ফিচার I গয়নার ভার্চ্যুয়াল দোকান
দেশীয় গয়না নিয়ে গড়ে উঠেছে বেশ ক’টি অনলাইন শপ। সহজলভ্য উপকরণে তৈরি এসব গয়নার চাহিদা বিপুল
মাটি, মেটাল, কড়ি ও বিডসের নানা রকম গয়না এখন বেশ জনপ্রিয়। হাতভর্তি চুড়ি ছাড়া বাঙালিয়ানা পূর্ণতা পায় না। শাড়ির সঙ্গে চুড়ির যেন এক নিবিড় সম্পর্ক। রেশমি, বেলোয়ারি, জয়পুরি- সব রকম চুড়িরই সমান কদর। সুতি শাড়ি আর বাহারি চুড়ি-দুলে বাঙালি নারীরা তাই সাজতে পিছিয়ে থাকেন না।
ব্রেসলেট, আংটি কিংবা লকেটের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। উৎসবে তা আরও বেশি মাত্রা পায়। মাটির তৈরি কিংবা দেশি ধাঁচের গয়না বাঙালি নারীর সাজে পূর্ণতা এনে দেয়।
আরও আছে মেটালের মালা, বড় লকেট, কাঠ, বাঁশ, বেতসহ নানা রকম গয়না। শাড়ির পাশাপাশি টপস, থ্রিপিসের সঙ্গে এসব পরা যেতে পারে।
ব্যতিক্রম
‘আমি চারুকলার দাদুর ছেলে’- এই বলেই পরিচয় দেন নজরুল ইসলাম বাবু। সেই দাদু আসলে জয়নুল আবেদিনের মডেল। পরবর্তী সময়ে তার হাত ধরে মাটির গয়নার বেশ প্রচলন ঘটেছে। ‘গয়না বানানো আমার পেশা না শুধু, এটা আমার নেশা’- বললেন তিনি। ছোটবেলায় বাবার কাছে দেখেছেন কীভাবে বানাতে হয় গয়না। এরপরে সেখান থেকে আজ নিজেই তৈরি করছেন বিভিন্ন রকমের গয়না। সেসব বিক্রি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা অনুষদের সামনে।
পাথর আর পোড়ামাটির ফলক দিয়েও গয়না তৈরি করেন বাবু। সারা দিন ধরে বানানো গয়না নিয়ে বিকেলে বসেন চারুকলার সামনে। তিনি বলেন, ‘এইটা আমার শখ। আমি ব্যবসা করতে চাই না। তবু পেট চালানোর দায়ে করতে হয়।’
মূল উপাদান রুদ্রাক্ষ, রিঠা, কড়ি, বিভিন্ন ফলের বীজ, মাটি। এগুলো দিয়ে তিনি তৈরি করেন মালা, কানের দুল, কোমরের বিছা, চুড়ি- বলতে গেলে সব রকম গয়না। দামও খুব কম। ৩০ থেকে শুরু করে ৮০ টাকা।
আজকাল গয়নার অনলাইন বাজার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এগুলোর নকশার মধ্যে থাকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকতার ছোঁয়া।
অনেকে ঐতিহ্য মেনে সেজে ওঠেন নতুন গয়নায়।
ফার্মাসিতে পড়ুয়া অন্বেষা দত্তর আগ্রহ ছিল আর্টে। গয়না বানানোর প্রেরণা সেখান থেকেই। চট্টগ্রামে, নিজের ঘরই তার কর্মক্ষেত্র। স্বপ্ন দেখেন, পরবর্তী সময়ে একটা ছোট দোকান খুলবেন। তার অনলাইন শপের নাম ত্রিনিত্রি। গয়না তৈরির পাশাপাশি পোশাকের ডিজাইন ও শাড়ির ওপর কাজ করে থাকেন।
অরিগামি বানিয়ে ক-বাঙালের কাজ শুরু। নিজের জন্য গয়না বানাতেন লিজা। অনুপ্রেরণায় ছিলেন উত্তম। তারপরই শুরু হয়ে গেল তাদের কাজ।
খুব অল্প সময়ে অনলাইন বাজারে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। বয়স বেশি দিন নয়, মাত্র বছর পেরোবে। এরই মাঝে ক-বাঙাল মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। নিজেদের চারপাশের ঐতিহ্যের হারিয়ে যাওয়া উপাদান তাদের ভাবায়। সেসব নতুন করে ফিরিয়ে আনতেই এই উদ্যোগ।
ক-বাঙাল এবার নিয়ে কাজ করেছে কড়ি, মেটাল, রঙবেরঙের সুতার সমন্বয়ে। এর মাঝে আছে আংটি, গলার মালা, কানের দুল ইত্যাদি। আনন্দের সাত রঙ নিয়ে তাদের উপস্থাপন। যা বাঙালি মেয়েদের পোশাকের সঙ্গে মিশে নতুন লুক তৈরি করে।
হাতে তৈরি দেশীয় ধাঁচের গয়না নিয়ে গড়ে উঠেছে লহরি। তাহসীন নিজের ঘরে বসে কল্পনা থেকে সাজিয়ে তোলেন তার গয়নার সম্ভার। বাস্তবে যেখানে কখনো হাতের আংটিতে ফুটেছে ফুল অথবা বধূ শাড়ির আঁচলের নিচে থেকে ঘোমটা সরিয়ে উঁকি দিচ্ছে; কিংবা আকাশের বিশালতার রঙ থেকে একটু নীল নিয়ে, নীল পুঁতি দিয়ে গড়ে ফেলেন গলার শোভা। এমনই এক অনলাইন দোকান লহরি।
রঙ আর রঙিন জিনিসের প্রতি আলাদা একটা অনুরাগ আছে তার। নিজে রঙিন থাকতে চান। সেভাবে দেখতেও পছন্দ করেন। তাই তার কাজে বিভিন্ন ধরনের পেইন্টিং ফুটে ওঠে। তিনি অনুপ্রাণিত হন রিকশা-ট্রাকের পেইন্ট দেখে।
শখ থেকেই শুরু এই ভার্চ্যুয়াল দোকানের পথচলা। সোহানা লাবণী খুব চঞ্চল প্রকৃতির হলেও একটা বিষয়ে বেশ স্থির। আর তা হলো গয়না বানানোর কাজ। মানুষের পছন্দ আর নিজের শখের মিশেলে তৈরি করেন গয়না। যেভাবে সাজাতে চান। বানান সেভাবেই। এবারের আয়োজনে আছে কাঠের উপরে নানা নকশায় তুলে ধরা গলার মালা। সঙ্গে থাকছে খোঁপায় বাঁধার কাঁটা, হরেক রকমের দুল আর পায়েল।
ফারহানা আফরিনের শুরু মায়ের কাজ দেখে। মা সুই-সুতার কাজ করতেন আর সেখান থেকেই একধরনের ভালো লাগার জন্ম। পরে তিনি এর সঙ্গে কাঠ আর কাপড়ের মেলবন্ধন ঘটিয়ে এক নতুন ধরনের গয়নার জন্ম দিলেন।
ফুল্লরা চর্যাপদের একটি চরিত্র। যে সব সময় সাজসজ্জায় নিজের চারপাশের প্রকৃতির উপাদান ব্যবহার করত।
এখানকার গয়নার মূল উপাদান হলো কাঠ, কাপড় আর হরেক রকমের রঙিন সুতা। কাঠের মাঝে সুতা বুনে কী করে কারুশিল্প গড়ে ওঠে, তার এক উদাহরণ এটি। নতুন মালা, আংটি, দুল, ব্রেসলেট নিয়ে আসছে এই অনলাইন শপ। কাজ চলছে ছেলেদের ব্রেসলেট ও ঘড়ি নিয়ে।
আহমাদ মুহতাসীম
মডেল: প্রিয়াম
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন, ওমর ফারুক ও আসিফ চৌধুরী
জুয়েলারি: মাধুরি সঞ্চিতা স্মৃতি