তনুরাগ I মাছের তেলে
মাছ ভাজা যাবে, সুস্বাস্থ্য রক্ষা হবে, এমনকি করা যাবে রূপচর্চাও। তা-ও কি শুধু ত্বক! চুল আর নখের দেখভালেও দারুণ এ উপাদান। যাকে বলে একদম অল-ইন-ওয়ান
মাছের তেল আসলে কী, তা আগে জেনে নেওয়া যাক। বইয়ের ভাষায়, এটি আসলে একটি খাদ্যতালিকাগত পরিপূরক, যা চর্বিযুক্ত ও তৈলাক্ত মাছ, যেমন ম্যাকেরেল, ট্রাউট, স্যামন ও টুনা থেকে পাওয়া যায়। এটিতে দুটি অপরিহার্য ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি ঘনীভূত উৎস রয়েছে; যা আইকোসেপেন্টেনোয়িক অ্যাসিড (ইপিএ) এবং ডোকোসাহেক্সানোয়েক অ্যাসিড (ডিএইচএ) নামে পরিচিত। চিকিৎসকদের মতে, ইপিএ এবং ডিএইচএ প্রদাহ, মানসিক কষ্ট কমানো থেকে শুরু করে শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশসহ শরীরে নানা উপকার করতে সক্ষম। সারাবে সৌন্দর্যজনিত নানান সমস্যা।
গবেষকদের মতে, মাছের তেল ব্রণ সারায়, সূর্যরশ্মির ক্ষতির ঝুঁকি কমায়, শুষ্ক ত্বককে আর্দ্র করে। ত্বকের লাল, চুলকানি ভাব কমিয়ে নিরাময়ের গতি বাড়ায়। এ ছাড়া চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত করে। চুল বেড়ে ওঠা ত্বরান্বিত করে। সিল্কি করে তোলে চুল। এ ছাড়া নখ মজবুত করে তোলার পাশাপাশি শুষ্ক, ভঙ্গুর প্রবণতা প্রতিরোধ করে ইত্যাদি। এই যে বিভিন্ন রাসায়নিকের ব্যবহারে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হয় ত্বক ও চুল, গবেষকেরা বলছেন, এই সমস্যাগুলোর সমাধানে ফিশ অয়েল হতে পারে চমৎকার টোটকা। কীভাবে?
ব্রণ
মনস্তত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, সিভিয়ার ব্রেকআউট বা ব্রণ কেবল সৌন্দর্য নয়, সেই সঙ্গে আত্মসম্মান আর আত্মবিশ্বাসকেও প্রভাবিত করে। বায়ুদূষণ ও খাদ্যদূষণের কারণে বয়ঃসন্ধিকালে ব্রণে সমস্যা হয় না এমন ত্বক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ফিশ অয়েল সেই অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে। কারণ, গবেষণা বলছে, মাছের তেল প্রোইনফ্ল্যামেটরি সাইটোকাইন উৎপাদনকে দমন করতে পারে, যার ফলে ব্রণ প্রবণতা অনেকটা কমে যায়। সারে ক্ষতও।
অতিবেগুনি রশ্মি
মাছের তেলের মধ্যে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির বিরুদ্ধে ত্বকের প্রতিরক্ষায় সহায়তা করার ক্ষমতা রাখে। এটি ত্বককে তারুণ্যোজ্জ্বল ও সুস্থ দেখাতে সাহায্য করে। ক্যানসারের ঝুঁকি পর্যন্ত কমাতে পারে।
শুষ্ক ত্বক
যার ফলে রোজাসিয়া ব্রণ ও বলিরেখা দেখা দেয় ত্বকে। মাছের তেল ত্বকের শুষ্কতা কমিয়ে হাইড্রেশন বাড়াতে পারে। ফলে ত্বক পানি ধরে রাখতে পারে। তা ছাড়া লাল, চুলকানিপ্রবণ ত্বকের জন্যও এটি আদর্শ। সেটি কমাতে ফিশ অয়েল সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার হতে পারে কার্যকর সমাধান।
ত্বক নিরাময়
গবেষকদের মতে, ত্বকের ক্ষত সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং ত্বক নিরাময়ের গতি বৃদ্ধিতে মাছের তেলে বিদ্যমান ওমেগা-৩ ফ্যাট ভীষণ কার্যকর। চিকিৎসকেরা প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া কমাতে ওমেগা-৩ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন সাধারণত।
স্ক্যাল্প ফ্লেকিনেস
মাথার ত্বকের এ শুষ্ক ভাব চুলকানি, জ্বালা ও অস্বস্তি বাড়ায়। মাছের তেলে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো চুলের ফলিকলকে পুষ্ট করে। যা থেকে সহজে পাওয়া যায় মসৃণ ও ময়শ্চারাইজড স্ক্যাল্প। ওমেগা-৩ এর প্রদাহবিরোধী প্রভাব এবং ত্বকে তেল উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা এ সমস্যা মেটানোর মাধ্যম বলে মনে করা হয়।
মসৃণ চুল
মাছের তেল শুধু মাথার ত্বকের জন্যই উপকারী নয়। তেল উৎপাদন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে, ওমেগা-৩ চুলে পুষ্টি জোগাতে সহায়ক। সঙ্গে সিল্কি ভাব যোগ করতেও সক্ষম। তবে এটাও জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ, মাছের তেল চুল বা মাথার ত্বকে টপিক্যালি ব্যবহার করা উচিত নয়। তেল হিসেবে চুলে ব্যবহার না করে বরং খাদ্য হিসেবে মাছের তেল এবং ওমেগা-৩ গ্রহণ করা শ্রেয়।
চুল বৃদ্ধি
গবেষণায় দেখা গেছে, ওমেগা-৩ তেল চুলের ঘনত্ব ও শক্তি বাড়াতে পারে। চুল পড়া কমাতেও সক্ষম। ফিশ অয়েল সাপ্লিমেন্টেশনের মাধ্যমে চুলের ফলিকলগুলোর প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়। কেমোথেরাপি কিংবা স্ট্রেসের ফলে চুল পড়ে যাওয়া রোধে এটি একটি কার্যকর উপাদান বলা হয়েছে।
নখের যত্নে
মাছের তেলে উপস্থিত ওমেগা-৩ নখের শক্তি আর স্বাস্থ্যকেও বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম। কেউ নখের বৃদ্ধি বা সহজে ভেঙে যাওয়া সমস্যায় ভুগলে আদর্শ ওষুধ হলো ওমেগা-৩ ফ্যাট; যা নখের প্রদাহ কমাবে, কোষগুলোর স্বাস্থ্যকে পুষ্ট করে তুলবে। ফলে নখ লম্বা ও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। একইভাবে মাছের তেলসমৃদ্ধ নেইল কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহারে শুষ্ক নখ ও কিউটিকল লুব্রিকেটেড এবং ময়শ্চারাইজড হয়ে ওঠে। এটি নখের ভঙ্গুরতাও কমাতে পারে। ভঙ্গুর নখ সহজে ফেটে যেতে পারে; নরম ও দুর্বলও হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। ওমেগা-৩ এসব ঘাটতি পূরণ করে দেয় চকচকে, সুস্থ নখের নিশ্চয়তা।
রত্না রহিমা
মডেল: লিন্ডা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান