তনুরাগ I দাওয়াই যখন ডিটক্স
শরীরের ভেতরের দূষণ দূরে। সঙ্গে কাটবে প্রতিদিনের ক্লান্তি, কাজের চাপে সৃষ্ট অবসাদ; এমনকি গায়ের ব্যথা। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ না করেই
বডি ডিটক্সের হাজার রকম তরিকা। সেই সঙ্গে সহজলভ্য দেশি-বিদেশি নানা ডিটক্সিফায়িং পণ্য। এলিক্সির, সনা, ব্রিদওয়ার্ক, চা, স্ক্রাব থেকে ডিওডোরেন্ট অব্দি—সবই তৈরি হচ্ছে শুধু শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, এত কিছুর ভিড়ে আজ অব্দি বডি ডিটক্সের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি ম্লান অর্থাৎ গোসল। যা অবশ্যই হতে হবে উষ্ণ পানিতে। সঙ্গে চলতে পারে সুদিং মিউজিক আর জ্বালিয়ে নেওয়া যায় পছন্দের কোনো সেন্টেড ক্যান্ডেল। ভাবতেই যেন অর্ধেক ক্লান্তি কেটে যায়!
কিন্তু চিন্তা চলে আসতেই পারে, এমন স্বর্গীয় অনুভূতি পেতে কি গাঁটের অনেক পয়সা খরচ করে পারলারের কোনো দামি প্যাকেজ কিনে নিতে হবে। ব্যাপারটি কিন্তু মোটেই সে রকম নয়। বাসায় বসেই ডিটক্স বাথ সেরে নেওয়া সম্ভব। তা-ও শুধু একভাবে নয়, ভিন্ন ভিন্ন ছয়টি উপায়ে। যার কোনোটাই রকেট সায়েন্স নয়; সাদাসিধে সব স্টেপ। এতে ব্যবহৃত উপাদানগুলোও শতকের বেশি সময় ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে সারাইয়ে, নতুন প্রাণ জোগাতে। একটিমাত্র মূল উপাদান, কিন্তু তার অসীম শক্তিতেই দূরীভূত হয় দেহের টক্সিন আর হেভি মেটাল।
তবে ডিটক্স বাথের আগে মাথায় রাখা চাই, পুরো সময়টা রিল্যাক্সিং অনুভূত হবে বটে; কিন্তু শরীর অতিরিক্ত উষ্ণ হয়ে উঠবে। গোসলের সময় প্রচণ্ড ঘামতে পারে শরীর। এমনকি গোসল সারার পরে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত গায়ে ঘাম হতে পারে। তাই গোসলের শুরুতে আর্দ্রতার ভরপুর জোগান দেওয়া চাই শরীরে। গোসল সারার পর পান করতে হবে পর্যাপ্ত পানি। তবেই প্রস্তুত হবে শরীর।
এপসম সল্ট বাথ: দ্য ওজি
উপাদান: ২ কাপ এপসম সল্ট।
নিয়মাবলি: গোসলের উষ্ণ পানিতে এপসম সল্ট ঢেলে ভালো করে গুলিয়ে নিতে হবে। এতে গা ডুবিয়ে বসে থাকতে হবে মিনিট পনেরো থেকে ত্রিশেক। ত্বকের ধরন ও চাহিদা বুঝে। তারপর স্বাভাবিক পানি দিয়ে শরীর ধুয়ে, তোয়ালে দিয়ে মুছে নিতে হবে।
উপকারিতা: বিশেষজ্ঞদের মতে, এপসম সল্ট বাথ হচ্ছে ম্যাগনেশিয়াম ও সালফারের দারুণ উৎস; যা পেশি ও জয়েন্টের রিলাক্সেশনে সহায়ক। প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি দেহ থেকে টক্সিন আর হেভি মেটাল দূর করতেও বেশ কার্যকর।
বেকিং সোডা বাথ: দ্য সিম্পল ওয়ান
উপাদান: চার কাপ অ্যালুমিনিয়াম ফ্রি বেকিং সোডা।
নিয়মাবলি: গোসলের জন্য গরম পানি নেওয়ার সময় তাতে বেকিং সোডা মিশিয়ে নিতে হবে। পানির তাপমাত্রা সামান্য সহনীয় হলে তাতে শরীর ডুবিয়ে বসে থাকতে হবে ত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিট অব্দি। তারপর তোয়ালে দিয়ে ভালো করে মুছে নিতে হবে ত্বক। হ্যাঁ, খানিকটা আজবই শোনায়; তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, পরের দিন পর্যন্ত স্বাভাবিক পানি দিয়ে গা না ধোয়ার বা গোসল না করার।
উপকারিতা: দেহ থেকে ক্ষতিকর টক্সিন আর মেটাল বের করে দেয়। পেশির ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়। বডি অ্যালকালাইজ করে।
বেন্টোনাইট ক্লে বাথ: ডিপ ডিটক্স সোক
উপাদান: ৩/৪ (১ কাপের ৪ ভাগের ৩ ভাগ) কাপ বেন্টোনাইট ক্লে।
নিয়মাবলি: আলাদা পাত্রে নিয়ে তাতে ক্লে মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করে নিতে হবে। এটি দুটো বিকল্প উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রথমটি হচ্ছে গোসলের গরম-গরম পানিতে মিশ্রণটি ঢেলে কাঠের চামচ অথবা হাত দিয়ে গুলিয়ে নেওয়া। আর দ্বিতীয় পদ্ধতি অনুসারে মিশ্রণটি পুরো গায়ে মাখিয়ে নিতে হবে। মিনিট পাঁচেক রেখে ভালো করে শুকিয়ে নেওয়া চাই। এই বডি মাস্ক ডিপ ডিটক্সিংয়ের কাজ করবে। দুটো পদ্ধতির পরবর্তী ধাপ কিন্তু একই। উষ্ণ পানিতে মিনিট বিশেকের জন্য শরীর ডুবিয়ে রাখতে হবে। তারপর ঠান্ডা পানিতে শরীর ভালো করে ধুয়ে নিয়ে, টাওয়েল ড্রাই করে নিতে হবে ত্বক।
উপকারিতা: প্রদাহ কমায়। দেহ থেকে টক্সিন বের করে দেয়। আর্দ্রতা বাড়ায়। ত্বক করে তোলে সিল্কি স্মুথ।
অ্যাপল সাইডার ভিনেগার বাথ: দ্য স্মেলি ওয়ান
উপাদান: ১-২ কাপ র অ্যাপল সাইডার ভিনেগার।
নিয়মাবলি: গোসলের গরম-গরম পানিতে ভিনেগার ঢেলে দিতে হবে। তাতে ৩০-৪৫ মিনিট শরীর ভিজিয়ে নিতে হবে। তারপর তোয়ালে দিয়ে শুকনো করে মুছে নিতে হবে ত্বক। আট ঘণ্টার আগে গোসল একেবারে মানা।
উপকারিতা: আপাদমস্তক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে চমৎকার। গায়ে ব্যথা উপশমেও দারুণ। দেহের অ্যালকালিনিটি পুনরুদ্ধার করে। দেহে দুর্গন্ধের সমস্যা থাকলে তা দূরেও সহায়ক। যারা ডিওডোরেন্টের প্রাকৃতিক বিকল্প খুঁজছেন, তাদের জন্য বিশেষ কাজের।
গ্রিন টি বাথ: মিনারেল ড্রিপ
উপাদান: ৫-১০টি গ্রিন টি ব্যাগ।
নিয়মাবলি: গোসলের গরম পানি অর্ধেকটা নিয়ে তাতে পছন্দমতো পরিমাণে টি ব্যাগ ছেড়ে দিতে হবে। পানি পুরোটা ভরে যাওয়া পর্যন্ত টি ব্যাগগুলো তোলা যাবে না। তারপর আরও ১৫ মিনিট সেগুলোকে ভিজতে দিতে হবে। ততক্ষণে পানির রংও পরিবর্তিত হতে শুরু করবে। এই পানিতে ৩০-৪০ মিনিট শরীর ভিজিয়ে রাখা চাই। তারপর ঠান্ডা পানিতে গোসল করে তোয়ালে ড্রাই করে নিতে হবে ত্বক।
উপকারিতা: গ্রিন টি তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মিনারেল আর হিলিং প্রোপার্টি শুষে নেয় ত্বক।
জিঞ্জার বাথ: ইনফ্রারেড সনা
উপাদান: আধা কাপ সদ্য কুচিয়ে রাখা আদা অথবা ১-২ টেবিল চামচ অর্গানিক আদা পাউডার।
নিয়মাবলি: গোসলের উষ্ণ পানিতে আদাকুচি বা পাউডার ফেলে দিতে হবে। তারপর এই মিশ্রণে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে শরীর। গোসল করে নিতে হবে ঠান্ডা পানিতে। ত্বক টাওয়েল ড্রাই করে নেওয়া চাই।
উপকারিতা: ‘ফিবার বাথ’ হিসেবে পরিচিত এটি। কারণ, ডিটক্সিফিকেশন আর ইমিউনিটি বাড়ানো এ গোসলে দেহের তাপমাত্রা সামান্য বাড়ে। হয় ঘাম।
বিউটি ডেস্ক
মডেল: অন্তরা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল