিনি পরেছিলেন একটু ভলিউমনাস গাউন। এই পোশাকে তার জনসমক্ষে আসার বিষয়টি ফ্যাশনবিশ্বে এত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রেখেছিল, সেটিকে আইকনিক মুহূর্ত হিসেবে গুরুত্ব দেন ফ্যাশনবোদ্ধারা। কিন্তু এই পোশাকও পড়েছিল ফ্যাশন ফো পা-এর ফাঁদে। প্রিন্সেস যখন এটি পরে সকলের সামনে আসেন, তখন দেখা যায় পোশাকটি জুড়ে নানা আকারের ভাঁজ। ইস্ত্রি কোথায় বিলীন হয়ে গেছে যেন!
রাজপরিবারে ফ্যাশন ফো পা-এর গল্প এখানেই শেষ নয়। তালিকায় স্বয়ং সদ্য প্রয়াত রানি এলিজাবেথও আছেন। পোশাকে ফুড স্টেইনসহ রানিকে দেখা গিয়েছিল পাপারাজ্জিদের ক্যামেরায়। ঘটনাটি ২০১০ সালের। অবশ্য ওই ঘটনা থেকে এখনো কোনো ট্রেন্ড চালু হয়নি। নিজের পোশাকে সচেতনভাবে খাবারের দাগ তৈরি করার মতো ট্রেন্ডি সম্ভবত হতে চাননি কেউ!
সেলিব্রিটিদেরও আছে ফ্যাশন ফো পা-এর অভিজ্ঞতা। কখনো কখনো সেগুলো তাদের জন্য মোটেই সুখের নয়। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন ফ্যাশন মোগল কিম কার্দাশিয়ান। তিনি একবার এমন এক জাম্প স্যুট পরেছিলেন, যেটি ছিল আঁটসাঁট। সেই স্যুটে কিমকে দেখে সমালোচনা করেছিলেন কেন্ডাল জেনার। বলেছিলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে, ডায়াপার পরে আছে!’ এই ঘটনা ঘটেছিল মিলান ফ্যাশন উইকে।
২০১৩-এর মেট গালাতে ঘটে আরেক ঘটনা। সেখানে কিম পরেছিলেন একটি ফ্লোরাল গাউন। হাজার ফুলের প্রিন্টের সেই গাউনে তাকে দেখে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক হাস্যরস করেছেন নেটিজেনরা। তারা অনেক ধরনের মিম বানিয়েছেন ওই আউটফিট নিয়ে। যা দেখে কষ্টই পেয়েছিলেন কিম। ভোগ ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি দুঃখ পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন।
মেট গালা আসলে নানান ঘটনার জন্ম দেয়। ২০১৮-এর আসরে কাইলি জেনার কালো একটি বডি হাগিং গাউনে হাজির হয়েছিলেন। দারুণ ওই গাউনে তার বাহুর নিচ থেকে কোমর অবধি চোখ আটকে যাচ্ছিল জিপারে। রুপালি জিপার নিয়ে সেভাবে কোনো অস্বস্তি দৃশ্যমান হয়নি কাইলির মাঝে; তবু তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, উৎসুক দৃষ্টি তার জিপারের রহস্য জানতে উদগ্রীব। এরপর ২০২০ সালে একটি ইনস্টাগ্রাম স্টোরির মাধ্যমে তিনি জানান, এই জিপার তার পোশাকের নকশার অংশ ছিল না। এটি সেট করার কারণ, পোশাকটিতে তিনি স্বচ্ছন্দ হতে পারছিলেন না এবং ঠিক উৎসবের আগে তার পোশাকের পাশের দিকের সেলাই খুলে গিয়েছিল! লাস্ট মোমেন্ট সল্যুশন হিসেবে যুক্ত করা হয় ওই জিপার।
২০২২-এর কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমরা দেখেছি, স্প্যানিশ অভিনেত্রী রোসি দি পালমা ব্লেজার পরেছেন প্যান্ট ছাড়াই। বটমলেস টপের ট্রেন্ড সামনের দিনে ফ্যাশন-দুনিয়াকে মাতাবে কি না, সেটা বুঝতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। এখনই কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছে না। ফো পা থেকে ফ্যাশন ট্রেন্ডে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছেই।
ফ্যাশনে ফো পা ট্রেন্ড সেই সব ধারা সামনে নিয়ে এসেছে, যা কারও না কারও ফ্যাশন ফলস স্টেপে তৈরি। আর দুর্দান্ত সাহসে ব্যতিক্রমী ভুলগুলো পরিণত হয়েছে ট্রেন্ডে। একেই সম্ভবত বলে দুর্নিবার।

 

মডেল: কেয়া পায়েল, ইলিয়াস ও কোকো
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: ক্লোদেন
ছবি: কৌশিক ইকবাল

অবাধ বিচরণে

কেয়া পায়েল

ফ্যাশন ট্রেন্ডে আমার জন্য আরামই সব। সেটি ফো পা থেকে আসা ট্রেন্ড হোক অথবা রেগুলার ফ্যাশনধারা। সারা দিনের ব্যস্ততায় নিত্যনতুন পোশাক দরকার পড়ে। আমার পেশা অভিনয় হওয়ার কারণে এই প্রয়োজনটা একটু বেশিই। নিজের জন্য পোশাক নির্বাচনে তাই কমফোর্টকে এগিয়ে রাখি। রং, কাট, ডিজাইন—এসব আসে পরে। আর পছন্দ—নিজের উজ্জ্বল উপস্থিতি। তাই চেষ্টা করি কালার প্যালেটের এমন শেড বেছে নিতে, যেগুলোতে নিজেকে দ্যুতিময় দেখাবে। ব্রাইট শেডে আগ্রহ তাই সব সময়ের।
আমি বিশ্বাস করি, নতুনত্বই ফ্যাশনকে আকর্ষণীয় করে। নয়তো ঘুরেফিরে আসা সেই একই নকশায় আগ্রহ হারাত মানুষ। আনকোরা আয়োজনে আনমনে আগ্রহ জন্মে। আমারও পছন্দ অচেনাকে আপন করতে। ফো পা থেকে আসা ফ্যাশন ভাবনাগুলোতেও তাই আমার না নেই। চাই ফ্যাশনের বিশাল জগতে অবাধে বিচরণ করতে। আমার ব্যক্তিত্ব, নিজস্বতা হারিয়ে যাবে না—এমন ট্রেন্ড নিজের করে নিতে কোনো সমস্যা নেই। নিজেকে সীমার মাঝে বন্দি করতে চাই না। সারা বিশ্বের ফ্যাশন-ধারণাকেই জানতে চাই। বুঝে নিতে চাই কোনটা কেমনভাবে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারে। পরে সেখান থেকে নিজের জন্য সঠিকটাই বেছে নিতে চাই। তাই সব ট্রেন্ডকে স্বাগত জানাই। প্রতিদিন পোশাক বেছে নিতে চাই নিজের ভাবনাকে সম্মান জানিয়ে।

 অনুলিখন: সারাহ্ দীনা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top