তনুরাগ I কোরিয়ান কেয়ারে
বিশেষ ত্বকযত্ন। মাত্র চার ধাপেই নজরকাড়া ফল। প্রাণবন্ত, সজীবতার প্রতিচ্ছবি
কোরিয়ান স্কিন কেয়ার নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। অনেকে আবার বেশি বয়সী কোরিয়ানদের গ্লাসের মতো কিংবা ১৮ বছরের তরুণীর মতো সতেজ ত্বক নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। কোরিয়ানরা ত্বক পরিচর্যার ক্ষেত্রে মেকআপের চেয়ে ত্বকের ভেতরের সৌন্দর্যকে বেশি প্রাধান্য দেন। দিনে দিনে রূপচর্চার প্রক্রিয়া যেমন পাল্টেছে, তেমনি সাজসজ্জার তুলনায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিকাশে স্কিন কেয়ার হয়ে উঠছে জনপ্রিয়। কোরিয়ান ত্বক পরিচর্যার ব্যাকরণে যত্ন আর পরিচর্যা বিশেষ স্থান দখল করে আছে বলে অনেকের মনে জায়গা করে নিয়েছে।
জানা যায়, কোরিয়ানরা মেকআপের বদলে ত্বককে প্রাধান্য দেন বেশি। একে বলা যেতে পারে ত্বককে প্যাম্পার করা। শরীরের সঠিক যত্নের রুটিনের প্রধান লক্ষ্যও কিন্তু এটিই। তাই ক্যামিকেল দেওয়া ক্ষতিকর পণ্য না কিনে কোরিয়ান ত্বকযত্নের পণ্য কেনাকেই শ্রেয় মনে করেন অনেকে। আরেকটি কথা না বললেই নয়, কোরিয়ান স্কিন কেয়ারের প্রধান লক্ষ্য হলো, ত্বকের প্রাকৃতিক স্তরকে সুরক্ষার মাধ্যমে পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর করে তোলা।
কোরিয়ান ত্বকযত্নের আরেকটি প্রধান বিষয়, চিকিৎসা পর্যায়ে যাওয়ার চেয়ে তার আগেই ত্বকের যত্ন, সুরক্ষা ও প্রতিরোধ-সক্ষমতায় মনোনিবেশ করা। অবশ্য কোনো একক ব্যক্তি কিংবা কোম্পানির কাছ থেকে ত্বকযত্নের এই পদ্ধতি আসেনি। এটি বরং ধীরে ধীরে ঘটা এক বিবর্তন। সেই বিবর্তনের ধারায় আরও অনেকে কোরিয়ান ত্বকের রুটিনে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। চরম সত্য হচ্ছে, একবার কোনো ক্ষতি হলে ত্বককে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং। তাই কোরিয়ানদের মত, চিকিৎসার পর্যায়ে যাওয়ার আগেই ত্বকের প্রতিরোধব্যবস্থা নেওয়া উত্তম। আর সেটিই বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ত্বকযত্নের বাজারকে প্রভাবিত করেছে। ফলে যারা প্রসাধনী ও ত্বকযত্নের ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেন, তাদের আগ্রহের জায়গায় পরিণত হয়েছে কোরিয়ান রুটিন।
কোরিয়ান কেয়ারের ব্যাকরণে চারটি প্রধান স্টেপ শুরু করলে ত্বকযত্নে দ্রুত পরিবর্তন অনুভব করবেন, বিষয়টি এমন নয়। সময় লাগবে। কিন্তু এই যত্ন ত্বককে ভেতর থেকে সজীব ও প্রাণবন্ত করে তুলবে।
ক্লিনজিং
একটি সুস্থ ত্বকের রুটিন সব সময় শুরু হয় ত্বক পরিষ্কার করার মধ্য দিয়ে। তাই এই পদ্ধতির প্রথম ধাপ হচ্ছে তেল কিংবা ফোমজাতীয় ক্লিনজারের মাধ্যমে ত্বক পরিষ্কার করে নেওয়া; যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে সুরক্ষা দেয়। এ ছাড়া কিছু বাই এমআই ফেস এবং বডি স্ক্র্যাব ক্লিনজার আছে, যা সব ধরনের ত্বকে উপযুক্ত। কোন ক্লিনজার ব্যবহার করবেন, তা নির্ভর করবে ত্বকের সে সময়ের অবস্থার ওপর। কোন কোন প্রসাধনের লেয়ার ত্বকে রয়েছে, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া চাই। যেমন মেকআপ বা সানস্ক্রিন দেওয়া অবস্থায় ব্যবহার করতে পারেন অয়েল বেইজড ক্লিনজার। আর যদি একদম প্রসাধনমুক্ত মুখের জন্য ক্লিনজার খোঁজেন, তাহলে ব্যবহার করতে পারেন ফোম ক্লিনজার। স্যালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত ক্লিনজার ত্বকের মৃতকোষ পুনরুজ্জীবিত, র্যাশ দূর এবং অয়েল কন্ট্রোল করে। পাশাপাশি ত্বকের পিএইচ লেভেল রাখে ঠিকঠাক।
টোনিং
ত্বক পরিষ্কার করার পরে ত্বকের পিএইচ রিহাইড্রেট এবং ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য টোনার দুর্দান্ত। এটিকে পরিষ্কার ত্বকের ওপরে একটি সুরক্ষামূলক স্তর হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন। টোনার ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স ধরে রাখে, রাফনেস রিপেয়ার করে এবং স্কিন টাইট রাখে। এর মধ্যে একাধিক এসেন্স, সেরাম, অ্যাম্পুল বা মাস্ক অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এ ছাড়া এএইচএ/বিএইচএ ক্ল্যারিফাইং ট্রিটমেন্ট টোনারও ব্যবহার করতে পারেন। এএইচএ এবং বিএইচএ ত্বককে হাইড্রেট করে। এ ধরনের টোনার শুরুতে বেশি ব্যবহার করলে ইরিটেশন হতে পারে। তাই সপ্তাহে দু-একবার অল্প পরিমাণে প্রয়োগের মাধ্যমে ত্বককে অভ্যস্ত করে নিয়ে এরপর ধীরে ধীরে এর পরিমাণ বাড়াতে পারেন।
ময়শ্চারাইজ
কোরিয়ান ত্বকযত্নে ময়শ্চারাইজিংকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। সুদিং জেল, ওভার-নাইট মাস্ক, অ্যালোভেরা, ক্রিম, ভিটামিন ই-সহ নানা কিছু তারা ত্বকযত্নে ব্যবহার করেন। ময়শ্চারাইজিংয়ের গুরুত্ব কম-বেশি সবাই জানি। কিন্তু কোরিয়ান ময়শ্চারাইজারে আছে এক্সট্রা কিছু। তাই ময়শ্চারাইজিং প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণে সিরামাইড, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাবেন। ফলে ত্বক সব সময় থাকবে হাইড্রেটেড। যদি কোরিয়ান শিট মাস্কের অনুরাগী হন, তাহলে এটিই ত্বককে হাইড্রেটেড রাখবে। ব্যবহার করতে পারেন স্নেইল ক্রিম। এই ক্রিম ত্বকে পুষ্টির জোগান দেয়। এ ছাড়া ৯২ শতাংশ শামুক মিউসিনের সঙ্গে মিশ্রিত এই ক্রিম ত্বককে সতেজ রাখে।
সানস্ক্রিন
শেষ ধাপ হলো ত্বককে সুরক্ষা করা। সারা দিন ত্বকের পরিচর্যা করলেন; অথচ শেষে রোদে বের হলেন সানস্ক্রিন না লাগিয়ে, এতে পুরো ত্বকের পরিচর্যাই বৃথা হয়ে যাবে! তাই নিয়মিতভাবে সানস্ক্রিন প্রয়োগ করে ত্বককে সুরক্ষা দিতে পারেন। অনেকে শুধু কিছু কিছু ক্ষেত্রে সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন। রোদের উত্তাপ দেখে সিদ্ধান্ত নেন, সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন কি না। কোরিয়ান চার ধাপের রূপচর্চায় প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করা হয়। সানস্ক্রিন শুধু রোদে পোড়ার হাত থেকে রক্ষা করে না, এটি ইউভি এক্সপোজার বলিরেখার বিকাশও রোধ করে। কোরিয়ান অনেক সানস্ক্রিন বাজারে পাওয়া যায়। অ্যালো সুদিং সানক্রিমও ব্যবহার করতে পারেন। অ্যালোভেরার নির্যাসে তৈরি এই সানস্ক্রিন ত্বকে খুব হালকা অনুভূতি দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত এই চারটি মাত্র স্টেপ রুটিনমাফিক ব্যবহার করে কোরিয়ানরা এমন চকচকে, তারুণ্য ধরে রাখতে পারেন। এর বাইরে আরও বেশ কিছু পদ্ধতি তারা ব্যবহার করলেও এই চারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উম্মে হানী
মডেল: মাহেলেকা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল