সঙ্গানুষঙ্গ I ফেস্টিভ ফুটওয়্যার
পছন্দের পোশাক কেনা শেষ। এবার চাই জুতসই জুতা। উৎসবসম্মত, কিন্তু স্বস্তিদায়ক ও স্বাস্থ্যসম্মত। তবেই না সাজে সন্তুষ্টি আসবে ষোলো আনা
ফুটওয়্যার বাজারের কলেবর বেড়েছে নিয়মিত। স্ট্যাস্টিকা তাদের একটি রিসার্চ পেপারে ধারণা প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশের ফুটওয়্যার মার্কেটের আকার ২০২৪-২০২৮ সময়কালে ৫ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ দেশে বাণিজ্যিকভাবে জুতা তৈরি শুরু ১৯৬২ সালে। বাটা শু কোম্পানির যাত্রার মধ্য দিয়ে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত সে তালিকায় যুক্ত হয়েছে অনেকে। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ কেনাকাটা করে উৎসবকে কেন্দ্র করে। বাজার বড় হওয়ার ক্ষেত্রে ঈদ, পয়লা বৈশাখ ভূমিকা রেখেছে বলা যেতে পারে। বিয়ের শপিংও জুতার বাজারকে প্রভাবিত করে। ঈদের পরের ছুটিতে অনেকেরই বিয়ে সেরে ফেলার পরিকল্পনা থাকে; ফলে ফুটওয়্যার কোম্পানিগুলো সব ভেবেই জুতার ডিজাইন, ম্যাটেরিয়াল নির্ধারণ করে। মূলত নন-অ্যাথলেটিক ফুটওয়্যার এ সময়ে প্রাধান্য পায়। তবে করোনাকালের পর থেকে মানুষ স্বাস্থ্য ও সুস্থতা—উভয় বিষয় নিয়েই আগের চেয়ে বেশ সচেতন। হেলথ কনশাসনেসের কারণে অ্যাথলেটিক ফুটওয়্যারের বাজারও বড় হয়েছে। সেখানেও ফেস্টিভিটি যোগ হতে দেখা যায়। উদাহরণ স্নিকারে ফ্লোরাল প্রিন্ট।
ঈদের জুতা নিয়ে উত্তেজনা, সে তো বরাবরেরই। পোশাকের সঙ্গে রং মিলিয়ে কেনার আগ্রহও দেখা যায়। আবার কেউ কেউ চিরচেনা কালো-সাদাতেই থাকেন খুশি। সোনালি আর রুপালির চাহিদাও বাড়ে। হিল বরাবরই পছন্দের তালিকায় ছিল। এবারও ব্যতিক্রম নয়। হিলের বিভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। গঠনগত নকশায় এসেছে নতুনত্ব। স্লিপার যে হাওয়া হয়ে গেছে, তা কিন্তু নয়। সবই আছে। মেয়েরা কেনাকাটায় এগিয়ে আছেন, সে কথা তো জানা আছেই; তাই প্রথমে থাকছে নানা রঙে, নানা ঢঙে ফিমেল ফুটওয়্যারের গল্প।
ওয়েলকাম ওয়েজেস
জুতার সোলের এক্সটেনশন করা হয় এই ডিজাইনে। শেষ থেকে শুরু অবধি একই উচ্চতার। পুরো পা সাপোর্ট পায় বলে হাঁটাচলায় তুলনামূলক স্বস্তিদায়ক। ১৯৪০ সালে প্রথম বাজারে আসে। জনপ্রিয়তা ১৯৭০ থেকে। আর এবারে ফুটওয়্যার স্টেটমেন্ট হিসেবে নাম কামিয়ে নিয়েছে।
প্রিটি পাম্প শু
এটি সব সময় ইন ট্রেন্ড। তবে ঈদ ঘিরে সেজেছে আনকোরা রূপে। অলংকরণে বাকেল বো-এর ব্যবহার বেশি। ডিজাইন ক্লোজ কাউন্টার হওয়ার কারণে পা নিরাপদ থাকে। তাই ছোট থেকে বড়—যে কেউই ব্যবহার করতে পারেন। রঙের ক্ষেত্রে পাউডার পিংক, অফ হোয়াইট, পার্ল পিংক, পিচ নজর কাড়ছে।
পয়েন্টি ওপেন ব্যাক
স্টিলেটো ঘরানা থেকে পয়েন্টি ওপেন ব্যাকের আগমন। পেছনের দিকের পুরোটা খোলা; তবে সামনের দিকে ক্লোজড হওয়ার কারণে অলংকরণ দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলার সুযোগ থাকে। আর ডিজাইনাররা এই সুযোগের যথাযথ ব্যবহার করেছেন এবার। এই অংশে শাইনি লুক দেখা যাচ্ছে। কোনো জুতায় বিডস, স্টোনের এমবেলিশমেন্ট তো কোনোটায় এমব্রয়ডারি। আবার দুই রঙের সম্মিলনেও সৃজনশীল নকশা করা হয়েছে। পয়েন্টি ওপেন ব্যাকের সঙ্গে মিউল হিলের সঙ্গত নজরকাড়া। এগুলো বিয়ের কনের জুতা হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়। এ কারণে চুমকির নকশাও দেখা যায়। বাংলাদেশের ব্র্যান্ডগুলোতে ডার্ক শেড বেশি চোখে পড়ছে। কালো, নেভি ব্লু, মেরুন দারুণভাবে ইন ট্রেন্ড।
স্ট্রাকচারড লাগ শু
রাবার ম্যাটেরিয়ালে তৈরি লাগ শু এবার ঈদে জেনারেশন জেডের পছন্দের তালিকায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এই জুতার বিশেষত্ব এর স্ট্রাকচারে। সোল ডিজাইনে গ্রিপ দারুণ শক্তিশালী। তাই যেকোনো আবহাওয়ায় পরে নেওয়া যায়। হাঁটাহাঁটিতে সুবিধা হয় বলে ওয়ার্ক শু হিসেবে জনপ্রিয়। তবে উৎসবের সময়েও চাহিদা থাকতে পারে। কালো লাগ শুর চাহিদা থাকবে বেশি।
স্লিংব্যাকে সুন্দর
অ্যাংকেল স্ট্র্যাপে নান্দনিক সৌন্দর্যের বিকাশ ঘটায় এই নকশার জুতা। বিশ্ববিখ্যাত ডিজাইনার কোকো শ্যানেলের হাত ধরে জনপ্রিয় হয়েছিল বহুবছর আগে। যার ধারাবাহিকতায় এখন অব্দি ফ্যাশন বিশ্বে এর জনপ্রিয়তার পারদ ওপরের দিকে। এবারের ঈদেও ফ্যাশনিস্তাদের কালেকশনে জায়গা করে নেওয়ার সম্ভাবনা আছে। কালো, পাউডার ব্লু, আইভরি, মিডনাইট ব্লু, ক্যামেল রংগুলো থাকবে এগিয়ে।
স্যান্ডেল থেকে ফ্লিপফ্লপ
স্যান্ডেল সব সময়ই ক্রেতাপ্রিয়। স্লিংব্যাক স্যান্ডেল কেনায় আগ্রহ দেখা যেতে পারে এবার। যেহেতু বসন্ত বিদায়ের পরেই আসবে গনগনে গরম, তাই খোলামেলা জুতার ডিমান্ড থাকবেই। খেয়াল রাখতে হবে পায়ে ঠিকঠাকমতো হয়েছে কি না। যেহেতু ওপরের অংশের নকশা এবং স্ট্রি পা ধরে রাখে, তাই কতটুকু আরামদায়ক, তা যাচাই করে নেওয়া ভালো।
প্রোভাইড আ প্ল্যাটফর্ম
স্ট্রিট স্টাইলের জনরায় দীর্ঘ সময় লিড দিয়েছে ফ্লাট ও ব্যালে পাম্প। এবারে প্ল্যাটফর্ম শু সেই জায়গা দখলে নেবে বলে ধারণা করছেন ফুটওয়্যার স্টাইলিশরা। উঁচু হিলে যাদের সমস্যা নেই, তাদের পছন্দের তালিকায় এই নকশার অবস্থান থাকতে পারে।
মিউল শু
আঠারো শতকের অভিজাত জুতা। পেছনের দিকে খোলা। সামনের অংশে নকশা করানো। সফট লেদার ব্যবহারে তৈরি করা হয় ভেতরের অংশ। তাই পরতে আরামদায়ক। অল্প হিল থাকে। সেখানে এবারে অলংকরণ দেখা যাচ্ছে। শ্যাম্পেইন, ডাস্টি রোজ, ব্ল্যাক শেড পছন্দের তালিকায় থাকতে পারে।
হ্যান্ডক্র্যাফটেড জুত্তি
হাতে বানানো জুতার প্রতি আলাদা আগ্রহ দেখা গেছে কয়েক বছর ধরে। সৃজনীর বিমূর্ত প্রকাশ এই জুতাগুলো। সোলে লেদারের ব্যবহার আর সবটা জুড়ে নান্দনিক নকশা এর সুন্দরতার মূল। যেন শিল্পীর ক্যানভাস দুই পা জুড়ে। কখনো সরাসরি ফ্যাব্রিকে, কখনো সুই-সুতা-পুঁতি-চুমকি, কখনো হ্যান্ড পেইন্টে সেজে ওঠে জুত্তি। উৎসবের আমেজ দারুণভাবে প্রকাশিত হতে পারে এতে পা গলিয়ে নিলে। জুত্তির অনেক রকমের নকশা রয়েছে। এবারে উজ্জ্বল রঙে তিল্লা জুত্তি, লাকি জুত্তি, কাসুরি জুত্তির চাহিদা থাকবে। মোগল আমলের জুত্তির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। এবারেও সেই রেশ থাকবে বোঝা যাচ্ছে।
পুরুষের ঈদপোশাকে পাঞ্জাবি-পাজামা ছিল, আছে, থাকবে! সেগুলোর সঙ্গে মানিয়ে পায়ে স্যান্ডেল, ব্যাক বেল্ট স্যান্ডেল, হাফ শু পছন্দ করার সম্ভাবনা রয়েছে এবার। চিরায়ত নাগরায় স্বচ্ছন্দ এমন মানুষেরও দেখা মিলবে বলে ধারণা বাজার বিশেষজ্ঞদের। ক্যাজুয়ালের সঙ্গে লোফার থাকতে পারে পছন্দের তালিকায়।
স্যান্ডেল
স্যান্ডেলের বিশাল সংগ্রহ দেখা যাচ্ছে দেশের ফুটওয়্যার ব্র্যান্ডগুলোতে। ক্রস বেল্ট সহজে ব্যবহার করার জন্য অনেকের পছন্দের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। ব্যাকবেল্ট স্যান্ডেল আছে এখনো চাহিদায়। দীর্ঘ সময় পাঞ্জাবি-পাজামায় যাদের থাকার ইচ্ছা, তাদের জন্য এ ধরনের স্যান্ডেলের উপযোগিতা বেশি। আরামের সঙ্গে সঙ্গে আভিজাত্য প্রকাশ পাবে।
লোফার
মূলত মোকাসিন থেকে অনুপ্রাণিত। লেইস লেস। মোস্ট ক্যাজুয়াল হিসেবে নামডাক হয়েছে। পেনি লোফার ও ট্যাসেলের বড় সংগ্রহ দেখা যাচ্ছে মার্কেট ঘুরে। ধারণা করা যায়, ক্রেতাচাহিদায় দুটিই এগিয়ে থাকবে। নেভি ব্লু, কালো, ক্যামেল কালারে।
নাগরা
বাংলাদেশি পুরুষদের মধ্যে অনেকে পাজামা-পাঞ্জাবি-নাগরাতেই ঈদের আমেজ পরিপূর্ণ মনে করেন। লেদারের তৈরি নাগরা এবারেও বাজার ব্যস্ত রাখবে বলে ধারণা। কারুকার্যে এমব্রয়ডারির ব্যবহার হয়েছে। আবার কিছু নকশা শুধু গঠনগত সৌন্দর্যেই। দু রকমই আছে।
এ বছর বাংলাদেশের জুতার বাজারের আকার ৩ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে বলে অনুমান করেছে গবেষণাসংক্রান্ত ওয়েবসাইট স্ট্যাস্টিকা। ঈদবাজারের কেনাকাটা এর সম্ভাবনা অনেকটাই নির্ধারণ করবে।
সারাহ্ দীনা
মডেল: কনিকা, কোকো, মারিয়াম, লিন্ডা, ষড়ঋতু ও সজিব
ফুটওয়্যার: ওরিয়ন
ওয়্যারড্রোব: ব্লুচিজ ও রাইজ
ছবি: কৌশিক ইকবাল