ফিচার I বাতায়নে বাণিজ্য
রাস্তার পাশে কাচে ঘেরা দোকান। তাতে সাজানো পণ্যের আকর্ষণীয় মহিমা। ক্রেতাদের মনোযোগ কাড়তে
চলতে ফিরতে ব্র্যান্ডের শোরুম অতিক্রমে চোখ আটকে যায় নান্দনিক প্রডাক্ট শোকেসিংয়ে। সুন্দর করে সাজানোর আইডিয়ার একটি ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ নাম ভিজ্যুয়াল মার্চেন্ডাইজিং। এই পদ্ধতিতে আকর্ষণীয় উপায়ে পণ্য ক্রেতার কাছে তুলে ধরা হয়। ভিজ্যুয়াল মার্চেন্ডাইজিং শুধু দোকানের সৌন্দর্য বাড়ায়, বিষয়টি এমন নয়। এর সঙ্গে আরও নানা বিষয় যুক্ত। এটি ক্রেতার কাছে দোকানের কিংবা পণ্যটির একটি আলাদা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে। সহজ কথায় বলা যায়, এটি পণ্যের ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়িয়ে দেয়।
ভিজ্যুয়াল মার্চেন্ডাইজিংয়ের অনেকগুলো ধরন আছে, এগুলোর অন্যতম উইন্ডো মার্চেন্ডাইজিং। ঠিক রাস্তার পাশেই কাচে ঘেরা দোকানের দিকে তাদের পণ্যগুলো সাজিয়ে রাখে বেশির ভাগ লেবেল। ম্যানিকিনের ব্যবহারও দেখা যায় এতে। এই কার্যক্রমের উদ্দেশ্য থাকে ক্রেতা আকর্ষণ।
বর্তমানে গ্রাহকের রুচিতে পরিবর্তন এসেছে। যেহেতু ব্যস্ততা বেড়েছে, তাই সম্ভাব্য ক্রেতাদের সময়ের বেশ খানিকটা যথাযথ ব্যবহার হয় এখানে। পথে আসা-যাওয়ার সময়ে, অথবা উইন্ডো শপিংয়ে পছন্দের ব্র্যান্ডের কালেকশন সম্পর্কে ক্রেতা ধারণা করতে পারেন এই বর্ণিল আয়োজন দেখে। সাধারণত গ্রাহকেরা সেই সব দোকানের দিকেই বেশি আকৃষ্ট হন, যারা তাদের পণ্যগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে। উন্নত দেশগুলোতে মার্কেটিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে উইন্ডো ডিসপ্লে বিবেচিত হয়ে আসছে আগে থেকেই। বিশ্বায়নের প্রভাবে আমাদের দেশের বাজারেও এসেছে পরিবর্তন।
লোকাল মেইড ব্র্যান্ডগুলো এখন আন্তর্জাতিক বাজারের বিষয়ে আরও বেশি জানার সুযোগ পাচ্ছে। সে অনুযায়ী ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে ও তাদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন নতুনত্বকে নিয়ে আসছে। ভিজ্যুয়াল মার্কেটিং যে আমাদের দেশের জন্য একদম নতুন ধারণা, তা নয়। বাংলাদেশের বাজারে এই মার্কেটিং টুলের ব্যবহার আগে থেকেই ছিল। তবে এখন কলেবরের ব্যাপকতা দেখার মতো। একটি-দুটি নয়, বেশির ভাগ এস্টাবলিশড ব্র্যান্ড চেষ্টা করছে যথাযথ প্রডাক্ট শোকেসিংয়ের মাধ্যমে ক্রেতা আকর্ষণ করার। করোনা-পরবর্তী সময়ে যেসব নতুনত্বকে ধারণ করেছেন বিক্রেতারা, সেগুলোর মধ্যে এটি একটি।
উইন্ডো ডিসপ্লে দোকানের পণ্যই শুধু প্রদর্শন করে না, বলা যায় এটি বিজ্ঞাপনের আরেক রূপ। তাই এর গুরুত্ব অনেক। গ্রাহকের সঙ্গে ব্র্যান্ডের প্রথম যোগাযোগবিন্দু হিসেবে কাজ করে এটি। গ্রাহক দোকানে আসবেন কি না, সেটাও এই সাজের ওপর খানিকটা বর্তায়। উইন্ডো ডিসপ্লে আরেকটি বিষয় পরিষ্কার করে, তা হলো, ব্র্যান্ডটি কোন শ্রেণির গ্রাহকদের জন্য। এতে সেলসম্যানের কাজ খানিকটা সহজ হয়ে যায়। উইন্ডো ডিসপ্লের কারণে ক্রেতা শোরুমের পণ্য সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেয়ে থাকেন। ফলে পণ্যের সম্ভাব্য ক্রেতার ফুট স্টেপ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। অযাচিত ভিড় এড়িয়ে যাওয়া যায়।
উইন্ডো মার্চেন্ডাইজিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এর সৃজনশীলতা। এর পাশাপাশি ব্যবসায়িক দক্ষতাও প্রয়োজন। উইন্ডো ডিসপ্লে এমনভাবে ডিজাইন করা উচিত, যেন গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে পারে। পণ্য এলোমেলো করে রাখার চেয়ে যদি কোনো থিম ধরে দোকানটি সাজানো হয়, তাহলে উইন্ডো প্রদর্শন আরও কার্যকর হয়ে উঠবে। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সাধারণত উৎসবকে কেন্দ্র করে ডিসপ্লে ডিজাইন করে থাকেন। তা ছাড়া নিয়মিত নতুন কালেকশনে ম্যানিকিন সাজিয়ে তোলেন। ডিসপ্লেতে আলোর ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। তাই আলো ব্যবহারের পরিকল্পনা গুরুত্ব পায় এখানে।
বাংলাদেশে আড়ং, কে ক্র্যাফট, যাত্রা, দেশাল, সাদা-কালো, সারা, ক্লাবহাউস, মিথ, রাইজ, গ্রামীণ ইউনিক্লো প্রভৃতি লেবেলের শোরুমে উইন্ডো ডিসপ্লে দেখা যায়। ছোট থেকে মাঝারি ব্র্যান্ডগুলো মহামারি ও অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে ক্রেতা আকর্ষণের উদ্দেশ্যে উইন্ডো ডিসপ্লেতে আগের চেয়ে বেশি আগ্রহী বলে বাজার ঘুরে ধারণা করা যায়। এবারের ঈদ ঘিরে উইন্ডো মার্চেন্ডাইজিংয়ের নান্দনিকতা নজর কেড়েছে। ঈদ থিম হিসেবে নিয়ে চাঁদ, তারাসহ আরও বিভিন্ন মোটিফ ব্যবহার করে উৎসবের আমেজ তৈরির চেষ্টা ছিল ক্লদিং ব্র্যান্ডগুলোর মাঝে। ফুটওয়্যারের ক্ষেত্রে বাটা ও এপেক্সে দেখা যায় ক্রিয়েটিভ টাচ।
ক্রেতা আকর্ষণের এই আধুনিক জায়গা নিয়ে নিয়মিত কাজ করছে বাংলাদেশি ক্লদিং ব্র্যান্ড কে ক্র্যাফট। এর স্বত্বাধিকারী খালিদ মাহমুদ খান এ বিষয়ে বলেন, যারা কে ক্র্যাফটের উইন্ডো ডিসপ্লে ডিজাইন করেছেন, তাদের চেষ্টা ছিল ক্রেতাকে মুহূর্তের দৃষ্টিপাতে একটি ভালো লাগার অনুভূতি দেওয়ার। চেষ্টা ছিল ডিসপ্লে অ্যারেঞ্জমেন্টে সময়ের সঙ্গে থেকে রং বিন্যাসে স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়ার। এটা অনেকটা ফার্স্ট ইমপ্রেশন ক্রিয়েট করার মতো বিষয়।
উইন্ডো মার্চেন্ডাইজিংয়ের গুরুত্ব তৈরি হওয়ার ফলে আমাদের দেশে উইন্ডো ডিসপ্লে ডিজাইনার নামে পেশাদারদের একটি নতুন ধারাও চালু হয়েছে।
উম্মে হানী
ছবি: ইন্টারনেট