ফোকাস I ঘামরোধী
সঙ্গে এর ফলে সৃষ্ট ত্বক সমস্যাগুলোও। ভুলবশত বাড়তে পারে সংক্রমণ। সহজ টোটকা আর সঠিক পণ্যেই মিলবে সারাইয়ের সমীকরণ
গরমকালে অনেকটা বিব্রত করতেই যেন ঘামাচির জন্ম। আর গ্রীষ্মপ্রধান দেশে একে এড়ানোর উপায় কই! ঘাম থেকে এর উৎপত্তি। আর পার্সপিরেশনের এই প্রক্রিয়া শরীরের জন্য খুবই স্বাভাবিক। একে রুখে দেওয়া যেমন সম্ভব নয়, তেমনি শরীরের জন্য নয় হিতকরও। গরমের মরসুমে দেহে ঘামের মাত্রা বাড়ে, ফলে ঘামাচি সৃষ্টিও বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত ঘাম ঘর্মগ্রন্থি দিয়ে বের হয়ে ত্বকের নিচে এসে জমা হতে থাকে। কিছু সময় পরে ঘামভর্তি ছোট ছোট ফুসকুড়িতে পরিণত হয়ে ফুলে ওঠে। সেটাই হচ্ছে ঘামাচি। এটি মূলত তিন ধরনের হয়ে থাকে।
মিলিয়ারিয়া ক্রিস্টালিনা: দেখতে একদমই স্বাভাবিক এই ধরনের ঘামাচি। সাধারণত কোনো ধরনের উপসর্গ থাকে না।
মিলিয়ারিয়া রুবরার: এ ধরনের ঘামাচির ফলে ঘর্মনালিতে বদ্ধতা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে ত্বকের ওপর ছোট ছোট অসংখ্য গোটা হতে দেখা যায়। গোটার মাথায় পানির দানাও থাকতে পারে, আবার না-ও থাকতে পারে। ত্বক স্বাভাবিকের চেয়ে আপেক্ষিকভাবে লালচে রঙের দেখা যায়। প্রচণ্ড চুলকানি হয়। শরীরের মূল অংশ অর্থাৎ বুক, পিঠ ও ঘাড়ে বেশি হতে দেখা যায়।
মিলিয়ারিয়া প্রফান্ডা: এ ক্ষেত্রে ঘর্মনালির বদ্ধতা থাকে ত্বকের অনেক গভীরে। ফলে বাহ্যিকভাবে দেখতে অনেকটা স্বাভাবিক ধরনের মনে হতে পারে।
এই তিনটির মধ্যে দ্বিতীয়টির আক্রমণ হয় বেশি তীব্র। গরম ও স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় এটি বেশি হয়।
ঘামাচি রোধে তাই করণীয় কী হতে পারে, তা নিয়ে পরিকল্পনা থাকা জরুরি। যেহেতু ঘাম থেকে এর সৃষ্টি, তাই এটি রোধের চেষ্টা করতে হবে সবার আগে। শরীর যেন অতিরিক্ত না ঘামে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে সব সময় সেটা সম্ভব হবে না, এটা মাথায় রাখা জরুরি। শরীর যতটা সম্ভব শুষ্ক রাখার চেষ্টা করতে হবে। ফ্যান, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের আবহে থাকলে এটা সম্ভব। এতে ঘাম কম হবে। একান্ত দরকার না পড়লে দুপুরের দিকটা বাড়িতেই থাকার চেষ্টা করা যেতে পারে। আর যদি বাইরে বেরোতেই হয়, সে ক্ষেত্রে শুকনা কাপড় বা তোয়ালে রাখা যেতে পারে সঙ্গে। ঘাম হলে চটজলদি মুছে ফেলার জন্য। শরীরচর্চার সময়ও ঘাম বেশি হয়। সে ক্ষেত্রে প্রতি পাঁচ মিনিট পর ঘাম মুছে নেওয়া জরুরি। এতে ত্বকে ঘাম বসবে না, ঘামাচি সৃষ্টিরও সুযোগ তৈরি হবে না। এ ছাড়া আরামদায়ক ব্রিদেবল ফ্যাব্রিকের তৈরি পোশাক পরা যেতে পারে। এতে ভালো ভেন্টিলেশন হয়, যা শরীরের ঘাম শুকিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। এ ছাড়া হালকা রঙের পোশাকও পরা যায়, যা সূর্যের তাপ শরীরে শোষণে বাধা দেয়। ফলে গরম লাগে না, অতিরিক্ত ঘামেও না শরীর। এ ছাড়া কিছু নির্দিষ্ট ধরনের খাবার এড়িয়ে যাওয়া যেতে পারে এ মৌসুমে। বেশি ঝাল-মসলাযুক্ত খাবার এ ক্ষেত্রে তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে। ক্যাফেইনও এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন অনেক বিশেষজ্ঞ। এ ছাড়া ছোট ছোট ভাগে খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন তারা। এতে বাড়তি মেটাবলিজম হিট তৈরি হয় না, ফলে শরীর ঠান্ডা থাকে। বাড়তি ঘামও হয় না।
এরপরও ঘামাচির সমস্যায় জীবন জেরবার। সে ক্ষেত্রেও রয়েছে সমাধান। কোনোটা বাসায় বসে একদম প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে, তো কোনোটা সঠিক পণ্যের সহায়তায় একটা শুকনা কাপড়ে কয়েক টুকরা বরফ দিয়ে ১০-১৫ মিনিট ধরে ঘামাচির ওপর বুলিয়ে নিলে আরাম মিলবে তৎক্ষণাৎ। দিনে ৩-৪ বার এভাবে করলে ভালো ফল মিলবে। এ ছাড়া পরিমাণমতো মুলতানি মাটি নিয়ে তাতে গোলাপজল মিশিয়ে ঘামাচির ওপরে মাখানো যেতে পারে। কিছুক্ষণ রেখে শুকিয়ে ফেলার পর ধুয়ে নিলেই চলবে। উপকার মিলবে। এক কাপ ঠান্ডা পানিতে এক চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিতে হবে। তাতে পরিষ্কার কাপড় ডুবিয়ে ঘামাচির ওপর ১০ মিনিট রেখে আলতো হাতে মুছে নিতে হবে। ঘামাচির মোক্ষম নিরাময় হচ্ছে অ্যালোভেরা। অ্যালোভেরার রসের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে সেটা ঘামাচির ওপর মেখে রাখলে আরাম মিলবে। কিছুক্ষণ রেখে পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। নিমপাতাও ঘামাচির উপশম হিসেবে দারুণ কার্যকর। এর রসের সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে ঘামাচির ওপর মাখিয়ে রাখতে হবে। ঘামাচি না চুলকে তার ওপর নিমের ডাল বোলালেও আরাম মিলবে। দুই টেবিল চামচ চন্দনগুঁড়ার সঙ্গে পরিমাণমতো গোলাপজল মিশিয়ে ঘামাচির ওপর লাগিয়ে রাখা যায়। এতে দ্রুত উপশম মিলবে। তিন টেবিল চামচ ওটমিলের সঙ্গে আধা টেবিল চামচ হলুদগুঁড়া মিশিয়েও ঘামাচির ওপর মাখানো যায়। কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।
এ ছাড়া ব্যবহার করা যেতে পারে ঘামাচির জন্য বিশেষভাবে তৈরি প্রিকলি হিট পাউডার। এসেনশিয়াল অয়েল এবং অ্যান্টিসেপটিক প্রোপার্টিযুক্ত। এগুলো গরমে ঘামাচির অস্বস্তি থেকে রক্ষা করবে, কমাবে চুলকানি আর সংক্রমণ। হাতের কাছে থাকলে সমস্যার সমাধান হবে সহজে।