ইন্টারভিউ I দেশীয় ফ্যাশনে নতুন অতিথি ক্লাবহাউজ
আমাদের দেশীয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি পার করছে গুরুত্বপূর্ণ সময়। বদলে যাচ্ছে এর দিগন্ত। হচ্ছে নতুন মেরুকরণ। ক্রান্তির সাক্ষী হতে এই পরিমণ্ডলে যোগ দিয়েছে ক্লাবহস। নতুন লক্ষ্যে পথচলার পরিকল্পনা শেখ সাইফুর রহমানের সঙ্গে শেয়ার করেছেন সদ্য গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মো. শহীদ হোসেন
কারও অনুপস্থিতিতে তার প্রশংসাই তো আধুনিক বিপণনবিজ্ঞানের ভাষায় কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড হয়ে ওঠা। সরল সজ্জার সুপরিসর অফিস রুমের আন্তরিক অন্দরে বসে কথা বলতে বলতে সেই অনুরণনই অনুভব করছিলাম। কারণ, ঠিক তেমনই ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর মো. শহীদ হোসেন। ডেকো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাঁদের বিশাল এই সাম্রাজ্যে যোগ হচ্ছে নতুন অতিথি। প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। ক্লাবহস। জার্মান শব্দ। এর ইংরেজি হবে সেই ক্লাবহাউজ। দেশের ফ্যাশন ভূমন্ডলের নতুন সদস্য। এ লেখা আপনাদের হাতে পৌঁছার আগে অভিষেকও হয়ে গেছে। ২৭ এপ্রিল বসুন্ধরা সিটি শপিং মল আর ওয়ারীর আউটলেট দিয়ে। এরপর ১১ মে ক্লাবহস আসছে যমুনা ফিউচার পার্কে। একই দিনে অথবা কাছাকাছি সময়ে ক্লাবহসকে পাবে মিরপুরবাসী।
আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, বাংলাদেশের দেশীয় ফ্যাশনের নতুন মেরুকরণে অনুঘটক হচ্ছে ক্লাবহস। কারণ, তৈরি পোশাকশিল্পের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আর উল্লেখযোগ্য সাফল্য নিয়ে দেশীয় ফ্যাশনে ইতিমধ্যে স্থান করে নিয়েছে বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড। মাত্র কয়েক বছরে তারা রীতিমতো বাজার মাত করেছে। ক্লাবহসও সেই জনারেই পড়ে। কারণ, ১৯৫৩ সালে রক্সি পেইন্টস দিয়ে এই গ্রুপের সূচনা হলেও তৈরি পোশাকশিল্পে তাদের অবস্থান যথেষ্ট সুদৃঢ়। জারা, এসপিরিট, টমি হিলফিগারের মতো বিশ্বের বিখ্যাত সব ব্র্যান্ডের জন্য নিয়মিত পোশাক আর অ্যাকসেসরি তৈরির ঋদ্ধ অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করেই পা রাখতে চলেছে দেশের বাজারে। তারপর এখন যাদের জন্য পোশাক বানায়, তাদের দেশেও পা রাখবে ক্লাবহস। অন্তত সেই প্রত্যয় পরিলক্ষিত হয়েছে ক্লাবহসের চেয়ারম্যান শহীদ হোসেনের আশাবাদী বক্তব্যে। সহমত হয়েছেন তাঁর আত্মজা এবং ক্লাবহসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রায়ানা হোসেনও। কোনো সন্দেহ নেই, এই উদ্যোগে, শেষোক্তের হার্ভার্ডের শিক্ষা মাত্রা যোগ করতে পারে।
নব্বই দশকের গোড়ায় তৈরি পোশাকশিল্পের অভিজ্ঞতা থেকে দেশের বাজারে ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার ধারা সৃষ্টি করে পিয়ারসন্স। সাড়ম্বর অভিষেক আর সময়োপযোগী উদ্যোগ সত্ত্বেও এই প্রতিষ্ঠানের পরিণতি ছিল ডাইনোসরের মতো। তবে পরবর্তী সময়ে এই ধারার প্রতিনিধিরা দেশের বাজারে রাজত্ব কায়েম করেছে সাফল্যের সঙ্গে। এই মিছিলের নতুন সদস্য অবশ্যই ক্লাবহস।
ক্লাবহস করার ভাবনা রাতারাতি নয়, বরং ভাবনা থেকে পরিকল্পনার মধ্যে অতিবাহিত হয়েছে ৭ থেকে ৮ বছর। তারপর পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হয়েছে এ বছর- বললেন শহীদ হোসেন। শুরুতেই বেসিক, ক্যাজুয়াল, প্রিমিয়াম ও হেরিটেজ- এই চার ধরনের প্রডাক্ট লাইন থাকবে ক্লাবহসে। নামকরণ করা হয়েছে চার নদ-নদীর নামে- বড়াল, আত্রাই, মগরা, কালিন্দী।
এই বাছাইও যেনতেনভাবে নয়, বরং ভেবেচিন্তে। নামগুলো তুলনায় অপ্রচলিত বা অব্যবহৃত, হৃদয়ছোঁয়া এবং সংক্ষিপ্ত। সব কটিই সেই হিসেবে এক সিলেবলের। যুক্তাক্ষর না ধরলে তিন অক্ষরের।
কেন নদী? প্রশ্নটা স্বাভাবিক। শহীদ হোসেনের উত্তরও ততটাই স্বাভাবিক আর হৃদয়গ্রাহী। আসলে বাংলাদেশের প্রাণ বলতে গেলে নদী। এ দেশের ল্যান্ডস্কেপ সমৃদ্ধ হয়েছে নদীর উপস্থিতিতে। এর পাশেই গড়ে উঠেছে নগর-বন্দর। তাই এই নদী হোক আমাদের ব্র্যান্ড সিম্বল। নদীকেই এ জন্য বেছে নেয়া।
এই লাইনগুলোর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। বেসিক পোশাকের লাইন বড়াল। মৌলিক আর আরামদায়ক কাপড়ে তৈরি প্রাত্যহিকীর আয়েশী সম্ভার। আমাদের ফ্যাশন হাউজগুলোতে বেসিক লাইনের যে অভাব পরিলক্ষিত হয়, সেটা দূর করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মান আর ফিট বজায় রাখবে তারা। আত্রাই হবে ক্যাজুয়াল কালেকশন। উজ্জ্বল রঙ, মনোগ্রাহী ছাপার এসব পোশাক থাকবে এই প্রডাক্ট লাইনে। ক্লাবহসের প্রিমিয়াম প্রডাক্ট লাইন মগরা। হাইস্ট্রিট ফ্যাশনের উপযোগী সংগ্রহ। আর হেরিটেজ লাইন হবে কালিন্দী। বাংলাদেশের হেরিটেজ টেক্সটাইলে তৈরি হবে এই অর্গানিক প্রডাক্ট লাইন। আমাদের সমৃদ্ধ সূচিকর্ম আর প্রকৃতিজ সব উপাদানের পাশাপাশি বাংলার চিরায়ত নকশা উপাদানও থাকবে এই সম্ভারে।
কাট, ফিট, শিলুয়েটে সহজতার মধ্য দিয়ে চমকে দেবে ক্লাবহস, মিক্স অ্যান্ড ম্যাচের সৌকর্যে। ফলে শহীদ হোসেনের বিশ্বাস- অচিরেই এই প্রতিষ্ঠান প্রত্যেক ক্লায়েন্টের নিজের প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠবে।
ঢাকা তো বটেই, দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়বে ক্লাবহস। প্রতিটি আউটলেটে সেখানকার ক্লায়েন্টদের কথা বিবেচনায় রেখেই ক্লাবহস সাজাবে পণ্যসম্ভার।
নামের মতোই ভেবেচিন্তে বাছাই করা হয়েছে ক্লাবহসের ব্র্যান্ড কালার। হলুদ ও নীল। রঙ নিয়েও শহীদ হোসেনের ব্যাখ্যা অনবদ্য: হলুদ তো আসলে প্রাণময়তার রঙ। সজীব, সতেজ, ইতিবাচক যেমন তেমনি আত্মপ্রত্যয় আর বুদ্ধিদীপ্ততারও অনুঘটক। এই রঙ আপনাকে বিশ্বস্ত হতে উদ্বুদ্ধ করে। সুখী করে। ইতিবাচক হতে শেখায়। অন্যদিকে নীল আপনাকে দেয় স্বর্গীয় অনুভব। বিশ্বাস আর আনুগত্যের প্রতীক। বর্ণমালার উল্লেখযোগ্য এই রঙ দুটির বিশেষত্ব বজায় রাখবে ক্লাবহস তার পণ্য, সেবা, অন্দরসজ্জায়; ক্লায়েন্টদের জন্য রয়েছে নানান অফার- অভিনব এবং আকর্ষক; যা একজন ক্রেতাকে সহজেই করে তুলবে ক্লাবহসের সদস্য। এর সঙ্গে রয়েছে ডেকো গ্রুপের এথিক্যাল আর গ্রিন ফ্যাশন অনুশীলনের ধারাবাহিকতা।
কারও প্রতিদ্বন্দ্বী নয় বরং নিজেদের পণ্য, ব্র্যান্ডিং আর সেবায় নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার লক্ষ্যেই ক্লাবহস শুরু করেছে দেশীয় ফ্যাশনে নতুন অভিযাত্রা। শহীদ হোসেন মনে করেন, প্রতিশ্রুতি পূরণের মধ্য দিয়ে অচিরেই ব্র্যান্ড হিসেবে অনন্য উচ্চতায় উন্নীত হবে দেশীয় ফ্যাশনের নবীন সদস্য ক্লাবহস। শুভকামনা আর প্রত্যাশা আমাদেরও।
ছবি: রত্না চৌধুরী