skip to Main Content

টেকসহি I রেসপনসিবল ফ্যাশন

দায় থেকেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ওঠা। ব্যক্তিসচেতনতায় প্রভাবিত করা ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে। ইতিবাচক পরিবর্তনই মূল লক্ষ্য

আলমারি ভর্তি পোশাকের সামনে দাঁড়িয়েও মনমতো কিছু খুঁজে না পাওয়ার অভিযোগ করেননি, এমন মানুষ খুব কম। ফলাফল—চিন্তাভাবনা ছাড়াই শপিং স্প্রি। এতে ফ্যাশন বাজেটের যেমন সঠিক ব্যবহার হয় না, তেমনি আলমারিতে বাড়ে কাপড়ের স্তূপ। এ সমস্যা সমাধানের নতুন কৌশল রেসপনসিবল ফ্যাশন ট্রেন্ড। ব্যক্তিসচেতনতা সৃষ্টি দিয়ে শুরু হলেও এর মূল উদ্দেশ্য গোটা ইন্ডাস্ট্রির চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনা। গ্রাহকদের তাদের পছন্দের ব্যাপারে সচেতন করে তোলার পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব পায় দায়িত্বশীলতা, সংবেদনশীলতা আর জবাবদিহিতা। রেসপনসিবল ফ্যাশন মুভমেন্ট গ্লোবাল অ্যাজেন্ডা বটে, কিন্তু শুরু হতে পারে ঘর থেকেই। সহজ সব কৌশল মেনে।
প্রথমেই শপিংয়ের জন্য পরিকল্পনা করে নেওয়া প্রয়োজন। ডেইলি ওয়্যার, ফেস্টিভ ওয়্যার—দুই-ই থাকতে পারে এ লিস্টে। এ ক্ষেত্রে একাধিক আয়োজনে পরে নেওয়া যাবে এমন প্রোডাক্ট বেছে নিলে সমস্যা কিছুটা কমবে। মডার্ন ও ফ্যাশনেবলের বদলে সিম্পল অ্যান্ড ক্ল্যাসিক ঘরানার পোশাক সংগ্রহে থাকলে তা বরং বারবার ব্যবহার করা সম্ভব। শুধু অ্যাকসেসরিজের হেরফেরেই তৈরি করে নেওয়া যাবে নিত্যনতুন লুক। প্রতিদিনের পোশাকের ক্ষেত্রেও রাখা যেতে পারে এমন পরিকল্পনা।
প্রয়োজনীয়তা হারালে স্তূপ না করে পোশাক বিতরণ করে দেওয়াই বরং বেশি স্বস্তির। আলমারিতে এমন অনেক পোশাক পড়ে থাকে, যা বহুদিন গায়ে তোলা হয় না। হয়তো ভাবনায় থাকে, কোনো একদিন পরা হবে। কখনো ফিগারের সাইজ কমিয়ে আনা তো কখনো পার্সোনাল অ্যাটাচমেন্টের অজুহাতে এগুলো রেখে দেওয়া হয়।
মূল্যহ্রাসের হাতছানি বরাবরই উদ্বুদ্ধ করে অতিরিক্ত কেনাকাটায়। কখনো কখনো অন্যের প্ররোচনাতেও বাড়তি শপিং করেন অনেকে। এ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে আত্মনিয়ন্ত্রণ বাড়ানো চাই। প্রয়োজন নেই এমন কিছু কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে, মূল্যহ্রাস যতই আকর্ষণীয় হোক।
একটি নতুন পোশাক কিনলে ওয়্যারড্রোব থেকে পুরোনোটি বাদ দেওয়ার ‘ওয়ান ইন ওয়ান’ টেকনিক দায়িত্বশীল হতে সাহায্য করতে পারে। এতে ওয়্যারড্রোবের কালেকশন যথাযথ থাকবে। কারণ ছাড়া কেনাকাটার প্রবণতায় লাগাম টানা যাবে।
ফ্যাশনের চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে ট্রেন্ড। তাই নতুন ধারার সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে চলতে গিয়ে অনেক সময় চলতি ধারার পোশাক কেনা হয় বটে, কিন্তু পরে ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মিল পাওয়া যায় না। তখন সেই পোশাক আলমারিতে অহেতুক জায়গা করে নেয়। সে ক্ষেত্রে ট্রেন্ডে গা ভাসানোর আগেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। হুটহাট করে নয়, বরং প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর একটা তালিকা করে মাসে একবার শপিংয়ে যাওয়া যেতে পারে।
অনুষঙ্গের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণ পোশাক হতে পারে অসাধারণ। যেমন একটি কালো কামিজের সঙ্গে একই রঙের ওড়না ব্যবহার করলে এক রকম দেখাবে, আবার তা বদলে যদি একটি রঙিন স্কার্ফ গলায় পেঁচিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে লুকটাও পাল্টে যাবে। সঙ্গে গয়নার অদলবদলেও পরিবর্তন আনা সম্ভব। তাই পোশাকের পাশাপাশি নানা রকম অ্যাকসেসরিজ কেনায় এবং সংগ্রহে গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে।
পোশাকের সঙ্গে স্মৃতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বহুদিন গায়ে ওঠেনি, এমন পোশাকও তাই থেকে যায়। মায়া পড়ে যাওয়ার কারণে বাতিল করতে না পারা এমন আইটেমগুলো কাবার্ডের সামনের দিকে রাখা যেতে পারে। এরপরের কয়েক মাস লক্ষ রাখতে হবে, সেগুলো একবারও ব্যবহার হয়েছে কি না। উত্তর ‘না’ হলে এগুলো বিদায় জানানোই ভালো।
একই রকম পোশাক একাধিক না কেনার বিষয়ে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বেসিক কালারের রেগুলার ওয়্যার কয়েকটি সংগ্রহে রাখলে ওয়্যারড্রোব কালেকশনে বাড়ে বৈচিত্র্য। এতে একঘেয়েমি যেমন দূর হয়, তেমনি মিক্স অ্যান্ড ম্যাচের মাধ্যমে লুকে পরিবর্তন আনা যায় যখন-তখন।
পোশাকের সঙ্গে ব্যক্তিত্বের মিল পাওয়া যায়। স্বাভাবিকভাবেই ব্যক্তিভেদে একেক ধরনের লুক পছন্দ। তাই ফ্যাশনে নিজস্বতাকে গুরুত্ব দিয়ে পোশাক পরিকল্পনা করা যায়। সে অনুযায়ী শপিং করলে উপযোগিতা বাড়বে। অপচয় কমবে।
ওয়্যারড্রোবের কোথায় কী আছে, তা নিয়ে ওয়াকিবহাল থাকা জরুরি। প্রতিটি পোশাক সম্পর্কে জানা থাকলে বোঝা যায় সংগ্রহে কী কী আছে, কী কী দরকার আর কী কী না কিনলেও চলবে।
ক্লদিং আইটেমে কোনো সমস্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাতিল করে দিতে হবে, ব্যাপারটা মোটেই এমন নয়। চেষ্টা করে দেখতে হবে কাস্টমাইজ করে পুনর্ব্যবহারের উপায় আছে কি না। থাকলে পুরোনো ওয়্যারড্রোবই ভোল পাল্টে হয়ে উঠবে নতুন। কালার নিউট্রালিটি ও টাইমলেসনেসকে প্রাধান্য দিয়ে। এতে করে নানা রকম লুক তৈরি সহজ হয়।
ক্যাপসুল ওয়্যারড্রোবের ধারণা সহায়তা করতে পারে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ফ্যাশনেবল হয়ে উঠতে। এই ফিলোসফিতে ব্যাগ, জুতার অ্যাকসেসরিজসহ মোট ৫০টি আইটেম ব্যবহারই যথেষ্ট।
আলমারিজুড়ে পোশাক আবশ্যক নয়। যথাযথ উপযোগ আছে এমন ফ্যাশন আইটেম জরুরি। সেই সঙ্গে জরুরি মানসিকতার পরিবর্তন। দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া চাই প্রতিটি ক্ষেত্রে। তবেই রেসপনসিবল ফ্যাশন মুভমেন্ট সফল হবে; যাতে সরাসরি প্রভাবিত হবে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি।

 সারাহ্ দীনা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top