skip to Main Content

মনোজাল I ওয়্যারড্রোব এথনোগ্রাফি

ব্যক্তিত্ব থেকে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য—বোঝা যাবে ওয়্যারড্রোবের তাকে থরে থরে সাজানো পোশাকের স্তূপে তাকাতেই। বিশ্বাস হচ্ছে না?

ওয়্যারড্রোব এথনোগ্রাফি। এ আবার কী? কথাটি খটমটে। অপরিচিতও কিছুটা। সহজ করে বললে, আক্ষরিকভাবে এর অর্থ দাঁড়ায় ক্লজেটের ভেতরে কী আছে, তা দেখে ব্যক্তিত্বকে বোঝার একটি উপায়। অনেকটা পরীক্ষার মতো। এমন একটি পরীক্ষা, যা ভোক্তার আচরণ প্রকাশ করে। যেমন কোনো মানুষ কেন নির্দিষ্ট স্টাইল বা ফ্যাশনের প্রতি আকৃষ্ট? কিংবা শপিং ক্যাটাগরি, খরচ করার মানসিকতা থেকে শুরু করে ব্যক্তির চরিত্রের বৈশিষ্ট্য এবং তার নির্দিষ্ট বিশ্বাস ও মূল্যবোধও প্রকাশ করে।
ওয়্যারড্রোব দিয়ে এত কিছু? গবেষকদের মতে, মানুষের ওয়্যারড্রোবগুলো আসলে সংস্কৃতির পরিচায়ক। ব্যক্তি পরিচয়কে ধারণ, নিজের পুরোনো সংস্করণ সংরক্ষণ এবং আনন্দ-বেদনাকে উদ্‌যাপনের উৎস বলা যেতে পারে। খালি চোখে ওয়্যারড্রোবগুলোকে খুব সাধারণ মনে হলেও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে এর ফলাফল কিন্তু বিচিত্র। সেটি করা হবে কীভাবে? খুব সহজ। ঘরে বসে নিজেই নিজের পরীক্ষক-বিচারক—দুটোই বনে যেতে হবে এ ক্ষেত্রে। যার জন্য উত্তর দিতে হবে নিচের প্রশ্নগুলোর। তবে শুরু করা যাক।
 আপনার ক্লজেট বা ওয়্যারড্রোবে সাধারণত কতগুলো আইটেম আছে বা কী কী থাকে (জুতা, গয়না, ব্যাগ, পোশাক)?
 কত ঘন ঘন কাপড় ধোয়ার অভ্যাস এবং সেটি কীভাবে?
 ক্লজেটের সবচেয়ে পুরোনো আইটেম কী এবং সেটি কত পুরোনো? কেন এখনো সেটিকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে?
 সবচেয়ে নতুন আইটেম কী এবং কখন সেটি কেনা হয়েছিল?
 কত ঘন ঘন নতুন জামাকাপড় কেনা হয়? কত ঘন ঘন পুরোনো কাপড় বিলিয়ে দেওয়া হয়?
 ক্লজেটের মধ্যে কোন পোশাক বা গয়না সব সময় আবেগতাড়িত করে?
 এর মধ্যে থাকা কত শতাংশ আইটেম নিয়মিত পরা কিংবা ব্যবহার করা হয়?
 যদি একটি আইটেম কিছুটা ছিঁড়ে বা নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে সেটি কী করা হয়?
 ওয়্যারড্রোবে সাধারণত কী রঙের পোশাক প্রাধান্য পায়? কেন?
 পোশাকের কত শতাংশ একই প্যাটার্ন বা উজ্জ্বল রং দিয়ে তৈরি?
 ক্লজেটটি সব সময় গোছানো থাকে?
এমন সব সাধারণ প্রশ্ন, যার উত্তরগুলোও হওয়া চাই সাধারণ। কারণ এর মধ্য দিয়েই খুঁজে পাওয়া যাবে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিত্ব। ওয়্যারড্রোব এথনোগ্রাফি শব্দটির জন্মও সেখান থেকে। যার মূল উদ্দেশ্যই হলো মানুষের ওয়্যারড্রোবে জমে থাকা পোশাক নিয়ে স্টাডি। এই জমে থাকা পোশাক ব্যক্তির পরিচয়, ব্যক্তিত্ব, রীতিনীতি, ধারণা ও অভ্যাসের ওপর আলো ফেলে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা পৃথিবীতে ফ্যাশন-সচেতন নারীমাত্রই তার ওয়্যারড্রোবে কমপক্ষে ১০৩টি আইটেম থাকে। যেখান থেকে মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার করা হয়। গবেষকেরা পরিষ্কার করে বলেছেন, পোশাক সংগ্রহের এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে মানুষের জটিল সম্পর্ক রয়েছে। জামাকাপড় ও আনুষঙ্গিকগুলো অতীতের সত্তা, স্মৃতি ও সম্পর্কের বাহ্যিকীকরণ হিসেবে কাজ করে।
পৃথিবীতে ভোগবাদ বেড়েছে এবং কোটি কোটি ফ্যাশন পণ্যের আবির্ভাব ঘটেছে। ফলাফল—ফ্যাশন-সম্পর্কিত নতুন নতুন কনসেপ্ট সৃষ্টি হচ্ছে। ওয়্যারড্রোব এথনোগ্রাফি তেমনই একটি শব্দ, যা ফ্যাশন ও ভোগের এই রূপান্তরের সঙ্গে মিল রেখে উদ্ভূত। অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপক ইঙ্গুন গ্রিমস্ট্যাড ক্লেপ এবং মারি বেজারককে এই ধারণার প্রবর্তক বলা যায়। ধারণাটি বেশ চমকপ্রদ। কারণ, এটা প্রমাণ করেছে, পোশাক ব্যক্তির আসল পরিচয় প্রকাশ করে।
ওয়্যারড্রোবগুলো জমে থাকা পোশাক প্রদর্শন এবং পরা ছাড়াও সংগ্রহের উদ্দেশ্য বাতলায়। যে জিনিসগুলো কেনা হচ্ছে, সেগুলো ছাড়াও উপহার পাওয়া এবং হস্তান্তর করা জিনিসও এই সংগ্রহে স্থান পায়। যা থেকে সম্পর্কের তাৎপর্য অনুধাবন করা যায়। কারও কাছ থেকে পাওয়া উপহার কীভাবে রাখা হচ্ছে, তা মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়েও অনেক কিছু বলে। অনেক সময় অপছন্দের উপহারও যত্নে তুলে রাখা হয়, যিনি দিয়েছেন তার সম্মানের কথা ভেবে। আবার প্রিয় মানুষের স্মৃতি বহন করে এমন টুটা ফুটা নষ্ট হয়ে যাওয়া উপহারও যত্নে সাজিয়ে রাখা হয় ভালোবাসায়। কে, কীভাবে, কোন জিনিস তার ওয়্যারড্রোবে সাজিয়ে রেখেছেন, এর সবকিছুই তার ব্যক্তিত্বের অংশ।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাশন ট্রেন্ড আসে ও যায়। অতীতে একটি দোকানে যা পাওয়া গেছে, বর্তমানে তা না-ও পাওয়া যেতে পারে। সময়ের সঙ্গে পাল্টে যায় পছন্দও। একটি ওয়্যারড্রোব বছরের পর বছর ধরে সংগৃহীত আইটেমগুলোর মাধ্যমে নানা ব্যক্তিগত পরিবর্তনকে নথিভুক্ত করে। যার মধ্য দিয়ে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে, একসময় কী পছন্দের ছিল বা কীভাবে জীবনের একটি নির্দিষ্ট সময় কাটানো হয়েছে। আর আজ যা পরা হচ্ছে, তা আজকের পরিচায়ক। সময়ের সঙ্গে কী কী পরিবর্তন এসেছে, তা উদ্‌ঘাটন করতে পিছিয়ে যাওয়া এবং প্রিয় পোশাকগুলো আবার নেড়েচেড়ে দেখার মাধ্যমেই তা জানা সম্ভব হয়।
এথনোগ্রাফির অনেক স্টাডি পোশাকগুলোকে নানা বিভাগে বিভক্ত করে এবং পরিমাণ গণনা দিয়ে শুরু হয়। যেমন একটি ওয়্যারড্রোবে কতগুলো টি-শার্ট, ট্রাউজার, সোয়েটার, সালোয়ার-কামিজ বা শাড়ি আছে? কেন আছে? ব্যক্তিভেদে পছন্দ-অপছন্দ, কেনাকাটার উপায় এবং পরিমাপও ভিন্ন হয়। ভোক্তা আচরণ-নির্বিশেষে ব্যবহারের প্যাটার্নও হয় বৈচিত্র্যপূর্ণ। ওয়্যারড্রোব এথনোগ্রাফির প্রবক্তারা এই প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে একটি শক্তিশালী পয়েন্ট তৈরি করেন। এখন বেশির ভাগ ওয়্যারড্রোবই এমন পোশাকে পূর্ণ থাকে, যা আর প্রয়োজন নেই। গবেষকদের মতে, এই পোশাকগুলো দান করার মাধ্যমে মানসিক স্বস্তি খোঁজেন অনেকে। অন্যকে খুশি করার মাধ্যমে। বুঝেশুনে কেনাকাটা করাও গুরুত্বপূর্ণ। ফাস্ট ফ্যাশনে গা না ভাসিয়ে যদি বেছে বেছে প্রয়োজন বুঝে ভালো মানের পণ্য ক্রয় করা যায়, তাতে ভোক্তার অহেতুক খরচ কমে এবং অযাচিত পোশাক সংগ্রহের অভ্যাসও পরিবর্তন করা যায় সহজে।

 রত্না রহিমা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top