নখদর্পণ I লিপ গ্লস নেইল
মানিয়ে যায় যেকোনো নেইল শেইপে, যেকোনো কালারের আউটফিটে। সময় ও অর্থ সাশ্রয়ী
ফ্যাশন ওয়ার্ল্ডে বড় জায়গাজুড়ে আছে নেইল আর্ট। এর ওপর বিভিন্ন প্যাটার্ন আর্ট থেকে শুরু করে, বোল্ড কালারের নেইলপলিশ, কম্বিনেশন নেইলপলিশ বেশ জনপ্রিয়। এই তালিকার লিপ গ্লস নেইলে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে ট্রেন্ডিদের। নাম শুনেই অনুমান করে নেওয়া যায়, নেইলে এটি কেমন লুক এনে দেবে। ন্যাচারাল নেইলের ওপরে ট্রান্সপারেন্ট, কিংবা একদম হালকা কালারের নেইলপলিশের ওপর গ্লসি একটি ইফেক্ট মূলত লিপ গ্লস নেইল। দেখতে যেমন সিম্পল, অন্যান্য নেইল আর্টের তুলনায় করা যায় চটজলদি। খুব বেশি স্টেপ ফলো করার দরকার পড়ে না। সহজে সম্পন্ন।
প্রথমে বেছে নেওয়া যায় একদম হালকা ন্যুড কোনো কালার। যেমন হালকা গোলাপি কিংবা লাইট ব্রাউন শেড। হালকা কালারের ওপরে গ্লসি ইফেক্ট স্নিগ্ধ আর রিফ্রেশিং লুক এনে দেয়। নেইলপলিশটি ভালোভাবে শুকানোর পর এর ওপরে ট্রান্সপারেন্ট গ্লসি নেইলপলিশ অ্যাপ্লাই করুন। খেয়াল রাখুন, গ্লসি নেইলপলিশ অ্যাপ্লাইয়ের আগে অবশ্যই যেন প্রথম কোটেড শুকনো থাকে। ভালোভাবে শুকানোর আগে গ্লসি নেইলপলিশ অ্যাপ্লাই করলে লেয়ারগুলো একটির সঙ্গে অন্যটি মিশে যেতে পারে। অন্যান্য নেইলপলিশের তুলনায় গ্লসি নেইলপলিশ থিন হওয়ায় পরিমাণে একটু বেশি হলেই নখের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই অ্যাপ্লাইয়ের ক্ষেত্রে দরকার বাড়তি সতর্কতা। এ জন্য বেছে নিতে পারেন পাতলা চিকন ব্রাশ। এতে নখের চারপাশে ছড়ানো আরও কমে যাবে। অ্যাপ্লাই শেষে নেইলপলিশটি ভালোভাবে শুকিয়ে নিন; দেখবেন সুন্দর সিম্পলি পারফেক্ট লুক এসেছে।
লিপ গ্লস সাধারণত ট্রান্সপারেন্ট হয়ে থাকে, আর নেইল কালারে হালকা কালার ব্যবহার করা হয়। এতে নখের ভেতরের অংশ দেখা যায় ভালোভাবে। অনেক সময় নখের ভেতরে ডাস্ট জমে। তাই লিপ গ্লস নেইল করার আগে চটজলদি মেনিকিউর জরুরি। এ সময় নেইলের ভেতরে ক্লিন করে নেওয়া হয়। লিপ গ্লস নেইল করলে মানিয়ে যায় চমৎকারভাবে। এ ছাড়া অন্যান্য ডিপ কালারের নেইল পলিশ ব্যবহারের পর নেইল শেইপ চোখে না পড়লেও লিপ গ্লস নেইলের ক্ষেত্রে শেইপ পারফেক্ট থাকলে মানানসই হয়। তাই নেইল ক্লিনিংয়ের পাশাপাশি শেইপও ঠিক করে নিতে মেনিকিউর হতে পারে কম সময়ে ওয়ান স্টেপ সলিউশন। সময়স্বল্পতার কারণে ফুল মেনিকিউর প্রসেস করা হয় না অনেকের। সে ক্ষেত্রে ছোট্ট ব্রাশে একটু শ্যাম্পু নিয়ে নেইলের ভেতরে-বাইরে আলতো করে পরিষ্কার করুন। তবে খেয়াল রাখবেন, বেশি ঘষামাজা যেন না হয়। নয়তো স্কিনের ভেতরটা রুক্ষ হতে পারে; নেইলের টেক্সচারও নষ্ট হতে পারে। এরপর একটি নেইল ফাইলার দিতে নেইলের শেইপ করে অ্যাপ্লাই করতে পারেন লিপ গ্লস নেইল। পরিবর্তনটা চোখে পড়বে মুহূর্তেই।
লিপ গ্লস নেইলের আরেকটি ভালো দিক হচ্ছে লিপ কালারগুলো নিউট্রাল হওয়ায় এটি যেকোনো ড্রেসে মানিয়ে যায়। হালকা কালারের ড্রেসের সঙ্গে দেখায় বেশ স্নিগ্ধ। আর ডিপ কালারের ড্রেস হলে নেইল কালার নিউট্রাল হওয়ায় এটি ড্রেসকে হাইলাইট করে। এ ছাড়া ট্রাভেলের সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ড্রেসের সঙ্গে ম্যাচিং নেইলপলিশ চেঞ্জ করা হ্যাসেল হয়ে পড়ে। আবার ডিপ কালারের নেইলপলিশ ড্রেস কালারের সঙ্গে ম্যাচিং না হলে ভালো দেখায় না। এ ক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন লিপ গ্লস নেইল। ভিন্ন ভিন্ন কালারের ড্রেস পরলেও ম্যাচিং নেইলপলিশের ঝামেলা দূর হবে নিমেষে।
নেইল আর্টের জন্য নেইল শেইপও অনেক ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। যেমন কিছু কিছু বোল্ড কালারের নেইলপলিশ একটু বোল্ড শেইপের নেইলে বেশ ভালো মানায়। আবার ভিন্ন ভিন্ন নেইল শেইপের ওপর ভিত্তি করেও ব্যবহৃত হয় ভিন্ন ভিন্ন নেইল কালার। এ ক্ষেত্রে লিপ গ্লস নেইল সব নেইল শেইপের সঙ্গে একদম ইজি টু গো। যাদের নেইলে শেইপ নেই, লিপ গ্লস নেইল তাদেরও দেয় পারফেক্ট লুক।
অন্যান্য নেইল ডেকোরেশন বা নেইল আর্টের তুলনায় লিপ গ্লস নেইল অ্যাপ্লাই করা সহজ ও সাশ্রয়ী। ম্যাক্সিমাম নেইল আর্টে প্রয়োজন এক্সপার্ট হ্যান্ড। সঙ্গে সময় দরকার। ব্যয়বহুলও। লিপ গ্লস নেইল হতে পারে একদম ওয়ান-স্টপ সল্যুশন। রং নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা এবং অ্যাপ্লাই প্রসেস সহজ হওয়ায় নিজেই অ্যাপ্লাই করতে পারেন। কিছু কিছু নেইলপলিশ রিমুভিংয়ের জন্যও আছে স্পেশাল কিছু টেকনিক এবং স্পেসিফিক রিমুভার। তবে লিপ গ্লস নেইল রিমুভিংয়ের জন্য এক্সট্রা হ্যাসেলের দরকার নেই। তুলা কিংবা টিস্যু পেপারে বেসিক কোনো নেইলপলিশ রিমুভার অল্প নিয়ে নেইলের ওপর অ্যাপ্লাই করলে সহজে উঠে আসে লিপ গ্লস নেইলপলিশ।
লিপ গ্লস নেইল দেখতে খুব সিম্পল হলেও ফ্যাশনিস্তাদের কাছে দারুণ সমাদর পেয়েছে। জনপ্রিয় আমেরিকান মডেল হেইলি বিবারের নখে হরহামেশাই দেখা যায় লিপ গ্লস নেইল। এ ছাড়া বিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড ডিওরের এক্সক্লুসিভ কিছু নেইল আর্টের সঙ্গে মিল রয়েছে এর। বিভিন্ন নেইল সেলিব্রিটিও নানা সময়ে লিপ গ্লস নেইল নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। সেলিব্রিটি নেইল আর্টিস্ট সোনুয়া বলেছেন, লিপ গ্লস নেইল একদমই নতুন কোনো নেইল স্টাইল নয়, আগে থেকে এটি সামার ফ্রেন্ডলি নেইল আর্ট। ধারণা করা হয়, লিপ গ্লস নেইল আগে জেলি নেইল আর্ট নামেও পরিচিত ছিল। ধীরে ধীরে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সব সিজনেই তা মানানসই।
যারা একটু পরিপাটি নেইল লুক চান, তাদের জন্য দারুণ সল্যুশন হতে পারে লিপ গ্লস নেইল। যেহেতু এটি যেকোনো শেইপের নেইলের সঙ্গে, যেকোনো কালারের আউটফিটের সঙ্গে দারুণভাবে মানিয়ে যায়, তাই বিশেষ দিনগুলোতে ঝামেলা এড়াতে এবং সময় বাঁচাতে বেছে নিতে পারেন। কোন রং নখে মানাবে কিংবা কোন নেইল শেইপের সঙ্গে কোন নেইল কালার ভালো কম্বিনেশন হবে, এসবে অভিজ্ঞতা একটু কম যাদের, তারাও লিপ গ্লস নেইলের ওপর ভরসা করতে পারেন।
সাদিয়া আফরিন আইভী
ছবি: সংগ্রহ