ফিচার I বিউটি ওয়াটার
ভেতর ও বাইরে থেকে শরীরে আর্দ্রতার জোগান জরুরি। এটা সম্ভব হলেই সুন্দর থাকবে ত্বক। চাই বিউটি ওয়াটার
শরীর ফিট রাখতে কিংবা সৌন্দর্যের মাত্রা বৃদ্ধিতে পুরো দিনের খাবারের তালিকায় কিছু নিয়ম মানা আবশ্যক। যেমন পুরো দিনে হাইড্রেট থাকতে আট গ্লাস পানি খেতে হয়। আবার খাবারের তালিকায় চা কিংবা জুসও যোগ করা যায়। যেমন সকালবেলা ১ গ্লাস তাজা ফলের জুস। সঙ্গে ১ গ্লাস সয়া মিল্কের কফি উদ্যম এনে দেবে। দুপুরে নিয়মিত খাবারের আয়োজনের সঙ্গে ১ কাপ গ্রিন টি। এতে ডায়েট ব্যালান্স ঠিক থাকবে। পাশাপাশি মস্তিষ্কে সতেজ অনুভূতি বিরাজ করবে। সন্ধ্যায় কেবল এক গ্লাস ডালিমের তাজা জুস দেহে আয়রন জোগাবে। বজায় থাকবে সুস্বাস্থ্য। রাতে শোবার আগে ১ গ্লাস শসা মিশ্রিত ইনফিউসড ওয়াটার পান করতে হবে। সারা দিনের এই চার বেলার খাদ্যাভ্যাস দেহকে হাইড্রেট রাখতে অত্যন্ত সহায়ক।
সৌন্দর্যচর্চায় পানির রয়েছে বিচিত্র রূপ। যেমন কিউকাম্বার ওয়াটার, রাইস ওয়াটার, জিঞ্জার ওয়াটার, মিন্ট ওয়াটার, হানি ওয়াটার ও রোজ ওয়াটার। এককথায় বিউটি ওয়াটার। নামভেদে কাজও ভিন্ন। কিউকাম্বার ওয়াটার ত্বকের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে দেয়। বমি ভাব দূর করে হাইড্রেট রাখে। সঙ্গে চোখের চারপাশের কালো দাগ মুছে দেয়। এটি চোখের চারপাশে মেখে রেখে দিতে হবে ২০ মিনিট। শুকালে ধুয়ে ফেলতে হবে।
রাইস ওয়াটারে রয়েছে ভিটামিন ও মিনারেল। বড় হয়ে যাওয়া লোমকূপগুলো সংকুচিত করে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে দেয়। এটি মুখে মেখে নিতে হবে। শুকানোর পরেই ধুয়ে ফেলতে হবে। চুলেও এই ওয়াটার কার্যকর। চুল ধোয়ার মতো করে মাখার পর শুকিয়ে গেলে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এটি চুলের গভীরে পুষ্টি জোগায়। রাইস ওয়াটার সপ্তাহে এক থেকে দুবার ব্যবহার করতে হয়।
শরীরের যত্নে জিঞ্জার ওয়াটারের ভূমিকা অসাধারণ। এটি মাসিকের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দেয়। অনিয়মিত পিরিয়ডকে নিয়মিত করতে সাহায্য করে। মাথা ব্যথা কমে যায়। ঠান্ডাজনিত সমস্যা কমিয়ে দেয়। বদহজম থেকেও মুক্তি দেয়।
মিন্ট ওয়াটার বেশ স্বাস্থ্যকর। ত্বকের যত্নেও ফলপ্রদ। মিন্ট অর্থাৎ পুদিনা পাতায় রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা শরীরের ভেতর জমে যাওয়া ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ দূর করতে পারে। হজমের সমস্যা সমাধান করে। শরীরের বিপাকীয় কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়। ফলে ব্রণ দূর হয়। চেহারায় লাবণ্য ফিরে আসে।
ত্বকের যত্নে হানি ওয়াটারের গুরুত্ব অপরিসীম। মধুমিশ্রিত পানি সফট ড্রিঙ্কে কিংবা খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। এটি পান করতে হয় সকালে। খালি পেটে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারলে ভালো। হানি ওয়াটার দেহের অতিরিক্ত ফ্যাট কমায়। পাশাপাশি লেবুর রসে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিডের প্রভাব হজমের সমস্যা সমাধান করে। অনেক সময় মুখের ত্বকে লেবুর রস সরাসরি মাখলে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। কিন্তু হানি ওয়াটারের সঙ্গে লেবু মিশিয়ে পান করলে দেহ ও ত্বকে ভালো ফল মেলে। লেবুর রসে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিডে অয়েল কন্ট্রোলিং বৈশিষ্ট্য আছে। ফলে মুখের ত্বকের ব্রণ দূর করতে এটি অত্যন্ত সহায়ক। ধুলাবালু, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ত্বকের কোষে এবং লিভারে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ সৃষ্টি করে। শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। হানি ওয়াটার রাসায়নিক পদার্থ দূর করে। শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাও সমাধান করে। এই পানি দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতেও সহায়ক। অন্ত্রের কাজ স্বাভাবিক রেখে বিপাক ক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হতে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখে।
রোজ ওয়াটার অর্থাৎ গোলাপজলে আছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এ ছাড়া রয়েছে জ্বলনবিরোধী উপাদান। এসব উপাদান ত্বক হাইড্রেট ও আর্দ্র রাখে। পিএইচ লেভেল যদি ৪ দশমিক ৫ থেকে ৬ দশমিক ২-এর আওতায় থাকে, তবে বুঝতে হবে ত্বকের ধরন সামান্য অ্যাসিডিক। সাবান, ফেশিয়াল ক্লিনজার এবং অন্যান্য প্রডাক্ট পিএইচ ব্যালান্স নষ্ট করে দেয়। ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ বৃদ্ধি পায়। ফলে ব্রণের রাজত্ব চলে। গোলাপজল ত্বকের পিএইচ লেভেল স্বাভাবিক (৫ দশমিক ৫) অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
টোনার হিসেবে গোলাপজল অত্যন্ত কার্যকর। এটি মুখের ত্বকে মেখে রেখে দিতে হবে। অপেক্ষা করতে হবে যতক্ষণ না ত্বকের ছিদ্রের গভীরে প্রবেশ করছে। নিয়মিত গোলাপজলের ব্যবহার ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে। ব্ল্যাকহেড, হোয়াইটহেড, ব্রণ ও ফুসকুড়ি দূর করে। চোখের ফোলা ভাব কমিয়ে দেয়। চাপ, অবসাদ, অ্যালার্জি এবং কম ঘুমের কারণে চোখে ফোলা ভাব দেখা যায়। ফোলা ভাব দেখা দিলে চোখের চারপাশে তরলজাতীয় পদার্থের জোগান জরুরি। একটু ঠান্ডা গোলাপজলে কটন প্যাড ভিজিয়ে চোখের পাতার চারপাশে কোমলভাবে মাখতে হবে। অপেক্ষা করতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত চোখে শীতল অনুভূতি না আসে। এই পদ্ধতি চোখের ক্লান্তি দূর করবে। সঙ্গে ফোলা কমাবে।
মেকআপ পরিষ্কার করতে গোলাপজলের ভূমিকা অপরিহার্য। ২ টেবিল চা চামচ গোলাপজলের সঙ্গে ২ চা চামচ বাদাম তেলের মিশ্রণ ত্বকের মেকআপ তুলে ফেলতে খুব সহায়ক।
চুলের স্বাস্থ্য ঠিক করতেও চাই গোলাপজল। চুলের শুষ্কতা দূর করতে এর রয়েছে চমৎকার একটি প্যাক। তৈরি করতে লাগবে ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল, ৩ টেবিল চামচ গোলাপজল, ২ ফোঁটা গাজর বীজের তেল এবং ২ ফোঁটা ইলাং ইলাং (একধরনের হলুদ রঙের ফুল) তেল। প্রথমে নারকেল তেল হালকা (৫-১০ সেকেন্ড) গরম করে নিতে হবে। তারপর প্রয়োজনীয় তেল যোগ করতে হবে। কিছুক্ষণ নাড়ার পর মাথার ত্বকে মেখে নিয়ে তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে রেখে দিতে হবে ৩ ঘণ্টা।
ইলাং ইলাং তেল এবং গাজর বীজের তেল চুল ঘন, মজবুত করে। পাশাপাশি চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। সঙ্গে শুষ্কতা দূর করে চুলে উজ্জ্বলতা জোগায়।
খুশকি দূর করতে গোলাপজলের জুড়ি নেই। সে জন্য তৈরি করতে হবে একটি প্যাক। লাগবে এক টেবিল চামচ মেথি, ২ টেবিল চামচ গোলাপজল, ১ ফোঁটা পুদিনার তেল, ১ ফোঁটা মেন্থল তেল। প্রথমে গোলাপজলের সঙ্গে মেথি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। তারপর প্রয়োজনীয় তেল মিশিয়ে নিতে হবে। সব উপাদানের সমন্বয়ে মিশ্রণ তৈরি হয়ে গেলে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করতে হবে। রেখে দিতে হবে ৪০ মিনিট। শেষ পর্যায়ে গোসলের সময় শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে নিতে হবে।
রেন্টিনা চাকমা
মডেল: হৃদি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস