ফিচার I ডু দ্য ডোপামিন
মুড বুস্টিং থেরাপি থেকে কম নয় মেকআপের নতুন এ মন্ত্র। ড্রেসিং থেকে ডেকরে ইতিমধ্যে প্রমাণিত যার প্রভাব
অতিমারিতে আক্রান্ত পৃথিবী তখন সবেমাত্র স্বস্তির নিশ্বাস নিতে শুরু করেছে। শরীরের অসুখের গতিবিধি তখন অনেকটাই আয়ত্তে। আর মহামারিতে আক্রান্ত মনের মেরামতের কাজও চলেছে সমানতালে। সবেতেই যেন স্বস্তির খোঁজ। পোশাকে ঠাসা ওয়্যারড্রোবের ড্রয়ার থেকে ঘরের কোণের ছোট দেয়াল—কিছুই বাদ পড়েনি। অতিমারির আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে তখন দারুণ দাওয়াইয়ের কাজ করে টিকটকের এক ট্রেন্ড। ডোপামিন নামক হরমোনের উদ্রেক ঘটানো এ ট্রেন্ড তখন সাড়া ফেলতে শুরু করে জীবনযাপনের প্রতিটি পর্যায়ে। প্রথমে ফ্যাশন, তারপর হোম ডেকর। প্রমাণিত হয়, চিফ ফিল গুড নিউরোট্রান্সমিটার অনুরণন ঘটানো এই ট্রেন্ড মুড বুস্টিংয়ে দারুণভাবে সফল। ফলাফল—সৌন্দর্যবিশ্বেও শুরু হয় নিরীক্ষা। মস্তিষ্কের ডোপামিন বুস্ট করতে পারে এমন ফিল গুড ফ্যাক্টরগুলোকে মেকআপের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার কাজে নেমে পড়েন বিউটি আর্টিস্টরা। আর তাদের ব্যাকআপ দেওয়ার জন্য বিউটি ব্র্র্যান্ডগুলোও তৈরি করতে শুরু করে নিত্যনতুন সব পণ্য। অতিমারির দিনগুলোর টপ চার্টে থাকা ক্লিন গার্ল লুকের অ্যান্টি ট্রেন্ড বলা যায় ডোপামিন মেকআপকে।
কিন্তু ডোপামিন মেকআপ আসলে কেমন? প্রথমে শুনলে মনে হতেই পারে, অনেক বেশি রঙের যোগে সেরে নিতে হবে এই মেকআপ। আসলে এর কোনো বাঁধাধরা মন্ত্র নেই। তবে মূলসূত্র একটাই, যা সবচেয়ে জরুরি। মেকআপের সঙ্গে মনস্তত্ত্বের মিশেল। যাতে ব্যক্তিমনে আনন্দের উদ্রেক হয়। সে ক্ষেত্রে পছন্দ মেনে কালার, টেক্সচার আর স্টাইল বেছে নেওয়া যেতে পারে, যাতে আয়নার সামনে নিজেকে সেরা দেখায়। সেই আনন্দের কি তুলনা হয়! ডোপামিন লেভেল হাই হতে বাধ্য। অনেকের কাছে আবার ডোমাপিন মেকআপ মানেই নস্টালজিয়া। প্রথম মেকআপ করার সুখস্মৃতিকে উসকে দেওয়া। হতে পারে তা আশির দশকের বোল্ড ব্লাশ অথবা নব্বইয়ের শিমারি আইলিড লুক। অথবা প্রতিদিনকার ডেইলি মেকআপ লুকে হঠাৎ রঙের ছটা। কালো আইলাইনারের বদলে না হয় অন্য কোনো রঙের টান পড়ল চোখের রেখাজুড়ে। তবে যাদের মনে এখনো খচখচানি রয়েছে ডোপামিন মেকআপ নিয়ে, তাদের জন্য একদম সহজ পরামর্শ। ছোট ছোট পরিবর্তন দিয়ে মেকআপটা শুরু করার। নতুন একটা আপলিফটিং কোন রঙের যোগে কেমন পাল্টে যায় পুরো মেকআপটা, সে অভিজ্ঞতাটুকু নেওয়ার সাহস সঞ্চার করলেই হবে। আর মেকআপের পর আয়নায় চোখ বোলালেই ঠিক টের পাওয়া যাবে মনের খবর। সেটাই তো চাই। তারপরও যাদের অনুপ্রেরণা দরকার, তাদের জন্য একদম বেসিক একটা তালিকা তৈরি করে দিয়েছেন খোদ মেকআপ আর্টিস্টরা। সঙ্গে পছন্দসই যোজন-বিয়োজনে আরও ইনক্লুসিভ করে তোলা যাবে।
শিমার অ্যান্ড স্পার্কেল
ডোপামিন মেকআপের সবচেয়ে ভালো উদাহরণ এটি। স্পার্কলি শাইনি এ স্টাইল ট্রাই করে দেখতে পারেন একদম নতুনেরা। প্রথম প্রয়াস হিসেবে মন্দ হবে না। শাটল শিমারি এই লুক চেহারায় অনেক লক্ষণীয় হবে না, তবে নজরে যে আসবে তা গ্যারান্টেড। আর এই লুক করে নেওয়া কঠিন কিছু নয়। শুধু চাই একটি মেটালিক ক্রিম আই শ্যাডো। আঙুল বা ফোলা ব্রাশের সাহায্যে চোখের পাতায় মাখিয়ে নিতে হবে। কমিয়ে বা বাড়িয়ে নেওয়া যাবে ইচ্ছেমতো। বাকি চেহারা চাইলে সিম্পল রাখা যায়। অথবা গো বোল্ড। শিমারি গ্লসি লিপগ্লসের সঙ্গতে, ব্যস!
বোল্ড ব্লাশ
চেহারায় চটজলদি হ্যাপি গ্লো এনে দিতে দারুণ। আর এ ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা যদি হয় আশির দশক, তাহলে তো কথাই নেই। প্রথমে ত্বক করে নিতে হবে উজ্জ্বল ও মসৃণ। এ ক্ষেত্রে ফেস গ্লস ব্যবহার করা যেতে পারে গ্লাস-গ্লো লুকের জন্য। তারপর ব্লাশ মাখার পালা। অল্প অল্প করে নিয়ে শুরু করতে হবে। চিকবোন থেকে কপালের টেম্পল অব্দি, ব্রাও বোনের নিচের অংশ পর্যন্ত। এ ক্ষেত্রে ক্রিম ব্লাশ ব্যবহারই ভালো। এগুলো সহজেই বিল্ডেবল। সঙ্গে চেহারায় এনে দেবে নরম, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল আভা।
ইলেকট্রিক লাইনার
হলুদ, নীল, সবুজ—যত রঙচঙে ততই ভালো। চটজলদি স্টেটমেন্ট লুকের জন্য একদম পারফেক্ট। আর লাইনের আঁকিবুঁকি নিয়েও হতে পারে নানান নিরীক্ষা। শুধু সে ল্যাশ লাইন ঘেঁষে দিতে হবে তা নয়, ফ্লোটিং, গ্লাফিক, ক্ল্যাসিক ক্যাট আইলাইন—সবেতেই সুন্দর দেখাবে। আর আইলাইনারগুলো যদি শিমারি হয়, তাহলে তো আরও ভালো। ট্রাই করে দেখা যেতেই পারে। ডোপামিনকে আরও উসকে দিতে।
সামারি ইয়েলো লিড
নরওয়ের প্রফেশনাল মেকআপ আর্টিস্ট হেলি নর্ডবির ক্রিয়েট করা এই লুক মাতিয়েছে পুরো সৌন্দর্যবিশ্ব। আলটিমেট সামার লুকের জন্য বেস্ট। মেটালিক ফিনিশের হলুদ আইশ্যাডোর লেয়ারিংয়ে চোখের পাতায় সূর্যের আলোকছটা ছড়িয়ে দেওয়াই মূল উদ্দেশ্য। সঙ্গে ডোপামিনের পারদ বাড়বে বৈ কমবে না।
স্টেটমেন্ট লিপ
শুধু যে চোখই সাজাতে হবে, ব্যাপারটা মোটেই এমন নয়। লিপস্টিক সবচেয়ে সহজ হাতিয়ার ডোপামিন মেকআপের। তাই তো বিউটি ব্র্যান্ডগুলো তাদের লিপ প্রডাক্টের কালার চার্টে যোগ করছে উজ্জ্বল হলুদ, নীল আর কমলার মতো রংগুলো। ফর্মুলাতেও মিলছে নানান অপশন। ম্যাট, শিমারি, মেটালিক থেকে গ্লসি পর্যন্ত। প্রথমবার এমন শেডের লিপস্টিকগুলো ট্রাই করার আগে খেয়াল রাখতে হবে চেহারার অন্য কোনো অংশে যেন রঙের আতিশয্য না থাকে। আর বাকিটা মনের কথা শুনলেই চলবে। কারণ, এই মেকআপে তাকে খুশি করাই যে মুখ্য!
জাহেরা শিরীন
মডেল: মাশিয়াত
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল