ফিচার I রাশির কথারাশি
জোডিয়াক বা রাশিচক্র নিয়ে যেমন রয়েছে বিভিন্ন ধারণা, তেমনি রাশি নির্ধারণের বা গণনারও রয়েছে নানা পদ্ধতি। জোডিয়াকোস বা জোডিয়াক মানে হচ্ছে সূর্যের গতিপথের বারোটি ভাগ। এই শব্দটির আরেকটি মানেও রয়েছে, ‘ছোট পশুদের বৃত্ত’। এ কারণে হয়তো বেশির ভাগ রাশির প্রতীকে স্থান পেয়েছে বিভিন্ন পশুর আকৃতি। আবার সংখ্যাতত্ত্ব দিয়েও রাশির বিভাজন রয়েছে। সাধারণত সূর্যের গতিপথের উপর ভিত্তি করে রাশিচক্র নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, প্রাচীন প্রতিটি জাতি সূর্যের গতিপথকে বারোটি ভাগেই ভাগ করেছে। অথচ তখন গ্রিস, ভারত, মিসর- এসব দেশের মধ্যে যোগাযোগের সুযোগ ছিল না। এ ভারি অদ্ভুত যে, একটি বিষয়ে সবার ধারণা হুবহু মিলে গেছে। এই বারোটি ভাগের বারোটি নাম ও ছবি কল্পনা করা হয়েছিল, যা রাশির নাম ও প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত। মজার বিষয় হচ্ছে, চীন ছাড়া গ্রিস, মিসর, ভারতবর্ষ, আরবসহ অনেক দেশে এই বারোটি নাম ও প্রতীক হুবহু একই ছিল। প্রতিটি ভাগ হচ্ছে রাশি আর সূর্যের গতিপথ হলো রাশিচক্র।
আদিকালে মানুষ রাশিচক্রে চাঁদ ও নক্ষত্রের অবস্থান দেখে মাস, ঋতু ও বছরের হিসাব করতো। সূর্য প্রতি মাসে এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে সরে যায়। কোন মাস চলছে তা বোঝা যায় সূর্য কোন রাশিতে অবস্থান করছে। সূর্য কোন রাশিতে অবস্থান করছে, তা বোঝার উপায় কী? উত্তর আছে অবশ্যই।
আমেরিকায় করা একটা জরিপে দেখা গেছে, সেখানকার প্রতি চারজনের একজন রাশি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। শুধু আমেরিকাতেই নয়, পৃথিবীর প্রায় সবার যাপিত জীবনে রাশি একটি বিরাট অংশ দখল করে আছে। জন্ম, বিয়ে, পেশা- এসব তো আছেই, হালে কোন রাশি অনুযায়ী কী ধরনের মেকআপ, কোন কালারের পোশাক পরতে হবে, তা-ও রাশিচক্র যাচাইয়ের পর করা হয়।
এবার আসা যাক রাশিচক্রের ইতিহাসে। প্রাচীন প্রায় সব সভ্যতায় রাশি গণনার প্রমাণ মিললেও প্রাচীন ব্যাবিলনে প্রথম এর হদিস পাওয়া যায়। তারাই প্রথম বছরকে বারো মাসে আলাদা করে। বিভিন্ন মাসে নক্ষত্রের অবস্থান দেখে ঠিক করেছিল নাম। আনুমানিক সাত শ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রথম রাশিচক্রের সূচনা হয়। এ ঘটনার প্রায় নয় শ বছর পর রাশিচক্রের তালিকাটি ব্যবহার করে টলেমি গাণিতিকভাবে ভূকেন্দ্রিক বিশ^ মডেলের ধারণা দেন। এই মডেল পরে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রেখেছিল।
রাশির নামগুলো বেশ অদ্ভুত। এর কারণ হলো সূর্যের গতিপথে অবস্থানরত তারাগুলোর উপর ভিত্তি করে একটি প্যাটার্ন বা আকৃতি কল্পনা করা হয়। এই প্যাটার্নগুলোর নাম দেওয়া হয় পরিচিত কোনো পশুর আকৃতির সঙ্গে মিল রেখে কিংবা দেব-দেবী, পৌরাণিক ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে। সবই হয় প্রাচীন ধ্যানধারণা অনুযায়ী। পরবর্তী সময়ে এসব নামেরও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে।
শুধু প্রাচীনকালে যে রাশিচক্রে মানুষের বিশ্বাস ছিল তা নয়, আজকের দুনিয়ায়ও এটি রয়েছে। সংবাদপত্রে রাশিফলের কলামে চোখ আটকে যায় না এমন মানুষ কমই আছেন। বিশ্বাস করুন বা নাই করুন, একবার কিন্তু সবাই চোখ বুলিয়ে নেন। মজা করার জন্য হলেও নিজের ভাগ্যে কী আছে, রাশিচক্রের মাধ্যমে একবার দেখে নেওয়ার চেষ্টা করেন। রাজনীতিক, ব্যবসায়ী বা খ্যাতিমান অনেককেই জ্যোতিষীর সাহায্য নিয়ে কাজে নামতে দেখা যায়। জনশ্রুতি রয়েছে, অ্যাডলফ হিটলার তার কাজের সময় জ্যোতিষশাস্ত্রের আশ্রয় নিয়েছিলেন।
বেশির ভাগ রাশিফলেই আশার বাণী দেওয়া হয়। বিশ্বাস থাকুক বা না থাকুক, বাস্তবে ঘটুক বা না ঘটুক, রাশিফল পড়ে অবচেতনেই অনেকের মনে অনুপ্রেরণা জাগে। সেটাই বা কম কী?
আহমেদ বুবলি
ইলাস্ট্রেশন: দিদারুল দীপু