এই শহর এই সময় I শোক ছুঁয়ে
শোকের মাস আগস্ট। তবু শোক পালন শুধু নয়, শোককে শক্তিতে রূপান্তরের উদ্যোগেও শামিল হতে হয় মানুষকে। হয়েছেন রাজধানীবাসীও। আগস্টজুড়ে নানা আয়োজন ছিল এ শহরের শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনে।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালা আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এর মধ্যে ১৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় ‘কবিতা ও গানে বঙ্গবন্ধু’। এদিন সন্ধ্যায়, আয়োজনের শুরুতেই কবিরা মঞ্চে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। কথা ও কবিতায় উদ্বোধনী পরিবেশনা নিয়ে আসেন প্রখ্যাত মঞ্চব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান। আরও কবিতা পড়েন কবি নির্মলেন্দু গুণ, মুহম্মদ নূরুল হুদা, নাসির আহমেদ, আসাদ মান্নান, শ্যাম সুন্দর শিকদার, ঝর্ণা রহমান, আবদুস সামাদ, আসাদুল্লাহ, সালাউদ্দিন আহাম্মদ, রাসেল আশেকী, লিয়াকত আলী লাকী, শ্যাম সুন্দর শিকদার প্রমুখ। অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে ছিল নৃত্যালেখ্য ‘ক্যানভাসে বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছর’, গান, নৃত্য পরিবেশনা প্রভৃতি।
‘সমকালের বয়ান’। চিত্রশিল্পী আতিয়া ইসলাম এ্যানির তৃতীয় একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। ১৮ থেকে ১৯ আগস্ট, অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে। এতে ২০১২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে অ্যাক্রিলিক মাধ্যমে আঁকা এই চিত্রশিল্পীর ২২টি চিত্রকর্ম স্থান পায়। এসব চিত্রকর্মে শিল্পকুশলতায় প্রকাশ পেয়েছে অস্থির সময়ের মর্মযন্ত্রণা, যেমনটা এ্যানির শিল্পকর্মে হরদম দেখা মেলে। প্রচলিত সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ঘৃণা আর ক্রোধও ফুটে উঠেছিল তাতে। বিশেষত, সমাজে নারীর অবস্থানকে তিনি তুলে এনেছেন নিগূঢ়ভাবে। ২০১৮ সালে দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে ৬৮টি দেশের প্রতিযোগীদের মধ্যে গ্র্যান্ড পুরস্কারজয়ী আতিয়া ইসলাম এ্যানির এবারের প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ভাইস চ্যান্সেলর ড. রুবানা হক এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। প্রদর্শনী প্রসঙ্গে আতিয়া ইসলাম এ্যানির ভাষ্য, তিনি স্বতন্ত্র শৈলীতে সমসাময়িক সামাজিক চেতনার সূক্ষ্মতাকে ধারণ করেন। দেশের সমকালীন জীবনের নানা ঘটনা তাকে স্পর্শ করে। এ ঘটনাবলি বহুমাত্রিক। শোষণ ও মানবিকবোধ লঙ্ঘনের কথা তিনি তার চিত্রকর্মের মাধ্যমে তুলে ধরার চালান প্রয়াস।
১১ আগস্ট আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে শুরু হয়েছিল চার দিনব্যাপী ফ্যাশনবিষয়ক প্রদর্শনী ‘নিডল থ্রেড অ্যান্ড আ স্ল্যাশ অব ওয়াটার’। পিরান বাংলাদেশের আয়োজনে প্রথম ফ্যাশন ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী। যৌথভাবে যুক্ত ছিলেন ডকুমেন্টারি ফটোগ্রাফার রাফিদ আল জহুর। এখানে প্রদর্শিত হয় মিরপুরের বেরাইদ অঞ্চলের নারীদের সৃজনশীল হ্যান্ডিক্র্যাফটস। জানা যায়, পিরান বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী যারিন তাসনিম জয়ীতা ও নাজিফা তাবাসসুম দেশীয় ফ্যাব্রিক, ক্র্যাফটস নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। সাজেদা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কোলাবরেশনের মাধ্যমে বেরাইদ এলাকার ৩০ জন নারীর দক্ষতা উন্নয়নের উদ্দেশ্যে কাজ করেছেন তারা। তারই ঝলক দেখা গেল এক্সিবিশনে। তাতে পোশাক ও ক্লদিং আইটেমগুলোর ফ্যাশন শো প্রদর্শিত হয় বেরাইদ অঞ্চলের বসবাসকারীদের নিয়ে। তারাই ছিলেন মডেল। আনকোরা ভঙ্গিমায় নিজেদের দেহে তারা পিরান বাংলাদেশের উদ্যোগের পোশাকগুলো পরেছিলেন। যেখানে নকশায় ফুটে উঠেছে বেরাইদ এলাকার পরিবেশ, বাসিন্দাদের জীবনাচরণ ও স্বপ্ন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউসেপ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুল করিম, ন্যাশনাল ক্র্যাফটস কাউন্সিল অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফুর রহমান, বিবিআনা স্টুডিও লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা লিপি খন্দকার, মেকওভার এক্সপার্ট বাপন রহমান প্রমুখ। মিডিয়া পার্টনার ছিল ক্যানভাস।
লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: সংগ্রহ