টেকসহি I রেজল্যুশন ২০২৪
রূপসংক্রান্ত পুরোনো সমস্যা শুধু শুধু নতুন বছরে টেনে না আনাই ভালো। বর্ষশুরুর বিশেষ এই সময়ে এটাই হোক প্রধানতম রেজল্যুশন
হাজির ২০২৪। নতুন বছরের জন্য নিউ রেজল্যুশন ঠিক করা হয়ে গেছে হয়তো অনেকের। এমন সময়ে সবারই বাসনা জাগে ‘নতুন বছরে নতুন আমি’ হয়ে ওঠার। কিন্তু তা কি সব সময় সম্ভব হয়? নানাভাবে বাধার সম্মুখীন হয়ে প্রায়শই ক্ষুদ্রতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো পূরণ করাও অনেকের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তাই খুব বড় কিছু ভাবার দরকার নেই। সহজ ও ছোট আকাঙক্ষা, যেগুলো পূরণ করার জন্য মানসিক, শারীরিক, আর্থিক কোনো রকম শক্তিরই তেমন দরকার হয় না, তেমন কিছু ভাবা যেতে পারে। যেমন ধরা যাক, এ বছর আমি নিজের প্রতি আরও যত্নশীল হয়ে উঠব, কাজের প্রতি আরও মনোযোগী হব, ঠিকমতো ঘুমাব, অযথা টেনশন করব না ইত্যাদি। আসলে, নতুন বছরে নতুন আমি হয়ে ওঠার জন্য অনেক বিশেষ কিছু করার প্রয়োজন পড়ে না। প্রধান উপায় হলো গেল বছরের বাজে অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করা। জীবনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি যেমন প্রযোজ্য, সৌন্দর্যের বেলায়ও। নতুন বছরের বিউটি রেজল্যুশনের কথা ভাবা হচ্ছে? আহামরি কিছু করার প্রয়োজন নেই। ছোটখাটো কিছু অভ্যাস পরিহার আর যোগের খেলায় আমূল পাল্টে যাবে বিউটি গেম। কীভাবে?
হাইড্রেশন: পানি সেরা বন্ধু
সুস্থ ত্বক ও চুলের জন্য অপরিহার্য। নতুন বছরের বিউটি রেজল্যুশন হিসেবে, হাইড্রেটেড ও উজ্জ্বল থাকতে ত্বকের জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে ফেলা যেতে পারে শুরুতেই। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য দিনে কমপক্ষে দুই লিটার পানি পানের পরামর্শ দেওয়া হয়। যদিও এটি শুধু একটি সুপারিশ এবং খুব কঠিন কিছু নয়, তাই এ অভ্যাস গড়ে তোলাই যায়।
বিশ্রাম: পর্যাপ্ত ঘুম
সবার জন্য জরুরি। মানসিক চাপ ও ক্লান্তি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য, স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য বজায় রাখতে। মুখ-ত্বকে আভা যোগে নিরবচ্ছিন্ন ঘুম সবচেয়ে কার্যকর পন্থা। ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক পুনরুদ্ধার করতেও ঘুমানোর কথা বলা হয়। চিকিৎসকদের মতে, ঘুমের ঘাটতিতে মানসিক চাপের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, ক্লান্তি দেখা দেয়, খামখেয়ালিপনা বাড়ে। ফলাফল—দৈনন্দিন কার্যকারিতা প্রভাবিত হতে শুরু করে। ঘুমানোর সময় মন শিথিল ও পুনরুজ্জীবিত হয়। যা পরে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে ফোকাস করতে সহায়তা করে। ঘুম শরীরকে যেকোনো আঘাত বা স্ট্রেস থেকে উতরে ওঠার সময় দেয়। বিউটি স্লিপ বা সৌন্দর্যের জন্য ঘুমের প্রচলন তো বহু পুরোনো। তাই স্বস্তিদায়ক এবং চাপমুক্ত উপায়ে প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর হয়ে উঠতে চাইলে ঘুমের প্রতি মনোযোগী হওয়া চাই।
সৌন্দর্যপণ্য: প্রকৃতিতে আস্থা
নতুন বছরের বিউটি রেজল্যুশন হিসেবে ত্বকের যত্নে যতটা সম্ভব প্রকৃতিপ্রাণিত সৌন্দর্যপণ্যের ব্যবহার শুরু করা যেতে পারে। এগুলো রাসায়নিক পণ্যের দারুণ বিকল্প। কার্যকারিতাও কোনো অংশে কম নয়। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তো নেই-ই, বরং অতিরিক্ত সুবিধার গ্যারান্টি রয়েছে। তাই কৃত্রিম রাসায়নিক বিউটি প্রোডাক্টগুলো এই বছর পুরোপুরি ছাড়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। পণ্য যতই প্রলুব্ধ করুক না কেন, ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া সমীচীন।
শোয়ার আগে ত্বক পরিষ্কার
বিউটি প্রোডাক্ট মাইল্ড কিংবা ক্লিন ফর্মুলার হলেও ঘুমাতে যাওয়ার আগে সেগুলো অপসারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন মুখ মেকআপ ছাড়াও ধুলো, রোদ, দূষণের সংস্পর্শে আসে। দিনের শেষে, এসব ত্বকে আটকে থাকে এবং গভীরে কোনো পুষ্টিকে পৌঁছাতে বাধা দেয়। মুখ ধোয়ার ফলে মেকআপের সঙ্গে ধুলো, দূষণ দূর হয়। রাতে পরিষ্কার ত্বকে ভারী ময়শ্চারাইজিং ক্রিম প্রয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয় সাধারণত; যা ত্বকের আর্দ্রতা জোগানো ছাড়াও নানা ধরনের ত্বক সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে। কিন্তু এটি প্রয়োগ করার আগে মুখ ধোয়া গুরুত্বপূর্ণ। এতে নাইট ক্রিম থেকে পুষ্টি ত্বকে পৌঁছানো নিশ্চিত হয়। মেকআপে আটকে থাকার ভয়ও থাকে না।
নিয়মিত ময়শ্চারাইজিং
সুস্থ ও পরিষ্কার ত্বক পেতে নিয়মিত ময়শ্চারাইজ করা জরুরি। মসৃণ ও কোমল করে তোলার জন্যও এর তুলনা নেই। নতুন বছরে ময়শ্চারাইজিং? শুধু একটি স্কিন কেয়ার আইটেম ব্যবহার করলেও সেটা হওয়া চাই ময়শ্চারাইজার। কারণ, এটি নিশ্চিত করে যে ত্বক সঠিকভাবে আর্দ্রতার জোগান পাচ্ছে। খুব বেশি শুষ্ক বা তৈলাক্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেও মুক্ত থাকছে।
সূর্য থেকে সুরক্ষায়
রোদে বের হওয়ার সময় পর্যাপ্ত এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন পরতে ভোলা যাবে না—প্রতিজ্ঞা থাকুক এ বছরের। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে ত্বকের যত্ন নেওয়ার সর্বোত্তম কৌশল হলো সরাসরি সূর্যের এক্সপোজার এড়ানো। কড়া রোদে পোড়া থেকে ত্বকের গুরুতর সমস্যা হতে পারে। তাই রোদে বের হওয়ার আগে ত্বকে সানস্ক্রিন মাখা চাই। রৌদ্রোজ্জ্বল বা মেঘলা—আবহাওয়া যেমনই হোক না কেন, সূর্য থেকে রক্ষার জন্য যথাযথ এসপিএফ ব্যবহার অপরিহার্য। সময় ও সূর্যরশ্মির এক্সপোজারের ওপর ভিত্তি করে এসপিএফ ফ্যাক্টর নির্ধারণ করে নিন।
নিয়মমাফিক চর্চা
একটি ফুলপ্রুফ কেয়ার রুটিন তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে। ত্বক ও চুল—দুটোর জন্য। শুধু তৈরি করলেই চলবে না, নিয়মিত অনুসরণও করতে হবে। রুটিনটি এমন হওয়া চাই, যা খুব বেশি জটিল নয়। সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো সিটিএম পদ্ধতি। ক্লিন, টোন এবং ময়শ্চারাইজ। যেকোনো অর্গানিক ফেসওয়াশ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে, টোনার মেখে তারপর ময়শ্চারাইজ মাখতে হবে। ব্যস, রুটিন কমপ্লিট। চুলের ক্ষেত্রেও তাই। নিয়মিত পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি অয়েলিং আর ব্রাশিং। রুক্ষ ধরনের প্রোডাক্ট ব্যবহার এড়িয়ে চলা শ্রেয়।
ব্রাশ ব্যবহারের আগে
পরিষ্কার মুখে প্রতিনিয়ত ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করছেন না তো? কীভাবে? অপরিচ্ছন্ন ব্রাশ ব্যবহার করে। হেয়ার ব্রাশের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। নিয়মিত গরম সাবানপানি বা বেবি শ্যাম্পু দিয়ে মেকআপ ব্রাশ, হেয়ার ব্রাশ পরিষ্কার করার অভ্যাস গড়ে তোলা যেতে পারে এ বছর।
নবতর রূপকল্প
একই পুরোনো পাঁজরে আটকে না থেকে, নতুন কিছু করার চেষ্টা নতুন বছরকে আরও বিশেষ করে তুলতে পারে। হেয়ারস্টাইল পাল্টাতে ভয় লাগছে? ভয় না পেয়ে বদলে ফেলাই যায়। কিংবা দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা যেতে পারে। এই নতুন চেহারা জীবনে বড় ঝুঁকি নেওয়ার আত্মবিশ্বাস এনে দেবে।
রত্না রহিমা
মডেল: এফা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল