ফিচার I পালাজোর পালা
পালাজোর নতুন ট্রেন্ড। বিভিন্ন কম্বিনেশনে এখনকার ট্রেন্ডি নারীর স্টেটমেন্ট
এই গরমে মেয়েদের ফ্যাশনে সরগরম পালাজো প্যান্ট। কিন্তু কেন এই নামকরণ, তা জানা যায় না। কারণ, পালাজো শব্দটি ইতালিয়ান। এর অর্থ প্রাসাদ বা বড় বাড়ি। আর এই প্যান্ট ঢিলেঢালা। বানাতে বেশি কাপড় লাগে। আবার আরামদায়কও। তাই কি এই নাম? কে জানে। তবে এর শিকড় খুঁজতে গেলে ফিরতে হবে সেই গেল শতকের বিশের দশকে। তখনো কিন্তু এই প্যান্ট পরার চল। সেই উত্তাল সময়ে সাহসী নারীরা এটি পরেছেন অবলীলায়। এ ক্ষেত্রে সবার আগে আসে কোকো শ্যানেলের নাম। ত্রিশ আর চল্লিশের দশকে এই তালিকায় যুক্ত হন ক্যাথরিন হেপবার্ন, গ্রেটা গার্বো আর মারলিন ডিয়েট্রিচরা। তবে ফ্যাশনে আসতে সময় লাগে আরও অন্তত দুই দশক। ষাটে এসে এটা ট্রেন্ড হয়। তবে একটা মজার ঘটনা আছে এই পালাজো নিয়ে। সেই বিশের দশকে ইউরোপ আর আমেরিকায় ট্রাউজার বা প্যান্ট পরে অভিজাত রেস্তোরাঁয় মেয়েদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। কেবল স্কার্ট পরে যাওয়া যেত। অনেকে তাতে রাজি ছিলেন না। তারা এই পালাজো বা কুলোত্তি পরে রেস্তোরাঁয় যাওয়া শুরু করেন। সাধারণ প্যান্ট আর ট্রাউজারের বাইরে আরও রয়েছে বেলবটম, হারেম প্যান্ট, গাওচো। তবে এগুলো যে যার মতো। কোনোটাই পালাজো নয়।
ষাটের দশকে কাউটার কালচার মুভমেন্টই মূলত ঢিলেঢালা আর আরামদায়ক প্যান্ট পালাজো সাদরে গ্রহণ করে। অনেকে আবার এই প্যান্টে নানা রকম ভ্যালু অ্যাড করেন। আরও দুই দশক পর আশিতে এসে পাওয়ার স্যুটের অংশ হয় পালাজো। আর হিন্দি সিনেমার বদৌলতে সেটা উপমহাদেশে বেশ জনপ্রিয়ও হয়। আশির দশকে বিখ্যাত ডিজাইনাররা পালাজো ডিজাইন করেন। এই তালিকায় রয়েছেন জর্জিও আরমানি, ডোনা ক্যারেনরা। এরপরও পালাজোতে নানা পরিমার্জন হয়েছে। পালাজো ফ্যাশন থেকে অন্তর্হিতও হয়েছে। তবে ২০১৬ সালের স্প্রিং-সামার কালেকশনে বালমেঁ অন্তর্ভুক্ত করেন পালাজো। আর এখন তো যাকে বলে রমরমা। সহজে পরা যায়, আবার ফ্যাশনেবল, ট্রেন্ডি, আরামদায়কও।
আমাদের দেশে সারা বছরই চলছে পালাজো। আর এখন তো ফ্যাশনে অনেক কিছুই ইন। তবে কোনো কিছুই আউট নয়। ফলে পালাজো আছে শীতে, বসন্তে আর এই গ্রীষ্মেও। বিশেষত আমাদের এই নাভিশ্বাস ওঠা গরমে নিশ্চিতভাবেই এটি আরামপোশাক।
পালাজোর এখন নানা কাট আর স্টাইল। রুচি মিলিয়ে বেছে নিলেই হয়। কয়েকটার হদিস দেওয়া হলো এবার।
স্ট্রেইট কাট
কুর্তির সঙ্গে লেগিংসের চলটা বেশ পুরোনো। সে ক্ষেত্রে আপনার স্টাইলে কিছুটা বৈচিত্র্য আনতে পারে স্ট্রেইট কাট পালাজো। এটি তৈরির কৌশলই এমন, যা লম্বা কিংবা খাটো সব ধরনের কুর্তির সঙ্গে সহজেই মানিয়ে যায়। যারা এখনো পালাজো পরেননি কিংবা পরবেন বলে মনস্থির করছেন, তারা এই কাটটি ট্রাই করে দেখতে পারেন। অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন এটি আদৌ মানাবে কি না, তা নিয়ে। তাদের জন্য এটা হবে আদর্শ। কারণ, এর প্লিটগুলো সাধারণভাবে তৈরি এবং ঘের খুব কম থাকে। আর বেশ আরামদায়কও।
ফ্লেয়ার্ড কাট
ফ্লেয়ার্ড কাট কিংবা ঘের দেওয়া পালাজো খুব সহজেই দেবে বোল্ড লুক। অনেকেরই ধারণা, এই কাটের প্যান্টগুলো হয়তো সব জায়গায় কিংবা সব ধরনের পোশাকের সঙ্গে মানানসই নয়। একটু বুদ্ধি করে পরলেই আপনার লুক হয়ে উঠবে অন্যদের চেয়ে আলাদা আর অসাধারণ। ট্র্যাডিশনাল লুকের জন্য লম্বা কুর্তার সঙ্গে সহজেই প্রিন্টেড পালাজো পরা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে কুর্তা এক রঙের হলে মানানসই লাগবে। আবার এই ধরনের পালাজোর সঙ্গে কনট্রাস্ট প্লেইন টি-শার্ট পরা যেতে পারে। তা ছাড়া ঘের দেওয়া পালাজোর সঙ্গে সাদা কিংবা কালো টি-শার্টও বেশ মানাবে। পরেই অনুভব করা যাবে এই গ্রীষ্মের জন্য কতটা আরামদায়ক।
লেয়ার্ড
এই কাটের পালাজো হাল ফ্যাশনে নতুনত্ব যোগ করেছে। এলোমেলো চুলের একটা খোঁপা আর ফুলহাতা টি-শার্ট বা সিøভলেস ফতুয়ার সঙ্গে লেয়ার্ড কাটের প্যান্ট- এই কম্বিনেশন বেশ সুন্দর। এই প্যান্টের সুবিধা হলো লম্বা কিংবা খাটো সব ধরনের পোশাকের সঙ্গে সহজেই মানিয়ে যায়। কনট্রাস্ট টপসের সঙ্গে উজ্জ্বল কিংবা হালকা সব রঙে লেয়ার্ড কাটের পালাজো নারীকে করে তুলবে আকর্ষণীয়।
পালাজো টাই আপস
স্কার্ট ও ট্রাউজারের সমন্বয়ে তৈরি এ ধরনের টাই আপস পালাজো এবারের নতুন আকর্ষণ। সামনে থেকে দেখতে স্কার্টের মতো লাগলেও সাধারণ প্যান্টের মতো এটি দুই অংশে বিভক্ত। বিশেষত টি-শার্ট, কুর্তা লম্বায় ছোট যেকোনো পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায় এমন প্যান্ট। শপিং, ঘোরাঘুরি, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা এমনকি কাজের জায়গায় স্বচ্ছন্দে এ ধরনের পালাজো টাই আপস পরা যেতে পারে।
প্লিটেড পালাজো
প্লিটেড পালাজোর সঙ্গে পুরোনো গয়নার কম্বিনেশন তৈরি করবে একটা কমপ্যাক্ট লুক। পার্টি কিংবা বন্ধুদের আড্ডা, বাড়িতে অনুষ্ঠান বা জন্মদিনে এই আউটফিট একদম পারফেক্ট। তা ছাড়া হাইনেক টপসের সঙ্গে বেল্ট দিয়ে প্লিটেড পালাজো পরতে পারেন। সঙ্গে থাকবে উজ্জ্বল রঙের স্যান্ডেল।
পালাজো সালোয়ার সুটস
রেগুলার সালোয়ারের পরিবর্তে অনায়াসে পরা যায় পালাজো সালোয়ার সুটস। এগুলো শুধু আকর্ষণীয় নয়, আরামদায়কও। বানানোর কৌশলের জন্য এটি সবার কাছে সমাদৃত। এ ধরনের সুটে নতুন একটা লুক তৈরি হয়। যেকোনো ঝুলের কামিজ, টি-শার্ট বা টপসের সঙ্গে মানিয়ে যাবে এই প্যান্ট। আর সঙ্গে হাতে তৈরি কিংবা ট্রাইবাল গয়না যোগ করবে বাড়তি সৌন্দর্য।
এবারের ঈদে বা এই গরমে পালাজো হতে পারে ট্রেন্ডি নারীর ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। তাই বেছে নিতে পারেন যেকোনো কাটের পালাজো। সঙ্গে মানানসই টপস।
তানশু জুবেরিয়া
মডেল: স্পৃহা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: ক্যানভাস
ছবি: সৈয়দ অয়ন ও সংগ্রহ