ফিচার I ঈদ ফুড দেশে দেশে
ঈদ মানেই বিশেষ খাবারের সমাহার। কিছু খাবার সর্বজনীন, কোনোটায় যুক্ত থাকে স্থানীয় সংস্কৃতির প্রভাব। এ তালিকায় মিষ্টান্নের দাপট বেশি, সে কথা বলা বাহুল্য
ঈদের সকালে ঘরে ঘরে ভাসতে থাকে সুস্বাদু খাবারের ঘ্রাণ। পরিবারগুলো সাধ্য অনুযায়ী প্রস্তুত করে বিশেষ বিশেষ খাবার। সেমাই, ভুনা খিচুড়ি, মোরগ পোলাও, হালিম থেকে শুরু করে কত কীই-না থাকে আমাদের দেশে ঈদের খাদ্যতালিকায়। আমরা অভ্যস্ত নই, বিশ্বের নানা প্রান্তের এমন কিছু ঈদ ফুডের সন্ধান জানা যাক।
বিন পাই [যুক্তরাষ্ট্র]: বিন পাই বা নেভি পাই। একটি অল-আমেরিকান ডেজার্ট। মার্কিন মুলুকের নিউইয়র্কে এই খাবারের প্রচলন ঘটে আমেরিকান ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠন ন্যাশন অব ইসলামের হাত ধরে। কাস্টার্ড ধরনের পুর এবং ক্রিস্পি প্যাস্ট্রির সমন্বয়ে তৈরি এই ডেজার্ট আফ্রিকান-আমেরিকান সংস্কৃতিতে বেশ জনপ্রিয়।
বাকলাভা [তুরস্ক]: দ্য অক্সফোর্ড কমপ্যানিয়ন অব ফুড বই থেকে জানা যায়, উত্তর আমেরিকানরা এই ফিলো প্যাস্ট্রিকে এর গ্রিক নামে চিনলেও খাবারটির উৎপত্তি তুর্কি জনগোষ্ঠীর হাতে। অধুনালুপ্ত অটোমান সাম্রাজ্যের (যার মূল অংশ বর্তমান তুরস্ক) ইস্তাম্বুলে রমজান মাসের ১৫তম দিনে বাকলাভা প্যারেড আয়োজনের রেওয়াজ ছিল। এখনো রোজা ও ঈদুল ফিতরের অন্যতম খাদ্য-অনুষঙ্গ হিসেবে প্রচলন রয়েছে এই ডিশের। যদিও এখন বেশির ভাগ পরিবার খাবারের দোকান থেকে এটি কিনে আনে; তবে কিছু কিছু পরিবারে, বিশেষত তুর্কি ও বলকান অরিজিনগুলোতে এখনো ঈদুল ফিতর ঘিরে বাসায় বানানো হয় বাকলাভা। আর তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে তৈরি করা হয় পারিবারিক নিজস্ব রেসিপি মেনে।
সুইট রাইস [ইরান]: মিষ্টি ভাত! হ্যাঁ, ইরানে জাফরান ও চিনিযোগে রান্না করা হয় এই ভাত। ধর্মীয় উৎসবের দিনে, বিশেষত ঈদে ভাতের মিষ্টতা বাড়িয়ে দিতে এতে যোগ করা হয় ড্রাইড ফ্রুট ও খেজুর।
সুইট সমুচা [মরক্কো]: মরক্কোতে একে ‘ব্রিওয়াত’ বলা হলেও আরব উপসাগরীয় অন্যান্য অঞ্চলে ‘সামবুসা হিলওয়া’ নামে বেশি পরিচিত। বিশেষ এই সমুচার পুরে অন্যান্য মিষ্টি উপাদানের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় নাশপাতি কিংবা আপেলের মতো ফল, এমনকি বাদামের সিরাপ।
কুনাফা [মধ্যপ্রাচ্য]: মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় সব সময় পাওয়া গেলেও ঈদুল ফিতরে এই ডেজার্টের চাহিদা বেড়ে যায় আকাশচুম্বী। এর শ্রেডেড ফিলো ডো-তে যোগ করা হয় হোয়াইট চিজ। সুবাসিত সুগার সিরাপ যোগে কেকের টুকরোর মতো পরিবেশন করা হয় সুস্বাদু এই খাবার।
স্টাফড খেজুর [মধ্যপ্রাচ্য]: খেজুর এমনিতেই সুস্বাদু। তা যদি অন্য কোনো খাদ্য-অনুষঙ্গ সহযোগে পরিবেশন করা হয়, তাহলে পায় ভিন্নমাত্রা। ঈদুল ফিতরে এমন রেওয়াজের দেখা মেলে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। আস্ত বাদাম, নাট বাটার, ক্রিম চিজের পাশাপাশি বাদাম, মধু ও গোলাপজলের মিশ্রণে তৈরি সুইট পেস্ট যোগে সাজানো হয় খেজুরের এই বিশেষ পদ।
টার্কিশ ডিলাইট [ইরান]: নামের মধ্যে যদিও টার্কিশ শব্দটি রয়েছে, তবু তুরস্কে নয়, বরং ইরানেই এই মিষ্টান্নের উৎপত্তি বলে অভিমত খাদ্য-ইতিহাসবিদদের। ফার্সিতে একে বলে ‘লকুম’। জেলিতুল্য থেকে শুরু করে মার্শম্যালো সফট পর্যন্ত নানা স্বাদ ও টেক্সচারের হয়ে থাকে এই টিনি বাইটগুলো।
লাপিস লিজিট [ইন্দোনেশিয়া]: এশিয়ান এ দেশে দীর্ঘকাল ছিল ডাচ উপনিবেশ। সেখান থেকেই এসেছে এই বহুস্তরের কেক। ঈদের সকালে ঝটপট বানিয়ে ফেলা যায়। প্রতিটি লেয়ারেই থাকে বাটার। ফলে দারুণ সুস্বাদু।
বোলানি [আফগানিস্তান]: ঈদ ঘিরে স্বভাবতই শিশুদের উচ্ছ্বাস থাকে বেশি। তাদের পাতে তুলে দিতে আফগানিস্তানে রয়েছে এই খাবারের বিশেষ কদর। পালংশাক, আলু, কুমড়া কিংবা মসুর ডাল সহযোগে বিশেষ পুর বানিয়ে তা পুরে দেওয়া হয় রুটির ভেতর। এই ঐতিহ্যবাহী রুটিকে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করার এক কার্যকর অনুষঙ্গ হিসেবে গণ্য করেন আফগানরা।
মান্তি [রাশিয়া]: ঈদুল ফিতরের বিশেষ খাদ্যসম্ভারের জন্য রাশিয়ান কুজিনের খুব একটা সুনাম না থাকলেও চাইলে পরখ করে নিতে পারেন মান্তি। মূলত খাসি কিংবা গরুর মাংস ভাজা যোগে তৈরি করা স্টাফড ডাম্পলিং বা পুডিংবিশেষ এটি। এর রেসিপি অবশ্য একেক অঞ্চলে একেক রকম। তাই রাশিয়ান একেক মুসলিম পরিবারে ঈদের দিন একেক স্বাদের মান্তি পেলে চমকাবেন না!
আসিদা [ইয়েমেন]: ইয়েমেনি এই জেলি ডেজার্টের সঙ্গে মেক্সিকান ফ্ল্যান বা পুডিংয়ের খুব একটা পার্থক্য নেই। সৌদি আরব, সুদান ও লিবিয়ায়ও এর প্রচলন রয়েছে। এমনকি ঈদ ঘিরে সুদানের ঐতিহ্যবাহী খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ময়দা ও মধুতে তৈরি এই ডেজার্ট। ভাপে তৈরি আসিদা সাধারণত চুলা থেকে নামিয়ে গরম-গরম খাওয়া হয়। ইয়েমেনে ঈদ ছাড়াও এ খাবারের বেশ চল রয়েছে।
মামুল [সিরিয়া, লেবানন]: সিরিয়া ও লেবাননের মতো দেশগুলোতে এই শর্টব্রেড কুকির বেশ সুনাম। মূলত খেজুর, পেস্তা কিংবা আখরোটের বিভিন্ন ধরনের স্টাফিং সহযোগে তৈরি। ওপরে ছড়িয়ে দেওয়া হয় চিনির গুঁড়া।
কাম্বাবুর [সোমালিয়া]: সোমালিয়ার ঈদ স্পেশাল এই রুটিতে যোগ করা হয় বিভিন্ন মসলা। ওপরে চিনি এবং টক দই ছড়িয়ে পরিবেশন করা হয়। পূর্ব আফ্রিকান দেশ জিবুতিতেও কাম্বাবুরের বেশ কদর। ধারণা করা হয়, ওখানেই এই খাবারের উৎপত্তি।
তাজিন [মরক্কো, আলজেরিয়া]: উত্তর আফ্রিকান এই ডিশ বিশেষত মরক্কো ও আলজেরিয়ায় ঈদের সকালের অন্যতম প্রধান খাবার। এটি অবশ্য ডেজার্ট নয়; মেইন কোর্স। মাংসের সঙ্গে স্থানীয় ও মৌসুমি সবজির সহযোগে ভাপে সেদ্ধ করে রান্না হয়। সঙ্গে বরই ও খুবানির মতো ফল যোগ করারও রেওয়াজ রয়েছে কোথাও কোথাও।
ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট