skip to Main Content

ফিচার I ট্যালো-ট্রিক

বিতর্ক চলছে বহুদিন ধরে। এবার দেখার পালা, কাকে এগিয়ে রাখবেন সৌন্দর্যসচেতনেরা। বোর্ড সার্টিফাইড ত্বক বিশেষজ্ঞদের তত্ত্ব, নাকি সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের ট্রিক

বিফ ট্যালো, শব্দটি অচেনা মনে হচ্ছে? আক্ষরিক বাংলায় একে গরুর মাংসের চর্বি বলা যেতে পারে। চিন্তা করা যায়! মাংসের চর্বি; সেটাও ব্যবহৃত হচ্ছে সৌন্দর্যচর্চায়! যদিও সরাসরি ত্বকে এটি ব্যবহার করা হয় না। প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে ফেস ক্রিম, বডি লোশন ও সাবান তৈরি করে ত্বকে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়। ট্যালো লাভারদের মতে, এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর, অথচ সস্তা উপাদান, যা যে কেউ তাদের রূপ-রুটিনে সহজে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। অথচ এর ফল অনেক বিলাসবহুল কসমেটিকের চেয়েও বহুগুণ ভালো।
তাদের দাবি যে একেবারেই অমূলক, এমনটা বলার উপায় নেই। কারণ, গরুর চর্বি অনেক স্কিন কেয়ার পণ্য ও সাবান তৈরিতে আগেও ব্যবহার করা হতো। যদিও সেটির জনপ্রিয়তা এখনকার মতো ছিল না। এখন হঠাৎ করে এটি এত প্রিয় হয়ে ওঠার কারণ কী? জানতে হলে আরও গভীরে যেতে হবে; বিশেষ করে ত্বকের যত্নে ট্যালো কেন এতটা উপকারী, তার পেছনের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এটি এ, ডি, ই, কে, এবং সি, এল-এর মতো ভিটামিন ও খনিজ পদার্থে পূর্ণ। যার প্রতিটি ত্বকের নানা সমস্যা নিরাময়ের শক্তিশালী হাতিয়ার। এ ছাড়া বিফ ট্যালো ইলাস্টিসিটি বাড়াতে সক্ষম। তা ছাড়া এটি ত্বকে প্রতিরক্ষামূলক বাধা তৈরি করে, যা ত্বক শ্বাস নেওয়ার সময় আর্দ্রতা লক করতে সহায়ক। প্রাচীন মিসরীয় ও রোমানরা ট্যালোর এই গুণের কথা জানতেন বলেই ময়শ্চারাইজিং এবং নিরাময় এজেন্ট হিসেবে তাদের ত্বকের যত্নে ঘন ঘন ট্যালো ব্যবহার করতেন। প্রায় এক শ বছর আগে পর্যন্ত সাবান, লোশন, মোমবাতি ও বাতি ছাড়াও তাদের বেশির ভাগ রান্নাঘরে ট্যালোর উপস্থিতি ছিল বাধ্যতামূলক। রোমানদের সেই সিক্রেট ট্যালো রেসিপি এখন চলতি সময়ের সৌন্দর্যপিয়াসিদের হাতে। টিকটকারদের কল্যাণে পশ্চিমা বিশ্বের অনেকে ইদানীং নিজেই প্রসেস করে ট্যালো ব্যবহার করছেন বিউটি রুটিনে।
ফেস বাম ও লোশন তৈরিতে বিফ ট্যালো থাকে তাদের প্রধান উপাদান। বেস হিসেবে ট্যালো ব্যবহার করে তারপরে শিয়া বাটার, কোকো বাটার, স্কিন অয়েল, মধু এবং এমনকি অ্যালোভেরার মতো উপাদান যোগ করে তৈরি হচ্ছে ম্যাজিক্যাল স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট। অন্তত তাদের দাবি এমনটাই। যে কারণে ব্যাপারটি ট্রেন্ডে পরিণত হচ্ছে ক্রমশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিফ ট্যালো ট্রেন্ড এমনই জনপ্রিয় যে কারও কারও দাবি, ট্যালো ব্যবহারে এতই উপকার মিলেছে, এখন আর তাকে ক্লিনজার ব্যবহার করতে হয় না। কেবল উষ্ণ পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে তিনি ত্বক ময়শ্চারাইজ করার জন্য গরুর মাংসের ট্যালো সেরাম প্রয়োগ করলেই চলে। আর তাতে আক্ষরিক অর্থেই ত্বক অনেক স্বাস্থ্যোজ্জ্বল আর সুন্দর হয়ে উঠছে। বিফ ট্যালো ত্বকের লালচে ভাব এবং ব্রণ-প্রবণতা কমিয়ে মসৃণ ও তারুণ্যদীপ্ত করে তুলতে সাহায্য করছে।
তবে সমস্যা হলো, বেশির ভাগ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এই ট্রেন্ডের বিপক্ষে। তারা পশুর চর্বির সঙ্গে ময়শ্চারাইজার অদলবদলের চিন্তা করার আগে কয়েকবার ভেবে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। দেশি-বিদেশি ত্বক বিশেষজ্ঞদের মত, গরুর মাংসের মতো প্রাণীর উৎস থেকে পাওয়া এই তেলগুলো দূষণ, গন্ধ ও নিরামিষাশীদের জন্য নিরাপদ নয়। তবে ত্বকের ওপর গরুর মাংসের ট্যালো প্রয়োগে ক্ষতি নেই। যদিও একই রকম কার্যকারিতা সম্পন্ন হাইএন্ড সব ময়শ্চারাইজার বাজারে রয়েছে। অনেকেরই বক্তব্য, যেখানে সমান সুবিধা নিয়ে চমৎকার সব কসমেটিক ইতিমধ্যে হাতের নাগালে রয়েছে, সেখানে এই চর্বি মাখার মতো কাজ কেন করতে হবে?
তবে বিজ্ঞান বলছে, গরুর মাংস; যা মূলত স্যাচুরেটেড ফ্যাট দিয়ে তৈরি, এটির কোলেস্টেরল ও ফ্যাটি ভিটামিন ত্বকের জন্য নানাভাবে উপকারী। উদাহরণস্বরূপ, ভিটামিন এ, ওরফে রেটিনল, ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর সিনথেটিক ফর্মগুলো ব্রণ, সোরায়সিস, আঁচিল, অকালবার্ধক্য এবং এমনকি সূক্ষ্ম রেখা ও বলিরেখার বিরুদ্ধে লড়াই করে। পাশাপাশি ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রকৃতপক্ষে প্রদাহরোধী হিসেবে কার্যকর। তবে এখানে কথা আছে। ত্বকের জন্য উপকারী ভিটামিনযুক্ত ভালো পণ্য মানেই এই নয়, এটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যা ত্বক নিরাপদে শুষে নিতে সক্ষম। তাই বিশেষজ্ঞদের মত, ট্যালো লাভার সৌন্দর্য অনুরাগীদের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। যেহেতু এটি ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) মাধ্যমে ত্বকের যত্নের পণ্য হিসেবে নিয়ন্ত্রিত নয়, তাই দূষিত হতে পারে। কিংবা ব্যবহারকারীদের জন্য অজানা অ্যালার্জির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। অনেকের মতে, এটি মোটেই আহামরি কিছু নয়; বরং ক্ষেত্রবিশেষে ত্বকে জ্বালা বা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
গবেষকদের মতে, কেউ বিফ ট্যালো ট্রাই করতে চাইলে সরাসরি ব্যবহারের চেয়ে (যেমনটি অনেকে করছেন) বিফ ট্যালো-ইনফিউজড বাম বেছে নেওয়াই শ্রেয়। বিফ ট্যালো আসলেই ত্বকচর্চার ম্যাজিক্যাল উপাদান কি না, তা জানা দুষ্কর হবে যতক্ষণ না শুধু ট্যালো নিয়ে গবেষণা করা হয়। যেটি এখনো করা হয়নি।
অবশ্য বিশেষজ্ঞদের এসব বিশেষ কথা নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাচ্ছেন না ট্যালোপ্রেমীরা! তারা তাদের ত্বক সুরক্ষিত বা তারুণ্য ধরে রাখতে ট্যালোর ব্যবহার যে কতটা কার্যকর, তা প্রমাণের চেষ্টায় রত। তাদের কথা শুনলে মনে হতেই পারে, বাসায় আনা গরুর মাংসের সঙ্গে যে চর্বি আসে, তা ত্বকে কিছুক্ষণ ঘষে ট্রাই করে দেখি। এত মানুষ যে কথা বলছে, সেটি তো আর একেবারে মিথ্যা হতে পারে না!

 রত্না রহিমা
মডেল: জেরিন
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top