মনোজাল I দীঘল কেশ লাগছে বেশ
পরম্পরা মোতাবেক শতভাগ মেয়েলি হয়ে ওঠার পূর্বশর্ত। বিপরীত লিঙ্গের কাছে আরও আকর্ষণীয় দেখাবার শস্ত্র। বিজ্ঞান কী বলছে
চুল কি লম্বা? উত্তর হ্যাঁ হলে তো সোনায় সোহাগা, আর না হলে মোটামুটি সর্বনাশ। আর অতি সম্প্রতি যাদের লম্বা চুল কেটে ছোট করে ফেলা হয়েছে, তাদের জন্য তো রীতিমতো দুঃসংবাদ। বহু পুরোনো বিশ্বাস, লম্বা চুলভর্তি মাথা নিয়ে একজন নারী অনেক আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারেন কিংবা নারীর সৌন্দর্য আসলে লুকিয়ে থাকে লম্বা চুলের গভীরতায়। কথাটি গবেষকদের। যদিও এটি মিথ্যা নয় যে, নারীর সৌন্দর্যে চুলের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। সময়ের বিবর্তনে চুলের হাজার রকমের স্টাইল, কাট চলে এলেও সৌন্দর্যবিচারে এখনো লম্বা চুলের জয়জয়কার, সেটিও অজানা নয়। কিন্তু তাই বলে এত!
অনেকের হয়তো বিশ্বাস হবে না, কিন্তু এক গবেষণায় প্রমাণিত, অপেক্ষাকৃত ছোট চুলের তুলনায় বিশ্বজুড়ে পুরুষেরা লম্বা চুলের নারীদের বেশি পছন্দ করেন। রীতিমতো পরিসংখ্যানে বের করা। কেন? লম্বা চুল নাকি বিভ্রান্তি এড়াতে সাহায্য করে। তবে এর পেছনে যে যুক্তি দেখানো হয়েছে, তা নিয়েই রয়েছে বিভ্রান্তি! বলা হচ্ছে, পুরুষদের কাছে নারীর লম্বা চুল পছন্দের প্রধান কারণ, এটি মেয়েলি। আজকাল অনেক ছেলেও ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুল রাখেন। কিন্তু কোমর পর্যন্ত লম্বা চুল রাখার প্রবণতা মূলত মেয়েদেরই রয়েছে।
বাহ্যিকভাবে ছেলে-মেয়ে আজকাল আলাদা করা কিছুটা দুষ্করই বটে, কিন্তু লম্বা চুল দেখে একজন পুরুষ নিশ্চিত হতে পারেন, মেয়েটি শতভাগ মেয়ে! এমনকি, নারীদের চুলের স্টাইল এবং পুরুষদের আচরণের ওপর করা এক পরীক্ষায় এ-ও প্রমাণিত হয়েছে, লম্বা চুলের নারীকে পুরুষের সাহায্য করার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত বেশি। লম্বা চুলের জন্য এই পক্ষপাতিত্বের পেছনে রীতিমতো বিজ্ঞান রয়েছে বিশ্বাস করেন গবেষকেরা। কী সেই বিজ্ঞান?
ফার্টিলিটি
পুরুষদের নাকি মানসিকভাবে ডিজাইন করা হয়েছে নারীদের মধ্যে নির্দিষ্ট শারীরিক বৈশিষ্ট্য খোঁজার জন্য। এর মধ্যে রয়েছে বড় বড় চোখ, ঠোঁট, আকর্ষণীয় নিতম্ব এবং অবশ্যই লম্বা চুল! বিশ্বাস করা হয়, দীঘল ঘন চুল একজন নারীর জেনেটিক কোডের প্রতিনিধিত্ব করে। চুল যদি বড়, ঘন, লম্বা ও সুন্দর হয়, তাহলে তার একটি প্রতিলিপি তৈরি করার মতো জিন আছে। অর্থাৎ তিনি সন্তান জন্ম দিতে পুরোপুরি সক্ষম এবং শক্তিশালী বলে ধরে নেওয়া হয়।
যৌবন
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকলেও পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশে সাধারণত লম্বা চুলকে তারুণ্যের প্রতীক মনে করা হয়। বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েরা এবং পরবর্তীকালে নারীরা তাদের দীঘল নরম ঢেউ খেলানো চুলে বিপরীত লিঙ্গকে আকৃষ্ট করবেন, এটাই স্বাভাবিক। চুল আছে মানে যৌবন অক্ষত। যার চুলে সেই আকর্ষণের অভাব, তিনি যৌবনের সৌন্দর্য হারাচ্ছেন—সমাজ সেটাই বিশ্বাস করে।
নারীত্ব
পুরুষ ও নারী প্রাথমিকভাবে তাদের পার্থক্যের কারণে একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হন। স্ত্রীলিঙ্গের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরুষদের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে আকর্ষণীয়; কারণ, এগুলো আলাদা, এবং পুরুষালি নয়। দীর্ঘ চুলের মতো অন্য কিছুই এত সুন্দরভাবে মেয়েলি ভাব বোঝাতে সচেষ্ট নয় বলে মনে করেন গবেষকেরা। মারমেইড, ডিজনি প্রিন্সেস, রেনেসাঁর চিত্রকর্ম—এসব শিল্পের ফর্মগুলোতে যুগে যুগে ঢেউ খেলানো চুলের তরুণীরা চিত্রিত হয়ে আসছেন। পুরুষেরা যে কারণে লম্বা চুল পছন্দ করেন, ঠিক একই কারণে হাই হিল এবং আবেদনময়ী পোশাক পছন্দ তাদের; কারণ, এতে মেয়েদের আরও মেয়েলি দেখায়।
বৈচিত্র্য
লম্বা চুলের নারীদের বৈচিত্র্যময় সব উপায়ে হেয়ারস্টাইল করার সুযোগ থাকে। সোজা, মসৃণ, বন্য, তরঙ্গায়িত, হাফ আপ-হাফ ডাউন, পিন করা, বিনুনিসহ নানা সাজে সাজানো যায়। এই বৈচিত্র্য পুরুষদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। যেহেতু অনেক পুরুষই চোখের সৌন্দর্যে বিশ্বাসী, তাই চুলের এই নাটকীয়তা তাকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে।
দায়িত্ব
লম্বা চুলের যত্ন নেওয়া সহজ নয়। হিট স্টাইলিং, আবহাওয়া পরিস্থিতি, জীবনধারা—সবই চুলকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। তাই যার চুল লম্বা, তিনি স্বাভাবিকভাবে এর পেছনে অনেক সময় আর শ্রম দিচ্ছেন বলে ধরে নেওয়া হয়। অর্থাৎ লম্বা, স্বাস্থ্যকর চুল প্রতিশ্রুতি এবং দায়িত্বের ইঙ্গিত দেয়। বোঝায় লম্বা চুলের মানুষটি দায়িত্বশীল এবং যত্ন নিতে সক্ষম। এটি এমন এক গুণ যা বিপরীত লিঙ্গের কাছে দারুণ আকর্ষণীয়।
কমনীয়তা
লম্বা চুল শিল্পের ফর্ম থেকে কম নয়। বাতাসে একজন নারীর দীঘল কালো চুল এলোমেলোভাবে উড়ছে এমন দৃশ্য জাদুকরীই বটে। পুরুষেরা জেনেটিক্যালি এমনভাবে তৈরি যে, এমন পরিস্থিতিতে তাদের চোখ আটকে যেতে বাধ্য! মাথাভর্তি লম্বা চুলের মালিকের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য এমন একটি দৃশ্য রীতিমতো ফ্রেম হিসেবে কাজ করে। যা তৎক্ষণাৎ প্রেমে পড়তে বাধ্য করে পুরুষদের।
কারণগুলো বোঝা যাচ্ছে তো? চুলকে নারীর অলংকার তো আর এমনি এমনি বলা হয় না! আমাদের দেশে একসময় নারীর সৌন্দর্যের পরিমাপক ছিল লম্বা চুল। যার চুল যত লম্বা, তাকে তত সুন্দরী হিসেবে বিবেচনা করা হতো। আর পশ্চিমা বিশ্বে বলা হয়, চুল হলো ব্যক্তিত্বের উচ্চতম অভিব্যক্তিগুলোর একটি। কিছু নেটিভ আমেরিকান আদিবাসীদের বিশ্বাস, চুলের মধ্যে শক্তি ও জ্ঞানের উৎস রয়েছে। তার মানে, যার চুল যত লম্বা, সেই নারী তত জ্ঞানী। মিল্টনের ইভ থেকে রাপুনজেল—রূপকথার রাজকন্যাদের লম্বা চুলের জাদুকরী ক্ষমতার জানান দেওয়া হয় সেই ছোটবেলা থেকেই। তবে তা যে শুধু সৌন্দর্যবর্ধনেই কার্যকর, ব্যাপারটি এখন আর তেমন নয়। কারণ, ওই যে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, লম্বা স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করে। কথাটার সত্যতা নিয়ে অনেকের মনে ভ্রান্তি থাকতে পারে। কিন্তু চুল যদি লম্বা, সুন্দর থাকে; ক্ষতির তো কিছু নেই। কথায় আছে না, লাইফ ইজ নট পারফেক্ট বাট ইয়োর হেয়ার ক্যান বি।
রত্না রহিমা
মডেল: শ্রাবস্তী
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস