ইভেন্ট I তারুণ্যের বিপিও সম্মেলন
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা বিপিও। ১৫-১৬ এপ্রিল ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এই সম্মেলনের আয়োজক সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য)।
বিপিও বলতে একসময় শুধু কলসেন্টারকেই বোঝানো হতো। বর্তমানে এর পরিধি বেড়েছে অনেক। টেলিকমিউনিকেশন, ব্যাংক, ইনস্যুরেন্স, হাসপাতাল, হোটেলের ব্যাক অফিসের কাজ, এইচআর, আইটি, অ্যাকাউন্ট- সবকিছুই বিপিওর অন্তর্ভুক্ত। দেশে দিন দিন বাড়ছে এর গ্রহণযোগ্যতা। পড়াশোনার পাশাপাশি সমানভাবে কাজের সুযোগ থাকায় তরুণ শিক্ষার্থীরা এই সেক্টরে বেশি আসছেন। উদ্যোক্তারা বলছেন, ইতিমধ্যে ৪০ হাজার কর্মসংস্থান এখানে হয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে ১ লাখে পৌঁছাবে।
আমাদের দেশে নব্বইয়ের দশকে কলসেন্টার এবং ডেটা এন্ট্রির মধ্য দিয়ে বিপিওর সূচনা। শুরুটা সীমাবদ্ধ পরিসরে। কিন্তু কালক্রমে এই খাত বড় আকার ধারণ করেছে। বিশ্বজুড়ে বিপিওর বাজার ৫০০ বিলিয়ন ডলার। সেখানে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত আয়ত্তে আনতে পেরেছে মাত্র ১৮০ মিলিয়ন ডলার। বিষয়টি স্পষ্ট যে বিপিও খাতে একটা বিশাল বাজার পড়ে আছে।
বিপিও খাতে তরুণেরা মধ্যম আয়ের কাজ করতে পারেন। যাদের আয় হতে পারে ৩০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপানে এ মুহূর্তে প্রোগ্রামারের প্রয়োজন প্রায় ২০ লাখ। আগামী ৫ বছরে ২০ লাখ প্রোগ্রামার, কোডারের প্রয়োজন হবে ইউরোপ ও আমেরিকায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সেই তরুণ জনগোষ্ঠী এসব দেশে নেই। বাংলাদেশের তরুণেরা যদি নিজেদের যোগ্য করে তুলতে পারেন, তাহলে আগামী ৫ বছরে আন্তর্জাতিক বাজার দখলে থাকবে তাদেরই। প্রতিবছর ২ লাখ ৫০ হাজার শিক্ষার্থী স্নাতক হচ্ছেন। এদের বড় একটি অংশের কাজের ক্ষেত্র হতে পারে বিপিও। বিপিওতে কাজ করতে মাত্র দুটি যোগ্যতা লাগে। একটি ‘অ্যাবিলিটি টু লার্ন’ অর্থাৎ আমি জানি না, জানতে চাই- এই মনোভাব; অন্যটি ‘কমিউনিকেশন স্কিল’ বা যোগাযোগদক্ষতা।
বিপিওতে সবাই কাজ করতে পারেন। মূলত দুই ধরনের কাজের সুযোগ এখানে রয়েছে- ভয়েস ও নন-ভয়েস। ভয়েস সার্ভিসে ফোন বা অন্য কোনো মাধ্যমে গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে তাদের জিজ্ঞাসা ও সমস্যার সমাধান দিতে হয়। নন-ভয়েস সার্ভিসে ডেটা এন্ট্রি, কাস্টমার ভেরিফিকেশন ইত্যাদি কাজ করা হয়। তবে ভয়েসের কাজ মাত্র ১০ শতাংশ। এখানে প্রতিবন্ধীদের জন্য অনেক বড় একটি কর্মক্ষেত্র রয়েছে। কারণ, এর সব কাজই ডেস্কে বসে। তবে কাজের জন্য প্রাধান্য দেওয়া হয় শুদ্ধ বাংলা জানা ছেলে-মেয়েদের। একই সঙ্গে ইংরেজিতে দক্ষ হলে খুব ভালো। বিপিওতে যারা কাজ করছেন তাদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোই ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে। এখানকার কাজের ধরনগুলো হলো কাস্টমার কেয়ার, কালেকশন, ফিন্যান্স, অ্যাকাউটিং, পরিসংখ্যান, আইটি সার্ভিস নেটওয়ার্ক, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, ডেটা এন্ট্রি ও ট্রানজেকশন প্রসেস।
উল্লেখ্য, দুদিনের বিপিও সামিটে কাজের সেক্টর নিয়ে নানা ধরনের মোট ১০টি সেমিনার ও ১টি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘বিপিও অ্যাজ আ ক্যারিয়ার ফর ইয়ুথ’, ‘গ্লোবাল অপরচুনিটিজ ফর ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’, ‘এডুকেশন: আ কি ইনস্ট্রুমেন্ট টু অ্যাচিভ এসডিজি’, ‘ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন: চ্যালেঞ্জেস ইন বিপিও’, ‘আউসসোর্সিং ফর স্টার্ট-আপস: গ্রোয়িং টুগেদার’ এবং ‘ক্যাপাসিটি ব্লিডিং ফর কলসেন্টার এজেন্টস’। ৬০ জন স্থানীয় স্পিকার এবং ২০ জন আন্তর্জাতিক স্পিকার এইসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে অ্যাকটিভেশন কার্যক্রম। তরুণদের আগ্রহ বাড়াতে সরাসরি ইন্টারভিউর ব্যবস্থা করা হয়। বাক্যর পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুই দিনের এ সামিটে মোট ৪৩২ জনের ইন্টারভিউ নেয়া হয়েছে। ইন্টারভিউ নেয়া প্রার্থীদের বিপিওতে চাকরির ব্যবস্থা করার জন্য উচ্চতর ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
বিপিও সামিট ২০১৮-এর আয়োজনের প্ল্যাটিনাম স্পন্সর অগমেডিক্স, গোল্ড স্পন্সর এডিএন টেলিকম লিমিটেড, সিলভার স্পন্সর অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, ফ্রোরা ব্যাংক, জনতা ব্যাংক লিমিটেড, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড, নেটওয়ার্ক পার্টনার ফাইবার অ্যাট হোম, আইটি পার্টনার আমরা নেটওয়ার্ক লিমিটেড, স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলমেন্ট অথরিটি (বিডা), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটি, এলআইসিটি, একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই), বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি), এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো (ইপিবি), আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি)। পার্টনার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি (বিডব্লিউআইটি), আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি), সিটিও ফোরাম বাংলাদেশ ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।
লেখা ও ছবি: তৌহিদুল ইসলাম তুষার