ফিচার I গালগল্পের ঊর্ধ্বে
কারণ, মেকআপের এই আইটেম পথ পাল্টে আলো ছড়াচ্ছে চোখ, ঠোঁট এমনকি নখেও
হাইলাইটার। কম-বেশি সবাই পরিচিত মেকআপ এই পণ্যের সঙ্গে। সাজের দীপ্তি প্রকাশে কার্যকর। প্রথম দিকে এর ব্যবহারের আধিক্য দৃশ্যমান দূর গ্রহ থেকেও! সেটাই ছিল ট্রেন্ড। প্যারিসের বহুল ব্যবহৃত মেকআপ ব্র্যান্ড ল’রিয়েলের সেলিব্রিটি মেকআপ আর্টিস্ট স্যার জনের একটি লাইনই যথেষ্ট এর গুরুত্ব বোঝাতে ‘হাইলাইটার ব্যবহারে তোমার ত্বক সূর্যের আলোতে নাচবে’। এমন গুণের কথা সর্বজনবিদিত। কিন্তু শুধু চিকবোনেই কি হাইলাইটারের কাব্যকথার সমাপ্তি? তেমনটা কিন্তু লাগছে না ইন্টারনেট ঘেঁটে। আরও বিভিন্ন আঙ্গিকে ব্যবহারের গল্প রয়েছে পাতায় পাতায়। কারণ, ত্বককে এর কমপ্লিমেন্ট করার ক্ষমতা। ব্যবহারে সবাইকে সুন্দর দেখায়। তারুণ্যোজ্জ্বল সতেজতা ছড়িয়ে দেয় চেহারায়।
ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডেশনে
মেকআপ লেয়ারের প্রথম দিকে ব্যবহার করা হয় ফাউন্ডেশন। এটি মূলত মেকআপের বেসিক আইটেম হিসেবে পরিচিত। এই প্রসাধন মুখে বুলিয়ে নেওয়ার আগে চেহারার উঁচু অংশগুলোতে দুপাশ যেমন কপালের, নাকের উঁচু অংশ, ব্রাও বোনে বুলিয়ে নেওয়া যেতে পারে হাইলাইটার। এর ওপর ফাউন্ডেশন। যেহেতু ফাউন্ডেশন ভারী মেকআপ লেয়ার তৈরি করে, সে কারণে ব্যবহারের পরে অনেক সময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আড়াল হওয়ার মতো উদাহরণ পাওয়া যায়। কিন্তু হাইলাইটারের লেয়ারের ওপরে ফাউন্ডেশন ব্যবহার করলে তুলনামূলক ন্যাচারাল লুক তৈরি হয় বলে মত দিয়েছেন ফ্রেঞ্চ কসমেটিক ব্র্যান্ড নার্সের মেকআপ আর্টিস্ট নিকো লোপেজ।
ড্রামাটিক নাইট টাইম গ্লো
পা দেখা যাবে এমন পোশাক বেছে নিলে দারুণ প্রসাধন হতে পারে হাইলাইটার। হোক সেটি নি লেন্থ ড্রেস কিংবা স্লিটেড। সঠিক কৌশলে হাইলাইটার ব্যবহারে পা নজর কাড়বেই। সেলিব্রিটি আর্টিস্ট মোয়ানি লির বক্তব্য পাওয়া যায় এ বিষয়ে। তিনি একটি আর্টিকেলে বলেছেন, ‘আমার ক্লায়েন্টের পোশাক লেগ এক্সপোজিং হলে, তার পায়ের সবচেয়ে দীর্ঘ হাড়, টিবিয়া এবং থাই বোনে আমি হাইলাইটার ব্যবহার করি।’ এ ক্ষেত্রে মেকআপ আর্টিস্ট ক্রিম হাইলাইটার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। ভেগান এবং ক্রুয়েলটি ফ্রি ব্র্যান্ড কভার এফ এক্সের গ্লোবাল অ্যাম্বাসেডর ডেরেক শেলবিরও মতামত পাওয়া যায় এ বিষয়ে। তিনিও মনে করেন, পায়ে একটি ক্রিমি হাইলাইটার স্টিক ব্যবহারের মাধ্যমে রাতের পার্টি লুককে করে তোলা যায় আরও গ্ল্যামারাস।
চঞ্চল চোখে চোখ রেখে
দাওয়াতের আগে চোখে ক্লান্তি নামলে সমাধান হতে পারে হাইলাইটার। কীভাবে? চোখের ভেতরের দিকের কোণে একটু করে হাইলাইটার ছুঁয়ে নিলে চোখ দেখাবে বেশ সতেজ। ক্লান্তি-শ্রান্তি সুযোগ পাবে না একটুকুও উঁকি দেওয়ার। আমেরিকান মেকআপ ব্র্যান্ড ইএলএফের আর্টিস্টিক ডিরেক্টর অ্যাশেল ডানওয়ের মন্তব্য পাওয়া যায় এ বিষয়ে। তিনি বলেন, ‘ইনার আই কর্নারে হাইলাইটারের ছোঁয়া চোখকে জাগ্রত দেখাতে সাহায্য করে। যে দীর্ঘ সময় পরেও নেই কোনো অবসাদ কিংবা ক্লান্তি।’ আবার আইলাইনারে শিমারি লুক আনতে চাইলে সেখানেও ব্যবহার করা যেতে পারে এই প্রসাধন। এ ক্ষেত্রে হাইলাইট পাউডার বেশ কার্যকরী। শুধু লাইনার হিসেবে ব্যবহারের আগে বডি মিস্ট দিয়ে খানিকটা আর্দ্র করে নিতে হবে, ব্যস!
ফুলার লিপস টিপস
ঠোঁটের ওপরের অংশে অল্প একটু হাইলাইটার টেকনিক ব্যবহার করলে বেশ ফুলার লুক পাওয়া সম্ভব। আবার লরা জেলার কসমেটিকসের ফাউন্ডার লরা নিজেই এ বিষয়ে দিয়েছেন একটি টিপস। ‘ফেল্ট টিপ’ অ্যাপলিকেটর ব্যবহার করে ঠোঁটের চারপাশজুড়ে হাইলাইটার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। এতে ফুলার লিপসের লুক মিলবে বলে বক্তব্য তার। ঠোঁটে লিপ গ্লস ব্যবহার করলে সেখানেও দেখানো যেতে পারে হাইলাইটারের কারসাজি। সমান করে লিপ গ্লস দিয়ে নিয়ে এর ওপর লিপ ব্রাশের সাহায্যে হাইলাইটার বুলিয়ে নিলে আভা ছড়াবে পুরো সাজে।
হাইলাইটেড আইশ্যাডো
চোখের পাতায় ব্যবহার করা যেতে পারে হাইলাইটার। আইশ্যাডো হিসেবে। হাই পয়েন্ট অব ফেসগুলোর মাঝে চোখের পাতা অন্যতম। নাইট টাইম মেকআপে মুখের এই অংশে হাইলাইটার ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন ব্লাশিংটন মেকআপ অ্যান্ড বিউটি লাউঞ্জের এডুকেশন ডিরেক্টর রোসিও মাতোস। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার সম্ভব। ম্যাট ফর্মুলার আইশ্যাডো ব্যবহারে আই লিড ড্রাই হয়ে যেতে পারে। সমাধান হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে হাইলাইটার। বেইস কোট হিসেবে। তাহলে শুষ্কতার অস্বস্তি তৈরি হবে কম।
ডার্ক সার্কেলের দুর্দিন
চোখে ডার্ক সার্কেল তৈরি হয়ে থাকলে আন্ডার আইতে হাইলাইটার ব্যবহারে পাওয়া যেতে পারে সমাধান। কনসিলারের মতোই কাজ করবে এটি। শুধু বুঝে নিতে হবে হাইলাইটারটিতে গ্লিটার পার্টিকেলসের উপস্থিতি আছে কিনা। কারণ, চোখের জন্য এগুলো ভালো নয়। এই ক্ষতিকর চকমকি ক্ষুদ্র কণিকাগুলো না থাকলেই সই!
নখে নতুনত্বে
অস্বচ্ছ, ম্যাট শ্যাড একদমই ট্রেন্ডে নেই; বরং শিয়ার, গ্লিমারিং ফিনিশের নেইলপলিশ এখন তালিকার শীর্ষে। ফ্রস্টেড, পার্লি, কেইরি নেইল এর বড় উদাহরণ। তবে গ্লেজড ডোনাট মেনিকিওর যেন আরও একধাপ এগিয়ে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বাসায় বসেই এটি করে নেওয়া সম্ভব। বেসিক নেইলপলিশ আর হাইলাইটার হাতের কাছে থাকলেই চলবে। ফ্লাফি একটি আইশ্যাডো ব্লেন্ডিং ব্রাশ দিয়ে কিউটিকল আর আঙুলে হাইলাইটার বুলিয়ে নিলেই চলবে। তবে তা হওয়া চাই লেস পিগমেন্ট আর হাই গ্লিটার যুক্ত; তবেই দারুণ দেখাবে।
সারাহ্ দীনা
মডেল: লিন্ডা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল