skip to Main Content

ফিচার I সালতামামি ২০২৩ ফ্যাশন দুনিয়া

ফ্যাশন-সচেতনদের স্টাইল জার্নালে বছরজুড়েই প্রাণ সঞ্চার করেছে এ ট্রেন্ডগুলো। কোনোটাতে পুরোনো দিনের প্রবল প্রতাপ তো কোনোটা একদম হালফিলের। রাডারের ঘুরপাকে কেমন কেটেছে এ বছরের ফ্যাশন বিশ্বের সময়?

টিকটক ইন ট্রেন্ড
ফ্যাশন দুনিয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকের দারুণ প্রভাব দেখা গেছে বছরজুড়ে। এই সোশ্যাল হ্যান্ডেলের কনটেন্ট দেখে বছরভর মেতে ছিলেন ফ্যাশন-সচেতনেরা। কটেজ কোর, কোয়াইট লাক্সারি, গথিকসহ বেশ কিছু ট্রেন্ডের পালে হাওয়া দিয়েছে এই জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ। হ্যালোইনেও দেখা গেছে ইন্সপিরেশন।
 রম-কম: ‘রোমান্টিক কমেডি’ চলচ্চিত্রের একটি জনরা। একই সঙ্গে রোমাঞ্চ আর হাস্যরসের সন্ধি। সেখান থেকেই ফ্যাশনে এসেছে রম-কম ট্রেন্ড। এই ফ্যাশন কোরে টিউব টপস, শর্ট স্কার্ট, ছোট স্কার্ফ, কার্গো প্যান্ট, ডাংরি উল্লেখযোগ্য।
 কোয়াইট লাক্সারি: নিউ এজ মিনিমালিজম। উচ্চমানের উপাদানে প্রস্তুত ইনভেস্টমেন্ট পিস। নিউট্রাল কালার, বিশেষ করে বেইজ পায় গুরুত্ব।
 গথিক কোর: কালো রঙের প্রবল প্রকাশ দেখা গেছে এবার। ট্রেন্ডটির অফিশিয়াল নাম গথ কিংবা গথিক। চুল থেকে কালোকে উপজীব্য করে গড়ে উঠেছে এই ফ্যাশন কোর। এমনকি ঠোঁটেও দেখা যায় কালো লিপস্টিক।
 কোস্টাল কাউ গার্ল: বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম অবধি দরবার জমিয়ে রেখেছে এই অ্যাসথেটিক ফ্যাশন ট্রেন্ড। কালার প্যালেটের লাইট শেড, সাইজে ঢিলেঢালা, মোলায়েম ফ্যাব্রিক, মোটা বেল্ট, ডেনিম প্যান্ট, বুট জুতা অথবা ফ্লিপফ্লপ। অনুষঙ্গে আবশ্যক বড় হ্যাট।
সচেতনে অলংকার
গবেষণাগারে প্রস্তুত করা হীরার তৈরি অলংকারের চাহিদার পালে লেগেছে হাওয়া। কারণ, পরিবেশবাদ। বহুল জনপ্রিয় কার্বন ফুটপ্রিন্টের ওপর আলোকপাত করে গবেষকেরা বলছেন, একটি ৯ গ্রাম, ২২ ক্যারেট প্লেইন সোনার আংটি সায়ানাইড, পারদ বর্জ্যসহ প্রায় ২০ হাজার কেজি বিষাক্ত বর্জ্য তৈরি করে, যা বছরে প্রায় ৬ বিলিয়ন টন। মাত্র আধা গ্রাম সায়ানাইডেই মানবমৃত্যু সম্ভব। সেখানে এই ভয়াবহ রাসায়নিক উপাদানের যথেচ্ছ উৎপাদন চিন্তার কারণই বটে! তাই বিকল্পে ল্যাব মেইড হীরার পরামর্শ।
ব্রাইডাল ব্লেজার
বিয়ের কনে কিংবা ব্রাইডসমেডের আগ্রহ যদি ফিউশনে থাকে, তাহলে ব্লেজার হতে পারে সহজ সমাধান। প্যান্ট-ব্লেজারের চেনা সন্ধি তো আছেই; পাশাপাশি শাড়ি, লেহেঙ্গার সঙ্গেও সংগত সম্ভব। এবার মিলেছে তার সাক্ষ্য।
প্যাস্টেল গ্রুমওয়্যার
বরদের পোশাকে এবার জাঁকিয়ে বসেছিল প্যাস্টেল। গাঢ় রঙের বাহাদুরি কিছুটা কমল বটে! সাদাও দেখিয়েছে জেল্লা। হালকা রঙের গ্রুমওয়্যার অলংকরণে জনপ্রিয় ছিল এমব্রয়ডারি।
ব্রাইট ব্রাইডালওয়্যার
লাল-মেরুন-ম্যাজেন্টার গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসেছে কনেদের পোশাক। কালার প্যালেটের উজ্জ্বল কিন্তু হালকা রংগুলোতে মন মজেছে। সাদা এগিয়ে ছিল দারুণভাবে। মোগল মোটিফের ব্যবহার চোখে পড়েছে সর্বত্র। চিরন্তন বেনারসি, জামদানি শাড়ির পাশাপাশি আগ্রহ দেখা গেছে লেহেঙ্গা, গাউনের ড্রামাটিক উপস্থাপনে।
ব্রাইডাল জুয়েলারি
গয়নায় এবার রঙের ছড়াছড়ি। আগে সোনালি রং গয়নাতেই ছিল ক্রেতা সন্তুষ্টি। কয়েক বছর আগে দেখা গেছে রুপালি গয়নার প্রতি আগ্রহ। আর এ বছর গয়নার রং ছটায় দারুণ মুগ্ধতা। চিরাচরিত স্বর্ণালংকারের পাশাপাশি জ্যোর্তিময় জহরত অর্থাৎ দামি জেমস্টোন রুবি, এমারেল্ড, স্যাফায়ার, গারনেট, ওপাল, টোপাজের দেখা মিলেছে সবচেয়ে বেশি; বিশেষ করে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল পান্না।
বডি জুয়েলারি
আজমেরী হক বাঁধন, তানজিলা মিথিলা, নাজিফা তুষির মতো তারকাদের পিঠজুড়ে অলংকারের ঐশ্বর্য নজর কেড়েছে। নকশা বিকশিত হয়েছে নানাভাবে। নতুন নতুন দর্শনে। দাপুটে অবস্থান বছরের পুরোটাতেই। মেটালের নানা শেড জমকালো আবহে মন মাতিয়েছে।
মুক্তার মুক্তি
পরিবেশবান্ধব গয়না নিয়ে ছিল নানা মত। ধরণীর প্রতি মায়ার প্রভাব মেখেছে মুক্তাও। টেকসই ফ্যাশনের মুক্তা চাষ নীতি অনুসরণ করে উৎপাদিত মুক্তার ব্যবহার এবারে উৎসাহিত করেছেন প্রকৃতিপ্রেমী মুক্তাপ্রেমীরা।
ভোগ বিজনেস ইনোভেটরস: ক্লাস অব ২০২৩তে দুই বাংলাদেশি
জনপ্রিয় ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন ‘ভোগ’ বিশ্বের ১০০ অভিনব উদ্যোগের তালিকা ‘ভোগ বিজনেস ইনোভেটরস: ক্লাস অব ২০২৩’ শিরোনামের তালিকায় এবার জায়গা করে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের দুই উদ্যোক্তা। মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান মনের বন্ধুর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদা শিরোপা এবং বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মুস্তাফিজ উদ্দিন।
বটমে কার্গো
নব্বইয়ের দশকের কার্গো ক্রেজ দেখা গেছে বছরভর। ফেমিনিন ফ্যাশন স্ট্যাপল হিসেবে এর প্রত্যাবর্তন ছিল বেশ জমকালো। টপের বিভিন্নতায় ব্যাপ্তি বেড়েছে। রঙের ক্ষেত্রে কালো ছিল এগিয়ে। খাকিও কম যায়নি। কখনো স্নিকার, কখনোবা পয়েন্টেড হিলের সঙ্গে কার্গো বছরজুড়েই ছিল হিট।
চোখে চোখে
এ বছর ফ্রেম বাছাইয়ের সময় নিজের স্কিন আন্ডারটোনের দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন স্টাইলিস্টরা। ব্ল্যাক, ব্লু, গ্রে ফ্রেম কুল আন্ডারটোনের জন্য পারফেক্ট। অন্যদিকে ট্যান, পিঙ্ক, রেড হচ্ছে ওয়ার্ম আন্ডারটোনে বেশি জুতসই। আর সব মেনে ফ্রেম চোখে তুললেই তৈরি ফুলপ্রুফ কুল স্টাইল।
শিয়ার শিবির
সেমি ট্রান্সপারেন্ট ফ্যাব্রিকের পোশাক পরিণত হয়েছে স্টাইল স্টেটমেন্টে। রানওয়ে, রেড কার্পেট, বিলবোর্ডজুড়ে স্বচ্ছতার সেকি দারুণ সাহসী প্রকাশ! তারকারা এবারের জমকালো অনুষ্ঠানগুলোতে পছন্দের তালিকায় রেখেছিলেন শিয়ার। নান্দনিক নকশা ছিল প্রতিটির।
মাল্টিব্র্যান্ড প্ল্যাটফর্ম
মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল স্টোরগুলোতে ভিড় জমিয়েছেন ক্রেতারা। বছরজুড়েই। একই ছাদের নিচে মিলেছে একাধিক ব্র্যান্ড। ধরন এক হওয়া বাধ্যতামূলক ছিল না। পোশাক, জুয়েলারি, জুতার পসরার মাঝে দেখেশুনে মনমতো কেনাকাটার পরিবেশ বেশ পছন্দ করেছেন সবাই। রাজধানী ঢাকায় বছরজুড়ে ছিল মাল্টিব্র্যান্ড মেথডের হইহই-রইরই।
বেমানান—নো ওয়ে
কিসের সঙ্গে কী পরা যাবে, সে সিদ্ধান্ত এখন যার যার তার তার। টপের সঙ্গে বটমের সন্ধির ব্যাকরণ বদলেছে। শাড়ির সঙ্গে জ্যাকেট, লেহেঙ্গার সঙ্গে পায়ে স্নিকার—সবই মানানসই। কোনোটাকেই ফ্যাশন উপযোগী নয় বলে লেবেলিং করা হয়নি। বরং নতুনত্বকে দু হাত খুলে সাদরে গ্রহণ করেছে ফ্যাশন বিশ্ব।
বারবি ইন বিজনেস
সিলভার স্ক্রিনে বারবি দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল এবারের ফ্যাশনকে। পিংকের নানান শেডের ব্যবহার দেখা গেছে পোশাক এবং অনুষঙ্গে। বেশ কিছু ফ্যাশন ব্র্যান্ড কোলাবোরেশন করেছিল বারবির সঙ্গে। বারবিকোরে মন মজিয়েছেন ফ্যাশনিস্তারা। বছর শেষের এই সময়েও শোনা যাচ্ছে গোলাপির গল্প। বলা যায়, টাইনি এই ফ্যাশনিস্তা ছুঁয়েছে সফলতার সীমান্ত।
শোস্টপার স্নিকার
স্ট্রিট স্টাইলিংয়ের উপহার স্নিকার। স্পোর্টস শু হিসেবে যাত্রা শুরু হলেও এ বছর ফ্যাশন স্ট্যাপল হিসেবে নাম কুড়িয়েছে। ক্যাজুয়াল-পার্টিওয়্যার-ব্রাইডাল ফ্যাশন—সবখানেই দেখা মিলেছে। পরিণত হয়েছে ওয়্যারড্রোব এসেনশিয়ালে।
মেনস জুয়েলারি
পুরুষের ফ্যাশনে গয়নার বাজার কলেবরে বেড়েছে বছরজুড়েই। রিং, ইয়ার রিং, নেকলেস, ব্রেসলেট, কলার পিন, টাই অ্যাকসেন্ট—সবই ছিল কেনাকাটার তালিকায়। নেক জুয়েলারিতে ‘নেক মেস’ পেয়েছে জনপ্রিয়তা। অর্থাৎ একটি নয়, একাধিকের অবস্থান একসঙ্গে। লেয়ারড নেকলেসও ছিল ইন ট্রেন্ড।
বো-তে বিউটিফুল
বো ট্রেন্ড ফিরেছিল দশক পেরিয়ে। স্টেটমেন্ট বো দেখা গেছে তারকাদের পোশাকেও। অ্যাকসেসরিজে ছিল বো-এর ব্যবহারের ব্যাপকতা। জুতা, ব্যাগ, মাথার ব্যান্ড, ক্লিপ—সবখানেই দেখা গেছে বো। কিডজ ক্লদিংয়ে বহুল ব্যবহৃত বো সানন্দে আউটফিটে জুড়েছেন তরুণ-যুবারাও।
টার্টল ইন ট্রেন্ড
ফল সিজনে দেখা গেছে নেক ডিজাইনের চমক। টার্টল নেক পরিণত হয়েছিল ফেইল প্রুফ স্টাইলিং আইটেমে। কখনো স্কার্টের সঙ্গে টপ, কখনো জ্যাকেটের ইনার আবার কখনো শাড়ির সংগত। সলিড কালারেই আগ্রহ দেখা গেছে বেশি। প্রিন্ট ছিল পিছিয়ে।
সিঙ্গেল শেডে সম্পূর্ণ
প্রিন্ট নয়, প্যাটার্নও নয়। একদম এক কালারেই স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে টেক্সচারে ছিল ভিন্নতা। ডে টাইম লুকের জন্য ছিল পছন্দের তালিকায়। শেডের ভিন্নতা দেখা গেছে। তবে নিউট্রাল ছিল হিট!
কার্বন নেগেটিভের জয়ধ্বনি
ফ্যাশন বিশ্ব প্রচুর কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করে, যা পৃথিবীর জন্য মোটেই ইতিবাচক নয়। তাই পরিবেশের প্রতি ভালোবাসায় ফ্যাব্রিকের পুনঃপুন ব্যবহারসহ নানান কৌশলে বছরজুড়েই মনোযোগী হতে দেখা গেছে ফ্যাশন-সচেতনদের।
বছর শেষে ফ্যাশনের দিনপঞ্জিতে চোখ রাখলে দেখা যায়, উৎসব আর ফ্যাশন শো কেন্দ্র করে কাজ করেছেন ডিজাইনাররা। নতুনের জয়গান ছিল বছরজুড়ে। পুরোনো ফিরেছে সাড়ম্বরে।
 সারাহ্ দীনা
ছবি: ক্যানভাস আর্কাইভ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top