সঙ্গানুষঙ্গ I লুক কুল
ফ্রেমের ফেরে। ডাক্তারের প্রেসক্রাইবড বলেই যে বোরিং হতে হবে, তা কেন!
পৃথিবীর বুকে এমন মানুষ সংখ্যায় কম নন কিন্তু, প্রায় চার শ কোটি, যারা প্রতিদিন চশমা পরেন! জরিপ বলছে, ২০৫০ সাল অব্দি বিশ্বের অর্ধেক মানুষের চোখ ঢেকে যাবে ফ্রেমে। ইতোমধ্যে ১৫৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়া অত্যন্ত লাভজনক এই আইওয়্যার মার্কেট তাই নজর এড়ায়নি ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির। ফলাফল, ক্রমেই জরুরতের এই অনুষঙ্গ হয়ে উঠছে ডেইলি স্টাইল স্টেটমেন্টের অংশ। তাই জুতসই ফ্রেম বাছাই বাধ্যতামূলক! দৃষ্টিশক্তি শুধরে নেওয়ার পাশাপাশি ফ্যাশনেবল হয়ে উঠতে। মজার ব্যাপার, ফ্যাশন ট্রেন্ডের সরাসরি প্রভাব পড়ে আইওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে। সুস্পষ্টতা টের পাওয়া যায় এ বছরের চশমার ফ্রেমগুলোতে চোখ রাখলেই। বারবিকোর, রেট্রো ইন্সপায়ারড, ডোপামিন কালারড আর অভিনব শিলুয়েটেরগুলো এগিয়ে জনপ্রিয়তার তালিকায়। ফ্রেমে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে বাড়তি অনুষঙ্গ। সঙ্গে যদি মেনে চলা যায় ফ্যাশন স্টাইলিস্টদের অভিমত, তাহলেই কেল্লা ফতে! চশমায় কেবলাকান্ত নয়, দেখাবে কুল অ্যান্ড ক্লাসি।
শেপ হোক স্কয়ার, চলবে রেক্ট্যাঙ্গুলারও
এই সিজনে স্কয়ার ফ্রেমের হাইপ তুঙ্গে। সঙ্গে বেড়েছে রেক্ট্যাঙ্গুলার শেপের চাহিদাও। কারণ, হালের ডার্ক অ্যাকাডেমিয়া অ্যাসথেটিককে উসকে দেওয়া এই ফ্রেমগুলোতে লুকে তৈরি হয় গিক শিক ভাইব। পঞ্চাশের দশকের নিউজরুম স্টাইল চিকন রিমের চশমা এখন চোখে তুলছেন জেনজিরা। সেই সঙ্গে রেক্ট্যাঙ্গুলার আর স্কয়ার শেপের রেট্রো প্লাস্টিক ফ্রেমগুলোও ভাঙছে বিকিকিনির রেকর্ড। কারণ, ভিনটেজ ঘরানার হলেও এগুলো দিয়েই তৈরি হচ্ছে মডার্ন লুক। তবে এমন ফ্রেমে যারা অভ্যস্ত নন, ক্লাসিক কালোর বদলে ওয়ার্মিং টরটয়েজশেল অথবা নেভি আর ফরেস্ট গ্রিনের মতো ডার্ক জুয়েল টোনেরগুলো বেছে নিলে বরং সুবিধা হবে।
মিক্সড ম্যাটেরিয়াল
ফ্রেম একটাই, কিন্তু তাতে ভিন্ন ভিন্ন ম্যাটেরিয়ালের মিশ্রণ। এগুলোও স্টাইল কোশেন্ট বাড়িয়ে দিতে পারে অনেকখানি। একই চশমায় অ্যাসিটেট আর মেটালের জোড় এখন ট্রেন্ডিং। নিকেল সিলভার, স্টেইনলেস স্টিল আর মেটা অ্যালয়ের ব্যবহার এ ক্ষেত্রে বেশি। এর সঙ্গে সেলুলোজ অ্যাসিটেটের যোগ্য সঙ্গত। ব্যস! দেখতে স্টাইলিশ; দীর্ঘস্থায়ী, পোলকা ও ফ্লেক্সিবল ফ্রেম। যাদের রঙিন পছন্দ, তাদের জন্য জুতসই সেলুলোজ অ্যাসিটেট। এমনকি লেয়ারড কালারের ফ্রেমও তৈরি হয় এটি ব্যবহারে। একদম আনকনভেনশনাল কিছু চাই? অ্যাসিটেটের সঙ্গে এখন কাঠ এমনকি মার্বেল আর মাদার অব পার্লের মিশ্রণেও তৈরি হচ্ছে চমৎকার সব ফ্রেম। অভিনব টেক্সচার, প্যাটার্ন ও কালার কম্বিনেশনে তৈরি একেকটি ফ্রেম বোল্ড ফ্যাশন স্টেটমেন্ট তৈরিতে যথেষ্ট।
আইগ্লাস চেইন
নানি-দাদিদের সময়কার এ ফ্যাশন ফিরে এসেছে আবার। স্ট্রিট-স্টাইল স্টারদের কল্যাণে। দুইভাবে পরে নেওয়া যাবে। দুটো পদ্ধতিতেই—কুল ও ক্লাসি। প্রথমটি বিহাইন্ড দ্য নেক; অর্থাৎ গলার পেছনের দিক থেকে চেইন পরে নেওয়া হয়। আর অন্যটি ড্যাঙ্গলার স্টাইলে। অর্থাৎ হ্যাট স্ট্র্যাপের মতো চেহারার চারপাশে ঝুলে থাকবে। আইগ্লাস চেইন লম্বায় বড় হলে বার কয়েক গলায় পেঁচিয়েও নেওয়া যায়। আনকনভেনশনাল দেখাতে। ম্যাটেরিয়াল বেছে নেওয়ার জন্য রয়েছে হরেক রকম অপশন। এ ক্ষেত্রে মেটাল চেইন ক্লাসিক। কখনো চাঙ্কি তো কখনো একদম ডেলিকেট, ডিটেইলড ডিজাইনের। গোল্ড, রোজ গোল্ড আর সিলভার ফিনিশের। যারা লুকে আভিজাত্য আনতে চান, তাদের জন্য পার্লের তৈরি আইগ্লাস চেইন জুতসই। টাইমলেস হোয়াইট পার্লের পাশাপাশি সংগ্রহে রাখা যেতে পারে প্যাস্টেল টিন্টেড রংধনু রংগুলোও। ড্রামাটিক স্টেটমেন্টের জন্য চাঙ্কি টরটয়েজশেল চেইন থাকতে হবে সংগ্রহে। ফাঙ্কি, ফান লুক চাই? মাল্টিকালার বিডস আর টাসেল দিয়ে তৈরি আইগ্লাস চেইন মাস্ট বাই।
বোল্ড কালার
বছরটাই তো উজ্জ্বল সব রঙের। তাই শুধু পোশাকে সীমাবদ্ধ নেই, চশমার ফ্রেমেও টের পাওয়া যাচ্ছে এর আধিপত্য। রেগুলার ব্ল্যাক, টরটয়েজশেল কিংবা ওয়্যারফ্রেম বদলে চোখধাঁধানো এসব রঙের সংযুক্তি পুরো লুক আপডেট করে দেবে তুড়িতেই। ব্রাইট অ্যান্ড বোল্ড এসব ফ্রেম তাই এ বছর স্টাইল স্টেপলের তালিকায় ঢুকে গেছে। ক্যাজুয়াল কিংবা ফরমাল—সবকিছুর সঙ্গেই অনুষঙ্গ হিসেবে এগুলো দারুণ দেখায়। বারবিকোর পিঙ্ক, ফায়ারি রেড, সবুজ, হলুদ, বেগুনি, নীল যেন রংধনুর নানা রং প্রাণ জোগাচ্ছে ফ্রেমে। তবে হুট করেই এমন পরিবর্তন না চাইলে প্রথমে জুয়েল টোনড শেডগুলো বেছে নেওয়া হবে বুদ্ধিমানের। এ ক্ষেত্রে স্যাফায়ার ব্লু, এমারেল্ড গ্রিন থাকতে পারে পছন্দের তালিকায়। এমনকি এ বছরের প্যান্টন ‘কালার অব দ্য ইয়ার’ ডিপ রুবি শেডের ভিভা ম্যাজেন্টাও কিন্তু ফ্রেমের কালার অপশন হিসেবে চমৎকার। প্যাস্টেলও ইন ট্রেন্ড। আইসি ব্লু, প্যাস্টেল হানি, মাসকট গ্রিন, ল্যাভেন্ডার রংগুলোও দারুণ দেখায় চশমার ফ্রেমে।
সত্তরপ্রাণিত
‘বোল্ড অ্যান্ড আনঅ্যাপোলোজেটিক’—সত্তরের দশকের স্টাইলকে এভাবেই সংজ্ঞায়িত করা হয়। ফ্যাশনে এর পষ্ট প্রভাব রয়েছে এ বছর। তাই তো অ্যাভিয়েটর আর ওভারসাইজড রাউন্ড ফ্রেম নজর কাড়ছে সব জায়গায়। ডাবল ব্রিজ ফ্রেমের কাটতিও বেড়েছে অনেকখানি। মিনিমালিস্টিক ডিজাইনের কারণে ফ্যাশন ফরোয়ার্ড মানুষদের কাছে দিন দিন বাড়ছে এর কদর। ক্লিয়ার লাইন আর স্লিক প্রোফাইলের ডাবল ব্রিজ ফ্রেমগুলো তৈরি হয় এমনভাবে, যা নিশ্চিত করে সঠিক ও আরামদায়ক ফিট। ম্যাটেরিয়াল হিসেবে বেছে নেওয়া হয় মেটাল, অ্যাসিটেট থেকে কাঠ পর্যন্ত। আর এসব ফ্রেমে ব্যবহৃত হচ্ছে টিন্টেড ও গ্রেডিয়েন্ট লেন্স। সত্তরের সুস্পষ্টতা তো এতেই প্রমাণিত। নস্টালজিয়া যেমন উসকে দিচ্ছে, আইওয়্যারে প্রতিফলিত হচ্ছে ওল্ড ওয়ার্ল্ড চার্ম। তাতেই অনুপ্রাণিত হালের জেনজি স্টাইল।
তা ছাড়া এ বছর ফ্রেম বাছাইয়ের সময় নিজের স্কিন আন্ডারটোনের দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্টাইলিস্টরা। ব্ল্যাক, ব্লু, গ্রে ফ্রেম কুল আন্ডারটোনের জন্য পারফেক্ট। অন্যদিকে ট্যান, পিঙ্ক, রেড হচ্ছে ওয়ার্ম আন্ডারটোনে বেশি জুতসই। আর সব মেনে ফ্রেম চোখে তুললেই তৈরি ফুলপ্রুফ কুল স্টাইল।
জাহেরা শিরীন
মডেল: তাজরিয়ান ও নাজিয়া
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল ও ক্যানভাস