ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I রমরমা রম-কম
ফ্যাশন ও সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে পুরোনো ট্রেন্ড বারবার ফিরে আসে। ২০২৩ সালে রম-কম কোর আবারও তা প্রমাণ করেছে
রম-কম কোর বা রোমান্টিক কমেডি থেকে কোনো চরিত্রের মতো পোশাক পরিধানের ফ্যাশন এখন বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। টিকটকের ট্রেন্ডিং তালিকায়ও এর বেশ দাপট। পিন্টারেস্ট ও ইনস্টাগ্রামের তথ্য অনুসারে সবচেয়ে বেশি সার্চ করা ফ্যাশন ট্রেন্ড এখন রম-কম চরিত্রগুলো। নামীদামি ব্র্যান্ড মডেল থেকে সেলিব্রিটিরা এখন একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকের রম-কম ছবির নারী চরিত্রগুলো যে ধরনের কাপড় পরেছে, সেগুলো অনুসরণ করছেন। থার্টিন গোয়িং অন থার্টি, মিন গার্লস, হাউ টু লুস আ গাই ইন টেন ডেজ, টু সামথিং নিউ, নটিং হিল—এসব সিনেমায় নায়িকারা কর্মক্ষেত্রের স্কার্ট স্যুট থেকে শুরু করে সন্ধ্যাকালীন চক্করের সময়ে চমৎকারভাবে এমন সব ড্রেস পরতেন, যাতে তাদের অভিনীত চরিত্রগুলোর নিজস্বতা ফুটে উঠত। একই সঙ্গে কোমল, আবার দৃঢ়ও ছিল সেই সব ব্যক্তিত্ব! বিখ্যাত সেলিব্রিটিদের সঙ্গে কাজ করা পার্সোনাল স্টাইলিস্ট চেলি কার্লসনের মতে, রম-কম কোর হলো ‘শক্তিশালী নারী চরিত্রের প্রকাশ এবং তার আত্মবিশ্বাস প্রদর্শন করা’।
রম-কম মূলত আনন্দদায়ক ও অনুমানযোগ্য সমাপ্তির জন্য তুমুল জনপ্রিয়। প্রেমে পড়ার আগমুহূর্তের অনুভূতিগুলো দারুণভাবে উঠে এসেছে রম-কমে। মনকে ভারমুক্ত করতে এর জুড়ি নেই। মূলত কোভিড-১৯ অতিমারির দাপটে মানুষ অভ্যস্ত বাস্তবতা থেকে বের হতে চেয়েছে সব ক্ষেত্রে। তারই প্রতিফলন পোশাকেও। বাস্তবতা থেকে পালানোর সুযোগ করে দিয়েছে রম-কম। একই সঙ্গে কমেডি ও রোমান্টিসিজম একাকার হয়ে গেছে তাতে। ফলে গতানুগতিক ফ্যাশনের বাইরে গিয়ে মানুষ কল্পনাপ্রবণ হওয়ার উৎসাহ পেয়েছে। এই ক্ল্যাসিক ফ্লিকগুলোতে ব্যবহৃত পোশাক নজর কেড়েছে মানুষের।
এখন যেহেতু রম-কম কোর অনলাইনে, টিকটকে এবং সর্বত্র পোশাকে প্রভাব ফেলছে, আপনি কেন দূরে থাকবেন মম জিনস কিংবা ফ্লেয়ার ফ্রক থেকে? পিন্টারেস্টের ভবিষ্যদ্বাণী, ২০২৩ সালে রম-কমের নস্টালজিয়া বাড়বে ফ্যাশনে। কলাম্বিয়া বিজনেস স্কুলের ডিন এবং প্রখ্যাত মনস্তত্ত্ববিদ অ্যাডাম গ্যালেনেস্কির মতে, কেউ নিজেকে যেমন দেখতে পছন্দ করেন, সেই অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করেন এবং তা থেকে তার ব্যক্তিত্ব বোঝা সম্ভব। রম-কম ট্রেন্ড অনুযায়ী কেউ যদি কার্গো প্যান্ট, টিউব টপসের সঙ্গে বেরেট কিংবা ক্লোচে ক্যাপ পরে নেন, তাহলে বোঝা যাবে, তিনি নব্বইয়ের কোনো শক্তিশালী ক্ল্যাসিক ক্যারেক্টর ধারণ করছেন নিজের মধ্যে। অতিমারির সময়ে তো বটেই, এ ছাড়া বছরের পর বছর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তার কারণে মানুষ পেছনের দিকে নিজের জন্য স্বস্তি খুঁজে বেড়িয়েছেন, রম-কম তারই প্রতিফলন।
রম-কম কোরের দিকে একটু ভালোভাবে তাকালে দেখব, মূলত স্ট্রং ও ভাইব্র্যান্ট চরিত্রগুলোই সবাই অনুসরণ করছেন; পজিটিভনেস প্লে করছেন, যেন ভীষণ সিনেমাটিক ফ্লেভারের পাশাপাশি নারীত্বের প্রতিফলনও পড়ে প্রতিটি পোশাকে। উজ্জ্বল গোলাপি, বেগুনি, মিষ্টি, হালকা সবুজ রঙের পোশাকে একই সঙ্গে ফেমিনিন সাইড যেমন দৃশ্যমান, তেমনি তাদের চরিত্রের দৃঢ়তাও প্রকাশ পাচ্ছে পোশাকের প্যাটার্নগুলোতে। বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় শো যেমন নেটফ্লিক্সের এমিলি ইন প্যারিসেও আমরা রম-কমের ব্যাপক প্রভাব দেখেছি। এমিলির ফ্লোরাল প্রিন্টেড ফ্রক তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে, যা একই সঙ্গে কেট হাডসনের হাউ টু লুজ আ গাই ইন টেন ডেজের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে নেটিজেনদের। অন্যদিকে, আরিয়ানা গ্র্যান্ডকে একটি অনুষ্ঠানে পরার জন্য ইতালীয় বিখ্যাত ব্র্যান্ড ভারসাচি রিক্রিয়েট করে দিয়েছে জেনিফার গার্নারের থার্টি গোয়িং থার্টিনের বিখ্যাত রেইনবো ড্রেস।
এ ছাড়া রম-কম কোরের মধ্যে রয়েছে অদ্ভুত সুন্দর টেইলরিং। রম-কম ইন্সপায়ারড ফ্যাশনের মধ্যে টিউব টপস, লো-স্লাং স্কার্ট, ছোট স্কার্ফ কার্গো প্যান্ট, ডাংরি উল্লেখযোগ্য। কেউ যদি নিজ পছন্দের রম-কম থেকে ইন্সপায়ারড লুক পেতে চান, সে ক্ষেত্রে কী করবেন? একঝলক দেখে নেওয়া যাক! ধরুন, নটিং হিলে জুলিয়া রবার্টসের লুকটি ক্রিয়েট করতে চাইলে সাদা টি-শার্টের ওপর একটি লেদার ব্লেজার চাপিয়ে, পিনস্ট্রাইপ ট্রাউজার্সে স্লিপ করে ফেলুন। চাংকি হিল বা বুটস কিংবা জুলিয়া রবার্টসের মতো লোফার পরে নিন পায়ে, ব্যস তৈরি! রম-কম কোরে পোশাকের পাশাপাশি অ্যাকসেসরিজেও আমরা ভিন্নতা দেখতে পাই, লেস ইজ মোর যেন এ সময়কেই রিপ্রেজেন্ট করে।
সানগ্লাসের দিক থেকে বড় ধরনের ভিন্নতা দেখেছি এ সময়ে। গোল ও চারকোনা শেপের চশমা মূলত নব্বইয়ের রম-কমে জনপ্রিয় ছিল। জুতার দিক থেকে চাংকি হিল, কিটেন হিল, কনভার্স এবং কাউবয় বুটস ভীষণ জনপ্রিয়তা পাবে, ধারণা করা যায়। মেকআপেও দেখা যাবে ন্যাচারাল ভাইব; কোমল ও স্নিগ্ধতার জয়গান চলবে বছরজুড়ে।
গ্লোবালাইজেশনের এই সময়ে, ইন্টারনেটের কল্যাণে সারা বিশ্বে ফ্যাশন-সচেতন ও আগ্রহীরা মোটামুটি কাছাকাছি ধরনের ট্রেন্ড ফলো করে থাকেন। গত বছর যেমন আমরা কেপপ অর্থাৎ কোরিয়ান পপ কালচারের রাজত্ব দেখেছি; ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছর রম-কমের দিকেই বেশি ঝুঁকবেন ফ্যাশনেবল নেটিজেনরা।
শিগগির আসতে যাচ্ছে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার রম-কম সিনেমা ‘লাভ অ্যাগেইন’। এতে আরও আছেন সেলেন ডিওনের মতো নব্বইয়ের জনপ্রিয় সংগীত তারকাও। এ ছাড়া আমাজন প্রাইমে এসেছে জেনিফার লোপেজের ‘শটগান ওয়েডিং’। আরেক জনপ্রিয় রম-কম তারকা রিজ উইদারস্পুনের ‘ইয়োর প্লেস ওর মাইন’ও মুক্তি পেয়েছে সম্প্রতি। রম-কম ট্রেন্ড ইতিমধ্যে হলিউড ও বলিউডে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জেন্ডায়া থেকে শুরু করে ভিক্টোরিয়া বেকহামকে চলতি বছর প্যারিস ফ্যাশন উইকে দেখা গেছে নব্বইয়ের রম-কম লুকে।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন হাউসগুলো ইতিমধ্যে রম-কমকে এ বছরের ট্রেন্ড বলে সংজ্ঞায়িত করেছে। ফ্যাশন পত্রিকাগুলোর প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে রম-কমের বৃত্তান্ত। সবচেয়ে বড় কথা, ফ্যাশনের ইতিহাসে আমরা বারবার রেট্রো ফ্যাশনের ফিরে আসা দেখেছি, ২০২৩ সালেও এর ব্যতিক্রম হবে না। তাই রেট্রো হিসেবে এ বছর রম-কম শীর্ষ স্থানে থাকবে, এ বাজি ধরা যেতেই পারে!
নাঈমা তাসনিম
ছবি: ইন্টারনেট