সঙ্গানুষঙ্গ I জুয়েলারি জৌলুশ
পারমানেন্ট জুয়েলারি। বাড়ছে জনপ্রিয়তা। সৌন্দর্যের বার্তা ছড়াতে; বন্ধন গাঢ় করতেও
আমাদের মধ্যে যারা প্রতিদিন ব্যবহার্য, মানসম্পন্ন অথচ কম যত্ন নিতে হয় এমন কোনো গয়না চান, তাদের কাছে পারমানেন্ট জুয়েলারি এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গয়না যদিও ভারতীয় উপমহাদেশে দীর্ঘদিন ধরে নারীদের অঙ্গসজ্জার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তবে সময়ের পরিক্রমায় ও কর্মব্যস্ততায় তা পরিধানে পরিবর্তন এসেছে বেশ। বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান কিংবা উৎসব ছাড়া কারুকার্যখচিত ভারী গয়না পরার প্রচলন এখন আর তেমন নেই বললেই চলে। জনপ্রিয়তা পেয়েছে সহজে পরিধেয়, কম রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য এবং আরামদায়ক গয়না।
অন্যদিকে জুয়েলারি বা গয়না কেবল সাজসজ্জার অংশই নয়; একই সঙ্গে বিয়ে, বন্ধুত্ব কিংবা বিশেষ কিছুর প্রতীকও। উপহার হোক কিংবা নিজের ব্যবহারের জন্য—জুয়েলারির গুরুত্ব কখনো ফুরাবে না। মানুষের রুচি ও ব্যক্তিত্বেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটে গয়নায়। অতীতে সম্পদশালীরা অধিক গয়না পরিধান করতেন নিজেদের ক্ষমতা ও সম্পদের আধিক্য বোঝাতে। কোনো সুসংবাদ পেলে রাজদরবারে রাজা-বাদশাহরা গলা থেকে খুলে দুষ্প্রাপ্য মণিমুক্তার মালা দাস-দাসীদের বিলিয়ে দিতেন। রাজমুকুট কিংবা খোঁপার কাঁটায়ও ব্যবহার করা হতো মহামূল্যবান মণি, মুক্তা, জহরত, স্বর্ণ, রৌপ্য, হীরা।
পারমানেন্ট জুয়েলারি যে নতুন কিছু নয়, তা বুঝতে উদাহরণে বলা যেতে পারে, প্রাচীন মিসরীয়দের কথা। ফারাওদেরকে গয়না সহযোগেই কবর দেওয়া হতো। তারা বিশ্বাস করতেন, পরকালেও এই অলংকরণগুলো সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবেন। এভাবে গয়না বা অলংকারকে আচার বা পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে রাখার এই ধারণা বিভিন্ন ধরনের সংস্কৃতি, ধর্ম ও জীবনের স্তরগুলোতে প্রভাব ফেলেছে। কালের বিবর্তনে গয়নার ধরন ও ফ্যাশনে এসেছে আমূল পরিবর্তন।
পারমানেন্ট জুয়েলারি বলতে আমরা কী বোঝাতে চাচ্ছি? টেকসই গয়নার উপাদান যেমন হীরা, সোনা, রুপা ইত্যাদি? অবশ্যই এগুলো দিয়ে তৈরি গয়না; তবে তা যেন প্রতিদিন ব্যবহার করা যায়, আবহাওয়ার প্রভাবে বিশেষ কোনো ক্ষতির কারণ না হয়, স্কিনের কোনো অসুবিধা না হয়, স্বাভাবিক কাজে অসুবিধা সৃষ্টি না করে, দৃষ্টিকটু না হয়, আমাদের রুচির বহিঃপ্রকাশ সঠিক হয় এবং একই সঙ্গে সৌন্দর্য প্রকাশে সাহায্য করে। কানের দুল কিংবা নেকলেস কেনার আগে, আমরা সব সময় বিবেচনা করি, কত ঘন ঘন সেগুলো পরব। এটি কি প্রতিদিন পরার জন্য, নাকি শুধু বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য? একই সঙ্গে বিবেচনা করতে হয়, দাম কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং প্রতিটি পোশাকের সঙ্গে পরার জন্য যথেষ্ট ভার্সাটাইল কি না! অন্যদিকে, পারমানেন্ট জুয়েলারি অঙ্গীকারের, প্রতিজ্ঞার একটি চিহ্ন। আপনি আপনার বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে বেস্ট ফ্রেন্ডের সঙ্গে মিলিয়ে স্থায়ী ব্রেসলেট পরতে পারেন কিংবা ভালোবাসা প্রকাশের জন্য পার্টনারের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারেন যেকোনো জুয়েলারি। হতে পারে এনগেজমেন্ট রিং, রিস্ট ব্যান্ড কিংবা ওয়েডিং ব্যান্ডের মতন জুয়েলারি এক্সপার্ট এখানে আপনি! হাতে কিংবা পায়ে—যেখানেই গয়না পরতে চান, একদম সেখানকার মাপ অনুযায়ী ওয়েল্ডিংয়ের সাহায্যে জুড়ে দিতে হবে জুয়েলারি পিসটি। ব্যস! পারমানেন্ট লেবেলে এসে যাবে আপনার জুয়েলারি।
ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ডে ট্যাটুর বিকল্প হিসেবে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পারমানেন্ট জুয়েলারি। তা ছাড়া সহজে না হারানোর কারণেও পছন্দের তালিকায় রাখছেন অনেকে। আমাদের দেশে এভাবে সরাসরি স্কিনের কাছাকাছি ওয়েল্ডিং করে জুয়েলারি ফিট করার প্রচলন না থাকলেও কাস্টম মেইড জুয়েলারির বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। প্রিয়জনের নামখচিত জুয়েলারির প্রচলন যেমন এসেছে, শরীরের সঙ্গে আটকে থাকে এমন ডিজাইনের বিভিন্নতাও বাড়ছে। টিফানি অ্যান্ড কোং ইউরোপ ও আমেরিকায় সর্বাধিক জনপ্রিয় এ ধরনের কাস্টম মেইড জুয়েলারির জন্য। সম্প্রতি প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার জন্য বুলগারি বানিয়েছে কাস্টম মেইড জুয়েলারি, যা ভারতীয় সংস্কৃতি থেকে ইন্সপায়ারড। দেশীয় ব্র্যান্ড যেমন সিক্স ইয়ার্ড স্টোরি কিংবা গ্লুড টুগেদার থেকে আপনিও স্বর্ণ কিংবা রৌপ্য যেকোনো ধাতু দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন পছন্দসই পারমানেন্ট জুয়েলারি।
‘লেস ইজ মোর’ ট্রেন্ডের এই সময়ে মূলত স্বাচ্ছন্দ্য ও রুচির সমন্বয় পারমানেন্ট জুয়েলারিকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। তবে হ্যাঁ, এমআরআই কিংবা এক্স-রের মতন প্রসেসিংয়ের সময়ে আপনাকে খুলে রাখতে হবে জুয়েলারিগুলোকে। সে ক্ষেত্রে কেটে ফেলতে হবে চেইনের জোড়া অথবা তাপ দিয়ে গলিয়ে নিতে পারেন দক্ষ কোনো কারিগরের কাছ থেকে। তবে এই প্রসেস মোটেই ব্যথাদায়ক নয়। কেননা এটি সরাসরি স্কিনের সঙ্গে যুক্ত নয়। অনেকের ধারণা, পারমানেন্ট জুয়েলারি হয়তো আফ্রিকান বিভিন্ন কালচারে যেমন কান কিংবা মুখের ভেতরে অ্যাটাচ করে দেওয়া হয়; অথচ ব্যাপারটা তেমন নয়। এটি শুধু ত্বকের বাইরের অংশে পরিধেয় অলংকার। এ ছাড়া এয়ারপোর্টেও আপনাকে খুলে রাখতে হতে পারে চেকিংয়ের সময়। সে ক্ষেত্রে চেইন কিংবা দুল অথবা ব্রেসলেটে হুক লাগিয়ে নেওয়া হবে যুক্তিযুক্ত।
নাঈমা তাসনিম
ছবি: ইন্টারনেট