মনোজাল I শর্ত সেলফ লাভ
সঙ্গে প্রচলিত স্ট্যান্ডার্ড ভেঙে নিজস্বতায় ভরসা। জীবনের মূলমন্ত্র হোক নিজেকে উদ্যাপন। ফ্যাশনেবলি
ফ্যাশন কী? নিত্যনতুন ট্রেন্ডি পোশাকে নিজেকে সাজানো, নাকি তার চেয়ে বেশি কিছু? যদি বলা হয়, ফ্যাশন হচ্ছে আত্মপ্রকাশের একটি রূপ, আত্মবিশ্বাস ও আত্মপ্রেম বাড়ানোর উপায়; মানা যাবে? মানুষমাত্রই অন্যের কাছে নিজেকে সুন্দর ও আত্মবিশ্বাসী হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফ্যাশন শুধু সামাজিক মানদণ্ড মেনে চলা বা সর্বশেষ প্রবণতা অনুসরণ করা নয়, বরং নিজস্ব শৈলী ও ব্যক্তিত্বকে আলিঙ্গন করার মাধ্যম। ফ্যাশনের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস ও আত্মপ্রেম তৈরি করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া, জীবনে যার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রয়েছে। কীভাবে? এ জন্য প্রথমে জানা চাই, স্বপ্রেম ও ক্ষমতায়ন কী।
আত্মপ্রেম ও ক্ষমতায়ন—দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা একসঙ্গে চলে। স্বপ্রেম হলো নিজেকে জানা, দোষত্রুটিসহ নিজের পুরোটাই গ্রহণ করা। নিজেকে ভালোবেসে সঠিক মূল্যায়ন করা। নিজের সঙ্গে আরও সহনশীল আচরণ করা। অন্যদিকে ক্ষমতায়ন হলো, জীবনের নিয়ন্ত্রণ, সিদ্ধান্ত এবং অবশ্যই নিজেকে ভালো রাখার দায়িত্ব নেওয়া। আত্মপ্রেম ও ক্ষমতায়ন একত্র হলে এমন একটি শক্তিশালী সংমিশ্রণ তৈরি হয়, যা যেকোনো বাধা পেরিয়ে লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। এবার প্রশ্ন আসতে পারে, এখানে ফ্যাশনের ভূমিকা কী বা এটি কীভাবে আত্মপ্রেম ও ক্ষমতায়নকে বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম।
সত্যি কথা হলো, স্বপ্রেম ও ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ফ্যাশন সব সময় শক্তিশালী হাতিয়ার। নিজের সম্পর্কে ভালো বোধ করা গেলে আপনাআপনিই আরও আত্মবিশ্বাসী ও ক্ষমতায়িত অনুভূত হয়। ফ্যাশন সেন্স প্রকাশ করার পাশাপাশি ব্যক্তিত্বও হাইলাইটেড হয়। একটি মানানসই পোশাক যে কাউকে আকর্ষণীয় দেখাবার পাশাপাশি বিশ্বকে বিশেষ বার্তাও পাঠায়, যে, পরিধানকারী নিজেকে মূল্যবান মনে করেন, সম্মান করেন। এই আত্মতৃপ্তি নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণের, নতুন কিছুর প্রচেষ্টার এবং সফল হওয়ার ক্ষমতায় আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। এ জন্য বাছাইটা সঠিক হওয়া চাই। শরীরের সেরা বৈশিষ্ট্যগুলোকে হাইলাইট করলেও যদি তা স্বস্তিদায়ক না হয়, এমন ট্রেন্ডি পোশাক পরা থেকে বিরত থাকা হলো এ ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ।
নিজস্ব স্টাইল, ব্যক্তিত্ব, আগ্রহ ও জীবনধারার প্রতিফলনই যে কাউকে অনন্য করে তোলার জন্য যথেষ্ট। তাই কী ধরনের পোশাকে বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং আরাম অনুভূত হয়, তা চিহ্নিত করলেই কেল্লা ফতে। এর ওপর ভিত্তি করে, কাট-কালার-প্রিন্ট আর প্যাটার্ন নিয়ে খেলায় মেতে ওঠা যায়। বোহিমিয়ান থেকে ক্ল্যাসিক, এজি কিংবা ট্রেন্ডি—বিভিন্ন স্টাইল নিয়ে নিরীক্ষা করা যেতে পারে। যতক্ষণ না পছন্দসই কিছু খুঁজে পাওয়া যায়। পার্সোনাল স্টাইলিংয়ের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম নেই। তাই ঝুঁকি নেওয়ার এবং নতুন কিছু চেষ্টা করার ক্ষেত্রে ভয় পাওয়ারও কিছু নেই।
পোশাকের বিভিন্ন রং কিন্তু মেজাজ ও আত্মবিশ্বাসের স্তরের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। রঙের মনোবিজ্ঞান একটি আকর্ষণীয় ক্ষেত্র। কীভাবে বিভিন্ন রং আবেগ ও আচরণকে প্রভাবিত করে, তা বর্ণনা করে। পোশাকের জন্য সঠিক রং নির্বাচন করেও আত্মবিশ্বাস বাড়ানো সম্ভব। আরও ক্ষমতায়িত বোধ করা যায়। যেমন লাল একটি শক্তিশালী রং, যা শক্তি ও আবেগের অনুভূতি জাগায়। নীল রং মূলত প্রশান্তি ছড়ায়; মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে।
কেবল রং নয়, যখন ফ্যাশনের মাধ্যমে ক্ষমতায়িত বোধ করার কথা আসে, তখন অনুষঙ্গও একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। সঠিক অনুষঙ্গ যেকোনো পোশাককে একদম বেসিক থেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। তাই পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে সঠিক অনুষঙ্গ বাছাই এ ক্ষেত্রে বড় ব্যাপার। ধরা যাক, খুব সাধারণ একটি কালো বা সাদা পোশাক। কিন্তু এর সঙ্গে একটি স্টেটমেন্ট নেকলেস বা এক জোড়া গর্জাস কানের দুল যোগ করলে পুরো লুকই চেঞ্জ হয়ে যাবে। এক জোড়া মানানসই জুতাও হতে পারে গেম চেঞ্জার। কথায় আছে, এক জোড়া পারফেক্ট জুতা বিশ্ব জয় করার অনুভূতি দেয় মনে। সুতরাং জুতার কথা ভুললে চলবে না।
এককথায়, ব্যক্তিগত স্টাইলকে প্রতিফলিত করে নিজের জন্য এমন পারফেক্ট ফ্যাশন স্টেটমেন্ট তৈরি করাই ফ্যাশনের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস ও আত্মপ্রেম বাড়ানোর গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যখন কোনো পোশাকে আত্মবিশ্বাস বাড়ে, তখন সেই পোশাক পরা একটি উপভোগ্য অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে। তাই সে ধরনের পোশাকে বিনিয়োগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। পুরোনো জামাকাপড়, যা আর মানায় না বা যে পোশাকগুলো বিরক্তি উদ্রেক করে ও অস্বস্তি বোধ করায়, সেগুলো ফেলে দেওয়াই উত্তম। কারণ, ফ্যাশন পোশাকের চেয়ে অনেক বেশি কিছু। উপভোগের বিষয়। ঝুঁকি নিতে ভয় পেলে চলবে না, তবে যতক্ষণ না নিজের জন্য উপযুক্ত কিছু খুঁজে পাওয়া যায়, ততক্ষণ এক্সপেরিমেন্টে না যাওয়াই মঙ্গল।
রত্না রহিমা
মডেল: ষড়ঋতু
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল