লেবেল অ্যালার্ট I আবহমান
আবহমান শব্দের আভিধানিক অর্থ ক্রমাগত, চিরপ্রচলিত, ঐতিহ্যবাহী। বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে ধারণ করে কাজ করছে দেশি ক্লদিং লেবেল আবহমান। এর পেছনের গল্প জানালেন কর্ণধার লুৎফুন অনঘ রুফাইদা। বলেন, ‘বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা থেকেই এই নামকরণ। আবার প্রিয় পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘আবহমান’ সিনেমাটি আমার খুব পছন্দের। লেবেলের নামকরণে সেই ভালো লাগাও কাজ করেছে।’
রুফাইদা ছবি আঁকা, পোশাক সেলাই ও ডিজাইন এবং সুতার কালার কম্বিনেশন—এই ব্যাপারগুলো শিখেছেন তার নানির কাছে। অল্প বয়স থেকেই নিজের পোশাক নিজে বানাতে পারতেন। সেখান থেকে নিজের নকশার পোশাক সবার জন্য নিয়ে আসার সাহস পান। ‘বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন আমার পরা কাপড় দেখে প্রায়ই তাদের জন্য কাপড় বানানোর অনুরোধ করতেন,’ বলেন তিনি।
নিজের সৃষ্টিশীল সত্তা, ভালো লাগা ও শখ, দেশপ্রেম আর স্বাধীন পেশায় স্বনির্ভর হওয়ার ভাবনা থেকে আবহমান-এর যাত্রা শুরু বলে জানিয়েছেন রুফাইদা। প্যাশনকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাই নিজের নামও জুড়ে দিয়েছেন লেবেলের সঙ্গে। ‘আবহমান বাই রুফাইদা’ তার ব্র্যান্ডের পুরো নাম।
প্রডাক্ট লাইন দেশের সংস্কৃতি থেকে উৎসাহিত। বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজ। ক্রেতা মূলত বাংলাদেশি নারীরা হওয়ায় তাদের কথা ভেবে পোশাকের নকশা করা হয়। রুফাইদা চেষ্টা করেন বর্তমান সময়কে ধরতে। এ যুগের মানুষের প্রয়োজন মেটাবে এমন নকশাগুলো পোশাকে নিয়ে আসতে চান। ড্রেস কাটিং ও ডিজাইনে আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ট্রেন্ড অনুসরণ করেন। তাই আনারকলি, শারারা, গারারা থেকে শুরু করে হালের ফ্যাশন কো-অর্ডিনেটেড সেট, কুর্তি আর কাফতান এই লেবেলের জনপ্রিয় প্রডাক্ট লাইন। শাড়িতে আছে সুতিসহ দেশি অন্যান্য ফ্যাব্রিক। নকশার ক্ষেত্রে জ্যামিতিক, প্রকৃতিগত মোটিফ এবং দেশীয় ঐতিহ্যকে অগ্রাধিকার দেয় এই ব্র্যান্ড।
নিজস্ব ব্লকের কারখানা আছে রুফাইদার। এমব্রয়ডারি, জারদৌসি আর টেইলারিংয়েরও কারখানা আছে। ব্লকে দারুণ আগ্রহী তিনি। এর কারণ হিসেবে বলেন, ‘ব্লকশিল্প যেকোনো পোশাকের জন্য যেকোনো রং নিয়ে কাজ করার একটি চমৎকার মাধ্যম। আমরা এই ব্লক প্রিন্টিং শিল্পে কাঠের ব্লকের ডিজাইন, বিভিন্ন রং নিয়ে কাজ করি।’
সম্পূর্ণ এক কালারে একটি ফ্যাব্রিক যেভাবে একক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ফ্যাব্রিকের পুরো চেহারা যখন নতুন রং ও ডিজাইনে পরিবর্তিত হয় ব্লক প্রিন্টের কারণে, সেটা খুবই দৃষ্টিনন্দন ও হৃদয়গ্রাহী মনে হয় রুফাইদার। ব্লকের পাশাপাশি এমব্রয়ডারি ও জারদৌসি কাজের মধ্য দিয়েও অনেক দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন তৈরি হয় এই তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনারের কারখানায়।
পোশাক নকশা সম্পন্ন করতে কোয়ালিটি, কালার কম্বিনেশন, ডিজাইন প্যাটার্ন আর প্রডাক্ট প্রাইসিং বেশি গুরুত্ব পায় রুফাইদার কাছে। কালার কম্বিনেশন আর ডিজাইন প্যাটার্নের ক্ষেত্রে মাথায় রাখা হয় ক্রেতার বয়স ও পেশা। সেই সঙ্গে ট্রেন্ডি ডিজাইন প্যাটার্নে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ‘কোয়ালিটির ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান আপোসহীন,’ বলেন রুফাইদা।
দাম অথবা প্রডাক্ট প্রাইসিং আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রডাক্টের কোয়ালিটির সঙ্গে প্রাইসিংয়ের একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থান রাখার চেষ্টা এই বাংলাদেশি ব্র্যান্ডের সব সময় রয়েছে। প্রাইস রেঞ্জ ২ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ক্রেতা সন্তুষ্টি ভালো। রিপিট কাস্টমারের সংখ্যা বেশি।
রুফাইদা বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি পোশাক গভীর ভালোবাসা ও পরম যত্নে তৈরি হয়। প্রতিটি ডিজাইন খুব ভেবেচিন্তে বেছে নিয়ে, আবেগের সঙ্গে তৈরি এবং যত্নের সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়।’ বর্তমানে ‘আবহমান বাই রুফাইদা’তে যোগাযোগ করা যাবে শুধু অনলাইনে। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পাওয়া যাবে।
ফেসবুক লিঙ্ক: https://www.facebook.com/Abohomaan
ফ্যাশন ডেস্ক
ছবি: আবহমান বাই রুফাইদার সৌজন্যে