সঙ্গানুষঙ্গ I অলংকার অভিযান
কাস্টমাইজেশনের কল্যাণে অনন্য সব স্টেটমেন্ট পিস বদলে দিতে পারে বিয়ের সাজের ব্যাকরণ। শুধু মেনে চলা চাই সহজ কিছু সূত্র
বিয়ের গয়না। বর-কনে এবং তাদের পরিবারের আবেগের জায়গা। বেশির ভাগ বিয়ের আগেই, দুই পরিবারকে দেখা যায় জুয়েলারি স্টোরগুলো চষে বেড়াতে। গয়না গল্পে ওজন বাড়ায় নানা মত। রেডিমেড আর অর্ডার করে বানানো—দুই ধরনের মাঝে দেশীয় বিয়েতে ফরমায়েশি গয়নার চাহিদা অনেক আগে থেকে। সেই ধারা অব্যাহত এখনো। অনেক কনেকেই নিজের পছন্দের নকশায় গয়না গড়িয়ে নিতে দেখা যায়।
আনন্দ মিশ্রিত উত্তেজনার সঙ্গে কিছু দুশ্চিন্তাও থাকে এই গয়না তৈরির ক্ষেত্রে। যার কিছুটা এড়ানো সম্ভব ডিজাইনারের সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে। বিয়ের গয়না বিষয়ে কনের পরিকল্পনা জুয়েলারি ডিজাইনার বিস্তারিত জানলে সাজেশন যুক্তিযুক্ত হয়। অকপটে চাহিদা প্রকাশে সহজ হয় সাধের প্রাপ্তি।
কোন ধাতুতে গড়া!
বর্তমানে বিয়ের গয়না তৈরিতে বিভিন্ন ধরনের ধাতুর ব্যবহার বিশ্বব্যাপী দেখা যাচ্ছে। যেমন স্বর্ণ, প্লাটিনাম, প্লেডিয়াম, টাইটানিয়াম, সিলভার, টাংস্টেন ও স্টেইনলেস স্টিল। তবে দেশীয় বিয়েতে সোনার ব্যবহার সর্বাধিক। রুপার গয়নারও চাহিদা রয়েছে। আবার কেউ কেউ প্লাটিনামের সাটেল জুয়েলারি পছন্দ করেন। এখানে ব্যতিক্রমী বিষয় ভাবনায় রাখা যেতে পারে। সেটি হচ্ছে স্কিন টোন। জুয়েলারির কোন শেড কনের ত্বকরঙের সঙ্গে মানাবে, সেটি গুরুত্ব পেতে পারে। বর্তমানে ট্র্যাডিশনাল মেটাল কালারের বাইরেও গয়না তৈরি হচ্ছে। ক্যামিক্যাল ফিনিশিংয়ের মাধ্যমে এ ধরনের পরিবর্তন আনা হয়।
গয়না বাহার
অলংকার কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রথমে গঠনগত নকশার দিকে মনোযোগ দেওয়া যেতে পারে। গয়না হালকা নাকি ভারী হবে, সে বিষয়ে কনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে বাছাই সহজ হবে। আরেকটি বিষয় এখানে গুরুত্বপূর্ণ; তা হচ্ছে কনের পোশাকের নেকলাইন। কারণ, পোশাকের গলা ও গয়না অবস্থান করে পাশাপাশি। চলতি ধারায় জনপ্রিয় গলার নকশা আর নেকলেসের মেলবন্ধনের কিছু উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।
শাড়ির ব্লাউজ অথবা লেহেঙ্গার টপ—দুয়েই স্কুপ নেকলাইন দেখা যায়। সম্পূর্ণ গলা ও বুকের ওপরের অংশ প্রকাশ্যে আসে বলে গয়নার জন্য বেশ খানিকটা জায়গা পাওয়া যায়। তাই লহরসহ চোকার বেছে নেওয়া যেতে পারে স্কুপ নেকলাইনের সঙ্গে। আবার বিব নেকলেসও মানাবে।
ভি শেপ নেকলাইনে কাটের গভীরতা গুরুত্ব পায়। তাই ঝোলানো লহরের গলার হার বেছে নেওয়া যেতে পারে। আবার লং নেকলেস নেকলাইনে বর্ডারের মতো করে উপস্থাপিত হতে পারে।
বিয়ের পোশাক হিসেবে গাউন ও লেহেঙ্গা টপে স্ট্র্যাপলেস নেকলাইন বেছে নিতে দেখা যাচ্ছে ইদানীং। গলার পুরোটাসহ কাঁধের বেশ খানিকটা উন্মুক্ত থাকে সে ক্ষেত্রে। তাই প্রস্থ বেশি এমন হার মানাতে পারে। আবার কম দৈর্ঘ্যের পেনডেন্টসহ চেইন অথবা সরল নকশার চোকারও বেছে নেওয়া সম্ভব।
হাই কলার নেকলাইন অথবা ভারী অলংকরণের গলার ডিজাইনের ক্ষেত্রে লেয়ার করে নেকলেস পরা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে গলার কাছাকাছি পিসটি হালকা নকশার হলে ভালো। এতে সঙ্গ দিতে পারে দ্বিতীয় একটি লহর। আবার একটি সাধারণ নকশার ছোট চেইনের সঙ্গে লেয়ার করে লং ডিজাইনের নেকলেসও বেছে নেওয়া যায়।
সুইটহার্ট নেকলাইন এবারে ইন ট্রেন্ড। এ ধরনের নকশার নেকলাইনের সঙ্গে চোকার মানাবে বলে মনে করেন ফ্যাশনবোদ্ধারা। যেহেতু এমন গলার নকশার মাঝের অংশ বেশ খানিকটা গভীর হয়, তাই চোকারের সঙ্গে একটি ড্রপ সংযুক্ত হতে পারে। জেমস ড্রপ, পার্ল ড্রপ অথবা নকশা করা গোল্ড ড্রপও জুড়ে দেওয়া যেতে পারে।
ইন ট্রেন্ড
অলংকারের নকশা সনাতনি অথবা সমকালীন—দু রকমেরই হতে পারে। কোনোটাই পুরোপুরি আউট অব ফ্যাশন নয়। ইচ্ছা অনুযায়ী বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিয়ে উপলক্ষে তৈরি গয়না শুধু এই আয়োজন অথবা উৎসব উপলক্ষে পরা হবে, নাকি নিত্যদিনে গায়ে তোলা হবে, সেটিও রাখা যেতে পারে বিবেচনায়।
নকশার বিষয়ে বর্তমান ট্রেন্ডের খোঁজ রাখা যেতে পারে। যেমন অন্তর্জাল ঘেঁটে জানা যায়, এবারের বিয়ের গয়নায় ফ্লোরাল মোটিফ, লং চেইনের ক্ষেত্রে হুক ডিজাইন চলবে। আর জেম স্টোনের চলতি ধারায় থাকতে পারে হীরা, স্যাফায়ার, রুবি ও এমারেল্ড। এসব রত্নপাথরের প্রতি বর্তমান সময়ের কনেদের আগ্রহ বেড়েছে। জৌলুশ, টেকসই তত্ত্ব এবং অর্থপূর্ণ বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে ব্রাইডাল জুয়েলারি ফ্যাশনে এমন জহরতের প্রতিপত্তি বাড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাজেট ভাবনা
বিয়ের গয়না কেনার জন্য বাজেট অতি গুরুত্বপূর্ণ। শুরু থেকে এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকলে সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় সম্ভব হতে পারে। পরিকল্পিত বাজেট শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব না হলেও কাছাকাছিতে সম্পন্ন করার মনোভাব তৈরি হয়। ফলে হাজার রকমের নকশা থেকে নিজের বাজেটের মধ্যে গয়না খুঁজলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়।
ইন্টারনেটে ইন্টারেস্ট
মুঠোফোনে ইনস্টাগ্রাম, পিন্টারেস্ট অ্যাপ্লিকেশন ব্রাউজ করে হাজার রকম গয়নার ছবি দেখতে পাওয়া যায়। কনে সেখান থেকেও বেছে নিতে পারেন যেকোনো ধরনের ডিজাইন। আরও একটি কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যেতে পারে। সেটি হচ্ছে জুয়েলারি ব্র্যান্ডের ওয়েবসাইট। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন লেবেলের এই ওয়েবসাইটগুলো থেকে অলংকারের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ও দাম সম্পর্কে ধারণা বাসায় বসেই নেওয়া যাবে।
কারিগর কাহিনি
জুয়েলারি ডিজাইনারের প্রতি আস্থা ফরমায়েশি অলংকারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। পরিচিত কোনো জুয়েলার্স থাকলে সেখানে যাওয়া যেতে পারে। অথবা নামীদামি ব্র্যান্ডের গয়নাঘর হতে পারে বিকল্প। গয়না গড়ানোর ক্ষেত্রে যেহেতু নকশা, ধাতু ও অনুষঙ্গ—সবই কারিগরের তত্ত্বাবধানে থাকে, তাই সুস্পষ্ট যোগাযোগের মাধ্যমে পরিষ্কার তথ্য আদান-প্রদান করলে স্বস্তিকর অভিজ্ঞতা হবে।
সহজ সিদ্ধান্তের সঙ্গী
পোশাকের সঙ্গে গয়নার শতভাগ মিল! সেটা সব সময় সম্ভব নাও হতে পারে এই আশঙ্কা রয়েছে। ব্যবহৃত ধাতু ও জেম স্টোন—এই দুই ক্ষেত্রেই এটি হতে পারে। প্রতিটি মেটাল ও জেম স্টোনের টোন আর শেডে নিজস্বতা রয়েছে। সেটি মাথায় রাখা জরুরি।
কনের কানে বড় দুল একদম আবশ্যক নয়। ছোট কিংবা মাঝারি, টপ কিংবা ঝুমকা—সবই চলতে পারে। খেয়াল রাখা প্রয়োজন যেন ইয়ার রিংয়ের দৈর্ঘ্য যেন নেকলেসকে অতিক্রম না করে। তাতে জবরজং লাগবে। সরল সৌন্দর্য ঢেকে যাবে।
ব্লাউজের নেকলাইনকে ওভারল্যাপ করে এমন নেকলেসের বদলে এই দুটির মাঝে কিছুটা জায়গা ফাঁকা থাকবে এমন দৈর্ঘ্যেরগুলো বেছে নিলে স্বস্তি ও সৌন্দর্য প্রকাশ পাবে।
সারাহ্ দীনা
মডেল: মিয়াম
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: জে কে ফরেন ব্যান্ডস ও সাহার রহমান
জুয়েলারি: জড়োয়া হাউজ
ছবি: কৌশিক ইকবাল