ফিচার I রং বদলি
রীতি-রেওয়াজ, নীতি-নিয়মের ঊর্ধ্বে স্বকীয়তায় উজ্জ্বল। নবলব্ধ এই সাজকৌশল। আধুনিক কনেকে স্বতন্ত্র, সমকালীন আর সপ্রতিভ দেখাতে
বিয়ের পোশাক ও লুকে বিস্তর পরিবর্তন এসেছে বেশ কয়েক বছরে। ভারতীয় উপমহাদেশে বিয়ের পোশাকে উজ্জ্বল রং, বিশেষত লাল রঙের আধিক্য ছিল কয়েক শতক ধরে। কনে তো বটেই, আমন্ত্রিত অতিথিরাও আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দিতে বেছে নেন উজ্জ্বল রঙের পোশাক। লাল, খয়েরি, কমলা, গোলাপি, ক্ষেত্রবিশেষে সবুজ রঙের পোশাকেই এ ধরনের আয়োজন হয়ে ওঠে বর্ণিল আনন্দঘন। উজ্জ্বল রং মূলত প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। তারুণ্য ও আনন্দের প্রতীক রূপে পরিগণিত হয় উজ্জ্বল রঙের পোশাক। বিয়ের অনুষ্ঠানে স্বাভাবিকভাবে সবার আগ্রহ ও উচ্ছ্বাস থাকে পোশাক নির্বাচনে। এই উপমহাদেশে বর-কনের ক্ষেত্রে মূলত লাল রংই পছন্দের তালিকায় শীর্ষে ছিল দীর্ঘদিন। এমনকি গত বছর অব্দিও তাই দেখা গেছে। যদিও পাশ্চাত্যে ও প্রাচ্যের অনেক জায়গায় সাদা এবং সাদা-ঘেঁষা শেডগুলো বেছে নেওয়া হয় বিয়ের পোশাকের প্রধান রং হিসেবে। কিন্তু এই অঞ্চলে বিয়েতে সাদার প্রভাব পড়েনি আগে কখনোই। চলতি বছরে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বিয়ের বর-কনেকে সফেদ রঙের পোশাকে নিজেদের সাজিয়ে নিতে দেখা গেছে। ফ্যাশনসচেতন তরুণ-তরুণীরা মূলত তাতে প্রভাবিত হয়ে এ ধারায় যোগ দিচ্ছেন, নিঃসন্দেহে বলা যায়।
সাদা রং শুভ্রতা ও শান্তির প্রতীক। পাশ্চাত্যের মতে বিয়ের মতো এমন পবিত্র অনুষ্ঠানে সাদাই একমাত্র রং হওয়া উচিত। কেননা শুরুটা হওয়া উচিত শান্তি ও সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে। কিন্তু প্রাচ্যের মতে, বিয়ে হচ্ছে মানুষের জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন উৎসব, জীবনকে রঙিন করে সাজিয়ে তোলার সময়। এ জন্য চারদিকে রঙিন সাজসজ্জা দেখা যায় আমাদের দেশীয় বিয়েতে। তবে সময়ের পরিক্রমায় পরিবর্তন আসে, তেমনি বিয়ের পোশাকেও পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। হালকা রং বেছে নেওয়ার ট্রেন্ড বা ফ্যাশন মূলত শুরু হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলি এবং অভিনেত্রী আনুশকা শর্মার হাত ধরে। তাদের বিয়ের পোশাক কিন্তু সাদা ছিল না; তবে হ্যাঁ, লাল রং থেকে বেরিয়ে এসে তারাই প্রথম বেছে নিয়েছিলেন হালকা গোলাপি। মুহূর্তের মধ্যে নেটিজেনদের মাঝে তো বটেই, গোটা দুনিয়ায় আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল তাদের বিয়ের ছবি, বিশেষ করে পোশাক। শুরুটা সেখান থেকে। সম্প্রতি আলিয়া ভাটের বিয়ের সাদা শাড়ি কিংবা পরিণীতি চোপড়ার সাদা লেহেঙ্গা মুগ্ধতার রেশ এনে দিয়েছে তাদের ফ্যান ও ফলোয়ারদের মধ্যে। এদিকে, আমাদের দেশের জনপ্রিয় সেলিব্রিটি আয়মান সাদিক এবং মুনজেরিন শহীদও সফেদ রং বেছে নিয়েছেন তাদের বিয়ের পোশাকে।
হঠাৎ করেই কেন এমন রুচির পরিবর্তন এসেছে দেশীয় বিয়ের পোশাকে, তা জানা গেল ডিজাইনার সাফিয়া সাথীর কাছ থেকে। সাথী বলেন, মূলত সফিস্টিকেশন বজায় রাখতে অর্থাৎ কমনীয়তা কিংবা কোমলতা প্রকাশ করতে বর-কনে হালকা রঙের দিকে ঝুঁকছেন। একই সঙ্গে পোশাকের চেয়ে তাদের নিজস্বতা, ব্যক্তিত্ব ও সম্প্রীতিকে প্রকাশ করতে পোশাক যেন অন্তরায় না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখছেন তারা। এ ক্ষেত্রে সাদা একদমই ঝুঁকিমুক্ত। সাফিয়া সাথীর স্টুডিওতে বিয়ের পোশাক ট্রায়াল করতে আসা একজন হবু বধূর সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা যায়, পোশাক ও গয়নার চেয়ে মানুষটা জরুরি। আপনি কতটা সুন্দর, তা বোঝানোর জন্য ঝলমলে পোশাক, মেকআপ কিংবা গয়নার প্রয়োজন নেই। মূলত সে জন্য সাদা পরতে চান তিনি বিয়েতে। পরিবারও তার পছন্দের সঙ্গে একমত।
একথা পরিষ্কার, মানুষ কী ভাববে, তার চেয়ে এখনকার বর কিংবা কনে বেশি প্রাধান্য দেন নিজেদের সন্তুষ্টি এবং পরিবারের ভালো লাগাকে। এমনটাই কি হওয়ার নয়! তবে আমরা কি আমাদের ঐতিহ্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছি—এ প্রশ্ন থেকেই যায়। সেটা একদমই নয়। কারণ, রঙের পরিবর্তন এলেও পোশাকের মোটিফ কিংবা প্যাটার্ন প্রায় একই রয়ে গেছে। অর্থাৎ চিরায়ত শাড়ি কিংবা লেহেঙ্গাই বেছে নিচ্ছেন নারীরা। আর পুরুষ এখনও সুন্দর পাঞ্জাবি কিংবা শেরওয়ানিতে। যদিও মোটিফে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষণীয়। ভারী কাজ, বিয়ের নকশার বদলে ফুলেল বেছে নিচ্ছেন বেশির ভাগ বর-কনে। অনেক বিশেষজ্ঞের ধারণা, বৈশ্বিক আবহাওয়ার বদলে যাওয়া রূপ প্রভাবিত করছে পোশাকে রঙের পাল্টে যাওয়াকে। হালকা রঙের পোশাকের সঙ্গে নিজের স্কিনটোন বজায় রেখে কমনীয় ও স্নিগ্ধ মেকআপ লুকও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ইদানীং। তবে গয়না ব্যবহারে দেখা যাচ্ছে বিশেষ পরিবর্তন। চিরাচরিত স্বর্ণালংকারের পাশাপাশি জ্যোর্তিময় জহরত অর্থাৎ দামি জেমস্টোন যেমন রুবি, এমারেল্ড, স্যাফায়ার, গারনেট, ওপাল, টোপাজের আধিপত্য লক্ষণীয় মাত্রায় বেড়েছে। যেন পোশাকে রঙের অভাব মেটাচ্ছে রঙিন সব গয়না। সাজকে করে তুলছে অভিজাত। নারীদের কাছে এসব মূল্যবান রত্নের কদর ভীষণ। সফেদ রঙের পোশাকের সঙ্গে উজ্জ্বল রত্নের গয়নার জোড় বিয়ের সাজকে অনন্য করে তুলতে যথেষ্ট।
নাইমা তাসনিম
মডেল: তুবা ও সাবরিন
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: বাটারফ্লাই বাই সাগুফতা
জুয়েলারি: জড়োয়া হাউজ
ছবি: কৌশিক ইকবাল