skip to Main Content

সঙ্গানুষঙ্গ I জহরতে লা জওয়াব!

শুধু নারীরা? সেদিন গেছে। পার্টি পারফেক্ট লুক কিংবা প্রতিদিন পরার জন্য পুরুষেরও নজর এখন গয়নার বাক্সে

ইনস্টাগ্রাম কিংবা টিকটক। স্ক্রল করলেই চোখে পড়বে পুরুষদের জুয়েলারি ট্রেন্ড। গয়না শুধু নারীদের সঙ্গেই যায়, বিষয়টি গত হয়েছে বহু আগে। সারা দুনিয়ার তারকারাই তার প্রমাণ। বলিউডের রণবীর সিং থেকে শুরু করে পশ্চিমের জাস্টিন বিবার—স্বাচ্ছন্দ্যে পরে বেড়াচ্ছেন সুন্দর সব জুয়েলারি। হালের হার্টথ্রব শান্তনু মহেশ্বরী, বাবিল খান আর ইশান খাট্টাররাও পিছিয়ে নেই। শুরু করেছেন আরও নিত্যনতুন জুয়েলারি ট্রেন্ড।
জুয়েলারির ব্যবহার নারীদের কাছে অতুলনীয়, হোক সেটা কোনো ফরমাল অনুষ্ঠান কিংবা কফি ডেট। বর্তমান সময়ে এ ব্যাপারে পুরুষেরা পিছিয়ে নেই। যেকোনো অনুষ্ঠানে তাদের জুয়েলারি ব্যবহারের পুরো বিষয়টা এখন আর ‘ওভার দ্য টপ’ নয়, খুব স্বাভাবিকভাবে দেখা হচ্ছে। আর সেলিব্রিটিদের নিয়মিত চাহিদা বিভিন্ন ফ্যাশন এক্সপার্টকেও সুযোগ করে দিচ্ছে নিত্যনতুন জুয়েলারি নিয়ে নিরীক্ষার। এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ ডিজাইনারই বেছে নিচ্ছেন ‘পাওয়ার লেয়ারিং’। অর্থাৎ ভিন্ন ধরনের কিন্তু একে অপরের সঙ্গে মানানসই এমন কয়েকটা জুয়েলারি একই সঙ্গে পরার কৌশল; হতে পারে সেটা নেকলেস কিংবা ব্রেসলেট। ঠিক যেমন জাস্টিন বিবার তার শোর সময় স্টেজে উঠেছিলেন গলায় আঁটসাঁট হয়ে লেগে থাকা পার্লের নেকলেসের সঙ্গে মোটা চেইনের মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করা নেকলেস পরে। অনেকে এই ট্রেন্ডের নাম ‘নেক মেস’ দিয়েছেন। আবার জ্যাকেট বা বুকখোলা শার্টের সঙ্গে কয়েক লেয়ারের লম্বা চেইন পরার ট্রেন্ডও এখন দারুণ জনপ্রিয়। প্রমাণ—শান্তনু মহেশ্বরী আর বাবিল খান। সম্প্রতি একটি অ্যাওয়ার্ড ফাংশনে তাদের আউটফিটে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ছিল গলার গয়নাগুলো। শান্তনুর লেয়ারড নেকলেস সংগ্রহ করা হয়েছিল ট্রাইব বাই আম্রপালি থেকে। হাতের আংটি, ব্রেসলেট—সব সেই একই ব্র্যান্ডের। ট্রাইবাল ধাঁচের সিলভার জুয়েলারিতে শান্তনুর স্টাইল স্টেটমেন্টের প্রশংসাও হয়েছিল বেশ। অন্যদিকে শাইনি বডি চেইন পরনে বাবিলের চমকও ছিল দুর্দান্ত। সিম্পলের মধ্যে গর্জাস। অবশ্য তরুণ এই অভিনেতার গয়নাপ্রীতি যে পুরোনো, সেটা তার ইনস্টা ফিডেই সুস্পষ্ট। কখনো ট্রাইবাল চোকার, তো কখনো আঙুলের বোহো আংটি, চেইনড নেকপিস আর ব্রেসলেট, বাদ পড়েনি ক্ল্যাসিক পার্লও। এতেই বোঝা যায়, অ্যাকসেসরিজের এক্সপেরিমেন্টে তিনি পারদর্শী।
তালিকায় আরও আছে ইশান খাট্টার এবং সিদ্ধার্থ চতুর্বেদীর নামও। মেনজ জুয়েলারির ট্রেন্ড সেটার হিসেবে কোনো অংশে কম যান না তারাও। সেলিব্রিটিদের জুয়েলারির কথা বললেই অভিনেতা টিমোথি শালামেটের নাম আসে। খুব সাধারণ রেড কার্পেটেও তিনি কার্টিয়ার জুয়েলারি পরে ফটোগ্রাফারদের জন্য পোজ দিতে ভোলেন না। আবার ইনস্টাগ্রামে ক্যাজুয়াল ছবিতেও দেখা যায় তার হাতে পুঁতির ব্রেসলেটের গোছা।
সবাই যে খুব ভারী কিংবা লেয়ারড জুয়েলারি পরছেন, তা-ও কিন্তু নয়। শুরুতে খুব জাঁকজমকপূর্ণ জুয়েলারিতে স্বচ্ছন্দবোধ না করলে অনুসরণ করা যেতে পারে গায়ক শন মেন্ডিস কিংবা মিডিয়া পারসোনালিটি ব্রুকলিন পেল্টজ বেকহামের জুয়েলারি স্টাইলিং। একটা সাধারণ লম্বা চেইনের সঙ্গে ছোট কিংবা বড় একটা পেন্ডেন্টও যে খুব সহজে মানিয়ে যায়, তার উদাহরণ মিলবে। পার্ল খুব ফেমিনিন হলেও হ্যারি স্টাইলস তার মিউজিক ভিডিও থেকে অসংখ্য পাবলিক অ্যাপিয়ারেন্সে প্রমাণ করে দিয়েছেন, এটি ছেলেদের ঠিক ততটাই মানায়, যতটা মেয়েদের। পার্ল লাভারদের তালিকায় আরও আছেন বলিউড তারকা রণবীর সিং। লম্বা মালা থেকে শুরু করে কলারবোনের ওপর পার্ল নেকলেসের অহরহ ব্যবহার নজর কাড়ে তার স্টাইলিংয়ে। সেলিব্রিটিরা এই গয়নাগুলো এত অনায়াসে আর স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করছেন, যেন এগুলো তাদের প্রতিদিনকার লুকের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর চলতে থাকা এই ফ্যাশন ট্রেন্ডে যুক্ত হতে চাইলে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম মেনে চলতে হবে, তা কিন্তু নয়। নিয়ম ভাঙাটাতেই যে এর সৌন্দর্য!
রিং
যারা জুয়েলারিতে এখনো অতটা স্বচ্ছন্দ নন, তাদের জন্য সেরা অপশন। আংটি বলতে এখানে যে শুধু ওয়েডিং ব্যান্ড বোঝানো হচ্ছে, ব্যাপারটা এমন নয়। বরং বলা হচ্ছে স্টেটমেন্ট রিংয়ের কথা, যা কমবেশি সব ছেলের কালেকশনেই থাকে বা থাকা জরুরি। আংটি পরতে চাইলে ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী ধরন বেছে নিতে পারেন। একটা খুবই সাধারণ ব্যান্ড, আংটির সঙ্গে মূল্যবান কোনো পাথরের মিশেল, সিলভার-গোল্ডেন, বোহো, ট্রাইবাল কিংবা স্টেটমেন্ট রিং—কোনটা পরবেন, পুরোটাই ব্যক্তিগত পছন্দ। তবে পরামর্শ থাকবে এক হাতে একটি আংটি না পরার। কারণ, স্ট্যাকড রিং স্টাইল এখন ট্রেন্ডের শীর্ষে। চলবে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচের জাদুও।
ইয়ার রিং
আংটির পরই যে জুয়েলারি পুরুষের মধ্যে জনপ্রিয়, তা হলো কানের দুল। কানে ফুটো করা থাকলে কোন অনুষ্ঠানে বা কোথায় পরে যাচ্ছেন, তার ওপর ভিত্তি করে একটি স্টাড বা একটি ছোট রিং বেছে নেওয়া যেতে পারে। যাদের কানে ফুটো করা নেই, তাদের জন্য বিকল্প হিসেবে বাজারে বিভিন্ন ক্লিপ-অন রয়েছে। একটু অন্য রকম স্টাইল স্টেটমেন্ট চাইলে শুধু এক কানেও দুল পরে নেওয়া যায়। হতে পারে সেটা রিং, স্টাড এমনকি ইয়ারকাফও।
নেকলেস
গলায় লম্বা চেইন বা স্টেটমেন্ট সেন্টারপিসসহ একটি সাধারণ কালো ব্যান্ড হলো পুরুষের নেকলেস পরার সহজ উপায়। এগুলোর বিকল্প হিসেবে বেছে নেওয়া যায় মিলিটারি ডগ ট্যাগও। যদি মিলিটারি রংগুলো পছন্দ হয় আর নেকলেসটিকে আকর্ষণের কেন্দ্রে রাখতে চান, তাহলে পরামর্শ হলো ফ্ল্যাট বা ন্যূনতম রঙের পোশাক বেছে নেওয়ার, যাতে নেকলেসটি সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে। আর এখন তো মাল্টিলেয়ার নেকলেস পরার ট্রেন্ড চলছে। এথনিক থেকে স্মার্ট ক্যাজুয়াল—সবকিছুর সঙ্গেই দারুণ মানানসই এই স্টাইল।
ব্রেসলেট
জুয়েলারি হিসেবে ঘড়ির সঙ্গে কিংবা ঘড়ির বিকল্প হিসেবে পরা যেতে পারে ব্রেসলেট। আছে অনেক বিকল্প। অতি সাধারণ ব্যান্ডের মতো ব্রেসলেট থেকে শুরু করে পুঁতি গাঁথা—পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে পরে নেওয়া যাবে যেকোনোটি। তবে ব্রেসলেটের ক্ষেত্রে পরামর্শ দেওয়া হয় একসঙ্গে কয়েকটা পরার। অর্থাৎ স্ট্যাক আপ করে পরা যেতে পারে বিভিন্ন রকমের ব্রেসলেট। যদিও ব্রেসলেটের ক্ষেত্রে অধিকাংশের পছন্দ কালো বা বাদামি রং, অনুষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী সবুজ বা টোপাজের মতো অন্যান্য উজ্জ্বল রং নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করলেও মন্দ দেখাবে না। আর মেটাল তো এই সিজনে মাস্ট।
কলার পিন
ফরমাল পোশাকের সঙ্গে অনুষঙ্গ হিসেবে এর জোড় জমাটি। শুধু ফরমাল শার্ট-প্যান্ট পরলে বেছে নেওয়া যেতে পারে ফাঙ্কি গ্রাফিক কলার পিন। তবে একেবারেই ফরমাল লুক চাইলে এমন একটি সাদাসিধে কলার পিন বেছে নিতে হবে, যা ব্লেজার বা কোটের জন্য উপযুক্ত। এ ক্ষেত্রেও রং নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা যাবে অনায়াসে।
টাই অ্যাকসেন্ট
আরেকটি অনুষঙ্গ ফরমাল পোশাকের সঙ্গে দারুণ মানায়, তা হলো টাই অ্যাকসেন্ট বা টাই বার। এটি শুধু একটি জুয়েলারি পিস নয়; এর একটি কার্যকর দিক হলো, এটি টাই সঠিক জায়গায় ধরে রাখতে সাহায্য করে। কলার পিনের মতো টাই বারও হতে পারে ফাংকি কিংবা ফরমাল। শুধু মাথায় রাখতে হবে, টাইয়ের সঙ্গে যেন টাই বারের মিশেল হয় চমৎকার। প্রিন্টেড টাই পরলে একটি সাধারণ সিলভার কিংবা গোল্ডেন টাই বার বেছে নেওয়া যায়। আর সাধারণ রঙের সলিড টাই হলে এর সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন আকার ও রঙের টাই অ্যাকসেন্ট বেছে নিতে পারেন।
এসব চিরাচরিত জুয়েলারি পিস ছাড়াও আইব্রাও রিং, লেপেল পিন কিংবা কাফলিংও থাকতে পারে তালিকায়। এগুলোর মাঝে কোনটা বেছে নেওয়া হবে, তা নির্ভর করছে ব্যক্তিত্ব, পোশাকের ধরন আর নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্টের ওপর।

 শিরীন অন্যা
মডেল: নিহাফ
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top