skip to Main Content

অ্যাডভার্টোরিয়াল I শেফের গল্প

শহীদ শাহীন। লো মেরিডিয়েন হোটেলের এক্সিকিউটিভ শেফ। এই সেক্টরে পথচলা ২০০৫ সালে। শুরুতে ছিলেন কিচেন স্টুয়ার্ড, ক্যালিফোর্নিয়া ফ্রাইড চিকেনে (সিএফসি)। ২০০৯ সাল পর্যন্ত। এরপর শেফ বেকার (ফ্রেঞ্চ শেফ দ্য পার্টি, অর্থাৎ পার্টির সুপারভাইজার) হিসেবে যোগ দেন গুলশানের ফাইন ডাইন রেস্টুরেন্ট বেলাজিওতে। সেখানে কর্মরত অবস্থায় ২০১১ সালে প্রস্তাব পান রিটজ-কার্লটন আবুধাবি, গ্র্যান্ড ক্যানেল থেকে। সেটি ম্যারিয়ট গ্রুপের সেরা হোটেল হিসেবে বিবেচিত। নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণের পর বিধি বাম! ২০১২ সালে চাকরি ছাড়ার পর জানতে পারেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সে সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা প্রক্রিয়া বন্ধ। বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন মাত্র তিনজন। সে সময় বেলাজিওতে কাজ করতেন ফ্রেঞ্চ করপোরেট এক্সিকিউটিভ শেফ গিয়াম বোনিতি। তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল শাহীনের। গিয়ামের পরামর্শেই বিদেশে পাড়ি জমান উচ্চতর ডিগ্রি নিতে। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের সেগি কলেজে পড়তে যান কালিনারি আর্টস বিষয়ে।
শিক্ষার্থী অবস্থায় প্রথম ছয় মাস অন্য কোনো চাকরি করার সুযোগ নেই মালয়েশিয়ায়। সে সময়টুকু কাটিয়ে, বিশ্বখ্যাত জে ডব্লিউ ম্যারিয়ট হোটেল কুয়ালালামপুরে ব্রিটিশ এক এক্সিকিউটিভ পেস্ট্রি শেফের অধীনে খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ পান শাহীন। কাজ করেন এক বছর আট মাস। তারপর ২০১৪ সালে দেশে ফিরে যোগ দেন সিক্স সিজনস হোটেলে। হোটেলটির গ্র্যান্ড ওপেনিং সময়কালে ছয় মাস কাজ করার পর ম্যানেজারিয়াল পদবি সু শেফের দায়িত্ব পান। বলে রাখা ভালো, মালয়েশিয়ায় তিনি কাজ করেছিলেন ডেমি শেফ বা জুনিয়র সুপারভাইজার হিসেবে। ২০১৪ সালেই বাজারে রটে যায় বাংলাদেশে লো মেরিডিয়েন হোটেলের আগমনী বার্তা; আর হোটেলটি কাজ শুরু করে পরের বছর। দীর্ঘদিন কাজের সূত্রেই শাহীন জানতেন বিশ্বব্যাপী এয়ার ফ্রান্সের ব্র্যান্ড লো মেরিডিয়েনের সুনাম। এখানে নিয়মকানুন, সার্ভিস চার্জ, বেতন—সবকিছু মানা হয় আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুসারে।
তার মতে, এই ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকে আসছেন বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা দেখে। তবে গুটিকয়েক মানুষ নিজেদের প্যাশন থেকে এখানে সম্পৃক্ত হতে চান। নিজেকে এ দলের বলে দাবি তার। তাই হয়তো সে সময়ের পদের চেয়ে দুই পদ নিচের—ডেমি শেফ দ্য পার্টি হিসেবে লো মেরিডিয়েনে আবেদন করেছিলেন অনলাইনে। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অবশ্য কোনো সাড়া পাচ্ছিলেন না। এরপর নিজ তাগিদেই আগে করা আবেদনের চেয়ে এক পদবি ওপরের জন্য সিভি বানিয়ে সশরীরে হাজির হন হোটেলটিতে; জমা দেন এইচআর ডিপার্টমেন্টে। শেফ ডি পার্টি বা সুপারভাইজার পদের জন্য ডাকও পেয়ে যান। এবারও তার অভিজ্ঞতা হয়েছিল ফ্রেঞ্চ এক্সিকিউটিভ শেফের মুখোমুখি হওয়ার। ফরাসিদের সঙ্গে ও রিটজ-কার্লটনে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি তাদের স্টাইল সম্পর্কে ভালোভাবে জানতেন। ইন্টারভিউয়ে সেই এক্সিকিউটিভ শেফের মন পুরোপুরি জয় করতে পেরেছিলেন, তা নয়। দ্বিতীয় ইন্টারভিউতে জিএম, এইচআর ডিরেক্টরসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কাজের প্রতি তার তাড়না দেখে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। এর কয়েক মাস পর তার মুনশিয়ানা দেখে সু শেফ হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তৎকালীন ফ্রেঞ্চ শেফ এই হোটেল ছেড়ে গেলে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত লো মেরিডিয়েনকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মিস্টার শাহীন। এরপর চাকরি ছেড়ে পাড়ি জমান সাইপ্রাসে। অ্যাসিস্ট্যান্ট পেস্ট্রি শেফ হিসেবে কাজ শুরু করেন সমুদ্র ও পাহাড়বেষ্টিত থানোস হোটেলস অ্যান্ড রিসোর্টসে।
বলে রাখা ভালো, থানোস গ্রুপের ছিল চারটি হোটেল। শহীদ শাহীন প্রথম দিকে কিছুটা প্রতিকূলতার মুখে পড়লেও ধীরে ধীরে খাপ খাইয়ে নেন। এমনকি এতটাই আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন, পোল্যান্ডে নতুন রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠার সময় পালন করেন কনসালট্যান্টের দায়িত্ব। সেখানে ২০১৮ সালের শেষ ভাগ পর্যন্ত কাজ করেছেন। তারপর ওই বছরের শেষ দিকে চলে যান মালদ্বীপে; যোগ দেন ইউনিভার্সাল গ্রুপের লাক্সারি রিসোর্ট কুরুম্বা মালদ্বীপে, এক্সিকিউটিভ পেস্ট্রি শেফ হিসেবে। সেখানে ছিলেন ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। একই বছরের ডিসেম্বরে সৌদি আরবের র‌্যাডিসন কালেকশন রিয়াদে যোগ দেন এক্সিকিটিভ শেফ হিসেবে। এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে কাজের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হয়ে তিনি ফিরে আসেন আগের কর্মস্থল, ঢাকায় অবস্থিত লো মেরিডিয়েন হোটেলে। দুই মাস আগে যোগ দিয়েছেন এখানে।
১৯ বছরের কর্ম-অভিজ্ঞতা শাহীনের। এর মধ্যে ৯ বছরের বেশি সময় কাজ করেছেন পাঁচ তারকা হোটেল ও রিসোর্টে। কাজের প্রতি প্যাশন ও আর্টিস্টিক অ্যাপ্রোচ তাকে কালিনারি ইন্ডাস্ট্রিতে খ্যাতি এনে দিয়েছে বলে মনে করেন। এমনকি শুধু প্রাসঙ্গিক জ্ঞান অর্জন করতে একসময় চীনেও গিয়েছিলেন।
কর্মজীবনে শাহীন মেনু ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করেছেন বহুদিন। নিজের মতে, তার উল্লেখযোগ্য ইউনিক মেনুর মধ্যে অন্যতম চকলেট ডিজায়ার। এতে চালিয়েছেন নানান নিরীক্ষা। তিনি মনে করেন, খাদ্যের মান ও দামের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। বলেন, ‘রান্না অনেকে করতে পারে; কিন্তু সবাই শেফ হতে পারে না। খাবার নিয়ে খেলতে জানা চাই। খাবারের রং ও স্বাদ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে নতুন মাত্রা দিতে পারলে সত্যিকারের শেফ হওয়া সম্ভব। হাইজিন, ডিউরেবিলিটি, ফ্লেভার, টেক্সচার—সবকিছু গুরুত্বপূর্ণ।’
দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাজ করে যেতে চান শাহীন। সে কারণেই দেশে ফিরে আসা। তার মতে, এ দেশের অনেক তরুণ-তরুণী এই সেক্টরে সম্পৃক্ত হতে চাইলেও রয়েছে সুযোগ-সুবিধার অভাব। তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে চান তিনি। ২০২২ সালে একটি ফেডারেশন গঠন করেছেন, যেখানে অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে আমেরিকান, মালয়েশিয়ান শেফরা এ দেশের শিক্ষার্থীদের হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে ধারণা দেন। বাংলাদেশের পর্যটন খাত নিয়ে আশাবাদী তিনি।
 ফুড ডেস্ক
ছবি: লো মেরিডিয়েনের সৌজন্যে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top