ফরহিম I ফর পারফেক্ট শেভ
ভেরি ফার্স্ট টাইম? নাকি পুরোনো রুটিনের হালনাগাদ? স্টেপ বাই স্টেপ গাইড রইল সুপার ক্লোজ, স্মুথ শেভিংয়ের জন্য। সব সময়
পুরুষদের রেগুলার গ্রুমিং রুটিনে শেভিং মাস্ট। ক্লান্ত, উষ্কখুষ্ক চেহারা নিমেষেই পাল্টে দিতে পারে। শুধু গোসলের সময় চটজলদি একটা ক্লিন শেভ। ব্যাস! এতে ফ্রেশনেসের সঙ্গে দারুণ কনফিডেন্সও চলে আসে চেহারায়।
সঠিক পদ্ধতি জানা না থাকলে শেভিং ব্যাপারটা বেশ ঝামেলার মনে হতে পারে। অনেকক্ষণ ধরে শেভ করার পরেও মনে হতে পারে, পারফেক্ট শেভিং ফিনিশিংটা ঠিক আসছে না। সময়, দরকারি সামগ্রী, প্রক্রিয়া—সবকিছু ঠিকঠাকভাবে একটু গুছিয়ে নিতে পারলেই পাওয়া যাবে নিখুঁত ফল।
শেভিং শুরুর আগে চেহারাকে ভালোভাবে তৈরি করে নেওয়া জরুরি। ফেস ক্লিনিংয়ের মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে সচরাচর ঠান্ডা পানি ব্যবহার করলেও শেভিংয়ের সময়টুকুতে ব্যবহার করা যেতে পারে ঈষদুষ্ণ পানি। এতে ত্বকের লোমকূপগুলো খুলে যাবে, আর ফেশিয়াল হেয়ারও নরম হয়ে আসবে অনেকটা। ক্লিনিং প্রসেসটা আরও নিখুঁত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে ফেশিয়াল ক্লিনজার বা প্রি-শেভ অয়েল। ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিলে শেভিংয়ের সময় ত্বকে অস্বস্তি অনেকটাই কম হয়।
শেভিংয়ের ক্ষেত্রে সঠিক টুলস নির্বাচন পুরো প্রক্রিয়াকে ঝক্কিহীন করতে সক্ষম। কোন ফেস শেপের ওপর ঠিক কোন ধরনের রেজর দিয়ে শেভ করলে, খুব চটজলদি দারুণ ফিনিশিংয়ের শেভ পাওয়া যাবে, তা বেছে নেওয়ার জন্য নানা ধরনের রেজর সম্পর্কে জেনে নেওয়া যেতে পারে ইন্টারনেটে। নির্দিষ্ট ফেস শেপের জন্য বিশেষ আকারের কোনো রেজর থাকলে, চোখ বন্ধ করে সেটাই বেছে নেওয়া ভালো। বাজারে সেফটি রেজর ও স্ট্রেইট কাট রেজরই বেশি মেলে। জেন্টস পার্লারগুলোতেও এই দুটিই ব্যবহার করা হয় বেশির ভাগ সময়ে। তবে যারা নতুন নতুন শেভিং শুরু করেছেন, তারা সেফটি রেজর বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের। এগুলোতে ডাবল লেয়ার রিস্ক প্রটেকশন দেওয়া থাকায় কাটাছেঁড়ার শঙ্কা কম।
অনেকের অভ্যাস প্রতিদিন সকালে শেভ করে নেওয়ার। তবে যাদের অফিস বা ক্লাস থাকে সকালে, স্বাভাবিকভাবেই আরাম-আয়েশ করে, যথেষ্ট সময় নিয়ে শেভ করার সুযোগ থাকে না। তাদের জন্য থ্রি ব্লেড রেজর। এগুলোতে তিনটি ধারালো ব্লেড পরপর থাকায় খুব কম সময়ে স্মুথ ও ফ্ললেস শেভ পাওয়া যায়।
রেজরের পাশাপাশি শেভিং ব্লেডেও দেওয়া উচিত সমান গুরুত্ব। ধারালো ব্লেডের ব্যবহারে শেভিং হয় সূক্ষ্ম ও স্মুথ। প্রতিবার শেভিংয়ের আগে চেঞ্জ করে নেওয়া যেতে পারে শেভিং ব্লেড। আগেরবার ব্যবহৃত ব্লেডে পানি লাগার কারণে শঙ্কা থাকে মরিচা পড়ার। আবার জীবাণুও জমে থাকতে পারে, যা থেকে ত্বকে সংক্রমণ ও অস্বস্তি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
শেভিংয়ের সময় ত্বকে একবার সোয়াইপ করা হলে ফেশিয়াল হেয়ারের পাশাপাশি মৃতকোষগুলোও আটকে যায় ব্লেডের সঙ্গে। এতে পরের সোয়াইপে ব্লেডটি ফুল পারফরম্যান্স দিতে পারে না। এ ছাড়া আটকে যাওয়া ডেড সেলগুলোর সঙ্গে ফেসের নতুন জায়গাগুলোতে শেভ করলে স্কিন ইরিটেশন হতে পারে। তাই শেভিংয়ের সময় প্রতিবার সোয়াইপের পরেই ব্লেডটি পানিতে ধুয়ে নেওয়া চাই।
প্রতিবার শেভিংয়ের পর শেভিং ব্লেড চেঞ্জ করা সুবিধাজনক হলেও শেভিং রেজরের বডি যেহেতু সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে আসে না, তাই এটি বারবার পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। শেভিংয়ের পরে কয়েকটি স্টেপ ফলো করলে একটি রেজরই পারফেক্টভাবে ইউজ করা যায় অনেক দিন। এতে খরচও কমে আসে। মেটাল রেজরগুলোর ক্ষেত্রে এতে পানি লেগে থাকলে মরিচা পড়তে পারে। আর প্লাস্টিকের ক্ষেত্রে রেজরগুলো হয়ে যায় পিচ্ছিল। এতে পরেরবার ব্যবহারের সময় ধরার আরাম আর থাকে না। তাই প্রতিবার শেভিং শেষে রেজরটি শুকিয়ে নেওয়া দরকার। শাওয়ার থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে শুষ্ক কোনো জায়গায়।
ফুল ফেসকে ক্লিন করার ক্ষেত্রে, শুরুতে চটজলদি কিছু কাজ সেরে নিলে শেভিংটা হবে একদমই ফ্ললেস। একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর ত্বকে মৃতকোষ জমা হয়। এতে স্কিন টোন থেকে টেক্সচার—প্রভাবিত হয় সবই। শেভিংয়ের আগে হালকা করে স্কিন এক্সফোলিয়েট করে নেওয়া যায়। যেকোনো স্ক্রাবিং ক্রিম দিয়ে আলতো করে কয়েকবার ম্যাসাজ করে নিলেই ত্বকের মৃতকোষগুলো উঠে আসবে। ব্যবহার করা যেতে পারে ফেস স্পঞ্জও। তবে স্কিনের ওপর খুব বেশি ঘষাঘষি না করাই শ্রেয়। অন্যথায় অনেক সময় স্কিন র্যাশ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অন্য সময় যেমন গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের মতো বিভিন্ন কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর খুব ভালো কাজ করলেও শেভিংয়ের আগে এগুলো এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
শেভিং জেল বা শেভিং ক্রিম অ্যাপ্লাই শেভিংয়ের একদম বেসিক স্টেপ। তাই এগুলো নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া চাই। শেভিং ক্রিমে কী কী উপাদানের ব্যবহার হয়েছে এবং তা ত্বকের যত্নে মানানসই কি না, সেদিকে দিতে হবে বাড়তি নজর। বাজারে তৈলাক্ত ও শুষ্ক—দুই ধরনের ত্বকের জন্যই শেভিং ফোম পাওয়া যায়। ত্বকের ধরনের সঙ্গে মিলিয়ে বেছে নিতে হবে এগুলো। প্রাকৃতিক উপাদানের উপস্থিতি আছে, এমন শেভিং ক্রিম ব্যবহার করতে পারলে সবচেয়ে ভালো। তাতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার শঙ্কা কমে। স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য শেভিং ক্রিম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে চাই বাড়তি সাবধানতা। অ্যালোভেরা, গ্লিসারিনের মতো ত্বকবান্ধব উপাদানে তৈরি শেভিং ক্রিমগুলো এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় অনায়াসে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এমন শেভিং ক্রিম বেছে নিতে হবে, যেগুলো ব্যবহারে তেলে ভাব কমে যাবে। আর শুষ্ক ত্বকের জন্য বেছে নেওয়া যেতে পারে মিল্ক, বাটার, কোকোনাট অয়েল দিয়ে তৈরি শেভিং ক্রিম। এতে শেভিংয়ের পরে স্কিন সফট হয়ে যাবে অনেকটা।
শেভিং ব্রাশও বেশ ভূমিকা রাখে শেভিংয়ের ক্ষেত্রে। ঘোড়ার চুলে তৈরি শেভিং ব্রাশ এ ক্ষেত্রে অনেকের পছন্দের শীর্ষে। এটি বেশ স্মুথ, আর ফেনা তৈরিতেও কাজে দেয় দারুণ। তবে ব্রাশ নির্বাচনের ক্ষেত্রে মাথায় রাখা চাই ত্বকে শেভিং জেল, নাকি সোপ ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপর। নরমাল শেভিং জেল বা শেভিং ক্রিমের জন্য সফট ও ঘন ব্রাশগুলোই বেশি ভালো কাজে দেয়। ক্রিম বা জেল পাতলা হওয়ায় সফট ব্রাশের ম্যাসাজে ত্বকে অস্বস্তি কম হয়। তবে যারা শেভিং সোপ ব্যবহার করেন, তাদের হার্ড ব্রাশই চলবে। কারণ, ফেনা তৈরি করার জন্য এগুলো সবচেয়ে কার্যকর। এগুলো দাড়ি নরম করতে সাহায্য করে। ফলে শেভিং বেশ সহজ হয়ে যায়।
পুরো প্রক্রিয়া শেষে আফটার শেভের ব্যবহার শেভিং এক্সপেরিয়েন্সকে করে তোলে পরিপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিসেপটিক সমৃদ্ধগুলো বেছে নেওয়াই ভালো। এতে শেভিংয়ের সময়ে কোথাও কাটাছেঁড়া হলে সহজেই জীবাণুমুক্ত হয়ে যাবে। ফলে সংক্রমণের শঙ্কাও কমে যাবে।
সাদিয়া আফরিন আইভী
মডেল: হাসিন
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: কৌশিক ইকবাল