নখদর্পণ I সলিউশন এক্সফোলিয়েশন
ত্বক আর চুলের যত্নে জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতায়। টিকটকেও ট্রেন্ডিং এই বিউটি হ্যাক। করে নেওয়া যাবে দুভাবে
ত্বকে যেমন বিল্ডআপ হয়, তেমনি নখেও। মৃতকোষের প্রলেপ, এনভায়রনমেন্ট এক্সপোজার, নানা ধরনের পণ্যের যথেচ্ছা ব্যবহার, নেইলপলিশ রিমুভারের কারণে নখে ধীরে ধীরে আস্তর তৈরি হতে শুরু করে। এসবের পাশাপাশি ড্যামেজড নখের কেরাটিন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। নেইল এক্সফোলিয়েশনের মাধ্যমে নখের বিল্ডআপ পরিষ্কার করা সম্ভব। উপরিভাগ পরিষ্কার থাকলে নখের নিজস্ব সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়। আকার ঠিক থাকে।
দুটি পদ্ধতিতে নখ এক্সফোলিয়েট করা যেতে পারে। ফিজিক্যাল ও কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশনের মাধ্যমে। প্রথমটিতে স্ক্রাব ব্যবহার করে নেইল সারফেস পরিষ্কার করতে হয়। সার্কুলার মোশনে নখ ও কিউটিকলে ২-৩ মিনিট মাসাজ করা হয় এ ক্ষেত্রে। ফলে নখের উপর জমে থাকা ময়লা ও মৃতকোষ উঠে আসে। নিয়মিত এ পদ্ধতির প্রয়োগে নেইল রিজেস অর্থাৎ নখের ওপরের লম্বা দাগ, মলিনতা দূর হয়। দীর্ঘ সময় নেইলপলিশ ব্যবহারে তৈরি হওয়া দানাদার কেরাটিনও দূর করা সম্ভব ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েশনের মাধ্যমে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের এক্সফোলিয়েটিং স্ক্রাব রয়েছে। হ্যান্ড ও বডি স্ক্রাব—উভয়ই ব্যবহার উপযোগী। এগুলোতে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড থাকলে তা ত্বককোষের পুনরুৎপাদনকে ত্বরান্বিত করে। নখ হয়ে ওঠে কোমল। উজ্জ্বলতা বাড়ে। মজবুত হয়।
কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশনের জন্য প্রয়োজন এমন কোনো প্রোডাক্ট, যা এএইচএ অথবা বিএইচএ সমৃদ্ধ। তিন ধরনের অ্যাসিড এগুলোতে উপস্থিত থাকে—গ্লাইকোলিক, ল্যাকটিক ও স্যালিসাইলিক। নখকে সম্পূর্ণ নতুন করে তুলতে পারে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড। নখে সার্কুলার মোশনে অ্যাপ্লাই করে নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষার পর ধুয়ে নিতে হবে। সমাপ্তি টানতে হবে কিউটিকল অয়েল আর হ্যান্ড ক্রিমে। অর্থাৎ কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশনের পর নখ ময়শ্চারাইজড রাখা জরুরি।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকে সাড়া ফেলেছে নতুন আরেকটি কৌশল। আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড ব্যবহার করে সম্পন্ন হচ্ছে নখের এক্সফোলিয়েশন।
নেইল এক্সফোলিয়েশন করার ধরাবাঁধা সময় নেই। তবে সপ্তাহে একবার করা যেতে পারে। জেল নেইলপলিশ তুলে নেওয়ার পরপরই নেইল এক্সফোলিয়েশন করা যায়। রিমুভার ব্যবহার করলে দেখে নিতে হবে তাতে অ্যাসিটোন আছে কি না। এটি একটি রাসায়নিক, যা নখের সারফেস শুষ্ক করে দেয়; আবার নখ ক্ষতিগ্রস্তও হতে পারে।
নখ সাজাতে নেইল আর্ট বরাবরই দারুণ। কিন্তু এতে নেইল প্লেট দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই আর্টটি পুরোনো হয়ে উঠে যাওয়ার পরপরই এক্সফোলিয়েট করে নিলে নেইল সারফেস তার হারানো শক্তি খুঁজে পাবে। ব্রিদিং স্পেস নখকে আরও সতেজ করে তুলবে। যারা নিয়মিত জেল ম্যানিকিওর অথবা অ্যাক্রিলিক নেইল করে থাকেন, তাদের জন্য নেইল এক্সফোলিয়েশন হতে পারে ভালো সমাধান। নখের ওপর জমতে থাকা বিউটিফিকেশনে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদানগুলো এই প্রক্রিয়ায় ডিপ ক্লিনিংয়ের মাধ্যমে উঠে আসে।
নখের যত্নে ‘ডু ইট ইয়োরসেলফ’ টেকনিকগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বাসাতেই নিয়মিত যত্ন নেওয়া সম্ভব। ভিটামিন ই অয়েল, অলিভ অয়েল, নারকেল তেল নখের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে; ভেঙে যাওয়া প্রতিরোধ করে, চকচকেও হয়।
এক্সফোলিয়েশনের পরে নখের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে গ্লো মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। গ্লাইকোলিক অ্যাসিড এবং বাকুচিওল সমৃদ্ধ মাস্ক ব্যবহারে নখ মসৃণ, উজ্জ্বল হয়। এ ছাড়া হাইড্রেটিং বাটার ব্যবহারে নখ একসঙ্গে অনেকগুলো পুষ্টিকর উপাদানের সংস্পর্শ পাবে। যেমন শিয়া বাটার, নারকেল, ভিটামিন ই। সেই সঙ্গে হাইড্রেটিং সেরাম নখ ও কিউটিকলের শুষ্কতা রোধে ভূমিকা রাখে। এগুলোতে থাকে হায়ালুরনিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি ফাইভ। এই দুয়ের সন্ধি নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। নখ হয়ে ওঠে মসৃণ। ঔজ্জ্বল্যও চোখে পড়ে।
যত্নের সঙ্গে নখ এক্সফোলিয়েশনের জন্য কিউটিকল এক্সফোলিয়েটর সংগ্রহে রাখা যায়। বর্তমানে বিভিন্ন ইনস্ট্রুমেন্ট ও প্রসাধনী পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। নিজের প্রয়োজন বুঝে বেছে নিতে পারলে নখ থাকবে সুস্থ ও সুন্দর।
সারাহ্ দীনা
ছবি: সংগ্রহ