টেকসহি I রক্তদানে জীবন দান
১৪ জুন। ওয়ার্ল্ড ব্লাড ডোনার ডে। জীবন বাঁচাতে রক্তদান এক মহতী উদ্যোগ
১৪৯০ থেকে ১৪৯২ সালের মাঝামাঝি সময়ের কথা। ইতালির এক প্রভাবশালী ব্যক্তি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা ধারণা করেন, তার শরীরের কোথাও নিশ্চয় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কালক্ষেপণ না করে তারা সিদ্ধান্ত নেন, রক্ত পান করিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখবেন। ভাবনামতো দশ বছরের তিনজন শিশুর শরীর থেকে রক্ত বের করে তাকে পান করানো হয়। রক্তের বিনিময়ে শিশুদের দেওয়া হয় একটি করে স্বর্ণমুদ্রা। সে-যাত্রায় ওই ব্যক্তির শরীর সাময়িক ভালো হলেও রক্ত নেওয়ার কারণে তিন শিশুর কেউই বাঁচেনি। ১৪৯২ সালে ওই ব্যক্তিও কোনো ঘোষণা ছাড়াই মৃত্যুবরণ করেন। ইতিহাস বলে, রক্ত স্থানান্তরের গল্প ছিল এটি। তবে তার ও শিশুদের মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে নেননি তখনকার মানুষ। ফলে রক্তদানে এগিয়ে আসতে ভয় পেতেন তারা।
এরপর কেটে যায় অনেকটা সময়। প্রযুক্তির কল্যাণে রক্ত স্থানান্তর প্রক্রিয়াও আধুনিকতার মুখ দেখে। আবিষ্কৃত হয় শিরার মাধ্যমে রক্ত স্থানান্তরের পদ্ধতি। ধীরে ধীরে মানুষের ভয় কাটতে শুরু করে। ‘রক্তদানে জীবনদান’ বিধায় নির্ভয়ে অনেকে এগিয়ে আসেন। রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে তোলেন বিপদাপন্ন ব্যক্তিদের। যারা স্বেচ্ছায় ও বিনা মূল্যে রক্ত দান করে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন, তাদেরকে উৎসাহিত করতে প্রতিবছরের ১৪ জুন পালন করা হয় ওয়ার্ল্ড ব্লাড ডোনার ডে বা বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইএফআরসি), ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ব্লাড ডোনার অর্গানাইজেশন (এফআইওডিএস) এবং ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব ব্লাড ট্রান্সফিউশনের (আইএসবিটি) সহযোগিতায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) চিহ্নিত আটটি অফিশিয়াল ‘গ্লোবাল পাবলিক হেলথ’ ক্যাম্পেইনিংয়ের মধ্যে একটি এ দিবস।
১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস পালন এবং ২০০০ সালে ‘নিরাপদ রক্ত’—এই থিম নিয়ে পালিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৪ সালে প্রথম পালিত হয় বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। গোটা বিশ্বের মানুষকে রক্তদানের ব্যাপারে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করা, মানুষের মাঝে সংহতি এবং সামাজিক সম্প্রীতি বাড়াতে রক্তদানের গুরুত্ব প্রচার, এ-সংক্রান্ত অমূলক ভয় দূরীকরণ, নতুন রক্তদাতা তৈরি করা এবং নিরাপদ রক্ত ব্যবহারে উৎসাহ জোগানোই দিবসটির মূল উদ্দেশ্য।
স্বেচ্ছায় রক্তদানকারীদের উৎসাহিত করার পাশাপাশি বিশ্ব রক্তদাতা দিবস পালনের আরও একটি তাৎপর্য রয়েছে। এদিন জন্ম হয়েছিল নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টাইনারের। যিনি আবিষ্কার করেছিলেন রক্তের গ্রুপ। অগণিত মুমূর্ষু মানুষের প্রাণ বাঁচানোর কারিগর ছিলেন তিনি। ১৯০১ সালে ভিয়েনার ডা. কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার আবিষ্কার করেন, মানুষের রক্তের প্রধানত তিনটি গ্রুপ রয়েছে—এ, বি এবং ও। একই গ্রুপ থেকে রক্ত গ্রহণে কোনো ক্ষতি নেই—সেটি তিনিই প্রথম প্রমাণ করেছিলেন। পরবর্তী বছরে তিনি এবং তার দুই সহযোগী আলফ্রেড ভন ডেকাস্টেলো ও আদ্রিয়ানো স্ট্রুলি ‘এবি’ রক্তের গ্রুপ শনাক্ত করেন।
রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের মাধ্যমে ১৯০৭ সালে নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে একজন মুমূর্ষু রোগীর শরীরে সফল রক্তসঞ্চালন করা হয়। ১৯২১ সালে লন্ডনের কিংস কলেজ হাসপাতালে ব্রিটিশ রেডক্রসের সদস্যরা সবাই একযোগে রক্ত দান করেন। সূচিত হয় বিশ্বের প্রথম স্বেচ্ছা রক্তদানের দৃষ্টান্ত। ১৯৩৭ সালে কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার ও আলেকজান্ডার সলোমোন ওয়েনার রেসাস ম্যাকাক বানরের রক্ত থেকে আরএইচ অ্যান্টিজেন আবিষ্কার করেন। এর আরএইচ ফ্যাক্টরের মাধ্যমে আমরা রক্তের গ্রুপ পজিটিভ নাকি নেগেটিভ, তা বুঝতে পারি।
সাধারণত ১৮ থেকে ৬০ বছরের যেকোনো সুস্থ মানুষ, যাদের শরীরের ওজন ৪৫ কেজির বেশি, তারা চার মাস পরপর নিয়মিত রক্ত দান করতে পারেন। রক্তদান নিয়ে কিছু ধারণা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। অনেকে মনে করেন, দান করলে শরীর থেকে রক্ত কমে যায়। এটি আসলে ভ্রান্ত ধারণা। দৈহিকভাবে রক্তদানের কোনো ঝুঁকি নেই।
রক্তদানের জন্য নাড়ির গতি প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০-এর মধ্যে থাকতে হবে। দেহের তাপমাত্রা অবশ্যই স্বাভাবিক অর্থাৎ ৯৯ দশমিক ৬ ফারেনহাইটের মধ্যে থাকা চাই। তবে অসুস্থ বা জ্বরগ্রস্ত অবস্থায় রক্ত দেওয়া যাবে না। ওষুধ ব্যতীত রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যে (সিস্টোলিক ১০০ থেকে ১৬০ মিমি মার্কারি এবং ডায়াস্টোলিক ৬০ থেকে ১০০ মিমি মার্কারির নিচে) থাকলেই রক্ত দেওয়া যাবে। রক্তদানের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাত্রা কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ থাকা চাই (পুরুষদের ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ৫ গ্রাম/ডিএল এবং নারীদের ক্ষেত্রে ১১ দশমিক ৫ গ্রাম/ডিএল)।
স্বেচ্ছা রক্তদানে ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার রক্ত সংগ্রহ করা হয়, যা দাতার শরীরের প্রয়োজনের উদ্বৃত্ত রক্তের অর্ধেকের কম। ফলে রক্তদানে শারীরিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। বিজ্ঞান বলে, রক্তদানের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত বোন ম্যারো বা অস্থিমজ্জা নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। রক্ত দান করার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেহে রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায়। দান করার দুই থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্তকণিকা জন্ম হয়ে এই ঘাটতি পূরণ করে। আর প্রাকৃতিক নিয়মেই যেহেতু প্রতি ৪ মাস পর আমাদের শরীরের লোহিত রক্তকণিকা বদলায়, তাই বছরে তিনবার রক্ত দিলে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না, বরং লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা আরও বেড়ে যায়।
রক্ত দেওয়া হোক বা না হোক, একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে তা নিজ বৈশিষ্ট্যেই বদলে যায়। যেমন রক্তের প্রধান অণুচক্রিকার আয়ু ৮ থেকে ৯ দিন, শ্বেতকণিকার আয়ু ১৩ থেকে ২০ দিন এবং লোহিত কণিকার আয়ু ১২০ দিন। নির্দিষ্ট এই সময় পর কণিকাগুলো নিজে নিজেই ধ্বংস হয়ে যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী নিরাপদ রক্তসঞ্চালনের জন্য রক্তদাতার শরীরে হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, এইচআইভি বা এইডস, ম্যালেরিয়া ও সিফিলিস—এই পাঁচটি রক্তবাহিত রোগ আছে কি না, তা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হয়। তাই নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমে চার মাস পরপর একজন দাতা বিনা মূল্যে তার সার্বিক সুস্থতা যাচাই করে নিতে পারেন।
বিশ্বখ্যাত স্বেচ্ছাসেবী মানবিক সংস্থা রেডক্রসের তথ্য অনুযায়ী, একজন পরিপূর্ণ সুস্থ মানুষের রক্ত দান করতে সময় লাগে মাত্র ৮ থেকে ১০ মিনিট। রক্তদানের আগে ও পরে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, বিশ্রামসহ ৪০-৫০ মিনিট সময় ব্যয় হয় স্বেচ্ছা রক্তদানে।
রক্তদান-সম্পর্কিত আরেকটি প্রচলিত ধারণা হলো, রক্ত দিলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়; যা সর্বৈব ভুল। বরং নিয়মিত রক্তদানে শরীর থাকে সুস্থ। এতে শরীরের রক্ত চলাচল প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন হয়। ফলে ধমনীতে ব্লক হওয়ার ঝুঁকি কমে আসে। গবেষণায় দেখা গেছে, বছরে অন্তত তিনবার যারা রক্ত দান করেন, তাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়; এতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিখ্যাত চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী জার্নাল অব দ্য ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, নিয়মিত রক্তদানে ৩৭ শতাংশ ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। প্রথমবার রক্তদানের মাত্র ছয় মাসের মাথায় ক্যানসার হ্রাসের এই পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। নিয়মিত রক্তদাতাদের ফুসফুস, লিভার, পাকস্থলী, কোলন ক্যানসারসহ ১৭টির বেশি রোগের ঝুঁকি কম থাকে।
রক্তদান নিয়ে নারীদের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। মনে করা হয়, তাদের শরীরে রক্ত এমনিতেই কম; দান করলে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না! ত্বক শুষ্ক ও প্রাণহীন হয়ে যাবে! এ ধারণাও সঠিক নয়। গড়পড়তা নারীর শরীরে উদ্বৃত্ত রক্তের পরিমাণ ৮০০ মিলিলিটার। অন্যদিকে, স্বেচ্ছা রক্তদানে একজন দাতার কাছ থেকে নেওয়া হয় মাত্র ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার রক্ত। তাই এক ব্যাগ দেওয়ার পরও শরীরে পর্যাপ্ত রক্ত থাকে। রক্তদানের পরবর্তী কিছুদিন ভিটামিন সি যুক্ত ফলমূল, সবুজ শাকসবজি, ডিম, মাছ, মাংস, দুধ এবং পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ করলে প্রদত্ত রক্তের ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। তা ছাড়া, নিয়মিত রক্তদান নারীদের ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কমিয়ে দেয় শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমার প্রবণতা। শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যাল তৈরি হওয়ার কারণে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বুড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়, নারীদের ক্ষেত্রে যা বেশি দৃশ্যমান। রক্ত দিলে শরীর থেকে ফ্রি র্যাডিক্যালগুলো বের হয়ে যায়, যা সাহায্য করে তারুণ্য ধরে রাখতে।
অবশ্য বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে নারীদের রক্ত দান করা থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়। অন্তঃসত্ত্বা কিংবা প্রসূতি, স্তন্যদানকারী মা কিংবা গর্ভপাত হয়ে থাকলে রক্তে আয়রনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম থাকে। তাই আয়রনের মাত্রা স্বাভাবিক হলেই একজন নারী রক্ত দান করতে পারবেন। তা ছাড়া রক্তবাহিত রোগ, যেমন হেপাটাইটিস বি বা সি, জন্ডিস, এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি আছে যেসব নারীর, তাদের রক্তদান উচিত নয়; পাশাপাশি টাইফয়েড, ডায়াবেটিস, চর্মরোগ, বাতজ্বর, হৃদ্রোগ থাকলেও রক্ত দেওয়া অনুচিত।
রক্তদানের আগে ও পরে কিছু নিয়ম মানা জরুরি। দানের ১ থেকে ৪ ঘণ্টা আগে খাবার এবং অন্তত ৫০০ মিলিলিটার পানীয় গ্রহণ করা ভালো। ক্ষুধার্ত অবস্থায় রক্ত দান করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। রক্তদানের পরের ২৪ ঘণ্টায় স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ গ্লাস পানি বেশি পান করা অনিবার্য। পাশাপাশি রক্তদানের পর ১০-১৫ মিনিট বিশ্রাম নেওয়া চাই। তা ছাড়া রক্তদানের পর ঝুঁকিপূর্ণ ও ভারী কাজ যেমন গাড়ি চালানো, ব্যায়াম করা ইত্যাদি থেকে অন্তত এক দিন বিরত থাকতে হবে। এরপরও রক্তদান-পরবর্তী কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ রক্ত সংগ্রহকেন্দ্রে যোগাযোগ করা আবশ্যক।
বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য স্বেচ্ছাসেবী রক্তদান কর্মসূচি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে কোয়ান্টাম, রেড ক্রিসেন্ট, সন্ধানী, বাঁধন, পুলিশ ব্লাড ব্যাংক, রোটারি ও লায়ন্স। প্রতিবছর গড়ে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ১ লাখ ব্যাগ, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ৬০ হাজার ব্যাগ এবং সন্ধানী প্রায় ৫০ হাজার ব্যাগ রক্ত সরবরাহের মাধ্যমে চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ মেটাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ‘নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন কর্মসূচি’ প্রকল্পের মাধ্যমে এসব সংগঠনকে সহায়তা করে।
স্বেচ্ছায় রক্তদানের ক্ষেত্রে রেকর্ড করেছেন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক জেমস ক্রিস্টোফার হ্যারিসন। অস্ট্রেলিয়ান রেডক্রস ব্লাড সার্ভিসের হিসাব অনুযায়ী, ৮১ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছেন ২৪ লাখ শিশুর প্রাণ। জেমসের রক্তে মূলত অদ্ভুত ধরনের রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি থাকায় তা দিয়ে অ্যান্টি ডি নামের জীবন রক্ষাকারী ইনজেকশন তৈরি করত অস্ট্রেলিয়ার ওষুধ প্রশাসন। রক্তদাতার রক্তে থাকা অতি দুর্লভ এই অ্যান্টিবডি, গর্ভাবস্থায় নবজাতক শিশুকে রেসাস অসুখের হাত থেকে বাঁচায়। জেমস ক্রিস্টোফার হ্যারিসনের দান করা প্লাজমা থেকে অ্যান্টিবডি নিয়ে অসংখ্য অস্ট্রেলিয়ান মা সুস্থ সন্তান প্রসব করেছেন। বাংলাদেশে রক্তদানের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন খুলনার জাকারিয়া বিশ্বাস। রক্তদানকে অভ্যাসে পরিণত করা এ ব্যক্তি ১৯৮৬ সাল থেকে ১১৮ বারের মতো রক্ত দিয়েছেন।
আমাদের দেশে বছরে প্রায় ১৪ লাখ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন পড়ে। বিশ্বের প্রায় ৬২টি দেশে শতভাগ স্বেচ্ছা রক্তদানের মাধ্যমে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বের ৯ কোটি ২০ লাখ মানুষ রক্ত দেন। তবে উন্নত বিশ্বে স্বেচ্ছা রক্তদানের হার প্রতি এক হাজারে ৪০ জন হলেও উন্নয়নশীল বিশ্বে তা ৪ জনের কম। আমাদের দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার হার মাত্র ৩১ শতাংশ। থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় এ হার শতভাগ। ভারতেও ৬৫ শতাংশ মানুষ স্বেচ্ছায় রক্ত দান করেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে ভুটানের চেয়েও।
‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’—ভূপেন হাজারিকার এই গানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে রক্তদানের আহ্বান। মানুষের জীবন রক্ষায় এই মহৎ উদ্যোগের বিকল্প নেই।
সুস্মিতা চক্রবর্তী মিশু
ছবি: ইন্টারনেট