বিশেষ ফিচার I রেশমের গ্রাম
ঝিনাইদহের জুগিহুদা। রেশম চাষ নিভৃত এই পল্লির অর্থনীতি পাল্টে দিচ্ছে। জেগে উঠছে নতুন ভবিষ্যৎ। ঘুরে এসে জানাচ্ছেন জুনেদ আহমাদ মুহতাসীম মিশাল
‘আমি কখনো এই পেশা ছাড়ি নাই। ধরে রেখেছি বারো বছর ধরে’, বলছিলেন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার জুগিহুদা গ্রামের নুরুল হক। তিনি ’৮১-৮২ সাল থেকে রেশম চাষ শুরু করেন।
সে সময় এলাকার চেয়ারম্যান ড. আতাউর রহমান নিজ উদ্যোগে রেশম চাষ সম্পর্কে চাষিদের জানান। সেখান থেকে স্থানীয় অনেকেই এর প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন। নুরুল হক তাদের একজন।
রেশম চাষের আগে জুগিহুদা গ্রামের সবাই কৃষিকাজ করতেন। তাদের সবকিছু নির্ভর করতো ফসল উৎপাদনের ওপর। পরে রেশমের চাষের সুযোগ পেলে ধীরে ধীরে পাল্টাতে থাকে গ্রামের চেহারা। উদ্যোগীদের কাজ দেখে ধীরে ধীরে মানুষ এগিয়ে আসতে থাকে রেশম চাষে। একসময় গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ আগ্রহী হয়ে এই কাজে হাত দেন।
নুরুল হকের বয়স তখন ত্রিশ। তিনি প্রচলিত কৃষিকাজ ছেড়ে প্রথমবারের মতো রেশম চাষ শুরু করেন। তার পরিবারের অনেকেই এতে সায় দেয়নি। তবু নিজের চেষ্টায় নতুন কিছুর আশায় তিনি কাজ শুরু করেন। তার রেশম চাষের পথচলা দুই যুগের বেশি। এর মাঝে তিনি সফলতা পেয়েছেন, আবার মন্দ সময়েরও মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবু তিনি হাল ছাড়েননি।
আগে এই গ্রাম থেকে প্রায় এক ট্রাক গুটি সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া হতো। পরে বিভিন্ন কারণে কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখানে বিপর্যয় শুরু হয়। চাষ হতো ঠিকই, কিন্তু গুটি কেনার মানুষ ছিল না। ফলে সে সময় নামমাত্র দামে তাদের বিক্রি করে দিতে হতো সব গুটি। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। অনেক রেশমচাষি চাষ ছেড়ে দেয়। আস্তে আস্তে কমে আসে চাষির সংখ্যা। কমে গুটি উৎপাদন। অনেকেই তখন থেকে অন্তত বারো বছর অপেক্ষা করেছেন। নুরুল হক তাদের একজন।
জুগিহুদা গ্রামে এখন রেশম চাষের বেশ সুযোগ পাচ্ছেন চাষিরা। এখানে সরকারিভাবে এক হাজার তুঁতগাছ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এগুলোর পাতাই রেশম পোকার খাদ্য। নুরুল হক নিজের উদ্যোগে সাড়ে চার শ গাছ লাগিয়েছেন গ্রামের রাস্তার পাশে।
বছরে চারটি পর্ব আসে রেশমের। মাঝে মাঝে সেটা তিনটাও হয়। প্রতি পর্বে ২টি করে গুণ দেয়া হয় প্রত্যেক চাষিকে। সে গুণ তাদের পুষতে হয় ২৫-৩০ দিন। এই সময়ে বেশি গরম অথবা বেশি ঠান্ডা গুণ মেরে ফেলে। আবার মাঝে মাঝে গুণের অসুখ দেখা দেয়। তার জন্য রাজশাহী থেকে লোক আসে এবং তা পরীক্ষা করতে নিয়ে যায়। পরে তা বদলে চাষিকে আলাদা গুণ দেয়া হয়। গুণ থেকে গুটি হয়। তা বিক্রি করা হয় সেখানকার সরকারি অফিসে। প্রতিটি পর্বে গুটি বিক্রি করে একজন চাষি আয় করেন প্রায় ১২ হাজার টাকা। বছরে তাদের প্রায় ৬০ হাজার কিংবা তার বেশি আয় হয়।
বর্তমানে অনেক চাষি আগ্রহী হয়ে রেশম চাষে এগিয়ে আসছেন। খুব অল্প পরিশ্রমে ভালো আয় হয় এতে। ফলে এর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখা যাচ্ছে এই গ্রামের অর্থনীতিতে।
ছবি: লেখক