ফিচার I পৌরুষপূর্ণ
কালার প্যালেটে এ রংগুলোর কদর এখন সবচেয়ে এগিয়ে। বরের পোশাক বাছাইয়ে। কখনো কনের লুকের সঙ্গে মিলিয়ে, তো কখনো বৈপরীত্যেই তৈরি পারফেক্ট স্টেটমেন্ট স্টাইল
সেই দিনগুলো চলে গেছে। কোন দিনগুলো? যখন ব্রাইডাল লুক বা বর-বউয়ের পোশাক নিয়ে এক্সপেরিমেন্টের সুযোগ তেমন ছিল না; বিশেষ করে বরের পোশাকে। শেরওয়ানি বা কুর্তায় প্রাধান্য পেত সাদা বা মেরুনের ওপর চকচকে সোনালি সুতার কাজ। আর এখন? যার যার পছন্দ অনুযায়ী পোশাক কাস্টমাইজ করে নেওয়া হয়। তবে সেখানেও আর একঘেয়েমি নেই, সবচেয়ে বড় পরিবর্তন চোখে পড়ছে রঙে। গাঢ় থেকে আমূল পাল্টে সেগুলো হয়ে উঠেছে প্রশান্তিদায়ক এবং হালকা। চোখের জন্য আরামদায়ক, ম্লান রং কিন্তু পরিস্ফুট। বলা বাহুল্য নয়, এই পুরো পরিবর্তনের মূলে রয়েছে বলিউড। আমাদের এই উপমহাদেশের ব্রাইডাল ট্রেন্ড অনেকটাই তাদের নিয়ন্ত্রণে বলতে দ্বিধা নেই। কেউ স্বীকার করুক আর না করুক। সে ক্ষেত্রে কয়েক বছর ধরে বরের এই নতুন লুক তারাই তৈরি করেছে। বিশেষ করে হালের প্যাস্টেল স্টেটমেন্ট ট্রেন্ড সম্পূর্ণই তাদের অবদান। প্রমাণ চাই? কয়েক বছর ধরে বলিউডের বিয়েগুলো লক্ষ করলেই মিলবে সত্যতা। বর-কনের পোশাকে প্যাস্টেলের মাতামাতি। সেই আনুশকা-বিরাট দিয়ে শুরু। তারপর একে একে সবাই। ব্রাইড ট্রেন্ডে প্যাস্টেলের রাজত্ব আগেও ছিল, তবে গ্রুম ট্রেন্ডে এ বছর প্যাস্টেল যেভাবে জাঁকিয়ে বসেছে, তাতে আর এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। ফ্যাশন গবেষকদের মতে, সুন্দর, প্রশান্তিদায়ক এবং আনন্দ উদ্যাপনের জন্য বর-পোশাক এমন হওয়া চাই, যা একনজরে সবার হৃদয় কাড়বে। এমন একটি রং বেছে নিতে হবে, যা নির্ঝঞ্ঝাট এবং আরামদায়ক। স্টার-স্টাডেড সেই সঙ্গে দুর্দান্ত।
রণবীর কাপুরের আইভরি সিল্ক শেরওয়ানির কথা মনে আছে? তাতে সূক্ষ্ম সূচিকর্ম করা হয়েছিল আলিয়া ভাটের প্যাস্টেল লেহেঙ্গার সঙ্গে মিলিয়ে। যাতে দুজনকে একসঙ্গে দেখতে অসাধারণ লাগে। গবেষকদের মতে, প্যাস্টেল বিবাহের মৌসুমে রাজত্ব করে আসছে; কারণ, এটিতে যে কাউকে মানিয়ে যায়। এবং রংগুলো বিয়ের গাঢ় এবং উজ্জ্বল রঙের একঘেয়েমি ভেঙে দেয়, আড়ম্বরের সঙ্গে আপোস না করেই।
অভিনেতা আলি ফজলের বিয়ের শেরওয়ানিও ছিল তার কনে রিচা চাড্ডার প্যাস্টেল লেহেঙ্গার সঙ্গে মেলানো। আসলে, ইদানীং বলিউডের বিয়ের পোশাকগুলো প্রমাণ করে যে বর ও কনের পোশাক—উভয় ক্ষেত্রেই প্যাস্টেল এখন ইন। যদিও দেশীয় শেরওয়ানিতে কালো, নেভি ব্লু এবং মেরুন রং সব সময় পুরুষদের জন্য ক্ল্যাসিক বলে মনে করা হয়। কিন্তু তাই বলে পথ পাল্টে প্যাস্টেলে যাওয়া যাবে না এমন কোনো নিয়ম তো আর নেই। বলিউডের বর্তমান সেনসেশন সিদ্ধার্থ মালহোত্রার কথাই ধরা যাক। কনে কিয়ারার মতোই তার পোশাকেও ছিল প্যাস্টেলের প্রশান্তিময় বর্ণালি। কিংবা ভিকি কৌশল। যার বিয়ের পোশাক ছিল একই সঙ্গে জাঁকালো ও আরামদায়ক।
আসলে, প্যাস্টেল রংগুলো বছরের পর বছর ধরেই মূল ফ্যাশন প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। তার কারণ, এগুলো কমনীয়, রোমান্টিক এবং গ্রীষ্ম থেকে বসন্ত পর্যন্ত সব ঋতুর জন্য উপযুক্ত। গতানুগতিক বর, যারা প্যাস্টেল ট্রেন্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং নতুন বলে মনে করেন, তারা তাদের বিয়ের পোশাক আপগ্রেড করতে এসব তারকার থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারেন। ফ্যাশন গবেষকেরাও বলছেন, বরদের ব্রাইডাল লুক আরও বিশেষ করে তোলার জন্য এক সেট ক্ল্যাসি প্যাস্টেল পোশাক যথেষ্ট। তার জন্যই বোধ হয়, এই বছর সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রাইডাল ট্রেন্ডে প্যাস্টেল প্রবণতার রাজত্ব। কুর্তা থেকে শেরওয়ানি পর্যন্ত সবই কভার হয়ে যায় এই ট্রেন্ডের মধ্যে।
প্যাস্টেল পোশাকগুলোতে কমবেশি সবাইকে দুর্দান্ত দেখায়। তা ছাড়া কনেরা যেহেতু প্যাস্টেলে ঝুঁকছেন, সে ক্ষেত্রে আমাদের বরদেরও একই পথে হাঁটার সময় এসেছে। প্যাস্টেল শেরওয়ানি বা কুর্তাগুলোকে স্টাইলাইজ করে নেওয়ার সবচেয়ে সহজ এবং ট্রেন্ডি উপায় হলো কনের সঙ্গে মিলিয়ে একই শেডের প্যাস্টেল পরা। মানারকলিতে প্যাস্টেল রঙের প্যালেট দারুণ লাগে। আজকাল অনেক বরই তাদের ব্রাইডাল লুক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পছন্দ করেন। সে কারণেই তারা আংরাখা স্টাইলের কুর্তা বা মানারকলি বেছে নেন। আর বর যদি হয় রণবীর সিংয়ের ফ্যান, তাহলে তো কথাই নেই। প্যাস্টেল মানারকলি লুক আধুনিক এবং একই সঙ্গে উৎসবসম্মত। আর যারা এসব এক্সপেরিমেন্টাল স্টাইলে যেতে চান না, তাদের জন্য সাদা এবং অফ হোয়াইট প্যাস্টেল পোশাক তো থাকছেই। সাদা সব সময়ই বরের শেরওয়ানি ও কুর্তাগুলো ক্ল্যাসিক করে তোলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে। যদিও সাদাকে ঠিক সত্যিকারের প্যাস্টেল বলা যায় না। তবে অফ হোয়াইটকে বলা যায় অবশ্যই। এই রংগুলো কেবল কালজয়ী নয়, বর শেরওয়ানি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে এগুলো খুব পছন্দের রংও। একেবারে সাদামাটা দেখাতে না চাইলে তাতে জুড়ে দেওয়া যেতে পারে মিরর ওয়ার্ক। যারা গ্লিটজ এবং গ্ল্যাম পছন্দ করেন, তাদের জন্য দারুণ অপশন হতে পারে।
এবার কো-অর্ডিনেটেড ব্রাইডাল ওয়্যার যেমন ট্রেন্ডে আছে, তেমনি বিপরীত টোনগুলোও কিন্তু একেবারে সেকেলে হয়ে যায়নি। বরের প্যাস্টেল টোন পছন্দ? তখনো কিন্তু নববধূ তার পোশাকে ক্ল্যাসিক ও উজ্জ্বল রং বেছে নিতেই পারেন। একরঙা পোশাকও বেছে নিতে পারেন বরেরা। এগুলোর সবচেয়ে সুবিধাজনক ব্যাপার হলো, ভারী এমব্রয়ডারিও এর ওপর দারুণ ফুটে ওঠে।
এবার আসা যাক নেহরু জ্যাকেটে। এই উপমহাদেশে বরের পোশাকের ট্রেন্ড পাল্টে যেতে পারে, কিন্তু নেহরু জ্যাকেট সব সময়ের জন্য। শুধু প্যাস্টেল রংটি বাছাই করে নিতে হবে, ব্যস। জ্যাকেটগুলোতে এ ধরনের রং কেবল ম্যাজিক্যালই মনে হয় না, পরার পর দেখায় ফ্যাশনেবলও। তাই বিপরীত রং বা রং মিলান্তি—যা-ই পছন্দ হোক না কেন, পোশাকের ওপর একটি ট্রেন্ডি প্যাস্টেল নেহরু জ্যাকেট পরে নিলেই কেল্লা ফতে। শুভ দৃষ্টির সময় কেবল কনে কেন, বর থেকেও চোখ ফেরাতে পারবে না কেউই।
রত্না রহিমা
মডেল: রাব্বী, নিহাফ ও হাসিন
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ওয়্যারড্রোব: জুরহেম
ছবি: কৌশিক ইকবাল