দেহযতন I প্র্যাকটিস পালাটেস
জিমের ম্যাট টানুন এবং আপনার কোরকে স্থিতিশীল ও শক্তিশালী করবে এমন ব্যায়াম করার জন্য প্রস্তুত হোন!
পালাটেস ব্যায়াম সাধারণত একের পর আরেক মুভমেন্টে মনোনিবেশের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট ধারাবাহিকতায় চর্চা করা হয়। এসব মুভমেন্টের কিছু নাম রয়েছে; যেমন দ্য হান্ড্রেড, ক্রিস-ক্রস, এলিফ্যান্ট ও সোয়ান। মুভমেন্টগুলো দেখতে সহজ মনে হলেও নিয়ন্ত্রণ রেখে নির্ভুলভাবে করা কষ্টসাধ্য। কেননা, এটি কয়েক ধাপে ক্রাঞ্চ করার মতো সহজ নয়; বরং এতে টেকনিকের ওপর যথেষ্ট জোর দিতে হয়।
আপনি স্ট্রিমিং ব্যবহার করে ক্লাসে বা বাড়িতে এক্সারসাইজ ম্যাটে পালাটেস করতে পারেন। অথবা এমন কোনো জিম বা স্টুডিওতে যেতে পারেন, যেখানে বিশেষ সরঞ্জাম রয়েছে। সেই সঙ্গে কোনো প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ক্লাসে অংশ নিয়েও এই ব্যায়াম করা যেতে পারে। এ ধরনের ক্লাস সাধারণত ৪৫ মিনিট থেকে ঘণ্টাব্যাপী হয়ে থাকে। তবে শুরুতে কষ্ট হলে কিছুটা কম সময়ে কম মুভমেন্টে সম্পন্ন করা ভালো।
সার্বিকভাবে সবল হওয়ার পাশাপাশি আরও শক্তিশালী পেশি ও ফ্লেক্সিবিলিটি অর্জন করতে এই ব্যায়ামের রয়েছে বিশেষ সুনাম। তা ছাড়া আরও ভালো অঙ্গবিন্যাস এবং সুস্থ থাকার অনুভূতি বাড়িয়ে তোলে পালাটেস। এ ক্ষেত্রে কার্ডিও ছাড়াও সপ্তাহে কয়েক দিন এই ওয়ার্কআউট করার পরিকল্পনা করুন, যেহেতু পালাটেস কোনো অ্যারোবিক ব্যায়াম নয়।
শুরুতে মাঝারি মাত্রায় পালাটেস করাই শ্রেয়। আজকাল এর বেশ কদর। তবে এটি এমন ধরনের ওয়ার্কআউট নয়, যা পুরোটা সময় শরীর থেকে ঘাম ঝরাবে; বরং এটি একাগ্রতা ও শ্বাস-প্রশ্বাস সম্পর্কিত। তাতে প্রতিবার ব্যায়ামের সময় আপনি নিশ্চিতভাবেই নিজের পেশিতে এর প্রভাব অনুভব করবেন।
পালাটেসের মূল ফোকাস কোরের ওপর। এতে হাত ও পায়ের শক্তিও বাড়ে। পজিশন চেঞ্জ ও মুভমেন্ট নিয়ন্ত্রণ করে, অথবা পেশিতে বল প্রয়োগের মাধ্যমে এই শরীরচর্চায় উপকার পাওয়া যায়।
এটি আসলে কী ধরনের এক্সারসাইজ কিংবা এর চর্চা করলে শরীরে কী কী প্রভাব পড়ে—এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই উঁকি দিতে পারে। চলুন, জেনে নিই কোন ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা কেমন।
ফ্লেক্সিবিলিটি: হ্যাঁ। পালাটেস ওয়ার্কআউট শরীরের নমনীয়তা এবং সম্মিলিত গতিশীলতা বাড়িয়ে তোলে।
অ্যারোবিক: না। এটি কার্ডিও ওয়ার্কআউট নয়।
স্ট্রেন্থ: হ্যাঁ। এই ব্যায়াম পেশি সবল করতে সাহায্য করে।
স্পোর্টস: না।
লো ইম্প্যাক্ট: হ্যাঁ। এতে আপনি মৃদু উপায়ে নিজের পেশি নিযুক্ত করবেন।
যা জানা চাই
স্ট্রিমিং বা ওয়েবসাইটের সাহায্য নিয়ে, বাড়িতে বসেই বিনা খরচে পালাটেস প্র্যাকটিস করা যায়। চাইলে কোনো ক্লাসে ভর্তি হতে পারেন। প্রাইভেট সেশনের জন্য সাধারণত ২০০০ এবং গ্রুপ সেশনে ৫০০ টাকার মতো খরচ পড়ে।
বিগিনারদের জন্য কি পালাটেস ভালো? উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ। আপনি বিগিনারদের জন্য প্রযোজ্য ব্যায়াম দিয়ে শুরু করতে পারেন। দক্ষ হওয়ার পর অ্যাডভান্সড মুভমেন্টের চেষ্টা চালাতে পারেন। শুরুতে কোনো প্রশিক্ষকের শরণাপন্ন হওয়া ভালো। তাতে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত আঘাত প্রতিরোধের কৌশল জানা সহজ হবে। এই ওয়ার্কআউট করার জন্য আউটডোরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
পালাটেস করতে কী ধরনের সরঞ্জাম দরকার? একটি ম্যাট তো লাগবেই। কিছু জিমে পালাটেসের জন্য বিশেষ যন্ত্র থাকে, যাকে বলে রিফর্মার। বাড়িতে সেটির মোডিফাইড ভার্সন ব্যবহার করতে পারেন; তবে তা একান্ত প্রয়োজনীয় কিছু নয়।
অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি পারসোনাল পালাটেস ট্রেইনার সাদিয়া শিলা বলেন, ‘যদি পেট ও পেলভিসকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি ভালো অঙ্গভঙ্গি বজায় রাখতে চান, তাহলে পালাটেস আপনার জন্য প্রযোজ্য। এটি মন ও শরীরের মধ্যে এক তীব্র সংযোগ ঘটায়। তাই ইয়োগা উপভোগের অভ্যাস থাকলে তীব্র কোর ওয়ার্কআউটের জন্য পালাটেস আপনার পছন্দ হওয়ারই কথা।’
পালাটেস সুনির্দিষ্ট মুভমেন্ট ও নির্দিষ্ট শ্বাস-প্রশ্বাস কৌশলের সঙ্গে জড়িত। আপনি তুলনামূলক কম স্ট্রাকচারড ব্যায়াম পছন্দ করে থাকলে এটি আপনার জন্য নয়। যদি অ্যারোবিক ওয়ার্কআউটের মতো সুফল খুঁজে বেড়ান, তাহলেও নয়।
এই এক্সারসাইজ খুব ডিমান্ডিং। তবে ধীরে ধীরে শুরু করাই উত্তম। প্রশিক্ষক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তিনি সার্টিফাইড কি না, যাচাই করে নেওয়া চাই।
যাদের বিশেষ হেলথ কন্ডিশন আছে, তাদের জন্য কি এটি নিরাপদ? বলে রাখি, আপনি ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুসারে পালাটেসের রুটিন তৈরি করে নিতে পারেন। তাই হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মতো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলেও এটি আপনার অ্যারোবিক ওয়ার্কআউটের পাশাপাশি হতে পারে এক দুর্দান্ত সংযোজন। তবে শুরুর আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া চাই।
ডায়াবেটিসে যারা আক্রান্ত, তাদের চিকিৎসা পরিকল্পনায় কিছু সামঞ্জস্য করতে হতে পারে। যেহেতু পেশির ওপর ভর দিয়ে পালাটেস চর্চা করা হয়, তাই এটি আপনার শরীরকে গ্লুকোজের আরও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহার করতে সহায়তা করবে। তবে বিশেষত ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির মতো কোনো জটিলতা থাকলে নির্দিষ্ট পালাটেস মুভ বাদ দিতে হতে পারে। অবশ্য এ ব্যাপারে প্রশিক্ষক ও চিকিৎসকের পরামর্শই শিরোধার্য।
আর্থ্রাইটিসে যারা আক্রান্ত, তাদের ক্ষেত্রে পালাটেসের মতো স্ট্রেন্থ ট্রেনিং প্রোগ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনুসন্ধানে দেখা যায়, অ্যারোবিক এক্সারসাইজ ও স্ট্রেন্থ ট্রেনিংয়ের সংমিশ্রণ ওই রোগের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করতে, ভারসাম্য বজায় রাখতে, জয়েন্ট নমনীয় রাখতে এবং আপনাকে একটি আদর্শ শরীরের ওজন পেতে এবং তা ধরে রাখতে সহায়তা করবে।
সম্প্রতি পিঠে বা হাঁটুতে যারা আঘাত পেয়েছেন, চিকিৎসক গ্রিন সিগন্যাল না দেওয়া পর্যন্ত তাদের পালাটেস চর্চা বন্ধ রাখা আবশ্যক। এই শরীরচর্চা ঊরুর পেশিকে শক্তিশালী (কোয়াড্রিসেপস) করে এবং এটি আর্থ্রাইটিস ও হাঁটুর আঘাত প্রতিরোধে সাহায্য করতে সক্ষম। আর্থ্রাইটিস আক্রান্তদের ভবিষ্যৎ অক্ষমতা প্রতিরোধে বেশ কাজে দেয়।
ক্রনিক লো ব্যাক পেইন থাকলে পালাটেস করা যাবে কি না, নিজের চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন। কেননা, এটি আপনার দুর্বল কোর পেশি শক্তিশালী করতে সাহায্য করলেও তাতে শরীরে ব্যথা কিছুটা বাড়তে পারে। সর্বোত্তম ফলের জন্য এমন একজন পালাটেস প্রশিক্ষকের সন্ধান করা শ্রেয়, যিনি কমপক্ষে কয়েক বছর লো ব্যাক পেইন থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।
এই দেহচর্চায় অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে গর্ভবতী নারীদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া চাই। কেননা, পেটের আকৃতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পালাটেস চর্চায় কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষ করে, গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের পর পিঠে ভর দিয়ে শুয়ে ব্যায়াম করা ঝুঁকিপূর্ণ; এতে গর্ভে থাকা শিশুর রক্তপ্রবাহ হ্রাস পেতে পারে। অবশ্য, গর্ভবতী নারীদের জন্য রয়েছে বিশেষ পালাটেস প্রোগ্রাম।
ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট