skip to Main Content

হেঁশেলসূত্র I অষ্টস্বাদে তুষ্ট

স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় আটটি পদ। ঢাকাসহ আট বিভাগের এই খাবার কেবল সুস্বাদু ও পুষ্টিকর নয়, এসব জনপদের ফুড স্টেটমেন্টও। এই অষ্টব্যঞ্জনের পদকর্ত্রী আলপনা হাবিব

ছবি: সৈয়দ অয়ন

 

 

 

 

ইলিশ পোলাও
বরিশাল
এটা বরিশালের একটি ঐতিহ্যবাহী পদ।

উপকরণ: ইলিশ মাছ (পেট ও পিঠের অংশ) ৬ টুকরা, মিষ্টিদই ২ টেবিল চামচ, বিকল্প ২ টেবিল চামচ টকদই, ১ চা চামচ চিনি, ময়দা ১-২ চা চামচ, পোলাও চাল ৩ কাপ, ঘি আধা কাপ, রান্নার তেল আধা কাপ, নারকেলের দুধ ৩ কাপ, আদা বাটা ৩ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১-২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ বাটা ৬ টেবিল চামচ, পেঁয়াজের রস ২ টেবিল চামচ, পাকা মরিচ ৮-১০টা, কাঁচা মরিচ ৫-৬টা, মরিচের গুঁড়া ১-২ চা চামচ, পানি ৪ কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১-২ কাপ, লবণ ৫ চা চামচ।
প্রণালি: ইলিশ মাছ ধুয়ে ১ চা চামচ লবণ মাখিয়ে ১ ঘণ্টা রাখুন। ঘি ও তেল মেশান। এর অর্ধেকটাতে কড়া আঁচে পেঁয়াজ কুচি সোনালি করে ভাজুন। মিষ্টিদইয়ে ১-২ চা চামচ ময়দা মিশিয়ে নিন। এরপর ভাজা পেঁয়াজে আদা, রসুন, পেঁয়াজ বাটা, মরিচের গুঁড়া ও ১ চা চামচ লবণ দিয়ে কষান। এবার ময়দামিশ্রিত মিষ্টিদই দিয়ে আরও কষান। এরপর তার সঙ্গে আধা কাপ নারকেলের দুধ দিয়ে আবার কষান। মসলা কষানোর সুন্দর গন্ধ বের হলে তাতে ইলিশ মাছের টুকরাগুলো বিছিয়ে দিন। এক পিঠ কষানো হলে মাছ উল্টে দিয়ে ১/২ কাপ নারকেলের দুধ দিয়ে দিন। প্রয়োজনে আরও একটু পানি দেওয়া যেতে পারে। পাকা মরিচ দিন এবং ঢেকে ১০ মিনিট ধিমে আঁচে রাখুন। মাছের ঝোল মাখা মাখা হলে চুলা থেকে নামান। আর একটা হাঁড়িতে বাকি তেল ও ঘি কড়া আঁচে গরম করে কাঁচা মরিচ দিন। কাঁচা মরিচের মুখগুলো ভেঙে দেবেন, তাতে গরম তেলে মরিচ ফুটে উঠবে না। এতে পেঁয়াজের রস দিয়ে ভালো করে কষান। এবার এর সঙ্গে রান্না করা ইলিশ থেকে ৪ টেবিল চামচ ঝোল যোগ করুন। এবার এতে ৪ কাপ পানি দিন। পানি ফুটে উঠলে চাল দিন। চাল যখন আধা সেদ্ধ হবে, অর্থাৎ চাল টিপলে বাইরে সেদ্ধ হলেও মাঝখানে একটু শক্ত থাকবে, তখন ২ কাপ নারকেলের দুধ দিন। দুধ ফুটে উঠলে ঢেকে ২০ মিনিট ধিমে আঁচে রান্না করুন। ২০ মিনিট পরে পোলাও হয়ে গেলে এর উপরে একটু গর্ত করে ফাঁকে ফাঁকে ইলিশ মাছের টুকরা সাজান। মাছের টুকরাগুলো বাকি ঝোল দিয়ে তার উপর পোলাও দিয়ে ঢেকে আবারও ১০ মিনিট ধিমে আঁচে রাখুন। পরিবেশনের সময় পাত্রে আগে পোলাও দিয়ে তার উপরে ইলিশ মাছ সাজিয়ে দিন।

আলু মাংসের ঘাটি
বগুড়া, রংপুর

উপকরণ: গরুর মাংস ১ কেজি, বগুড়ার লাল আলু ২ কেজি, আদা বাটা ২ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, কালো এলাচি ৩টা, ছোট এলাচি ৫টা, দারুচিনি ২টা, লং ৫টা, গোলমরিচ ১০টা, ধনিয়া গুঁড়া ১ চা চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ২ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, লবণ ২ চা চামচ, তেল আধা কাপ, কাঁচা মরিচ ১০টা, ভাজা জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ।
প্রণালি: সব মসলা একসঙ্গে করে মেখে তার অর্ধেক দিয়ে মাংসগুলো ভালো করে মেখে নিন। তারপর ২ ঘণ্টা ফ্রিজে রাখুন। ফ্রিজ থেকে বের করে মাঝারি আঁচে মাংস অন্তত ২ ঘণ্টা কষান। কষানোর সময় মাঝে মাঝে নাড়তে হবে। অন্য চুলায় আলু খোসা ছাড়িয়ে সেদ্ধ করে হালকা চাপ দিয়ে ভেঙে রাখতে হবে। এবার মাংসের মধ্যে আলু মিশিয়ে দিন। তারপর ২ কাপ পানি দিয়ে চুলায় রেখে কষান। এরপর কাঁচা মরিচ মিশিয়ে নিন। ধিমে আঁচে কিছুক্ষণ রান্না করুন। তারপর ঝোল ঘন হলে ভাজা জিরা গুঁড়া উপরে ছিটিয়ে নামিয়ে নিন।

দুরুস কুরা
চট্টগ্রাম
এটি আদতে আস্ত মুরগির রোস্ট বা মুর্গ মুসাল্লাম। সাধারণত বাড়িতে জামাই এলে এই আয়োজন করা হয়।

উপকরণ: মুরগি ১ কেজি (আস্ত), পেঁয়াজ বাটা ১ টেবিল চামচ, আদা বাটা ২ চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, ঘি, এলাচি/দারুচিনি ২টা করে।
প্রণালি: আস্ত মুরগি পা বেঁধে আদা, রসুন, হলুদ, মরিচ বাটা, এলাচি, দারুচিনি ও লবণ দিয়ে সেদ্ধ করুন। আধা সেদ্ধ হলে পানি থেকে নামিয়ে নিন। এবার অর্ধেক ঘি গরম করে তাতে মুরগিটি ভেজে নিন। তারপর আবার ঝোলে মুরগিটি দিয়ে কষান। এবার বাকি ঘিয়ে পেঁয়াজ ভেজে নিন এবং তা মুরগির উপরে ছড়িয়ে দিন। বাটিতে ভাজা মুরগি বসিয়ে আধা ডুবানো ঝোল ঢেলে পরিবেশন করুন।

কাঁচা কাঁঠালের ঘাটি
সিলেট

উপকরণ: কাঁচা কাঁঠালের টুকরা ৪ কাপ, চ্যাপা শুঁটকি ৩টা, কাচকি শুঁটকি ২ টেবিল চামচ, খোসা ছাড়ানো চিংড়ি আধা কাপ, রুই বা যেকোনো কম কাঁটাওয়ালা বড় মাছ ৪ পিস (কাঁটা ছাড়িয়ে নুন-হলুদ মাখিয়ে ভেজে কাঁটা ছাড়িয়ে নিতে হবে), হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, ধনে গুঁড়া ২ চা চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ বাটা ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ৩ টেবিল চামচ, ফাড়া কাঁচা মরিচ ১০টা, লেবু পাতা ৪টা, সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ, সয়াবিন তেল ২ টেবিল চামচ।
প্রণালি: তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভাজুন। একটু গোলাপি হয়ে এলে এর মধ্যে চিংড়ি দিন। তারপর সব মসলা দিন। একটু কষিয়ে ধোয়া-বাছা শুঁটকিগুলো দিন। তাও কষিয়ে নিন। শুঁটকি গলে গেলে কাঁঠাল ও লবণ দিন। ৫ মিনিট মাঝারি আঁচে ঢেকে রাখুন। তারপর দুই কাপ গরম পানি দিয়ে আধা ঘণ্টা ধিমে আঁচে রান্না করুন। কাঁটা ছাড়ানো মাছ, লেবু পাতা, ফাড়া কাঁচা মরিচ দিয়ে আরও ৫ মিনিট ঢেকে রাখুন।
সিলেটে সাধারণত বাঁশের ভেতর লেবু পাতা দিয়ে চ্যাপা শুঁটকি বানানো হয়। ফলে আলাদা একটা ফ্লেভার আসে। শহরে তা পাওয়া যায় না বলে রান্নায় লেবু পাতা যোগ করা হয়েছে।

বেগুন বেশ্বরি
বিক্রমপুর, ঢাকা
বিক্রমপুরের একটি বিশেষ রান্না বেগুন বেশ্বরি। এই পদটি মূলত ইরান থেকে এসেছে। এর ইরানি নাম বেগুন ফারাস। এতে আঙুর পাতা ও পাইন নাট বা চিলগজা বাদামের ব্যবহার করা হয়; যা আমাদের দেশে পাওয়া যায় না বলে এখানে পেস্তা বাদাম ও কাঁচা মরিচ বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

উপকরণ: ৮ ইঞ্চি লম্বা বেগুন ৪টা, পেস্তা বাদাম/পাইন নাট/চিলগজা ৩ টেবিল চামচ, কাজু বাদাম ৩ টেবিল চামচ, পোস্ত দানা ১ টেবিল চামচ, সাদা সরিষা ১ টেবিল চামচ, মৌরি ১ টেবিল চামচ, লং ৫টা, শুকনা মরিচ পানিতে ভিজিয়ে ও বিচি ছাড়িয়ে ১০টা, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, আঙুরপাতা/কাঁচা মরিচ ১৫টা, কিমার কোপ্তা ভাজা ১০টা, লবণ ১ চা চামচ, চিনি ২ চা চামচ, তবক, সরিষার তেল ৪ টেবিল চামচ।
প্রণালি: প্রতিটা বেগুন লম্বায় ৪ টুকরা করে নিন। বেগুনগুলোর গায়ে খাঁজ কেটে নিন। এবার লবণ, মরিচ, হলুদ গুঁড়া ও চিনি দিয়ে মাখিয়ে ডুবো তেলে ভেজে নিন। ১টা কাঁচা মরিচ ও এক চিমটি লবণ দিয়ে সর্ষে বেটে নিন। পেস্তা, কাজু, পোস্ত, ৫টা কাঁচা মরিচ, লং, মৌরি, শুকনা মরিচ একসঙ্গে পিষে ২ কাপ পানি দিয়ে গুলে নিন। সরিষা বাটাও আধা কাপ পানি দিয়ে গুলে নিন। এবার একটি ছড়ানো পাত্রে তেল গরম করুন। তাতে মসলার মিশ্রণ হলুদ গুঁড়াসহ কষিয়ে নিন। লবণ আর চিনি দিন। এবার আস্তে করে ভাজা বেগুনগুলো এই মিশ্রণে ছেড়ে দিন। কাঁচা মরিচ দিন। ধিমে আঁচে ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন। এবার সরিষা বাটা ছড়িয়ে দিন। আরও ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন। চারপাশে ভাজা কোপ্তা দিয়ে সাজিয়ে উপরে তবক দিয়ে পরিবেশন করুন।

চ্যাপা শুঁটকির ভর্তা
ময়মনসিংহ
জনপ্রিয়তায় চ্যাপা শুঁটকি সবার ওপরে। এই ভর্তা ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী খাদ্যানুষঙ্গ।

উপকরণ: চ্যাপা শুঁটকি ৬টা, পেঁয়াজ ১ ইঞ্চি চৌকো করে কাটা ১ কাপ, কাঁচা মরিচ, ভেঙে অর্ধেক করা ১/২ কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, রসুন, ১ ইঞ্চি চৌকো করে কাটা ১/২ কাপ, পানি ১ কাপ।
প্রণালি: চ্যাপা শুঁটকি খুব নরম। সে জন্য আলতো করে কলের পানির নিচে ধরে ধুয়ে পরিষ্কার করুন। কড়া আঁচে তেল গরম করুন। শুঁটকি এপাশ-ওপাশ করে ভাজুন। লবণ ছাড়া আর সব উপকরণ দিন। নেড়ে মৃদু আঁচে ১০ মিনিট ভাজুন। পানি দিন। ঢেকে মৃদু আঁচে পানি শুকানো পর্যন্ত রান্না করুন। চুলা থেকে নামিয়ে হামানদিস্তায় শুঁটকি আধছেঁচা করুন। পাত্রে রেখে পরিবেশন করুন।

শসার খাটা
যশোর, খুলনা

উপকরণ: পাকা শসা বিচি ফেলে ২ ইঞ্চি করে টুকরা করে ৪ কাপ নিন, ঘি ৩ টেবিল চামচ, তেল ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ বাটা ১ টেবিল চামচ, আদা বাটা ২ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, তেঁতুলের পানি ২ টেবিল চামচ, লবণ দেড় চা চামচ, চিনি দুই চা চামচ, এলাচি ৩টা, দারুচিনি ২টা, পাঁচফোড়ন, নারকেল দুধ পরিমাণমতো, কাঁচা মরিচ ৪টা।
প্রণালি: ১ চা চামচ লবণ দিয়ে শসা সেদ্ধ করে পানি ফেলে দিন। এলাচি, দারুচিনি, পাঁচফোড়ন, শসা ১ টেবিল চামচ ঘিয়ে হালকা করে ভেজে নিন। বাকি ঘি ও তেলে পেঁয়াজ, আদা ও রসুন বাটা দিয়ে ভাজুন। কষানো মসলায় নারকেল দুধ দিন। লবণ, চিনি ও তেঁতুল পানি রান্না করুন। মিশ্রণ ফুটে উঠলে তাতে শসা ও কাঁচা মরিচ দিয়ে দিন। ঝোল ঘন হলে নামিয়ে নিন। তারপর পরিবেশন করুন।

সবজি খিচুড়ি
রাজশাহী
এটি রাজশাহীর একটি প্রচলিত পদ। এই বিভাগের বিভিন্ন জেলায় এর চল রয়েছে।

উপকরণ: সেদ্ধ চাল দেড় কাপ, পোলাওয়ের চাল আধা কাপ, মুগ ডাল আধা কাপ, মসুর ডাল আধা কাপ, ভাজা মাষকলাইয়ের ডাল এক কাপ, পেঁয়াজ কুচি এক কাপ, রসুন কুচি আধা কাপ, আদা বাটা তিন টেবিল চামচ, সরিষার তেল এক কাপ, হলুদ গুঁড়া এক টেবিল চামচ, আস্ত জিরা এক টেবিল চামচ, আস্ত মৌরি বাটা এক টেবিল চামচ, ঘি ১/৩ কাপ, লবণ দুই টেবিল চামচ, ফাড়া কাঁচা মরিচ এক কাপ, বাঁধাকপি কুচি এক কাপ, ফুলকপি কুচি এক কাপ, শিম কুচি এক কাপ, টমেটো কুচি এক কাপ, গাজর কুচি এক কাপ, ধনে পাতা কুচি এক কাপ, পানি ৮ কাপ।
প্রণালি: ঘি আর ধনে পাতা ছাড়া সবকিছু একসঙ্গে ভালো করে সময় নিয়ে কচলে মাখুন। পানি দিয়ে মিশিয়ে দিন। আধা সেদ্ধ হয়ে এলে আঁচ ধিমে করে আধঘণ্টা রাখুন। নামিয়ে ভালো করে নেড়ে ঘি মেশান। তারপর ধনে পাতা ছড়িয়ে দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

This Post Has One Comment
  1. রান্নাগুলো অসাধারণ। আঞ্চলিক রান্নাগুলো আমি ব্যক্তিগত ভাবে খুব পছন্দ করি। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। প্রতিটি রান্নাই মুখরোচক ও সুস্বাদু। আমি রন্ধন পাগল। অবশ্যই এই রান্নাগুলো ট্রাই করব। ধন্যবাদ আল্পনা আপা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top