skip to Main Content

ইন্টারন্যাশনাল I ফ্যাশন লা ভি অন রোজ

বিশ্বজোড়া জনপ্রিয় এই ফুলের জোর যোগাযোগ প্রেমে। গ্রিক মিথলজির প্রেমের দেবী আফ্রোদিতির মতো সম্প্রতি গোলাপ প্রণয়ে মত্ত হয়ে উঠেছেন সবাই। সংবাদ-সংসার গোলাপে সুরভিত। বাদ পড়েনি স্প্রিং-সামার ২৪ এর রানওয়েও

টাইমলেস এলিগেন্স হিসেবে পরিচিত রোজ মোটিফ। ফ্যাশন দুনিয়ায় এবার পুরোটাজুড়ে আধিপত্যের সংবাদ শোনা যাচ্ছে। ফ্যাশন শো, ক্রেতাপ্রিয় লেবেলের কালেকশন—সবখানেই দেখা যাচ্ছে উজ্জ্বল এই ফুলকে। হালের ফ্যাশন কোরেও গোলাপের উপস্থিতি। হ্যাশটাগ রোজ, রোজিয়েট, রোজ গার্ডেন ব্যবহারে নিয়মিত ছবি পোস্ট করছেন ফ্যাশনিস্তারা।
নারীত্বের জয়গান
ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে চলছে হাইপার ফেমিনিন এরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের হোম পেজ জুড়ে নানান ফ্যাশন কোরের উপস্থিতি। যার অনেকগুলোই নারীত্বকে প্রতিনিধিত্ব করে। সেই ধারাবাহিকতায় গোলাপ ফুল পাপড়ি মেলেছে সবখানে। নিউইয়র্ক, প্যারিস ও লন্ডন ফ্যাশন উইকে নানাভাবে গোলাপের উপস্থিতি দেখা গেছে। ক্রেতাপ্রিয় ব্র্যান্ড বালমাঁ, আলেকজান্ডার ম্যাককুইন, কেনজো, মোকাসিনো, ভারসাচি তাদের সামার-স্প্রিং কালেকশনে গোলাপকে ইনস্পিরেশন হিসেবে রেখেছে। আইওয়্যার তৈরি করেছে প্রাডা। যেখানে গোলাপের চিরচেনা গোলাপি রঙে চোখ ঢেকে থাকবে। দিওর এমব্রয়ডারি করা একটি ব্যাগ বাজারে এনেছে। যেখানে গোলাপের উপস্থিতিতে কাব্যিক বিন্যাস। টপ হ্যান্ডেল ব্যাগ তৈরি করেছে ডলশে অ্যান্ড গ্যাবানা। রেজিনের সহায়তায় হ্যান্ডপেইন্টে নান্দনিক হয়েছে এই ব্যাগের ক্যানভাস।
প্রস্ফুটনে ব্যতিক্রম
বসন্ত আর ভালোবাসার থিম হিসেবে গোলাপের চাহিদা সব সময় তুঙ্গে। তবে এবার ফিরে এসেছে প্রবল প্রতাপে। পোশাক, জুয়েলারি, ব্যাগ, জুতা—সবকিছুই ছুঁয়েছে এই ট্রেন্ড। চিরায়ত প্রিন্ট, অ্যাপ্লিকে, হ্যান্ডপেইন্ট, এমব্রয়ডারির বাইরেও দেখা গেছে গোলাপের ব্যবহার।
গঠনগত নকশা ও অলংকরণ—দুই ক্ষেত্রেই গোলাপকে পাওয়া গেছে। এবারও দেখা মিলবে প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট, হ্যান্ডপেইন্ট, অ্যাপ্লিকে, এমব্রয়ডারি—এমন নানা ফর্মে। আবার গঠনগত নকশায়ও ব্যতিক্রমী উপস্থিতি। ব্র্যান্ড ম্যাংগো নেকলাইনে ফুটিয়েছে গোলাপ। সাদা রং হল্টারনেক টপের এই নকশা নজর কেড়েছে। রোজ প্রিন্টের ওয়ান শোল্ডার ড্রপড ম্যাক্সি ড্রেসও বানিয়েছে এই ব্র্যান্ড। শুধু একটি গোলাপের ব্যবহারে পুরো পোশাকের নকশা সম্পন্ন করার উদাহরণও আছে। এইচ অ্যান্ড এম গ্রুপের সাব-ব্র্যান্ড অ্যান্ড আদার স্টোরিজ তৈরি করেছে এমন টপ।

রোজিয়েট ট্রেন্ড ছুঁয়ে গেছে গয়না, জুতা, মেকআপসহ জীবনযাপনের সব বিভাগ। জারার কালেকশনে আছে নতুন চোকার। ইন ট্রেন্ড রোজ থিমে তৈরি করা হয়েছে এই নেক অ্যাকসেসরিজ। ডিজাইনার স্যান্ডি লিয়াংও তৈরি করেছেন হেয়ার অ্যাকসেসরিজ। ডলশে ভিটার সংগ্রহে আছে ব্যালে ফ্ল্যাট। এস্টে লডার নিয়ে এসেছে রোজ টি ক্রিম লিপস্টিক। টম ফোর্ডের ব্যানারে এসেছে হাইলাইটার। এরমেস এনেছে নেইল কালার এবং ব্লাশ পাউডার।
সেলেব সূত্রে
তারকাদের পোশাকেও গোলাপের মুগ্ধতা। ক্রিটিক চয়েজ অ্যাওয়ার্ডে অস্ট্রেলিয়ান অভিনেত্রী মারগট রোবির পোশাকে দেখা গেছে গোলাপের সম্ভার। লাল রঙের মারমেইড কাট গাউন পরেছিলেন তিনি। অফ শোল্ডার নেকের হেমলাইন জুড়ে ছিল একই রঙের গোলাপের ঝাড়। যেন রক্তলাল গোলাপ জড়িয়ে আছে রোবিকে।
বলিউড ফ্যাশনিস্তা সোনম কাপুরের স্টাইল স্টেটমেন্টে গোলাপ ফুটিয়েছেন তারই সহোদরা ফ্যাশন ডিজাইনার রিহা কাপুর। বোনের জন্য রোজ-সংবলিত টপ তৈরি করেছিলেন। পাওয়ার স্যুটের সঙ্গে দারুণ দেখাচ্ছিল পিসটি। আমেরিকান তারকা জেন্ডায়া বোল্ড স্টেটমেন্টে হাজির হয়েছেন গোলাপে গড়ানো পোশাকে। তার সাদা-কালো পোলকা ডটের প্লে স্যুটের নেক থেকে ওয়েস্টলাইন পর্যন্ত নেমে গিয়েছিল দুই লাইনের রঙিন গোলাপ। একেকটি একেক রং। বলিউড ডিভা কারিনা কাপুরের পোশাকেও দেখা গেছে গোলাপের উপস্থিতি। মেঝে ছুঁয়ে যাওয়া গাউনে দোহা জুয়েলারি অ্যান্ড ওয়াচ এক্সিবিশনে হাজির হয়েছিলেন তিনি। লেয়ারিংয়ে ছিল ওভারসাইজড ব্লেজার। যেখানে ফুটেছিল গোলাপ।
এখনকার মতোই আরও একসময় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিল এ ফুল। বলা হচ্ছে ওয়াই টু কে-এর কথা। এই ফুল সরাসরি প্রেম ও ভালোবাসার সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করা হয়। এমন অনুভূতির সঙ্গে প্রবল যোগ থাকার কারণেই হয়তো এটি আউট অব স্টাইল হয়নি কখনো। বিভিন্ন সময়ে ব্যতিক্রমধর্মী ব্যবহারে সামনে এসেছে। সব মিলিয়ে গোলাপ এবার বিভ্রমে ভুলিয়ে রাখবে বলেই ধারণা করা যায়। হোক তা গঠনগত নকশায় গোলাপের বুনন কিংবা অলংকরণে আধিপত্য। চেনা রঙের বাইরের শেডেও গোলাপ দেখা যেতে পারে।
তত্ত্ব-তথ্য
গোলাপের প্রবল ক্রেতাপ্রিয়তার পেছনে মনস্তাত্ত্বিক দর্শন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে জানা যায়। মন ভালো করার পথ্য হিসেবে কাজ করে এই ফুল। ব্রেইন কেমিক্যাল ডোপামিন, অক্সিটোসিন, সেরোটোনিন নিঃসৃত হয় পুষ্পদর্শনে। ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ল্যানক্যাশের প্রফেসর লওরি ডথওয়ের গবেষণায় পাওয়া তথ্যমতে, মানুষ যখন দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকে, তখন তার ব্রেইন করটিসল নামের স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ করে, যা তাকে অস্থির করে তোলে। এই ব্যক্তি যদি এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফুলের কাছাকাছি যান, তাহলে তার মস্তিষ্ক তুলনামূলক কম স্ট্রেস হরমোন তৈরি করে; যা মন শান্ত রাখে।

 সারাহ্ দীনা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top