ফিচার I সযত্নে শীতপোশাক
প্রয়োজন কম সময়ের জন্য হলেও এগুলোর অপরিহার্যতা প্রতিবছরের। মায়া করে তুলে রাখলে টিকে যাবে দীর্ঘ সময়
পশ্চিমা দেশগুলোর মতো দীর্ঘস্থায়ী নয়, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি অব্দি শীতের আমেজ থাকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতেই ঠান্ডা বেশি জেঁকে বসে প্রকৃতিতে। শীত যখন শেষ পর্যায়ে, অর্থাৎ বসন্তের শুরু, তখন এ সময় ব্যবহৃত গরম কাপড়গুলো অন্যত্র সরিয়ে রাখা জরুরি হয়ে পড়ে। তাড়াহুড়ায় কিংবা অযত্নে সরিয়ে রাখলে কাপড়ের আয়ু কমে এবং পরবর্তী শীতে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফলস সিলিং, স্টোর রুম কিংবা সারাউন্ডিং সিলিংয়েই মূলত জায়গা হয় শীত কাপড়ের। সে ক্ষেত্রে জিদ্দি দাগ, ইঁদুরে কাটা কিংবা ছত্রাকের আক্রমণে বেশির ভাগ কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। শীত থাকতে থাকতে যাতে কোনো রকম ক্ষতি ছাড়াই আগামী বছরগুলোতেও শীতের কাপড় থাকে নতুনের মতন, সে চেষ্টাই তো থাকা উচিত।
আগামী বছর পরা হবে বলে পরিধেয় কাপড় পরিষ্কার না করে তুলে রাখা যাবে না। ঘাম থেকে কিংবা শরীরের উত্তাপে সৃষ্ট দাগ কখনো দূর হয় না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাপড় পরিষ্কার করে ফেললে দীর্ঘদিন তা টিকে থাকে। নতুবা ছোপ ছোপ দাগ থেকে কাপড়ে তিলের দেখা মিলতেও সময় লাগে না।
পরিষ্কার কাপড় ভ্যাকুয়াম সিলড ব্যাগে তুলে রাখা বেস্ট অপশন। এভাবে কাপড় দীর্ঘদিন থাকে নতুনের মতো। বাইরের আবহাওয়ার কোনো প্রভাব এর ওপর পড়ে না।
আলমারিতে জায়গা থাকলে কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে রাখা যেতে পারে শুকনো তেজপাতা কিংবা ন্যাপথালিন। এতে পোকার সংক্রমণ থেকে যেমন কাপড় সুরক্ষিত থাকবে, তেমনি দুর্গন্ধও হবে না।
সাধারণত প্লাইউড কিংবা বোর্ডের তৈরি আলমারিতে বৃষ্টির দিনে কিংবা স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় দ্রুত ছত্রাক ধরে। সে ক্ষেত্রে এতে তুলে রাখা কাপড়ও নষ্ট হয়ে যায় অজান্তেই। অনেক ক্ষেত্রে স্টিলের আলমারিতে মরিচার কারণে কাপড় নষ্ট হয়ে যেতেও দেখা যায়। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য মাঝেমাঝে প্রিয় পোশাকটিও আর ব্যবহার করা যায় না। তাই একটা নির্দিষ্ট সময় পর আসবাবের ব্যবহার উপযোগিতাও পরীক্ষা করে দেখা উচিত; পরিষ্কার করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে নেওয়া শ্রেয়।
বাজারে প্লাস্টিকের অনেক কনটেইনার পাওয়া যায়। এয়ার টাইট এসব কনটেইনারে দিব্যি এঁটে যায় শীতের সব কাপড়। তবে এক কনটেইনারে ঠাসাঠাসি করে না রাখাই ভালো। ব্রিদিং স্পেস রাখলে কাপড়ের টেম্পার ভালো থাকে।
যেসব কাপড় ড্রাই ওয়াশ করতে হয় অথবা সফট ওয়াশ, সেগুলোকে সেভাবে ওয়াশ করা চাই। বিশেষ ফ্যাব্রিক যেমন সিল্ক কিংবা নিট কীভাবে ওয়াশ করতে হয়, তার ওপর এর উজ্জ্বলতা ও টেম্পার নির্ভর করে। ভাঁজের ফাঁকে ট্রেস পেপার বা পলিথিন রাখলে কাপড় ভালো থাকে। বিশেষত তসর কিংবা সিল্ক বেশ ভঙ্গুর ফ্যাব্রিক। ওভারকোট, লং কোট কিংবা স্যুটগুলোকে ওয়াশের পর লং লেন্থের ব্যাগে করে ঝুলিয়ে রাখতে পারলে ঠিকঠাক থাকে পরের মৌসুম অব্দি।
শীতে মূলত আমরা চামড়ায় তৈরি জ্যাকেট, বুট—এসব বেশি ব্যবহার করে থাকি। লেদারের যত্ন আবার ফ্যাব্রিকের চেয়ে একেবারে আলাদা। লেদারকে পলিব্যাগে না রেখে বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় রাখলে ভালো থাকে। মাঝেমধ্যে মুছে পরিষ্কার করে রাখলে বছরের পর বছর পার করা যাবে।
দু-তিন মাস পরপর কাপড় রোদে শুকিয়ে আবার তুলে রাখলে পোকার সংক্রমণ থেকে বেঁচে যায়। কাপড়ে স্যাঁতস্যাঁতে যে দুর্গন্ধ হয়, তা থেকে রক্ষা মেলে।
রেগুলার ওয়্যার থেকে অকেশনাল ওয়্যারগুলোকে আলাদা করে রাখলে বাড়তি যত্ন পায় কাপড়গুলো। তা ছাড়া যেসব কাপড় সচরাচর পরা হয় না, সেগুলো ডিক্লাটার করে ফেলা কিংবা যাদের প্রয়োজন তাদের ডোনেট করে দেওয়াটা ওয়্যারড্রোবের জন্য যেমন ভালো, তেমনি মনের জন্যও।
দীর্ঘদিন পাইল আপ করে রাখায় এক কাপড় থেকে অন্য কাপড়ে রঙের দাগ লেগে যায় প্রায়শই। তাই রঙের ক্রম অনুসরণ করে কাপড় গুছিয়ে রাখলে সবচেয়ে ভালো থাকে।
অনেক সময়ে বাসায় বিভিন্ন লাগেজ, ব্যাগ বা ট্রাংক খালি পড়ে থাকে। কাপড় স্টোরিংয়ের জন্য বেছে নেওয়া যেতে পারে সেগুলো। একের ভেতর দুই হয়ে যাচ্ছে তাহলে। দামি কাপড়গুলোকে অবশ্যই পলিথিনের ব্যাগে ভাঁজ করে তুলে রাখবেন, বছরের পর বছর চোখ বন্ধ করে পরা যাবে।
আলমারিতে না রেখে বরং স্টোর রুমে কাপড় রাখলে ইঁদুরে কাটার শঙ্কা থেকে যায়। মাঝে মাঝে স্টোর রুম পরিষ্কার করে নিলে কাপড় ও ঘর—দুই-ই ভালো থাকবে। একটু যত্ন করে রাখলে বছরের পর বছর পারও করে দেওয়া সম্ভব।
নাঈমা তাসনিম
ছবি: ইন্টারনেট