skip to Main Content

তনুরাগ I বডি সেরাম বেনিফিট

অতটুকু জিনিস, আকাশছোঁয়া দাম! তা-ও কেন এত জনপ্রিয়

স্কিনের যত্নে সেরাম এখন অনেকে ব্যবহার করেন। কিন্তু তাদের বেশির ভাগই অভ্যস্ত ফেস অথবা আই সেরামে। কারণ, শরীরের যেকোনো অংশের চেয়ে এখনো মুখত্বককে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। মানা হয় মুখত্বকই পরিবেশ দূষণ আর সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে মেলে বাড়তি যত্নআত্তি। তাই বলে দেহত্বকের যে যত্নের প্রয়োজন নেই, তা কিন্তু নয়।
মুখত্বকের পাশাপাশি দেহত্বকে দেওয়া উচিত সমান নজর। বডি স্কিনে অনেক সময় ডিহাইড্রেশন এবং সানবার্নের সমস্যা দেখা দেয়। এর যত্নে লোশনের ব্যবহার থাকলেও বেশির ভাগ লোশন একটু ক্রিমি টেক্সচার হওয়ায় নিয়মিত ব্যবহারে অনেকে অস্বস্তিবোধ করেন। এসব সমস্যা থেকে রেহাই পেতে বডি সেরামের ব্যবহার বেশ কার্যকর। লাইট ওয়েট, ওয়াটারি টেক্সচারের হওয়ায় ইদানীং লোশনের চেয়ে বেশি এর জনপ্রিয়তা। ত্বকের ধরনভেদে ভিন্ন ভিন্ন উপাদানের বডি সেরাম ব্যবহার করা হয়। দেহত্বকের শুষ্কতা সারাই, আর্দ্রতা জোগানের পাশাপাশি উজ্জ্বলতা বাড়াতেও সহায়ক এগুলো।
বডি সেরামে দেহত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, হায়ালুরনিক অ্যাসিডসহ প্রায় সব প্রয়োজনীয় উপাদান থাকে। ত্বক বিশেষজ্ঞরা বডি সেরামকে দেহত্বকের পাওয়ার হাউস বলে থাকেন। এর কারণ, বডি সেরাম ব্যবহারে শুধু একটি সমস্যার সমাধান হয় এমনটি নয়, এটি একসঙ্গে অনেক কাজ করে। ত্বককে গভীর থেকে সারাইয়ের পাশাপাশি স্কিনের টেক্সচারকে করে তোলে নজরকাড়া। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল। অনেক উপাদান থাকা সত্ত্বেও বেশ লাইটওয়েট হওয়ায় গরমের সময় ব্যবহার করা যায় কোনো অস্বস্তি ছাড়াই। তবে সবচেয়ে বড় সুবিধা, ত্বকের নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য সে অনুযায়ী সেরাম বেছে নেওয়া যায়।
অনেক সময় পানি কম খেলে বা অতিরিক্ত গরমে দেহের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকও আর্দ্রতা হারায়। এতে শুষ্কতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পিলিংয়ের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। বডি সেরাম ব্যবহারে ত্বকে প্রতিরক্ষামূলক দেয়াল তৈরি হয়, যা প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা আটকে রাখে। ফলে কিছুদিন বডি সেরামের নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক তুলনামূলকভাবে বেশ পরিপুষ্ট, কোমল ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সঙ্গে পিলিংয়ের শঙ্কাও কমে যায়।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কমতে থাকে স্কিনের ইলাস্টিসিটি। এতে ত্বক ঝুলে যায় অনেকের। সঙ্গে দেখা দেয় ফাইন লাইনের সমস্যাও। ত্বক থেকে বয়সের ছাপ দূর করে ইলাস্টিসিটি বাড়াতে বডি সেরাম দারুণ সহায়ক। এ ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া যেতে পারে কোলাজেন সমৃদ্ধ বডি সেরামগুলো। এ ছাড়া অ্যান্টি-এজিংয়ের জন্য বিশেষভাবে তৈরি সেরামগুলো ব্যবহারেও স্কিনের ইলাস্টিসিটি বাড়ে এবং দূর হয় কুঁচকে যাওয়া ভাব।
দেহত্বকে পিগমেন্টেশনের সমস্যাও হতে পারে। কনুইয়ে, হাঁটুতে অথবা গলার ভাঁজে হালকা কালো দাগ নিয়ে অনেককে অস্বস্তিতে পড়তে হয়। নিয়াসিনামাইড এবং ভিটামিন সি যুক্ত বডি সেরাম নিয়মিত ব্যবহারে সহজে পিগমেন্টেশনের সমস্যা সেরে যায়। দাগছোপ হালকা হওয়ার পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতাও বাড়ে।
রোজকার দিনে কমবেশি সবারই রোদে যাওয়া হয়। ফলাফল পোড়া ত্বক। মুখত্বকের জন্য নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করলেও দেহত্বক রয়ে যায় অবহেলায়। আর দীর্ঘদিন ধরে সানবার্ন থেকে ত্বক হয়ে ওঠে তামাটে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ফর্মুলাযুক্ত সেরাম শরীর থেকে রোদে পোড়া দাগ কমিয়ে দেয় সহজেই।
মুখের মতো দেহত্বকেও মৃতকোষ জমা হয় কিছুদিন পরপর। তাই নিয়মিত এক্সফোলিয়েশন জরুরি। সে জন্য আছে এক্সফোলিয়েটিং বডি সেরাম। যার ব্যবহারে দেহত্বকের মৃতকোষ সারাইয়ের কাজ সেরে নেওয়া যায়। তবে এক্সফোলিয়েটিং বডি সেরাম ব্যবহার করা উচিত সপ্তাহে এক-দুই দিন। কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট থাকায় এগুলোর বেশি ব্যবহারে ত্বককোষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
বডি স্কিনের জন্য সেরাম বেছে নেওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় ত্বকের ধরন আর সমস্যা যাচাই করে নেওয়া। তারপর সে অনুযায়ী বেছে নিতে হবে সেরাম। অনেকের বিভিন্ন উপাদানে অ্যালার্জি থাকে। সে ক্ষেত্রে সেরাম বাছাইয়ের সময় এতে ব্যবহৃত ইনগ্রেডিয়েন্টগুলোর তালিকা দেখে নেওয়া ভালো। ত্বকে মানানসই নয় এমন কোনো উপাদান থাকলে সেই সেরাম এড়িয়ে যাওয়াই মঙ্গল। কারণ, এতে হিতে বিপরীতও হতে পারে। ত্বক সেনসিটিভ হলে বেছে নিতে হবে ডারমাটোলজি টেস্টেড সেরামগুলো। এগুলোই নিরাপদ অপশন। এসব সেরাম তৈরির সময় ধাপে ধাপে পরীক্ষা করা হয় এবং দেহে কোনো ধরনের ক্ষতি যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করা হয়।
বডি সেরাম ব্যবহারের বেশ কিছু নিয়ম আছে, যা মেনে চললে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে।
যেকোনো কিছু ব্যবহারের আগে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেওয়া চাই। নইলে ত্বকের শোষণক্ষমতা কমে যায়। পরবর্তী সময়ে সেরাম ব্যবহার করলে ত্বকের ভেতরের স্তর পর্যন্ত উপাদানগুলো পৌঁছায় না। এতে ত্বক সারাইয়ের পুরো প্রক্রিয়া ধীর হয়ে পড়ে। আর দেহত্বকের যে অংশগুলোতে সমস্যা বেশি, যেমন কনুই বা হাঁটু, সেখানে নিয়মিত সেরাম ব্যবহার করতে হবে।
দেহত্বকে নিয়মিত হালকা মাসাজ রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে নানা সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে। তবে শুষ্কত্বকে মাসাজ করলে উপকারের বদলে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই প্রথমে সেরাম মেখে নিয়ে তারপর সার্কুলার মোশনে মাসাজ করে নেওয়া যেতে পারে নিয়মিত। এতে ত্বকের ভেতরে বডি সেরাম বেশ ভালোভাবে প্রবেশ করে। দূর হয় রুক্ষতা।
তাই স্কিন কেয়ার রুটিনের মধ্যে একটা বডি সেরামের যোগ দেহত্বকে লক্ষণীয় পরিবর্তন নিয়ে আসতে অব্যর্থ।

 বিউটি ডেস্ক
মডেল: জলি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top